alt

উপ-সম্পাদকীয়

ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন

গৌতম রায়

: শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

ভারতে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা ভোটপর্ব চলছে। এই ভোটপর্বই ভারতের আসন্ন লোকসভা ভোটের (২০২৪) আগে শেষপর্বের বড় ভোট। আগামী লোকসভা ভোটের আগে ভারতে আর বড় কোনো নির্বাচন নেই। তাই যে পাঁচটি বিধানসভার ভোটপর্ব চলছে, তাকে আগামী লোকসভার একটা সেমিফাইনাল পর্ব বললে মনে হয় না খুব একটা ভুল বলা হবে। এই সেমিফাইনালই ভারতের আগামী লোকসভা ভোটের একটা আভাস পরিষ্কার করে দেবে- এমনটাই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

২০১৪ এবং ২০১৯ পরপর দুটি লোকসভা ভোটে আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি একক গরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছে। ভারতের প্রতিটি নাগরিকের কাছে এটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন যে, আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি কি তাদের গত দুবারের সাফল্য ধরে রাখতে পারবে? যদি পারে, তবে নোতুন মন্ত্রিসভার আকার, আকৃতি কেমন হবে? নরেন্দ্র মোদিই কি শীর্ষে থাকবেন? নাকি ক্ষমতার ভরকেন্দ্র আরো অনেকটাই প্রসারিত হবে অমিত শাহের দিকে? মোদি এবং শাহ- দুজনের ভিতরে কার উপরে বিজেপির মস্তিষ্ক আরএসএসের এখনও সর্বাধিক আস্থা? ২৪ সালে মোদিকে শীর্ষে রেখেই কি ২৭ সালের ভোটের জন্য এখন থেকেই আরো জোরদার ভাবে তুলে ধরা হবে শাহ কে? নাকি বাজপেয়ীর আমলের দ্বিতীয়জন বলে সবমহলের স্বীকৃতি প্রাপ্ত লালকৃষ্ণ আদভানীকে একপ্রকার রাজনৈতিক বাণপ্রস্থে পাঠিয়ে আরএসএস বিতর্কিত মোদিকে তুলে এনেছিল, তেমনই কাউকে আবার আগামী দিনে মোদির বিকল্প হিসেবে তুলে ধরবার জন্যে আস্তিনের ভিতরে ইতোমধ্যেই লুকিয়ে রেখেছে ট্রামকার্ড সংঘ- এসব প্রশ্ন এখন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনায় উঠতে শুরু করে দিয়েছে তার স্বাভাবিক ছন্দে।

এ পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভার ভোটে যে ভারতের শাসনব্যবস্থার বর্তমান রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির দিকনির্দেশক বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে উঠে আসবে, এটা যেমন ভাববার মতো বিষয় হতে পারে না, তেমনই এই ভোট যে আগামী লোকসভা ভোটের একটা সাম্পেল সার্ভের মতো বিষয় হয়েও উঠে আসবে না- সেটাও কিন্তু হলফ করে বলা যায় না।

পাঁচটি রাজ্য- মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা আর মিজোরাম- প্রতিটি রাজ্যের ভোটের এক একটা নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে। বিধানসভা ভোটে যেসব বিষয়গুলো ভোটকে প্রভাবিত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সেখানে মুখ্য হয়ে ওঠে রাজ্যের প্রসঙ্গগুলোই। নাগরিকদের রাজ্যস্তরে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির খতিয়ান হয়ে ওঠে বিধানসভা ভোটের কালে নাগরিকদের কাছে সব থেকে বেশি বিবেচনার বিষয়। চাকরি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, শিল্প, আইনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, সাম্প্রদায়িক সুস্থিতি, কৃষি- এসবের পেছনেই কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির থেকেও রাজ্য সরকারের ভূমিকা হয়ে ওঠে নাগরিকদের কাছে অনেকবেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রের নীতির কারণ যে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে একটা বড় ভূমিকা পালন করে- বিধানসভা ভোটের সময়ে সেটা নাগরিকদের কাছে বড় বিষয় হয়ে ওঠে না।

তবু মায়া রয়ে যায়- দেশের পরিস্থিতি ব্যতিরেকে একজন সচেতন নাগরিক কখনো রাজ্যস্তরের কোনো ভোটেই নিজের ভোটদান পর্বকে প্রয়োগ না করে পারেন না। প্রশ্ন হলো, ভারতের অঙ্গ রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক সচেতনতার প্রশ্নে নাগরিক সমাজের কতখানি অংশ এমন সচেতনতা অর্জন করতে পেরেছেন? একটা সময়ে পশ্চিমবঙ্গবাসী তাদের রাজ্যের নাগরিক সচেতনতা ঘিরে বেশ গর্বিত ই ছিলেন। কিন্তু গত প্রায় এক যুগ ধরে পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির যে চালচিত্র, তাতে সেই সচেতনতা ঘিরে গর্ব করবার মতো কিছু আর অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না।

আগামী লোকসভা ভোটের আগে ভারতে আর বড় কোনো নির্বাচন নেই। তাই যে পাঁচটি বিধানসভার ভোটপর্ব চলছে, তাকে আগামী লোকসভার একটা সেমিফাইনাল পর্ব বললে মনে হয় না খুব একটা ভুল বলা হবে। এই সেমিফাইনালই ভারতের আগামী লোকসভা ভোটের একটা আভাস পরিষ্কার করে দেবে

যে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটপর্ব চলছে, তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশে পাঁচ বছর আগে জনতার রায়ে বিজেপি হেরে গিয়েছিল। কংগ্রেস সেখানে সরকার গঠন পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু তারপর ভোটে না জিতেও ক্ষমতা দখলের যে চিরকালীন রাজনীতি বিজেপি করে থাকে, সেই রাজনীতির প্রয়োগ তারা মধ্যপ্রদেশে করে। টাকার জোরে মেছোহাটার মতো বিধায়ক কেনাবেচা করে তারা মধ্যপ্রদেশে নির্বাচিত কংগ্রেস সরকারকে ক্ষমতাক্যুত করে নিজেরা ক্ষমতা দখল করে।

মধ্যপ্রদেশ বা বাজপেয়ী জামানায় ওই রাজ্য ভেঙে তৈরি ছত্তিশগড়- এখানে বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএস দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের অবাধ খেলা চালাচ্ছে। আরএসএসের সামাজিক কর্মসূচির আড়ালে প্রকৃত যে কর্মসূচি এবং কার্যক্রম সেটি খুব বেশি মাত্রায় রাজনৈতিক। যদিও তারা কখনো ই নিজেদের এই রাজনৈতিক সত্তা এবং অস্তিত্বকে স্বীকার করে না।

সামাজিক কর্মকান্ডের অসিলায় আরএসএস যে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালায় তার সবটাই উচ্চবর্ণের অভিজাত হিন্দুদের ঘিরে। নিম্নবর্গীয় শম্বুক নিধনকারী ধনুর্ধর, যুদ্ধবাজ রামকে আদর্শ হিশেবে ধরে নিয়ে তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালায় সামাজিক কাজীর্মের অসিলায়। এই গোটা কার্যক্রমেই ১৯২৫ সালে আরএসএসের জন্মলগ্ন থেকে নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের কোনো জায়গা নেই। সনাতনী বিশ্বাসে যে বর্ণাশ্রমের বিধি বিধান আছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি আরএসএস বা তার শাখা সংগঠনগুলো কিংবা তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি, সেই বিশ্বাসকেই আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক পরিমন্ডলে প্রয়োগে বিশ্বাসী। যে হিন্দু রাষ্ট্রের লক্ষ্যে তাদের সব কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে, সেই রাজনৈতিক হিন্দুরাষ্ট্রে যেমন মুসলমানসহ যে কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে তারা বরদাস্ত করতে নারাছ, তেমনই উচ্চবর্ণের অভিজাত হিন্দু, অবশ্যই তাকে রাজনৈতিক বোধে সাম্প্রদায়িক হতে হবে- এমন লোকেদের ছাড়া অন্য কাউকে বরদাস্ত করতে নারাজ। যদি কোনো উচ্চবর্ণের হিন্দু মুসলমানবিদ্বেষী না হন, ধর্মনিরপেক্ষ হন, বর্ণবিদ্বেষী না হন- তেমন মানুষকে হিন্দু বলতেও নারাজ আরএসএস-বিজেপি।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক বর্ণহিন্দুদের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল, হিন্দুরাষ্ট্রের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- এই বিষয়টাতে দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করেও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সফল হয় নি। এই অবস্থায় কৌশলগত কারণে নিম্ন বর্গীয় হিন্দুদের সামনে বর্ণান্তর ঘটিয়ে, তাদের উচ্চবর্ণে উত্তীরণের লোভ দেখাতে শুরু করে আরএসএস। গ্রামীণ ভারতের একটা বিস্তীর্ণ অংশে নিম্নবর্গীয়দের ওপর উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার অবর্ণনীয়। সামাজিক, মানসিক, আর্থিক, শারীরিক- কোন দিক থেকে যে উচ্চফর্ণের হাতে নিষ্পেষিত হতে হবে নিম্নবর্গের মানুষদের, সেই ভয়েই নিম্নবর্গীয়েরা সব সময়ে কাঁটা হয়ে থাকেন।

নিম্নবর্গীয়দের এই অসহায়তাকেই কাজে লাগায় সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসবাদী আরএসএস। নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের সামাজিক স্তরের পরিবর্তন, অর্থাৎ; তারা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সমতুল হয়ে যাবে- এই লোভ দেখিয়েই অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশে পাঁচের দশকে আরএসএস তৈরি করে নিজেদের শাখা সংগঠন, ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম।’

এই সংগঠনটির কেন্দ্রস্থল ‘রায়পুর’ এখন অবশ্য ছত্তিশগড়ে অবস্থিত। তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে, উচ্চবর্ণে উত্তীরণের অসত্য প্রলোভন দেখিয়ে গোটা মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়জুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের যে আস্ফালন, সেটিরই প্রায়োগিক দিক আমরা দেখেছিলাম গুজরাট গণহত্যাতে। গুজরাট গণহত্যার আগে ভারতে আরএসএস সংগঠিত যত দাঙ্গা হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই উচ্চবর্ণের হিন্দুরা হত্যা করেছে মুসলমানদের। তাদের সম্পত্তি লুটতরাজ করেছে। নারীর সম্ভ্রম লুটেছে। কিন্তু গুজরাট গণহত্যায় সেই কৌশল প্রয়োগ করে নি সঙ্ঘ। সেখানে মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয় মদতে গণহত্যা চালাতে তারা ব্যবহার করেছে তাদের এই শাখা সংগঠন ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রমকে’। নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের দিয়ে গুজরাটে মুসলমানদের ওপরে নারকীয় তান্ডব চালায় হিন্দুত্ববাদীরা।

আরএসএসের কাছে নিজেদের অন্যতম শক্তিশালী শাখা সংগঠন, যার মাধ্যমে তারা তাদের কৌশলগত অদলবদল টিকে প্রয়োগ করে রাষ্ট্রশক্তি অদখলের পথে অনেকখানি সাফল্য পেয়েছে, সেই সংগঠনের বিস্তৃতি তে দুটি রাজ্যে, সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে- সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তিশগড়ে, গত পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত বিধানসভার ভোটেও এই চেষ্টাই গোটা হিন্দুত্ববাদী শিবির চালিয়েছিল। দুটোর একটাতেও মানুষের ভোটে তারা সফল হয়নি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভোটে না জেতা বিজেপি, যেভাবে ভোটের পরে জেতে, সেভাবেই মধ্যপ্রদেশের নির্বাচিত কংগ্রেস সরকারকে বিধায়ক কেনা বেচার ভিতর দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে। তবে ছত্তিশগড়ে যেহেতু যথেষ্ট গরিষ্ঠতা কংগ্রেস দলের ছিল, তাই বহু চেষ্টা করেও সেখানে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলে বিজেপি সফল হয়নি।

তবে চলতি নির্বাচন পর্বে বিজেপিকে হারাবার প্রশ্নে পাঁচটি রাজ্যেই কংগ্রেস দল যথেষ্ট রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় রাখতে পারেনি। বিজেপি বিরোধী সার্বিক বিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে কংগ্রেস দলের ভূমিকাও যথেষ্ট সংশয়ী। এই দলটি নির্বাচনী সংগ্রামে অন্য দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে এখনও এমন মানসিকতার পরিচয় দেয়, যেন তারা কেন্দ্রে একক গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আছে। জোট রাজনীতির প্রশ্নে যে দাদাগিরির পরিচয় কংগ্রেস এই পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে রেখেছে, তা যেমন এই ভোটে একটা প্রভাব ফেলবে, তেমন ই আগামী লোকসভা ভোটেও (২৪) আসন সমঝোতার প্রশ্নে একটা প্রভাব ফেলতে পারে।

বামেদের সঙ্গে এই পাঁচটি রাজ্যের ভোটে আসন সমঝোতার প্রশ্নে এতটুকু রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় কংগ্রেস রাখে নি। রাজস্থানে যে যে আসনে বামেদের শক্তি আছে, তারা জিতেছেন সেখান থেকে একাধিকবার, সেসব আসনেও সমঝোতার প্রশ্নে যে ভূমিকা কংগ্রেস রেখেছে, বিজেপি বিরোধী ভোট একত্রিত করবার প্রশ্নে তা কখনই ইতিবাচক বার্তা দেবে না।

পাশাপাশি আর একটা কথা বলতেই হয়, বিজেপি উগ্র সাম্প্রদায়িক অবস্থানের মোকাবিলায় কংগ্রেস প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছে না। ধর্মান্ধ রাজনীতির মোকাবিলায় নরম সাম্প্রদায়িকতার পথে হাঁটা অনেক দিন ধরেই শুরু করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে, বিশেষ করে গুজরাট বিধানসভার ভোটে যেভাবে নরম সাম্প্রদায়িকতার পথে একাধিকবার কংগ্রেস হেঁটেছিল তা কংগ্রেসকে সাফল্য এনে দেওয়া তো দূরের কথা, বিজেপিকেই আরো শক্তি জুগিয়েছে।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন

গৌতম রায়

শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

ভারতে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা ভোটপর্ব চলছে। এই ভোটপর্বই ভারতের আসন্ন লোকসভা ভোটের (২০২৪) আগে শেষপর্বের বড় ভোট। আগামী লোকসভা ভোটের আগে ভারতে আর বড় কোনো নির্বাচন নেই। তাই যে পাঁচটি বিধানসভার ভোটপর্ব চলছে, তাকে আগামী লোকসভার একটা সেমিফাইনাল পর্ব বললে মনে হয় না খুব একটা ভুল বলা হবে। এই সেমিফাইনালই ভারতের আগামী লোকসভা ভোটের একটা আভাস পরিষ্কার করে দেবে- এমনটাই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

২০১৪ এবং ২০১৯ পরপর দুটি লোকসভা ভোটে আরএসএসের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি একক গরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছে। ভারতের প্রতিটি নাগরিকের কাছে এটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন যে, আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি কি তাদের গত দুবারের সাফল্য ধরে রাখতে পারবে? যদি পারে, তবে নোতুন মন্ত্রিসভার আকার, আকৃতি কেমন হবে? নরেন্দ্র মোদিই কি শীর্ষে থাকবেন? নাকি ক্ষমতার ভরকেন্দ্র আরো অনেকটাই প্রসারিত হবে অমিত শাহের দিকে? মোদি এবং শাহ- দুজনের ভিতরে কার উপরে বিজেপির মস্তিষ্ক আরএসএসের এখনও সর্বাধিক আস্থা? ২৪ সালে মোদিকে শীর্ষে রেখেই কি ২৭ সালের ভোটের জন্য এখন থেকেই আরো জোরদার ভাবে তুলে ধরা হবে শাহ কে? নাকি বাজপেয়ীর আমলের দ্বিতীয়জন বলে সবমহলের স্বীকৃতি প্রাপ্ত লালকৃষ্ণ আদভানীকে একপ্রকার রাজনৈতিক বাণপ্রস্থে পাঠিয়ে আরএসএস বিতর্কিত মোদিকে তুলে এনেছিল, তেমনই কাউকে আবার আগামী দিনে মোদির বিকল্প হিসেবে তুলে ধরবার জন্যে আস্তিনের ভিতরে ইতোমধ্যেই লুকিয়ে রেখেছে ট্রামকার্ড সংঘ- এসব প্রশ্ন এখন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনায় উঠতে শুরু করে দিয়েছে তার স্বাভাবিক ছন্দে।

এ পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভার ভোটে যে ভারতের শাসনব্যবস্থার বর্তমান রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির দিকনির্দেশক বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে উঠে আসবে, এটা যেমন ভাববার মতো বিষয় হতে পারে না, তেমনই এই ভোট যে আগামী লোকসভা ভোটের একটা সাম্পেল সার্ভের মতো বিষয় হয়েও উঠে আসবে না- সেটাও কিন্তু হলফ করে বলা যায় না।

পাঁচটি রাজ্য- মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা আর মিজোরাম- প্রতিটি রাজ্যের ভোটের এক একটা নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে। বিধানসভা ভোটে যেসব বিষয়গুলো ভোটকে প্রভাবিত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সেখানে মুখ্য হয়ে ওঠে রাজ্যের প্রসঙ্গগুলোই। নাগরিকদের রাজ্যস্তরে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির খতিয়ান হয়ে ওঠে বিধানসভা ভোটের কালে নাগরিকদের কাছে সব থেকে বেশি বিবেচনার বিষয়। চাকরি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, শিল্প, আইনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, সাম্প্রদায়িক সুস্থিতি, কৃষি- এসবের পেছনেই কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির থেকেও রাজ্য সরকারের ভূমিকা হয়ে ওঠে নাগরিকদের কাছে অনেকবেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রের নীতির কারণ যে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে একটা বড় ভূমিকা পালন করে- বিধানসভা ভোটের সময়ে সেটা নাগরিকদের কাছে বড় বিষয় হয়ে ওঠে না।

তবু মায়া রয়ে যায়- দেশের পরিস্থিতি ব্যতিরেকে একজন সচেতন নাগরিক কখনো রাজ্যস্তরের কোনো ভোটেই নিজের ভোটদান পর্বকে প্রয়োগ না করে পারেন না। প্রশ্ন হলো, ভারতের অঙ্গ রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক সচেতনতার প্রশ্নে নাগরিক সমাজের কতখানি অংশ এমন সচেতনতা অর্জন করতে পেরেছেন? একটা সময়ে পশ্চিমবঙ্গবাসী তাদের রাজ্যের নাগরিক সচেতনতা ঘিরে বেশ গর্বিত ই ছিলেন। কিন্তু গত প্রায় এক যুগ ধরে পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির যে চালচিত্র, তাতে সেই সচেতনতা ঘিরে গর্ব করবার মতো কিছু আর অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না।

আগামী লোকসভা ভোটের আগে ভারতে আর বড় কোনো নির্বাচন নেই। তাই যে পাঁচটি বিধানসভার ভোটপর্ব চলছে, তাকে আগামী লোকসভার একটা সেমিফাইনাল পর্ব বললে মনে হয় না খুব একটা ভুল বলা হবে। এই সেমিফাইনালই ভারতের আগামী লোকসভা ভোটের একটা আভাস পরিষ্কার করে দেবে

যে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটপর্ব চলছে, তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশে পাঁচ বছর আগে জনতার রায়ে বিজেপি হেরে গিয়েছিল। কংগ্রেস সেখানে সরকার গঠন পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু তারপর ভোটে না জিতেও ক্ষমতা দখলের যে চিরকালীন রাজনীতি বিজেপি করে থাকে, সেই রাজনীতির প্রয়োগ তারা মধ্যপ্রদেশে করে। টাকার জোরে মেছোহাটার মতো বিধায়ক কেনাবেচা করে তারা মধ্যপ্রদেশে নির্বাচিত কংগ্রেস সরকারকে ক্ষমতাক্যুত করে নিজেরা ক্ষমতা দখল করে।

মধ্যপ্রদেশ বা বাজপেয়ী জামানায় ওই রাজ্য ভেঙে তৈরি ছত্তিশগড়- এখানে বিজেপির মূল মস্তিষ্ক আরএসএস দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের অবাধ খেলা চালাচ্ছে। আরএসএসের সামাজিক কর্মসূচির আড়ালে প্রকৃত যে কর্মসূচি এবং কার্যক্রম সেটি খুব বেশি মাত্রায় রাজনৈতিক। যদিও তারা কখনো ই নিজেদের এই রাজনৈতিক সত্তা এবং অস্তিত্বকে স্বীকার করে না।

সামাজিক কর্মকান্ডের অসিলায় আরএসএস যে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালায় তার সবটাই উচ্চবর্ণের অভিজাত হিন্দুদের ঘিরে। নিম্নবর্গীয় শম্বুক নিধনকারী ধনুর্ধর, যুদ্ধবাজ রামকে আদর্শ হিশেবে ধরে নিয়ে তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালায় সামাজিক কাজীর্মের অসিলায়। এই গোটা কার্যক্রমেই ১৯২৫ সালে আরএসএসের জন্মলগ্ন থেকে নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের কোনো জায়গা নেই। সনাতনী বিশ্বাসে যে বর্ণাশ্রমের বিধি বিধান আছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি আরএসএস বা তার শাখা সংগঠনগুলো কিংবা তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি, সেই বিশ্বাসকেই আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক পরিমন্ডলে প্রয়োগে বিশ্বাসী। যে হিন্দু রাষ্ট্রের লক্ষ্যে তাদের সব কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে, সেই রাজনৈতিক হিন্দুরাষ্ট্রে যেমন মুসলমানসহ যে কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে তারা বরদাস্ত করতে নারাছ, তেমনই উচ্চবর্ণের অভিজাত হিন্দু, অবশ্যই তাকে রাজনৈতিক বোধে সাম্প্রদায়িক হতে হবে- এমন লোকেদের ছাড়া অন্য কাউকে বরদাস্ত করতে নারাজ। যদি কোনো উচ্চবর্ণের হিন্দু মুসলমানবিদ্বেষী না হন, ধর্মনিরপেক্ষ হন, বর্ণবিদ্বেষী না হন- তেমন মানুষকে হিন্দু বলতেও নারাজ আরএসএস-বিজেপি।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক বর্ণহিন্দুদের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল, হিন্দুরাষ্ট্রের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- এই বিষয়টাতে দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করেও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সফল হয় নি। এই অবস্থায় কৌশলগত কারণে নিম্ন বর্গীয় হিন্দুদের সামনে বর্ণান্তর ঘটিয়ে, তাদের উচ্চবর্ণে উত্তীরণের লোভ দেখাতে শুরু করে আরএসএস। গ্রামীণ ভারতের একটা বিস্তীর্ণ অংশে নিম্নবর্গীয়দের ওপর উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার অবর্ণনীয়। সামাজিক, মানসিক, আর্থিক, শারীরিক- কোন দিক থেকে যে উচ্চফর্ণের হাতে নিষ্পেষিত হতে হবে নিম্নবর্গের মানুষদের, সেই ভয়েই নিম্নবর্গীয়েরা সব সময়ে কাঁটা হয়ে থাকেন।

নিম্নবর্গীয়দের এই অসহায়তাকেই কাজে লাগায় সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসবাদী আরএসএস। নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের সামাজিক স্তরের পরিবর্তন, অর্থাৎ; তারা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সমতুল হয়ে যাবে- এই লোভ দেখিয়েই অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশে পাঁচের দশকে আরএসএস তৈরি করে নিজেদের শাখা সংগঠন, ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম।’

এই সংগঠনটির কেন্দ্রস্থল ‘রায়পুর’ এখন অবশ্য ছত্তিশগড়ে অবস্থিত। তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে, উচ্চবর্ণে উত্তীরণের অসত্য প্রলোভন দেখিয়ে গোটা মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়জুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের যে আস্ফালন, সেটিরই প্রায়োগিক দিক আমরা দেখেছিলাম গুজরাট গণহত্যাতে। গুজরাট গণহত্যার আগে ভারতে আরএসএস সংগঠিত যত দাঙ্গা হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই উচ্চবর্ণের হিন্দুরা হত্যা করেছে মুসলমানদের। তাদের সম্পত্তি লুটতরাজ করেছে। নারীর সম্ভ্রম লুটেছে। কিন্তু গুজরাট গণহত্যায় সেই কৌশল প্রয়োগ করে নি সঙ্ঘ। সেখানে মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয় মদতে গণহত্যা চালাতে তারা ব্যবহার করেছে তাদের এই শাখা সংগঠন ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রমকে’। নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের দিয়ে গুজরাটে মুসলমানদের ওপরে নারকীয় তান্ডব চালায় হিন্দুত্ববাদীরা।

আরএসএসের কাছে নিজেদের অন্যতম শক্তিশালী শাখা সংগঠন, যার মাধ্যমে তারা তাদের কৌশলগত অদলবদল টিকে প্রয়োগ করে রাষ্ট্রশক্তি অদখলের পথে অনেকখানি সাফল্য পেয়েছে, সেই সংগঠনের বিস্তৃতি তে দুটি রাজ্যে, সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে- সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তিশগড়ে, গত পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত বিধানসভার ভোটেও এই চেষ্টাই গোটা হিন্দুত্ববাদী শিবির চালিয়েছিল। দুটোর একটাতেও মানুষের ভোটে তারা সফল হয়নি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভোটে না জেতা বিজেপি, যেভাবে ভোটের পরে জেতে, সেভাবেই মধ্যপ্রদেশের নির্বাচিত কংগ্রেস সরকারকে বিধায়ক কেনা বেচার ভিতর দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে। তবে ছত্তিশগড়ে যেহেতু যথেষ্ট গরিষ্ঠতা কংগ্রেস দলের ছিল, তাই বহু চেষ্টা করেও সেখানে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলে বিজেপি সফল হয়নি।

তবে চলতি নির্বাচন পর্বে বিজেপিকে হারাবার প্রশ্নে পাঁচটি রাজ্যেই কংগ্রেস দল যথেষ্ট রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় রাখতে পারেনি। বিজেপি বিরোধী সার্বিক বিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে কংগ্রেস দলের ভূমিকাও যথেষ্ট সংশয়ী। এই দলটি নির্বাচনী সংগ্রামে অন্য দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে এখনও এমন মানসিকতার পরিচয় দেয়, যেন তারা কেন্দ্রে একক গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আছে। জোট রাজনীতির প্রশ্নে যে দাদাগিরির পরিচয় কংগ্রেস এই পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে রেখেছে, তা যেমন এই ভোটে একটা প্রভাব ফেলবে, তেমন ই আগামী লোকসভা ভোটেও (২৪) আসন সমঝোতার প্রশ্নে একটা প্রভাব ফেলতে পারে।

বামেদের সঙ্গে এই পাঁচটি রাজ্যের ভোটে আসন সমঝোতার প্রশ্নে এতটুকু রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় কংগ্রেস রাখে নি। রাজস্থানে যে যে আসনে বামেদের শক্তি আছে, তারা জিতেছেন সেখান থেকে একাধিকবার, সেসব আসনেও সমঝোতার প্রশ্নে যে ভূমিকা কংগ্রেস রেখেছে, বিজেপি বিরোধী ভোট একত্রিত করবার প্রশ্নে তা কখনই ইতিবাচক বার্তা দেবে না।

পাশাপাশি আর একটা কথা বলতেই হয়, বিজেপি উগ্র সাম্প্রদায়িক অবস্থানের মোকাবিলায় কংগ্রেস প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছে না। ধর্মান্ধ রাজনীতির মোকাবিলায় নরম সাম্প্রদায়িকতার পথে হাঁটা অনেক দিন ধরেই শুরু করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে, বিশেষ করে গুজরাট বিধানসভার ভোটে যেভাবে নরম সাম্প্রদায়িকতার পথে একাধিকবার কংগ্রেস হেঁটেছিল তা কংগ্রেসকে সাফল্য এনে দেওয়া তো দূরের কথা, বিজেপিকেই আরো শক্তি জুগিয়েছে।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

back to top