বিজয়ের মাস
সাদেকুর রহমান
একাত্তরের ৩ ডিসেম্বরের দৃশ্যপট ছিল, মুক্তিবাহিনীর উপর্যুপরি হামলায় পাকিস্তানি হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মাসের শুরুর দিক থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল- মুক্তির পথে বাংলাদেশ। দেশের প্রায় সব স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসকান্ড, নির্যাতন বাড়িয়ে দিল। এছাড়া এদিন মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে জোট বাঁধে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা হয়তো এমন ধারণা পোষণ করেন যে, যুদ্ধে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমর্থন থাকায় তারা যা খুশি তা করতে পারে। বাঙালির সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ তারা করেছেন, সে একই আচরণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহানুভূতি পাওয়ার রাস্তাটা বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান নিজেরাই। নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম নিক্সন একাধিক পত্রে ইয়াহিয়া খানকে জানিয়ে দেন, পাকিস্তানের ‘অখন্ডতা’ রক্ষা যদি পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়, তবে সে মহৎ কাজ করতে গিয়ে তো প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করা কখনোই গ্রাহ্য হতে পারে না।
ওই সময়কার মার্কিন কূটনৈতিক দলিল ঘাঁটলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, পাকিস্তানি শাসকরা অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, অবন্তীপুর, উত্তরেলি, জোধপুর, আম্বালা ও আগ্রায় বিমান ক্ষেত্রগুলোতে বোমাবর্ষণ করে ব্যাপক হামলা না চালালে হয়তো যুদ্ধ এড়ানো যেত। একাত্তরে ডিসেম্বরের তৃতীয় দিনে প্রকাশ্য দিবালোকে এ হামলা চালানো হয়।
বিকেল ৫টা ৯ মিনিটে পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় কাশ্মীরের শ্রীনগর ও অনন্তপুরের উদ্দেশ্যে এবং সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি মিরেজ বিমান উড়ে যায় অমৃতসর ও পাঠানকোটের দিকে। দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে প্রেরিত হয় ভারতীয় ভূখন্ডের গভীরে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই আক্রমণে। ভারতের ওপর পাকিস্তান বাহিনীর এই হামলা পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে ১১টায় ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের উপর পাল্টা হামলা চালায়।
যদিও এদিন পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডকে জানান যে, কাশ্মীর থেকে রহিম ইয়ার খান পর্যন্ত এলাকা ভারতীয় বিমানবাহিনী দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে। ইয়াহিয়া আরো জানান, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মরক্ষার্থে চার দফা বিমান হামলা চালিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি জঙ্গিবিমান উড়ে গিয়ে যে ভারতের বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে সে কথা ইয়াহিয়া খুব কায়দা করে চেপে যান।
বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তান সংক্ষিপ্ত এক বিশেষ সংবাদ প্রচার করে, “ভারত পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে আক্রমণ শুরু করেছে। বিস্তারিত খবর এখনো আসছে।”
ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে যখন পাকিস্তান অতর্কিত বিমান-হামলা চালাচ্ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন। যত দ্রুত সম্ভব তিনি দিল্লী প্রত্যাবর্তন করেন। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর মধ্যরাতের কিছু পরে বেতার বক্তৃতায় তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, “এতদিন ধরে বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে।” তিনি দেশবাসীকে চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য তৈরি হওয়ার আহ্বান জানান।
ভারতও এর জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাবস্থা’ ঘোষণা করে এবং তাদের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে। ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনী সম্মিলিতভাবে পূর্ব সীমান্তে অভিযান শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের হানাদার অবস্থান গুলোকে ঘিরে ফেলার প্রচেষ্টায় সীমান্তের সাতটি এলাকা দিয়ে প্রচন্ড আক্রমণ পরিচালনা করে।
এদিকে, ৩ ডিসেম্বরের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠন। রণাঙ্গনে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধারা। ভিন্নমাত্রা পায় বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় যৌথ কমান্ডের সম্মুখযুদ্ধ।
যদিও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা একাত্তরের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ সংঘটিত হতে যাচ্ছে বলে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। অবিশ্বাস আর সন্দেহ থেকে পাকিস্তান ভারতের ওপর আক্রমণ করলে সে সুযোগ তারা নিয়েছে। শোষিত-বঞ্চিত বাঙালিকে সহযোগিতার পাশাপাশি পাশাপাশি পাকিস্তানের বাড়াবাড়ির দাঁতভাঙা জবাব দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠে ভারত। তারপরই মূলত মুক্তিযুদ্ধ নতুন গতি পায়। পাকিস্তানিদের পক্ষে তখন সেই মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় অনিবার্য হয়ে উঠে।
এদিন ভারতীয় সেনাবাহিনী চারদিক থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। নবম ডিভিশন এগোতে থাকে গরিবপুর, জগন্নাথপুর হয়ে যশোর-ঢাকা মহাসড়কের দিকে। চতুর্থ ডিভিশন মেহেরপুরকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জের দিকে। বিংশতম ডিভিশন তার দায়িত্ব দু’ভাবে বিভক্ত করে নেয়। একটি অংশ থাকে দিনাজপুরের হিলির হানাদার ঘাঁটি মোকাবিলার জন্য, আরেকটি অংশ হিলিকে উত্তরে রেখে এগিয়ে চলে সামনে। এভাবে নানা ডিভিশনে বিভক্ত হয়ে হানাদার বাহিনীকে চারদিক থেকে কার্যত ঘেরাও করে ফেলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
‘চরমপত্র’খ্যাত এম আর আখতার মুকুল তার ‘চল্লিশ থেকে একাত্তর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন পাকিস্তানের বিমান বাহিনী হঠাৎ করে একযোগে ভারতের ছ’টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা করলে দ্রুত যুদ্ধের ব্যাপ্তি লাভ করে এবং ঢাকার আকাশেও শুরু হয় বিমান-যুদ্ধ।”
মফিদুল হক তার ‘জেনোসাইড নিছক গণহত্যা নয়’ শীর্ষক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, “৩ ডিসেম্বর ভারত-পাক যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতা অর্জন করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী এবং জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। এই সম্মিলিত আক্রমণ প্রতিরোধে নিয়াজীর যুদ্ধ-পরিকল্পনা ছিল খুবই দুর্বল। পাকিস্তানিরা অস্থির হয়ে ছিল মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের ভয়ে। কোনো বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করলে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সংহতি আরো বাড়বে এবং প্রবাসে গঠিত বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত হয়ে উঠবে- এটা ছিল পাকিস্তানিদের আশঙ্কা। তাই তারা ছড়িয়েছিল গোটা সীমান্তজুড়ে। আর ছড়ানো-ছিটানো এসব পাকবাহিনীকে পাশ কাটিয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন করে এগোবার পন্থা অবলম্বন করেছিল ভারতীয় বাহিনী। বাংলাদেশ যুদ্ধের ময়দানে ‘বীরত্বের’ খেলাটি জমে উঠল ৩ ডিসেম্বরের পর থেকে। একে একে পাকবাহিনীর ঘাঁটিগুলোর পতন হতে থাকে এবং পশ্চাদগামী পাকবাহিনী সাধারণ বাঙালিদের ঘৃণা ও প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে থাকে।”
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত তথ্যভান্ডার থেকে প্রাপ্ত বর্ণনা মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অবস্থা এতাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে উপায়ান্তর না দেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে তারা ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক রূপ দেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ বলে চালিয়ে দিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা আদায় করতে।
পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) এর সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিষ্প্রদীপ ব্যবস্থা পালনের নির্দেশ দেয়।
ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং নয়াদিল্লিতে পার্লামেন্টে বলেন, বাংলদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ করার ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ভারত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী আগমনে ও ভারত সীমান্তে পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে ভারতের নিরাপত্তা বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছে।
৪র্থ ও ১০ম বেঙ্গল ফেনী থেকে অগ্রসর হয়ে রেজুমিয়া সেতুতে উপস্থিত হয়। ১নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন মাহফুজ তার বাহিনী নিয়ে অপর বাহিনীর সঙ্গে একত্র হয়। ফেনী-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়ে এই যৌথবাহিনীর একটি কলাম ডান দিকে মুহুরি নদী ধরে এবং অপর কলাম বাম দিকে সড়ক ধরে চট্টগ্রামের দিকে এগোতে থাকে।
মাসের শুরুর দিক থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল- মুক্তির পথে বাংলাদেশ। দেশের প্রায় সব স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল
এদিকে এদিন বাংলাদেশে ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর একদল চৌকস বীর মুক্তিযোদ্ধা মধ্যরাত থেকে অ্যাকশন শুরু করে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে গিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন শত্রুঘাঁটির ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করে। এদের প্রধান লক্ষ্য ছিল অবশ্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম। ঢাকা ছিল পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতেই ছিল তাদের জঙ্গি বিমানগুলো।
রাত নয়টার দিকে একটি অটার বিমান নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুজন চৌকস অফিসার- ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট শামসুল আলম ও ক্যাপ্টেন আকরাম (স্বাধীনতার পর দু’জনই সাহসিকতার জন্য বীরউত্তম খেতাব পান) দু’জন গানার নিয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল জ্বালানি সংরক্ষণাগারে একের পর এক রকেট নিক্ষেপ করে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে দেয়। সাত ঘণ্টা সফল অভিযান চালিয়ে বিমান নিয়ে ভারতের কৈলা শহর বিমানবন্দরে ফিরে যায় তারা।
ঘন কুয়াশার মধ্যে উড্ডয়ন বিপজ্জনক হলেও দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট বদরুল আলম (স্বাধীনতার পর এ দু’জনও সাহসিকতার জন্য বীরউত্তম খেতাব পান) আরেকটি ‘অ্যালুয়েট’ যুদ্ধ বিমান নিয়ে চট্টগ্রামের জ্বালানি সংরক্ষণাগারে উপর্যুপরি বোমা বর্ষণ করে ধ্বংস করে দেয়। অকস্মাৎ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হামলায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও চট্টগ্রামের ফুয়েল পাম্প ধ্বংস হয়ে গেলে মনোবলে চিড় ধরে উর্দুভাষী দখলদারদের।
এদিন তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে যে কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেবে তারা।
এদিকে সংশ্লিষ্ট জেলা তথ্য বাতায়ন থেকে জানা যায়, অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা এদিন ভোররাতে উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৎকালীন দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা (বর্তমানে জেলা) এবং দুপুর বারোটার দিকে উপকূলীয় জনপদ বরগুনাকে শত্রু মুক্ত করেন।
[ লেখক : সমন্বয়ক ও গবেষক, ‘প্রবাসে প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন ]
বিজয়ের মাস
সাদেকুর রহমান
শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩
একাত্তরের ৩ ডিসেম্বরের দৃশ্যপট ছিল, মুক্তিবাহিনীর উপর্যুপরি হামলায় পাকিস্তানি হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মাসের শুরুর দিক থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল- মুক্তির পথে বাংলাদেশ। দেশের প্রায় সব স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসকান্ড, নির্যাতন বাড়িয়ে দিল। এছাড়া এদিন মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে জোট বাঁধে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা হয়তো এমন ধারণা পোষণ করেন যে, যুদ্ধে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমর্থন থাকায় তারা যা খুশি তা করতে পারে। বাঙালির সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ তারা করেছেন, সে একই আচরণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহানুভূতি পাওয়ার রাস্তাটা বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান নিজেরাই। নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম নিক্সন একাধিক পত্রে ইয়াহিয়া খানকে জানিয়ে দেন, পাকিস্তানের ‘অখন্ডতা’ রক্ষা যদি পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়, তবে সে মহৎ কাজ করতে গিয়ে তো প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করা কখনোই গ্রাহ্য হতে পারে না।
ওই সময়কার মার্কিন কূটনৈতিক দলিল ঘাঁটলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, পাকিস্তানি শাসকরা অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, অবন্তীপুর, উত্তরেলি, জোধপুর, আম্বালা ও আগ্রায় বিমান ক্ষেত্রগুলোতে বোমাবর্ষণ করে ব্যাপক হামলা না চালালে হয়তো যুদ্ধ এড়ানো যেত। একাত্তরে ডিসেম্বরের তৃতীয় দিনে প্রকাশ্য দিবালোকে এ হামলা চালানো হয়।
বিকেল ৫টা ৯ মিনিটে পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় কাশ্মীরের শ্রীনগর ও অনন্তপুরের উদ্দেশ্যে এবং সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি মিরেজ বিমান উড়ে যায় অমৃতসর ও পাঠানকোটের দিকে। দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে প্রেরিত হয় ভারতীয় ভূখন্ডের গভীরে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই আক্রমণে। ভারতের ওপর পাকিস্তান বাহিনীর এই হামলা পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে ১১টায় ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের উপর পাল্টা হামলা চালায়।
যদিও এদিন পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডকে জানান যে, কাশ্মীর থেকে রহিম ইয়ার খান পর্যন্ত এলাকা ভারতীয় বিমানবাহিনী দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে। ইয়াহিয়া আরো জানান, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মরক্ষার্থে চার দফা বিমান হামলা চালিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি জঙ্গিবিমান উড়ে গিয়ে যে ভারতের বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে সে কথা ইয়াহিয়া খুব কায়দা করে চেপে যান।
বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তান সংক্ষিপ্ত এক বিশেষ সংবাদ প্রচার করে, “ভারত পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে আক্রমণ শুরু করেছে। বিস্তারিত খবর এখনো আসছে।”
ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে যখন পাকিস্তান অতর্কিত বিমান-হামলা চালাচ্ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন। যত দ্রুত সম্ভব তিনি দিল্লী প্রত্যাবর্তন করেন। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর মধ্যরাতের কিছু পরে বেতার বক্তৃতায় তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, “এতদিন ধরে বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে।” তিনি দেশবাসীকে চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য তৈরি হওয়ার আহ্বান জানান।
ভারতও এর জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাবস্থা’ ঘোষণা করে এবং তাদের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে। ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনী সম্মিলিতভাবে পূর্ব সীমান্তে অভিযান শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের হানাদার অবস্থান গুলোকে ঘিরে ফেলার প্রচেষ্টায় সীমান্তের সাতটি এলাকা দিয়ে প্রচন্ড আক্রমণ পরিচালনা করে।
এদিকে, ৩ ডিসেম্বরের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠন। রণাঙ্গনে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধারা। ভিন্নমাত্রা পায় বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় যৌথ কমান্ডের সম্মুখযুদ্ধ।
যদিও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা একাত্তরের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ সংঘটিত হতে যাচ্ছে বলে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। অবিশ্বাস আর সন্দেহ থেকে পাকিস্তান ভারতের ওপর আক্রমণ করলে সে সুযোগ তারা নিয়েছে। শোষিত-বঞ্চিত বাঙালিকে সহযোগিতার পাশাপাশি পাশাপাশি পাকিস্তানের বাড়াবাড়ির দাঁতভাঙা জবাব দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠে ভারত। তারপরই মূলত মুক্তিযুদ্ধ নতুন গতি পায়। পাকিস্তানিদের পক্ষে তখন সেই মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় অনিবার্য হয়ে উঠে।
এদিন ভারতীয় সেনাবাহিনী চারদিক থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। নবম ডিভিশন এগোতে থাকে গরিবপুর, জগন্নাথপুর হয়ে যশোর-ঢাকা মহাসড়কের দিকে। চতুর্থ ডিভিশন মেহেরপুরকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জের দিকে। বিংশতম ডিভিশন তার দায়িত্ব দু’ভাবে বিভক্ত করে নেয়। একটি অংশ থাকে দিনাজপুরের হিলির হানাদার ঘাঁটি মোকাবিলার জন্য, আরেকটি অংশ হিলিকে উত্তরে রেখে এগিয়ে চলে সামনে। এভাবে নানা ডিভিশনে বিভক্ত হয়ে হানাদার বাহিনীকে চারদিক থেকে কার্যত ঘেরাও করে ফেলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
‘চরমপত্র’খ্যাত এম আর আখতার মুকুল তার ‘চল্লিশ থেকে একাত্তর’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন পাকিস্তানের বিমান বাহিনী হঠাৎ করে একযোগে ভারতের ছ’টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা করলে দ্রুত যুদ্ধের ব্যাপ্তি লাভ করে এবং ঢাকার আকাশেও শুরু হয় বিমান-যুদ্ধ।”
মফিদুল হক তার ‘জেনোসাইড নিছক গণহত্যা নয়’ শীর্ষক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, “৩ ডিসেম্বর ভারত-পাক যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতা অর্জন করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী এবং জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। এই সম্মিলিত আক্রমণ প্রতিরোধে নিয়াজীর যুদ্ধ-পরিকল্পনা ছিল খুবই দুর্বল। পাকিস্তানিরা অস্থির হয়ে ছিল মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের ভয়ে। কোনো বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করলে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সংহতি আরো বাড়বে এবং প্রবাসে গঠিত বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত হয়ে উঠবে- এটা ছিল পাকিস্তানিদের আশঙ্কা। তাই তারা ছড়িয়েছিল গোটা সীমান্তজুড়ে। আর ছড়ানো-ছিটানো এসব পাকবাহিনীকে পাশ কাটিয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন করে এগোবার পন্থা অবলম্বন করেছিল ভারতীয় বাহিনী। বাংলাদেশ যুদ্ধের ময়দানে ‘বীরত্বের’ খেলাটি জমে উঠল ৩ ডিসেম্বরের পর থেকে। একে একে পাকবাহিনীর ঘাঁটিগুলোর পতন হতে থাকে এবং পশ্চাদগামী পাকবাহিনী সাধারণ বাঙালিদের ঘৃণা ও প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে থাকে।”
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত তথ্যভান্ডার থেকে প্রাপ্ত বর্ণনা মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অবস্থা এতাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে উপায়ান্তর না দেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে তারা ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক রূপ দেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ বলে চালিয়ে দিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা আদায় করতে।
পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) এর সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিষ্প্রদীপ ব্যবস্থা পালনের নির্দেশ দেয়।
ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং নয়াদিল্লিতে পার্লামেন্টে বলেন, বাংলদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ করার ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ভারত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী আগমনে ও ভারত সীমান্তে পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে ভারতের নিরাপত্তা বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছে।
৪র্থ ও ১০ম বেঙ্গল ফেনী থেকে অগ্রসর হয়ে রেজুমিয়া সেতুতে উপস্থিত হয়। ১নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন মাহফুজ তার বাহিনী নিয়ে অপর বাহিনীর সঙ্গে একত্র হয়। ফেনী-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়ে এই যৌথবাহিনীর একটি কলাম ডান দিকে মুহুরি নদী ধরে এবং অপর কলাম বাম দিকে সড়ক ধরে চট্টগ্রামের দিকে এগোতে থাকে।
মাসের শুরুর দিক থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল- মুক্তির পথে বাংলাদেশ। দেশের প্রায় সব স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল
এদিকে এদিন বাংলাদেশে ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর একদল চৌকস বীর মুক্তিযোদ্ধা মধ্যরাত থেকে অ্যাকশন শুরু করে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে গিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন শত্রুঘাঁটির ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করে। এদের প্রধান লক্ষ্য ছিল অবশ্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম। ঢাকা ছিল পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতেই ছিল তাদের জঙ্গি বিমানগুলো।
রাত নয়টার দিকে একটি অটার বিমান নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুজন চৌকস অফিসার- ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট শামসুল আলম ও ক্যাপ্টেন আকরাম (স্বাধীনতার পর দু’জনই সাহসিকতার জন্য বীরউত্তম খেতাব পান) দু’জন গানার নিয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল জ্বালানি সংরক্ষণাগারে একের পর এক রকেট নিক্ষেপ করে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে দেয়। সাত ঘণ্টা সফল অভিযান চালিয়ে বিমান নিয়ে ভারতের কৈলা শহর বিমানবন্দরে ফিরে যায় তারা।
ঘন কুয়াশার মধ্যে উড্ডয়ন বিপজ্জনক হলেও দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট বদরুল আলম (স্বাধীনতার পর এ দু’জনও সাহসিকতার জন্য বীরউত্তম খেতাব পান) আরেকটি ‘অ্যালুয়েট’ যুদ্ধ বিমান নিয়ে চট্টগ্রামের জ্বালানি সংরক্ষণাগারে উপর্যুপরি বোমা বর্ষণ করে ধ্বংস করে দেয়। অকস্মাৎ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হামলায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও চট্টগ্রামের ফুয়েল পাম্প ধ্বংস হয়ে গেলে মনোবলে চিড় ধরে উর্দুভাষী দখলদারদের।
এদিন তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে যে কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেবে তারা।
এদিকে সংশ্লিষ্ট জেলা তথ্য বাতায়ন থেকে জানা যায়, অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা এদিন ভোররাতে উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৎকালীন দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা (বর্তমানে জেলা) এবং দুপুর বারোটার দিকে উপকূলীয় জনপদ বরগুনাকে শত্রু মুক্ত করেন।
[ লেখক : সমন্বয়ক ও গবেষক, ‘প্রবাসে প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন ]