alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অ্যালামনাই

শারফুদ্দিন আহমেদ

: রোববার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯৮ সালে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক প্রচেষ্টায় তৎকালীন আইপিজিএমএন্ডআর একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। শুরুর পর থেকে পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিশ্ববিদ্যালয় শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে উত্তীর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, তা ২০২১ সাল পর্যন্ত ছিল অনুপস্থিত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক প্রচেষ্টা হয়েছে এই ২৩ বছর। কিন্তু জোরালো কোন প্রচেষ্টা যে হয়নি তার জ্বলন্ত প্রমাণ হল শুরু হবার প্রথম ২৩ বছরেও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন না হওয়া। আমি দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাকিং বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করি। এরই ফলশ্রুতিতে র‌্যাকিং প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রয়োজনীয়তার অনুভব করি।

অ্যালামনাই (অষঁসহর), যার বাংলা দাঁড়ায় প্রাক্তন, বলতে বোঝায় যারা কোন স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞানার্জন করে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং নিজের দায়িত্ববোধ থেকে অর্জিত জ্ঞান সমাজ বিনির্মানের মাধ্যমে দেশের উন্নতি সাধনের জন্য ব্যবহার করছে। অ্যাসোসিয়েশন (অংংড়পরধঃরড়হ) অর্থাৎ সংঘ বা সংগঠন হল কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্য নিয়ে কিছু সংঘবদ্ধ মানুষের আইন-কানুন মেনে একত্রিত হওয়া। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন হলো কোন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন যা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কমন প্লাটফর্ম তৈরি করে, ভাতৃত্ব এবং একতা সুদৃঢ় করে, প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে দায়িত্ব তা পালন করা। প্রয়োজনীয় সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজসমূহ সম্পাদন এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা করা।

অষঁসহঁং শব্দটি খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে রোমান আইনে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শব্দ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন গুরুগৃহে অবস্থান করে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে ‘অ্যালামনাই বলা হতো। সেকালে এই একটিমাত্র অর্থ প্রকাশের জন্যই শব্দটি ব্যবহৃত হতো। নবম শতকের প্রথম দিকে ধষঁসহর শব্দটির অর্থ বিবর্তিত হয়ে এর অর্থ হয়ে যায় প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ১০৮৮ সালে একটি ছাত্র সংগঠন সংস্থা ইতালির বোলোনিয়া শহরে বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠাকালের ভিত্তিতে মরক্কোর ফেজ শহরে অবস্থিত আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় বলা হলেও ডিগ্রি এবং উচ্চশিক্ষা প্রদানের ভিত্তিতে ইতালির বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরবর্তীতে ইউরোপে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বল্প পরিসরে একটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে। ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায়, বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনই বিশ্বের প্রথম অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এরপর ইংল্যান্ডে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আধুনিক অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়।

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যথার্থ গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ৬৪ তম সভার সুপারিশক্রমে ২৪ আগস্ট, ২০২১ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৮৪ তম সভায় বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং এর মাধ্যমেই বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

অ্যালামনাইদের অংশগ্রহণে আগামী ২৮ নভেম্বর একটি প্রাণোচ্ছল পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে, স্বপ্নযাত্রার সফল একটি আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এ আমাদের আশা নয়, বিশ্বাস। আজ আমাদের নতুন পথ চলার শুরু, আপনিও আমাদের এক স্বপ্নসারথি।

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রতিষ্ঠানের অংশ, এটি ফেলে আসা প্রতিষ্ঠানের সবাই শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট স্থান করে দেয় যাতে করে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে দায়, তা শোধ করার সামান্য সুযোগটুকু পায়। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রয়োজনীয়তা হলো, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে, বিপদে-আপদে সবাইকে পাশে পাওয়া এবং স্কুলের স্বার্থ রক্ষার্থে একজোট হয়ে কাজ করা। বর্তমান যুগ হচ্ছে কানেক্টিভিটির যুগ। যার সঙ্গে যত বেশি মানুষের জানাশোনা তার তত বেশি কানেক্টিভিটি এবং বিপদেআপদে সাহায্য করারও মানুষ বেশি। তাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হলো, সবাই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন করা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষতা সাধনে এবং এর মানকে উন্নত ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একটা বড় ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। অ্যালামনাইয়ের অনুজ সদস্যরা অগ্রজদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়, তাদের সাহচর্য ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে নিজেকে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সমাজ, দেশ ও বিশ্বব্যাপী অ্যালামনাইয়ের আনুভূমিক, সমান্তরাল ও খাঁড়া যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ে, কাছে থেকে দূরে সম্পর্কের বন্ধন মজবুত হয়। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাপী এই সুসম্পর্কের জাল বিস্তৃত হয় এবং বিশ্বমানব এর সুফল উপভোগ করে। যে সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন মজবুত ও কার্যকর, সে সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক প্রভাব বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন শুধুমাত্র বিএসএমএমইউ-সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রদান ও আধুনিকীকরণ-সংক্রান্ত বিষয়ে উৎকর্ষতা সাধনই নয়, বরং অক্সনিয়ানদের মতো বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক প্রভাব রাখবে সে প্রত্যাশা করি। ইতোমধ্যেই বিএসএমএমইউর অ্যালামনাই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিশ্বমানবের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের কাছে তার ডাটাবেজ নাই। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আরো সংগঠিত হয়ে কাজ করলে অদূর ভবিষ্যতে একটা ডাটাবেজ তৈরি করে তার হালনাগাদ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব।

[লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অ্যালামনাই

শারফুদ্দিন আহমেদ

রোববার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯৮ সালে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক প্রচেষ্টায় তৎকালীন আইপিজিএমএন্ডআর একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। শুরুর পর থেকে পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিশ্ববিদ্যালয় শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে উত্তীর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, তা ২০২১ সাল পর্যন্ত ছিল অনুপস্থিত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক প্রচেষ্টা হয়েছে এই ২৩ বছর। কিন্তু জোরালো কোন প্রচেষ্টা যে হয়নি তার জ্বলন্ত প্রমাণ হল শুরু হবার প্রথম ২৩ বছরেও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন না হওয়া। আমি দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাকিং বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করি। এরই ফলশ্রুতিতে র‌্যাকিং প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রয়োজনীয়তার অনুভব করি।

অ্যালামনাই (অষঁসহর), যার বাংলা দাঁড়ায় প্রাক্তন, বলতে বোঝায় যারা কোন স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞানার্জন করে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং নিজের দায়িত্ববোধ থেকে অর্জিত জ্ঞান সমাজ বিনির্মানের মাধ্যমে দেশের উন্নতি সাধনের জন্য ব্যবহার করছে। অ্যাসোসিয়েশন (অংংড়পরধঃরড়হ) অর্থাৎ সংঘ বা সংগঠন হল কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্য নিয়ে কিছু সংঘবদ্ধ মানুষের আইন-কানুন মেনে একত্রিত হওয়া। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন হলো কোন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন যা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কমন প্লাটফর্ম তৈরি করে, ভাতৃত্ব এবং একতা সুদৃঢ় করে, প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে দায়িত্ব তা পালন করা। প্রয়োজনীয় সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজসমূহ সম্পাদন এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা করা।

অষঁসহঁং শব্দটি খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে রোমান আইনে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শব্দ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন গুরুগৃহে অবস্থান করে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে ‘অ্যালামনাই বলা হতো। সেকালে এই একটিমাত্র অর্থ প্রকাশের জন্যই শব্দটি ব্যবহৃত হতো। নবম শতকের প্রথম দিকে ধষঁসহর শব্দটির অর্থ বিবর্তিত হয়ে এর অর্থ হয়ে যায় প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ১০৮৮ সালে একটি ছাত্র সংগঠন সংস্থা ইতালির বোলোনিয়া শহরে বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠাকালের ভিত্তিতে মরক্কোর ফেজ শহরে অবস্থিত আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় বলা হলেও ডিগ্রি এবং উচ্চশিক্ষা প্রদানের ভিত্তিতে ইতালির বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরবর্তীতে ইউরোপে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বল্প পরিসরে একটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করে। ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায়, বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনই বিশ্বের প্রথম অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এরপর ইংল্যান্ডে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আধুনিক অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়।

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যথার্থ গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ৬৪ তম সভার সুপারিশক্রমে ২৪ আগস্ট, ২০২১ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৮৪ তম সভায় বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং এর মাধ্যমেই বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

অ্যালামনাইদের অংশগ্রহণে আগামী ২৮ নভেম্বর একটি প্রাণোচ্ছল পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে, স্বপ্নযাত্রার সফল একটি আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এ আমাদের আশা নয়, বিশ্বাস। আজ আমাদের নতুন পথ চলার শুরু, আপনিও আমাদের এক স্বপ্নসারথি।

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রতিষ্ঠানের অংশ, এটি ফেলে আসা প্রতিষ্ঠানের সবাই শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট স্থান করে দেয় যাতে করে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে দায়, তা শোধ করার সামান্য সুযোগটুকু পায়। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রয়োজনীয়তা হলো, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে, বিপদে-আপদে সবাইকে পাশে পাওয়া এবং স্কুলের স্বার্থ রক্ষার্থে একজোট হয়ে কাজ করা। বর্তমান যুগ হচ্ছে কানেক্টিভিটির যুগ। যার সঙ্গে যত বেশি মানুষের জানাশোনা তার তত বেশি কানেক্টিভিটি এবং বিপদেআপদে সাহায্য করারও মানুষ বেশি। তাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হলো, সবাই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন করা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষতা সাধনে এবং এর মানকে উন্নত ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একটা বড় ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। অ্যালামনাইয়ের অনুজ সদস্যরা অগ্রজদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়, তাদের সাহচর্য ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে নিজেকে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সমাজ, দেশ ও বিশ্বব্যাপী অ্যালামনাইয়ের আনুভূমিক, সমান্তরাল ও খাঁড়া যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ে, কাছে থেকে দূরে সম্পর্কের বন্ধন মজবুত হয়। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাপী এই সুসম্পর্কের জাল বিস্তৃত হয় এবং বিশ্বমানব এর সুফল উপভোগ করে। যে সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন মজবুত ও কার্যকর, সে সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক প্রভাব বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন শুধুমাত্র বিএসএমএমইউ-সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রদান ও আধুনিকীকরণ-সংক্রান্ত বিষয়ে উৎকর্ষতা সাধনই নয়, বরং অক্সনিয়ানদের মতো বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক প্রভাব রাখবে সে প্রত্যাশা করি। ইতোমধ্যেই বিএসএমএমইউর অ্যালামনাই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিশ্বমানবের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের কাছে তার ডাটাবেজ নাই। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আরো সংগঠিত হয়ে কাজ করলে অদূর ভবিষ্যতে একটা ডাটাবেজ তৈরি করে তার হালনাগাদ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব।

[লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top