alt

উপ-সম্পাদকীয়

অপ্রিয় সত্য কথা

রহমান মৃধা

: বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

আমরা যারা সমালোচনা করি আমাদের তেমন কোনো যোগ্যতা নেই, তবে যাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করি সেই আলোচিত বা সমালোচিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন। তারা এলিট গুণমানসম্পন্ন এবং সুনামধারী জন এবং গণপ্রতিনিধি, যারা মুরুব্বিদের বিশেষ আশীর্বাদে সমাজ তথা অভাগা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং লালন করছেন। অতএব সমালোচিত হতে বহু যোগ্যতার দরকার, যা বাংলাদেশের অনেক মানুষের রয়েছে- সেই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

সদ্য বাংলাদেশ ভ্রমণ করে ফিরেছেন একজন আমেরিকা প্রবাসী; তিনি ফ্লোরিডার বাসিন্দা। আমি তার বাংলাদেশ ভ্রমণ সম্পর্কে কিছুটা অবগত ছিলাম। তাকে একটি টেক্সট মেসেজ দিয়ে রেখেছিলাম যেন সময় করে আমাকে নক করে। কিছুক্ষণ যেতেই ভদ্রলোক ফোন করেছেন, জিজ্ঞাসা করলাম বাংলাদেশ কেমন লেগেছে। বললেন এখনও কিছুটা অসুস্থ, শরীরে জ্বর নেই তবে বেশ কাশি, কাশির সঙ্গে বেশ অস্বস্তিকর পরিবেশ মনের মধ্যে দোল দিচ্ছে। কথায় বেশ বিষণ্ন মনে হলো, সঙ্গে বেশ অনুশোচনা করছেন কেন তিনি রীতিমতো মাস্ক ব্যবহার করেননি রাস্তা-ঘাটে চলাকালীন!

আমি জিজ্ঞেস করলাম পোস্ট কোভিড হয়েছে কিনা? উত্তরে বললেন না, ধুলো এবং বাকি সব আবর্জনা একসঙ্গে পাউডার হয়ে নাকে ঢুকেছে। যার ফলে আমি এখনও কিছুটা অসুস্থ তবে আশা করছি সত্বর সুস্থ হয়ে উঠবো। ভদ্রলোক বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে পুরো ঘটনাটি জানালেন দেশের শহরগুলোর পরিবেশ। ভদ্রলোক সম্ভবত ঢাকা, দিনাজপুর, যশোর ঘুরেছেন জানতে পারলাম। তার বর্ণনায় বাংলাদেশের দূষণ কিছুটা ভিন্ন বিশ্বের অন্যন্য দূষিত দেশগুলোর তুলনায়।

ভদ্রলোক গুছিয়ে গাছিয়ে কথাগুলো বললেন- আমি নিস্তব্ধ নীরবে তার কথাগুলো শুনলাম এবং আমার ভাবনায় আবারও দোলা দিয়ে গেল উপরের কথাগুলো। নাকের ভেতর দিয়ে যখন ফুসফুসে ঢুকছে তার মানে তখন সেটা সরাসরি রক্তে চলে যাচ্ছে, যা নিশ্চিত খুবই ভয়ঙ্কর? ও ভালো কথা, ভদ্রলোক আমার ছোটবেলার স্কুলটির পাশ দিয়ে যেতে পথে ছোট্ট একটি ভিডিও করে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। আমি বেশ অবাক হয়ে ভাবতে শুরু করি তখন! কী ব্যাপার সে হঠাৎ বাংলাদেশে তাও আমার গ্রামের স্কুলের পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে? গাড়িত চলন্ত অবস্থায় ছবি তুলেছেন তিনি।

অপ্রিয় সত্য কথা যখন তুললেই তবে পুরোটা কেন তুললে না? নাকি ইচ্ছে করে রেখে দিয়েছ ভেবে হয়তো অন্য কেউ বাকি অংশটুকু তুলে ধরবে?

কিছুদিন আগে আমি একটি জাতীয় দৈনিকে আমার সেই স্কুলের শতবর্ষ পূর্ণ হবে ২০২৪ সালে তার ওপর একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম। ভদ্রলোক ঘটনাটি জানতেন, হয়তো সেই কারণেই যশোর থেকে ঢাকা যেতে পথে নহাটার (মাগুরা জেলাধীন) পাশ দিয়ে যাবার সময় স্কুলের দৃশ্যটি তুলে ধরেছিলেন। সেই বিষয়টি জানতেই মূলত আমি তাকে নক করেছিলাম।

আমি চল্লিশ বছর দেশ ছেড়েছি, পঁয়তাল্লিশ বছর আগে সেখানে পড়েছি। স্কুলের পাশ দিয়ে চলে গেছে ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’, ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট শেরশাহ কর্তৃক নির্মিত বাংলার সোনারগাঁও থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত সুদীর্ঘ সড়ক। ব্রিটিশ আমলে চলাচলের সুবিধা এবং ডাক বিভাগের উন্নতির উদ্দেশ্য সড়কের সংস্কার করে কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়। এ সময় এই সড়কটির নাম দেওয়া হয় ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’। ব্রিটিশ শাসনের সময়কালের সেই কাঁচা রাস্তাটি দেশ স্বাধীনের পর পাকা হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ফরিদপুর থেকে যশোর বেনাপোল হয়ে ভারতে ঢুকেছে। নহাটার পাশ দিয়ে চলমান রাস্তাটির নাম তখন ছিল ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ যা বর্তমানে আমার চাচা বীরপ্রতীক মরহুম ইয়াকুব মিয়া রোড নামে পরিচিত।

সেই ঐতিহাসিক রাস্তার পাশে বিশিষ্ট জ্ঞানতাপস ও বিদ্যোৎসাহী বাবু শরৎচন্দ্র ভট্টাচার্যের উদ্যোগে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের দান ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও অদম্য প্রচেষ্টার ফলে ১৯২৪ সালে স্থাপিত হয় নবগঙ্গা বিধৌত মাগুরা জেলার প্রত্যন্ত জনপদ নহাটায় মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের একটা উজ্জ্বল বাতিঘর নহাটা স্কুল, সেখানে আমি পড়েছি। আমার সময়ে স্কুলটিতে পাঠদান হতো একটি উন্মুক্ত পরিবেশে যা এখন ভিডিওতে দেখে মনে হলো জেলখানায় পরিণত হয়েছে। স্কুলের মধ্যে আদৌ বিশুদ্ধ আলো বাতাস প্রবেশ করে কিনা সেটাও সন্দেহ। শুনেছি দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে তবে আমেরিকান প্রবাসীর ভ্রমণের বর্ণনা আর ভিডিওটি দেখার পর মনের মাঝে ফুলে থাকা বেলুনটি মুহূর্তে চুপসে গেল! ঠিক সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পরিচিত ছেলের একটি কমেন্ট নজর কেড়ে নিল। তখন তাকে লিখলাম- তোমার একটা কমেন্ট পড়লাম। লিখেছ- ‘বাংলাদেশের বিমানবন্দরে নতুন থার্ড টার্মিনালের নকশা করেছে রোহানি বাহরিন। এই একটা মেয়ে দেশের ২৪ লাখ ইঞ্জিনিয়ারকে হারিয়ে দিয়ে গেল।’

প্রশ্ন হচ্ছে- ‘এতগুলো বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট আপনাদের, এত টাকা ভর্তুকি দিয়ে জনগণ তাদের আশা নিয়ে পড়াচ্ছে, তারা কই? তারা কী শিখল? একটা মেয়ের সমান বাংলাদেশের ২৪ লাখ ইঞ্জিনিয়ার না পরাজিত হয়ে গেল? বাংলাদেশের একটা মেগা প্রকল্পের নকশা কিংবা কারিগরিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের চুল পরিমাণ অবদান নেই। আমরা তাহলে এতদিন ধরে কী বা কাদের তৈরি করেছি? এসব ইঞ্জিনিয়ার আসলে কী কাজ করছে তাও ক্লিয়ার হওয়া উচিত।’

অপ্রিয় সত্য কথা যখন তুললেই তবে পুরোটা কেন তুললে না? নাকি ইচ্ছে করে রেখে দিয়েছ ভেবে হয়তো অন্য কেউ বাকি অংশটুকু তুলে ধরবে? এই একই প্রশ্ন যেমন এতগুলো মেডিকেল কলেজ আমাদের, এত টাকা ভর্তুকি দিয়ে জনগণ তাদের আশা নিয়ে পড়াচ্ছে। তারা কই? তারা কী শিখলো?

প্রতিদিন কারো কিছু হলেই ভারতে চিকিৎসার জন্য ধাওয়া করে- বাংলাদেশের লাখো লাখো ডাক্তার এবং শতক খানেক হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও। বাংলাদেশের একটা বড় নেতার চিকিৎসা করার মতো এসব মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের সামান্য পরিমাণ দক্ষতা নেই! তা যদি না থাকে তাহলে এতদিন ধরে আমরা কী বা কাদের তৈরি করেছি? যাই হোক তোমাকে ধন্যবাদ।

সে উত্তরে লিখেছে- ‘বাকিটা আপনি লিখেন ভাই। আমি মানুষের মাথায় প্রশ্ন এঁকে দিই, বিস্তারিত বলি না।’ তার শেষের কথাটি মনে ধরেছে।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস : জোর দিতে হবে প্রতিরোধে

ঋণ ব্যবস্থা : তেলা মাথায় ঢালো তেল, ন্যাড়া মাথায় ভাঙো বেল

বিচারকের ওপর হামলা কেন

বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার কবলে রোহিঙ্গা ইস্যু

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

বৈষম্য ঘোচাতে চাই একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনকল্যাণ

সমস্যার সূতিকাগার

ছবি

বাংলাদেশে আলু চাষে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের পথ কী?

ব্যাংক সংস্কার : কাটবে কি অন্ধকার?

ছবি

নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

রম্যগদ্য: ম্যাড় ম্যাড়ে সোনা-কাহিনী

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার

কেন এত ধ্বংস, কেন এত মৃত্যু

জলবায়ু সম্মেলন থেকে আমরা কী পেলাম

উচ্চশিক্ষায় মান বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ

ছবি

যানজট আর্থ-সামাজিক বিড়ম্বনাকে প্রকট করে তুলছে

যাচ্ছে দিন, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

ছবি

স্বপ্ন দেখতে তো ভুল নেই

ছবি

আহমদুল কবির : সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে

ইতিহাসের কাছে মানুষ কী চায়?

আর্থিক সংকট কতটা গভীর

আদিবাসী নেতাদের দেখে নেয়ার হুমকি

সম্পত্তিতে এতিম নাতি-নাতনির অংশ ও বাস্তবতা

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন তত্ত্বের শতবর্ষ

প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো বাঁচানো জরুরি

রঙ্গব্যঙ্গ : শাব্বাশ বিটিভি, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

ছবি

কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি খুব একটা পরিবর্তন হবে কি

অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা

মুজিব কি কেবলই ছবি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অপ্রিয় সত্য কথা

রহমান মৃধা

বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

আমরা যারা সমালোচনা করি আমাদের তেমন কোনো যোগ্যতা নেই, তবে যাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করি সেই আলোচিত বা সমালোচিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন। তারা এলিট গুণমানসম্পন্ন এবং সুনামধারী জন এবং গণপ্রতিনিধি, যারা মুরুব্বিদের বিশেষ আশীর্বাদে সমাজ তথা অভাগা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং লালন করছেন। অতএব সমালোচিত হতে বহু যোগ্যতার দরকার, যা বাংলাদেশের অনেক মানুষের রয়েছে- সেই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

সদ্য বাংলাদেশ ভ্রমণ করে ফিরেছেন একজন আমেরিকা প্রবাসী; তিনি ফ্লোরিডার বাসিন্দা। আমি তার বাংলাদেশ ভ্রমণ সম্পর্কে কিছুটা অবগত ছিলাম। তাকে একটি টেক্সট মেসেজ দিয়ে রেখেছিলাম যেন সময় করে আমাকে নক করে। কিছুক্ষণ যেতেই ভদ্রলোক ফোন করেছেন, জিজ্ঞাসা করলাম বাংলাদেশ কেমন লেগেছে। বললেন এখনও কিছুটা অসুস্থ, শরীরে জ্বর নেই তবে বেশ কাশি, কাশির সঙ্গে বেশ অস্বস্তিকর পরিবেশ মনের মধ্যে দোল দিচ্ছে। কথায় বেশ বিষণ্ন মনে হলো, সঙ্গে বেশ অনুশোচনা করছেন কেন তিনি রীতিমতো মাস্ক ব্যবহার করেননি রাস্তা-ঘাটে চলাকালীন!

আমি জিজ্ঞেস করলাম পোস্ট কোভিড হয়েছে কিনা? উত্তরে বললেন না, ধুলো এবং বাকি সব আবর্জনা একসঙ্গে পাউডার হয়ে নাকে ঢুকেছে। যার ফলে আমি এখনও কিছুটা অসুস্থ তবে আশা করছি সত্বর সুস্থ হয়ে উঠবো। ভদ্রলোক বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে পুরো ঘটনাটি জানালেন দেশের শহরগুলোর পরিবেশ। ভদ্রলোক সম্ভবত ঢাকা, দিনাজপুর, যশোর ঘুরেছেন জানতে পারলাম। তার বর্ণনায় বাংলাদেশের দূষণ কিছুটা ভিন্ন বিশ্বের অন্যন্য দূষিত দেশগুলোর তুলনায়।

ভদ্রলোক গুছিয়ে গাছিয়ে কথাগুলো বললেন- আমি নিস্তব্ধ নীরবে তার কথাগুলো শুনলাম এবং আমার ভাবনায় আবারও দোলা দিয়ে গেল উপরের কথাগুলো। নাকের ভেতর দিয়ে যখন ফুসফুসে ঢুকছে তার মানে তখন সেটা সরাসরি রক্তে চলে যাচ্ছে, যা নিশ্চিত খুবই ভয়ঙ্কর? ও ভালো কথা, ভদ্রলোক আমার ছোটবেলার স্কুলটির পাশ দিয়ে যেতে পথে ছোট্ট একটি ভিডিও করে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। আমি বেশ অবাক হয়ে ভাবতে শুরু করি তখন! কী ব্যাপার সে হঠাৎ বাংলাদেশে তাও আমার গ্রামের স্কুলের পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে? গাড়িত চলন্ত অবস্থায় ছবি তুলেছেন তিনি।

অপ্রিয় সত্য কথা যখন তুললেই তবে পুরোটা কেন তুললে না? নাকি ইচ্ছে করে রেখে দিয়েছ ভেবে হয়তো অন্য কেউ বাকি অংশটুকু তুলে ধরবে?

কিছুদিন আগে আমি একটি জাতীয় দৈনিকে আমার সেই স্কুলের শতবর্ষ পূর্ণ হবে ২০২৪ সালে তার ওপর একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম। ভদ্রলোক ঘটনাটি জানতেন, হয়তো সেই কারণেই যশোর থেকে ঢাকা যেতে পথে নহাটার (মাগুরা জেলাধীন) পাশ দিয়ে যাবার সময় স্কুলের দৃশ্যটি তুলে ধরেছিলেন। সেই বিষয়টি জানতেই মূলত আমি তাকে নক করেছিলাম।

আমি চল্লিশ বছর দেশ ছেড়েছি, পঁয়তাল্লিশ বছর আগে সেখানে পড়েছি। স্কুলের পাশ দিয়ে চলে গেছে ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’, ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট শেরশাহ কর্তৃক নির্মিত বাংলার সোনারগাঁও থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত সুদীর্ঘ সড়ক। ব্রিটিশ আমলে চলাচলের সুবিধা এবং ডাক বিভাগের উন্নতির উদ্দেশ্য সড়কের সংস্কার করে কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়। এ সময় এই সড়কটির নাম দেওয়া হয় ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’। ব্রিটিশ শাসনের সময়কালের সেই কাঁচা রাস্তাটি দেশ স্বাধীনের পর পাকা হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ফরিদপুর থেকে যশোর বেনাপোল হয়ে ভারতে ঢুকেছে। নহাটার পাশ দিয়ে চলমান রাস্তাটির নাম তখন ছিল ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ যা বর্তমানে আমার চাচা বীরপ্রতীক মরহুম ইয়াকুব মিয়া রোড নামে পরিচিত।

সেই ঐতিহাসিক রাস্তার পাশে বিশিষ্ট জ্ঞানতাপস ও বিদ্যোৎসাহী বাবু শরৎচন্দ্র ভট্টাচার্যের উদ্যোগে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের দান ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও অদম্য প্রচেষ্টার ফলে ১৯২৪ সালে স্থাপিত হয় নবগঙ্গা বিধৌত মাগুরা জেলার প্রত্যন্ত জনপদ নহাটায় মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের একটা উজ্জ্বল বাতিঘর নহাটা স্কুল, সেখানে আমি পড়েছি। আমার সময়ে স্কুলটিতে পাঠদান হতো একটি উন্মুক্ত পরিবেশে যা এখন ভিডিওতে দেখে মনে হলো জেলখানায় পরিণত হয়েছে। স্কুলের মধ্যে আদৌ বিশুদ্ধ আলো বাতাস প্রবেশ করে কিনা সেটাও সন্দেহ। শুনেছি দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে তবে আমেরিকান প্রবাসীর ভ্রমণের বর্ণনা আর ভিডিওটি দেখার পর মনের মাঝে ফুলে থাকা বেলুনটি মুহূর্তে চুপসে গেল! ঠিক সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পরিচিত ছেলের একটি কমেন্ট নজর কেড়ে নিল। তখন তাকে লিখলাম- তোমার একটা কমেন্ট পড়লাম। লিখেছ- ‘বাংলাদেশের বিমানবন্দরে নতুন থার্ড টার্মিনালের নকশা করেছে রোহানি বাহরিন। এই একটা মেয়ে দেশের ২৪ লাখ ইঞ্জিনিয়ারকে হারিয়ে দিয়ে গেল।’

প্রশ্ন হচ্ছে- ‘এতগুলো বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট আপনাদের, এত টাকা ভর্তুকি দিয়ে জনগণ তাদের আশা নিয়ে পড়াচ্ছে, তারা কই? তারা কী শিখল? একটা মেয়ের সমান বাংলাদেশের ২৪ লাখ ইঞ্জিনিয়ার না পরাজিত হয়ে গেল? বাংলাদেশের একটা মেগা প্রকল্পের নকশা কিংবা কারিগরিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের চুল পরিমাণ অবদান নেই। আমরা তাহলে এতদিন ধরে কী বা কাদের তৈরি করেছি? এসব ইঞ্জিনিয়ার আসলে কী কাজ করছে তাও ক্লিয়ার হওয়া উচিত।’

অপ্রিয় সত্য কথা যখন তুললেই তবে পুরোটা কেন তুললে না? নাকি ইচ্ছে করে রেখে দিয়েছ ভেবে হয়তো অন্য কেউ বাকি অংশটুকু তুলে ধরবে? এই একই প্রশ্ন যেমন এতগুলো মেডিকেল কলেজ আমাদের, এত টাকা ভর্তুকি দিয়ে জনগণ তাদের আশা নিয়ে পড়াচ্ছে। তারা কই? তারা কী শিখলো?

প্রতিদিন কারো কিছু হলেই ভারতে চিকিৎসার জন্য ধাওয়া করে- বাংলাদেশের লাখো লাখো ডাক্তার এবং শতক খানেক হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও। বাংলাদেশের একটা বড় নেতার চিকিৎসা করার মতো এসব মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের সামান্য পরিমাণ দক্ষতা নেই! তা যদি না থাকে তাহলে এতদিন ধরে আমরা কী বা কাদের তৈরি করেছি? যাই হোক তোমাকে ধন্যবাদ।

সে উত্তরে লিখেছে- ‘বাকিটা আপনি লিখেন ভাই। আমি মানুষের মাথায় প্রশ্ন এঁকে দিই, বিস্তারিত বলি না।’ তার শেষের কথাটি মনে ধরেছে।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top