মিথুশিলাক মুরমু
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ আগামী ৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। তথ্যানুযায়ী, অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে চারজন আদিবাসী এবং ১৬ জন সংখ্যালঘু চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। বিশেষত চারজন আদিবাসীদের মধ্যে একজন ময়মনসিংহ-১ থেকে জুয়েল আরেং, খাগড়াছড়ি থেকে কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা, রাঙামাটি থেকে দীপংকর তালুকদার এবং বান্দরবান থেকে বীর বাহাদুর উশৈসিং নির্বাচনী টিকেট পেয়েছেন। এই চারজনই একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সংখ্যালঘু ১৬ জনের মধ্যে- রমেশ চন্দ্র সেন (ঠাকুরগাঁও-১), মনোরঞ্জন শীল গোপাল (দিনাজপুর-১), তুষার কান্তি মন্ডল (রংপুর-৩), সৌমিত্র পান্ডে (কুড়িগ্রাম-৩), সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), সৌরেন্দনাথ চক্রবর্তী (নওগাঁ-৩), স্বপন ভট্টাচার্য (যশোর-৫), বীরেন শিকদার (মাগুরা-২), ননী গোপাল মন্ডল (খুলনা-১), নারায়ণচন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (বরগুনা ১), কানাইলাল বিশ্বাস (পিরোজপুর-২), অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোণা-৩), মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সিগঞ্জ-৩), রঞ্জিত চন্দ্র সরকার (সুনামগঞ্জ ১) এবং প্রাণ গোপাল দত্ত (কুমিল্লা ৭)। এবারের নির্বাচনে ১০ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি। তারা হলেন- প্রদীপ মৃধা (রাজশাহী-১), বিপ্লব কুমার রাম (নাটোর-৪), চন্দন চক্রবর্তী (ঝিনাইদহ-২), সুজিত মল্লিক (খুলনা-৫), সিদ্ধার্থ মন্ডল (পিরোজপুর-২) রনজিত কুমার হাওলাদার (পিরোজপুর-৩), রতন সরকার (ময়মনসিংহ-৭), নন্দন শেঠ (কিশোরগঞ্জ-৫), ধীমন বড়ুয়া (কুমিল্লা-১), শ্যামল বিশ্বাস (চট্টগ্রাম-৮)। জাতীয় পার্টি থেকে ৩ জন চূড়ান্ত হয়েছেন- রঞ্জিত কুমার বাড়ৈ (বরিশাল-২) কাজল চন্দ্র মহন্ত (ময়মনসিংহ-১), সাজন কুমার মিস্ত্রী (বাগেরহাট-৩)। একাদশতম নির্বাচনে ২ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিল। লিবারেল ইসলামিক জোট থেকে ট্রান্সজেন্ডার উর্মিকে (গাজীপুর ৫) এবার মনোনয়ন প্রদান করেছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি থেকে কোনো আদিবাসী প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়নি। দ্বাদশ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত চুয়াল্লিশটি দলের মধ্যে বিএনপি ও তার সমমনা বেশ কয়েকটি দল ইতোমধ্যেই জানিয়েছে এবারের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না। বাকি দলগুলো নিজ নিজ দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ সম্পন্ন করেছে এবং নির্বাচন প্রচারাভিযানে মাঠে-ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। বড় রাজনৈতিক দল কিংবা ক্ষুদ্র দলগুলোর আদিবাসী প্রার্থিতার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে যে, আদিবাসীদের প্রার্থিতা বিষয়ে উদাসীনতা, উপেক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ বারংবার একই জায়গা থেকে আদিবাসী প্রার্থিতা দিয়েছে কিন্তু উত্তরবঙ্গের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা থেকে কখনোই দেয়ার মনোভাব পোষণ করেনি। দ্বাদশ নির্বাচনে রাজশাহী-১ আসন থেকে অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু এবং ময়মনসিংহ থেকে অ্যাডভোকেট সুজন হাজং মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল একবারের জন্যও উত্তরবঙ্গের রাজশাহীর কথা বিবেচনা করেনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের প্রতি উপেক্ষার নীতি এখনো সক্রিয় রয়েছে। দেশের অর্ধশতাধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ৫০ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশ সমতল অঞ্চলে বাসবাসরত। বাকি ২৫ শতাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাতে রয়েছে। সমতলের মধ্যে রাজশাহী-১ তানোর-গোদাগাড়ী উপজেলায় বেশির ভাগ আদিবাসীর বসবাস। এই আসন থেকেই ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট থেকে প্রয়াত সাগরাম হাঁসদা (মাজহী) নির্বাচিত হয়েছিলেন। উত্তরবঙ্গ থেকে স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু। স্বতন্ত্র কিংবা ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে কালেভাদ্রে আদিবাসীদের দাঁড়ানো প্রার্থীর তালিকাকে দীর্ঘায়িত করেছে বৈকি! স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের নারী সংরক্ষিত আসনেও আজ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের আদিবাসীরা উপেক্ষিত হয়ে আসছে। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আরোহিত হলে কলেজ শিক্ষক এথিন রাখাইনকে সংরক্ষিত নারী আসন ৩০ থেকে এবং ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে সংরক্ষিত নারী আসন ৭ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে চাকমা জাতিগোষ্ঠী থেকে বাসন্তী চাকমা সংরক্ষিত নারী আসন ৯ থেকে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৫টি নারী সংরক্ষিত আসনের একটিতে সুদীপ্তা দেওয়ান নির্বাচিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ সরাসরি নির্বাচনে কিংবা সংরক্ষিত আসনেও উত্তরবঙ্গের আদিবাসীরা বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে আসছে। যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের সুখ-দুঃখের কথা দেশবাসীকে অবহিত করার সুযোগ দেয়া জরুরি। আদিবাসীঅধ্যুষিত নির্বাচনী আসন থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও কদাচিৎ আদিবাসীদের হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো শোনার সুযোগ গ্রহণ করে থাকেন। রাস্তাঘাট, অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও আদিবাসীদের নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বিগ্নতা বেড়েই চলেছে। আজ পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সংসদ সদস্যরাও দেশের সরকারপ্রধানের কাছে আদিবাসীদের হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো পৌঁছাতে পারেনি। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংসদ সদস্য, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সংসদ সদস্য কিংবা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যও আদিবাসীদের বিষয়ে রহস্যজনক নীরবতা পালন করে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে যেন কথা বলে সেই আশা করি। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল আদিবাসীদের বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করবে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জন্য ভূমি কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে। নাগরিক হিসেবে আদিবাসীদের নিরাপদে ভোটদানের নিশ্চয়তা দেয়া খুবই জরুরি।
[লেখক : কলামিস্ট]
মিথুশিলাক মুরমু
বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ আগামী ৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। তথ্যানুযায়ী, অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে চারজন আদিবাসী এবং ১৬ জন সংখ্যালঘু চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। বিশেষত চারজন আদিবাসীদের মধ্যে একজন ময়মনসিংহ-১ থেকে জুয়েল আরেং, খাগড়াছড়ি থেকে কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা, রাঙামাটি থেকে দীপংকর তালুকদার এবং বান্দরবান থেকে বীর বাহাদুর উশৈসিং নির্বাচনী টিকেট পেয়েছেন। এই চারজনই একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সংখ্যালঘু ১৬ জনের মধ্যে- রমেশ চন্দ্র সেন (ঠাকুরগাঁও-১), মনোরঞ্জন শীল গোপাল (দিনাজপুর-১), তুষার কান্তি মন্ডল (রংপুর-৩), সৌমিত্র পান্ডে (কুড়িগ্রাম-৩), সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), সৌরেন্দনাথ চক্রবর্তী (নওগাঁ-৩), স্বপন ভট্টাচার্য (যশোর-৫), বীরেন শিকদার (মাগুরা-২), ননী গোপাল মন্ডল (খুলনা-১), নারায়ণচন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (বরগুনা ১), কানাইলাল বিশ্বাস (পিরোজপুর-২), অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোণা-৩), মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সিগঞ্জ-৩), রঞ্জিত চন্দ্র সরকার (সুনামগঞ্জ ১) এবং প্রাণ গোপাল দত্ত (কুমিল্লা ৭)। এবারের নির্বাচনে ১০ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি। তারা হলেন- প্রদীপ মৃধা (রাজশাহী-১), বিপ্লব কুমার রাম (নাটোর-৪), চন্দন চক্রবর্তী (ঝিনাইদহ-২), সুজিত মল্লিক (খুলনা-৫), সিদ্ধার্থ মন্ডল (পিরোজপুর-২) রনজিত কুমার হাওলাদার (পিরোজপুর-৩), রতন সরকার (ময়মনসিংহ-৭), নন্দন শেঠ (কিশোরগঞ্জ-৫), ধীমন বড়ুয়া (কুমিল্লা-১), শ্যামল বিশ্বাস (চট্টগ্রাম-৮)। জাতীয় পার্টি থেকে ৩ জন চূড়ান্ত হয়েছেন- রঞ্জিত কুমার বাড়ৈ (বরিশাল-২) কাজল চন্দ্র মহন্ত (ময়মনসিংহ-১), সাজন কুমার মিস্ত্রী (বাগেরহাট-৩)। একাদশতম নির্বাচনে ২ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিল। লিবারেল ইসলামিক জোট থেকে ট্রান্সজেন্ডার উর্মিকে (গাজীপুর ৫) এবার মনোনয়ন প্রদান করেছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি থেকে কোনো আদিবাসী প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়নি। দ্বাদশ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত চুয়াল্লিশটি দলের মধ্যে বিএনপি ও তার সমমনা বেশ কয়েকটি দল ইতোমধ্যেই জানিয়েছে এবারের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না। বাকি দলগুলো নিজ নিজ দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ সম্পন্ন করেছে এবং নির্বাচন প্রচারাভিযানে মাঠে-ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। বড় রাজনৈতিক দল কিংবা ক্ষুদ্র দলগুলোর আদিবাসী প্রার্থিতার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে যে, আদিবাসীদের প্রার্থিতা বিষয়ে উদাসীনতা, উপেক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ বারংবার একই জায়গা থেকে আদিবাসী প্রার্থিতা দিয়েছে কিন্তু উত্তরবঙ্গের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা থেকে কখনোই দেয়ার মনোভাব পোষণ করেনি। দ্বাদশ নির্বাচনে রাজশাহী-১ আসন থেকে অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু এবং ময়মনসিংহ থেকে অ্যাডভোকেট সুজন হাজং মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল একবারের জন্যও উত্তরবঙ্গের রাজশাহীর কথা বিবেচনা করেনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের প্রতি উপেক্ষার নীতি এখনো সক্রিয় রয়েছে। দেশের অর্ধশতাধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ৫০ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশ সমতল অঞ্চলে বাসবাসরত। বাকি ২৫ শতাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাতে রয়েছে। সমতলের মধ্যে রাজশাহী-১ তানোর-গোদাগাড়ী উপজেলায় বেশির ভাগ আদিবাসীর বসবাস। এই আসন থেকেই ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট থেকে প্রয়াত সাগরাম হাঁসদা (মাজহী) নির্বাচিত হয়েছিলেন। উত্তরবঙ্গ থেকে স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু। স্বতন্ত্র কিংবা ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে কালেভাদ্রে আদিবাসীদের দাঁড়ানো প্রার্থীর তালিকাকে দীর্ঘায়িত করেছে বৈকি! স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের নারী সংরক্ষিত আসনেও আজ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের আদিবাসীরা উপেক্ষিত হয়ে আসছে। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আরোহিত হলে কলেজ শিক্ষক এথিন রাখাইনকে সংরক্ষিত নারী আসন ৩০ থেকে এবং ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে সংরক্ষিত নারী আসন ৭ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে চাকমা জাতিগোষ্ঠী থেকে বাসন্তী চাকমা সংরক্ষিত নারী আসন ৯ থেকে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৫টি নারী সংরক্ষিত আসনের একটিতে সুদীপ্তা দেওয়ান নির্বাচিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ সরাসরি নির্বাচনে কিংবা সংরক্ষিত আসনেও উত্তরবঙ্গের আদিবাসীরা বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে আসছে। যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের সুখ-দুঃখের কথা দেশবাসীকে অবহিত করার সুযোগ দেয়া জরুরি। আদিবাসীঅধ্যুষিত নির্বাচনী আসন থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও কদাচিৎ আদিবাসীদের হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো শোনার সুযোগ গ্রহণ করে থাকেন। রাস্তাঘাট, অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও আদিবাসীদের নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বিগ্নতা বেড়েই চলেছে। আজ পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সংসদ সদস্যরাও দেশের সরকারপ্রধানের কাছে আদিবাসীদের হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো পৌঁছাতে পারেনি। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংসদ সদস্য, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সংসদ সদস্য কিংবা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যও আদিবাসীদের বিষয়ে রহস্যজনক নীরবতা পালন করে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে যেন কথা বলে সেই আশা করি। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল আদিবাসীদের বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করবে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জন্য ভূমি কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে। নাগরিক হিসেবে আদিবাসীদের নিরাপদে ভোটদানের নিশ্চয়তা দেয়া খুবই জরুরি।
[লেখক : কলামিস্ট]