alt

উপ-সম্পাদকীয়

মধুরতম ভাষা ও রক্তাক্ত বাংলা

মোস্তাফা জব্বার

: মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ভাষার ইতিহাস অনেক পুরনো। অনেকের মতে প্রায় এক লাখ বছর আগে মানুষ প্রথম ভাষার ব্যবহার শুরু করে। কালের পরিক্রমায় অনেক ভাষা হারিয়ে গেছে, অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। যখন একটি ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হয়Ñ বিশেষজ্ঞরা সেটিকে বিপন্ন ভাষা বলে থাকেন।

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি লোকের বাস। এই ৭০০ কোটি মানুষ এখন সাড়ে ছয় হাজারের বেশি ভাষায় কথা বলে। বিবর্তন এবং বিকাশের ফলে বছরের পর বছর ধরে ভাষা গুলোর বেশ পরিবর্তন হয়েছে। কেবল স্থানীয়দের মধ্যে এগুলো সীমাবদ্ধ থাকেনি। জনপ্রিয় এবং সৌন্দর্য অনুযায়ী মানুষ এখন তাদের পছন্দের বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে, বিভিন্ন ভাষা শিখে থাকে।

বিশ্বের ৫টি মিষ্টি ভাষা সম্পর্কে এবার জেনে নেয়া যাকÑ

বাংলা : বাংলা সংস্কৃতি থেকে আগত একটি ভাষা। বিশ্বের সকল ভাষার মধ্যে বাংলা সবচেয়ে মধুর ভাষা হিসেবে স্থান পেয়েছে। পূর্ব ভারতের কিছু অংশে (পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা) এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রধানত বাংলা বলা হয়। বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মাতৃভাষা। ভাষা পরিবর্তনশীল, দিনে দিনে বিকশিত হয়। প্রায় ১৩০০ বছরের দীর্ঘ বিবর্তনে বাংলা ভাষার সাথে যোগ হয়েছে অনেক স্থানীয় এবং বিদেশি শব্দ। স্থানভেদে উচ্চারণ শৈলীতে সামান্য পার্থক্য থাকলেও মূল উপভাষা মূলত একই থাকে। সরল উচ্চারণ, সহজে আবেগ প্রকাশ করা যায় বলে বাংলার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। আমরা বাংলার জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি। বাঙালি তার জাতীয়তাবাধ, ভাষা এবং সংস্কৃতি এমন ভাবে ধারণ করেছে সারা পৃথিবী এখন কেবল এটিকে স্বীকৃতি দেয়নি সম্মানও করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে বিশে^র ১৮৮ দেশে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিেেসবে পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির জন্য আমরা অনেক আগেই আবেদন করেছি।

২০১০ সালে ইউনেস্কোর একদল ভাষা বিজ্ঞানী দীর্ঘ গবেষণার পর বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। এখন পর্যন্ত বাংলা তার অবস্থান ধরে রেখেছে। যে ভাষাতে রবীন্দ্রনাথ নজরুল লিখেছে সে ভাষা এত সহজে হারিয়ে যাবার নয়।

স্প্যানিশ : মধুর ভাষার বিবেচনায় স্প্যানিস দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ল্যাটিন, গ্রিক এবং আরবি ভাষাসহ একাধিক ভাষা থেকে স্প্যানিশ ভাষা উদ্ভূত হয়েছে। রোমান ভাষার মধ্যে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা। স্পেনের কাস্টিল অঞ্চলে উৎপত্তি হওয়ার কারণে এটি কাস্টিলিয়ান ভাষা নামেও পরিচিত। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশের অফিসিয়াল ভাষাগুলোর এটি একটি এবং বিশ্বের দ্বিতীয় মিষ্টি ভাষা হিসেবে স্থান পেয়েছে স্প্যানিশ ভাষা।

ডাচ : মধুর ভাষার হিসেবে তৃতীয় স্থান ডেনিসের। পুরনো ফ্রাঙ্কিশ উপভাষা থেকে ডাচ ভাষা উদ্ভূত হয়েছে। পশ্চিম জার্মানিক ভাষা, জার্মান এবং ইংরেজির নিকটতম ভাষা এটি। ইয়ট, ব্র্যান্ডি, স্পুক, ডক, স্টুপ ইত্যাদি ইংরেজি শব্দভান্ডারের অনেক শব্দ ডাচ থেকে এসেছে। এটি নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের কিছু অংশে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হয়। ডাচ তিনটি ভাষায় লিপিবদ্ধ রয়েছে- ওল্ড ডাচ, মিডল ডাচ এবং স্ট্যান্ডার্ডাইজড বা আধুনিক ডাচ।

ফরাসি : স্প্যানিশের মতো ফরাসিও একটি রোমান্স ভাষা। এটি গ্যালো-রোম্যান্স থেকে বিকশিত হয়েছে যা গল, বিশেষ করে উত্তর গলে কথিত ভাষা ছিল। প্রাথমিকভাবে রোমান সাম্রাজ্যের অমার্জিত ল্যাটিন থেকে এসেছে। ফরাসি ইংরেজি ভাষাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ফরাসি ৫টি ভিন্ন দেশের ২৫টি দেশের একটি অফিসিয়াল ভাষা এবং বিশ্বের চতুর্থ মিষ্টি ভাষা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

তামিল : বাংলার মতো তামিলও সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এটি শ্রীলঙ্কা এবং সিঙ্গাপুরের সরকারি ভাষা। ভারতের তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতেও সরকারি ভাষার মর্যাদা বহন করে। তামিল ছাড়া কেরালা, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার ছোট অংশেও তামিল বলা হয়। তামিলকে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রাচীনতম ভাষাগুলোর একটি হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। এবং ৫ম মিষ্টি ভাষা হিসেবে এটি স্থান পেয়েছে। যদিও এগুলো নথিভুক্ত তথ্য, এটি কোন ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করতে পারে না এবং করা উচিত নয়।

প্রতিটি ভাষা সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং সমান সম্মান দেওয়া উচিত। প্রতিটি ভাষা তার নিজস্ব উপায়ে সুন্দর। আমাদের মনে রাখা উচিত যে প্রত্যেকের কাছে তাদের মাতৃভাষা সবচেয়ে মধুর।

আসামে বাংলা ভাষার লড়াই : আমরা মনে করি বাংলা ভাষার জন্য কেবল বাংলাদেশেই রক্ত দেয়া হয়েছে। সেটি সত্য নয়। আর ভাষা শহীদও কেবল বাংলাদেশেই হয়নি। আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল আসাম সরকারের অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। যেহেতু ঐ অঞ্চলের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল বাংলাভাষী সেহেতু পাকিস্তানের বাঙালীদের মতো আসামের বাঙালীরাও অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে রাস্তায় নামে। এই গণআন্দোলনের প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ১৯৬১ সালের ১৯ মে ঘটে, সেদিন ১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে প্রাদেশিক পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। ১৯৬০ সালের এপ্রিলে, আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে অসমীয়া ভাষাকে প্রদেশের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার একটি প্রস্তাবের সূচনা হয়। এতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অসমীয়া উত্তেজিত জনতা বাঙালি অভিবাসীদের আক্রমণ করে। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে সহিংসতা যখন উচ্চ রূপ নেয়, তখন প্রায় ৫০,০০০ বাঙালি হিন্দু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায়। অন্য ৯০,০০০ বরাক উপত্যকা ও উত্তর-পূর্বের অন্যত্র পালিয়ে যায়। ন্যায়াধীশ গোপাল মেহরোত্রার নেতৃত্বে এক ব্যক্তির একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী,কামরূপ জেলার গোরেশ্বর অঞ্চলের ২৫টি গ্রামের ৪,০১৯টি কুঁড়েঘর এবং ৫৮টি বাড়ি ধ্বংস ও আক্রমণ করা হয়; এই জেলা ছিল সহিংসতার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা। নয়জন বাঙালিকে হত্যা করা হয় এবং শতাধিক লোক আহত হয়।

১০ অক্টোবর ১৯৬০ সালের সেই সময়ের অসমের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চলিহা অসমীয়াকে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক রণেন্দ্র মোহন দাস এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ২৪ অক্টোবর প্রস্তাবটি বিধানসভায় গৃহীত হয। বরাক উপত্যকার বাঙালিদের ওপরে অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ নামক সংগঠনটির জন্ম হয়। অসম সরকারের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ১৪ এপ্রিল তারিখে শিলচর,করিমগঞ্জ আর হাইলাকান্দির লোকেরা সংকল্প দিবস পালন করেন। বরাকের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য এ পরিষদ ২৪ এপ্রিল একপক্ষ দীর্ঘ একটি পদযাত্রা শুরু করেছিল। ২ মে শেষ হওয়া এ পদযাত্রাটিতে অংশ নেওয়া সত্যাগ্রহীরা প্রায় ২০০ মাইল উপত্যকাটির গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালিয়েছিলেন। পদযাত্রার শেষে পরিষদের মুখ্যাধিকারী রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেছিলেন যে, যদি ১৩ এপ্রিল ১৯৬১ সালের ভিতর বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা না হয়, ১৯ মে তারা ব্যাপক হরতাল করবেন। ১২ মে অসম রাইফেল, মাদ্রাজ রেজিমেন্ট ও কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনী শিলচরে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছিল। ১৮ মে তে অসম পুলিশ আন্দোলনের তিনজন নেতা নলিনীকান্ত দাস, রথীন্দ্রনাথ সেন ও বিধুভূষণ চৌধুরীকে (সাপ্তাহিক যুগশক্তির সম্পাদক) গ্রেপ্তার করে।

১৯ মে শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে হরতাল ও পিকেটিং আরম্ভ হয়। করিমগঞ্জে আন্দোলনকারীরা সরকারি কার্যালয়, রেলওয়ে স্টেশন, কোর্ট ইত্যাদিতে পিকেটিং করেন। শিলচরে তারা রেলওয়ে স্টেশনে সত্যাগ্রহ করেছিলেন। বিকেল ৪টার সময়সূচির ট্রেনটির সময় পার হওয়ার পর হরতাল শেষ করার কথা ছিল। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের ট্রেনটির একটি টিকিটও বিক্রি হয়নি। সকালে হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়েছিল; কিন্তু বিকালে স্টেশনে অসম রাইফেল এসে উপস্থিত হয়। বিকাল প্রায় ২টা ৩০ মিনিটের সময় নয়জন সত্যাগ্রহীকে কাটিগোরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি ট্রাক তারাপুর স্টেশনের (বর্তমানের শিলচর রেলওয়ে স্টেশন) কাছ থেকে পার হয়ে যাচ্ছিল। পিকেটিংকারী সবাই তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে দেখে তীব্র প্রতিবাদ করেন। ভয় পেয়ে ট্রাকচালকসহ পুলিশরা বন্দীদের নিয়ে পালিয়ে যায়। এর পর কোনো অসনাক্ত লোক ট্রাকটি জ্বালিয়ে দেয়, যদিও দমকল বাহিনী এসে তৎপরতার সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তারপর প্রায ২টা ৩৫ মিনিট নাগাদ স্টেশনের সুরক্ষায় থাকা প্যারামিলিটারি বাহিনী আন্দোলনকারীদের বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে। এরপর সাত মিনিটের ভিতর তারা ১৭ রাউন্ড গুলি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চালায়। ১২ জন লোকের দেহে গুলি লেগেছিল। তাদের মধ্যে নয়জন সেদিনই নিহত হয়েছিলেন; দুজন পরে মারা যান। ২০ মে শিলচরের জনগণ শহীদদের শবদেহ নিয়ে শোক মিছিল করে প্রতিবাদ করেছিলেন। এ ঘটনার পর অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। আরও একবার বিজয়ী হয় বাংলা ভাষা। এরপর শিলচর রেলস্টেশনকে ভাষা শহীদ স্টেশন নামকরণ করা হয়। সেখানে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ। ২০১১ সালে ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শহীদ কমলা ভট্টাচার্য মূর্তি স্থাপন কমিটির পক্ষ থেকে গোপা দত্ত আইচ ছোটেলাল শেঠ ইনস্টিটিউটের প্রাঙ্গণে কমলার একটি ব্রোঞ্জের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেন।

এ আন্দোলনে যারা শহীদ হন তারা হলেনÑ কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডীচরণ সূত্রধর, হিতেশ বিশ্বাস, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, কুমুদরঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুকোমল পুরকায়স্থ এবং কমলা ভট্টাচার্য। এছাডাও আসামেই বাংলা ভাষার জন্য ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট বিজন চক্রবর্তী নামের আরো একজন শহীদ হন। অন্যদিকে ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই শহীদ হন দুজনÑ জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস। ভারতের তামিলনাড়–তে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধেও ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে।

[লেখক : সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মধুরতম ভাষা ও রক্তাক্ত বাংলা

মোস্তাফা জব্বার

মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ভাষার ইতিহাস অনেক পুরনো। অনেকের মতে প্রায় এক লাখ বছর আগে মানুষ প্রথম ভাষার ব্যবহার শুরু করে। কালের পরিক্রমায় অনেক ভাষা হারিয়ে গেছে, অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। যখন একটি ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হয়Ñ বিশেষজ্ঞরা সেটিকে বিপন্ন ভাষা বলে থাকেন।

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি লোকের বাস। এই ৭০০ কোটি মানুষ এখন সাড়ে ছয় হাজারের বেশি ভাষায় কথা বলে। বিবর্তন এবং বিকাশের ফলে বছরের পর বছর ধরে ভাষা গুলোর বেশ পরিবর্তন হয়েছে। কেবল স্থানীয়দের মধ্যে এগুলো সীমাবদ্ধ থাকেনি। জনপ্রিয় এবং সৌন্দর্য অনুযায়ী মানুষ এখন তাদের পছন্দের বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে, বিভিন্ন ভাষা শিখে থাকে।

বিশ্বের ৫টি মিষ্টি ভাষা সম্পর্কে এবার জেনে নেয়া যাকÑ

বাংলা : বাংলা সংস্কৃতি থেকে আগত একটি ভাষা। বিশ্বের সকল ভাষার মধ্যে বাংলা সবচেয়ে মধুর ভাষা হিসেবে স্থান পেয়েছে। পূর্ব ভারতের কিছু অংশে (পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা) এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রধানত বাংলা বলা হয়। বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মাতৃভাষা। ভাষা পরিবর্তনশীল, দিনে দিনে বিকশিত হয়। প্রায় ১৩০০ বছরের দীর্ঘ বিবর্তনে বাংলা ভাষার সাথে যোগ হয়েছে অনেক স্থানীয় এবং বিদেশি শব্দ। স্থানভেদে উচ্চারণ শৈলীতে সামান্য পার্থক্য থাকলেও মূল উপভাষা মূলত একই থাকে। সরল উচ্চারণ, সহজে আবেগ প্রকাশ করা যায় বলে বাংলার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। আমরা বাংলার জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি। বাঙালি তার জাতীয়তাবাধ, ভাষা এবং সংস্কৃতি এমন ভাবে ধারণ করেছে সারা পৃথিবী এখন কেবল এটিকে স্বীকৃতি দেয়নি সম্মানও করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে বিশে^র ১৮৮ দেশে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিেেসবে পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির জন্য আমরা অনেক আগেই আবেদন করেছি।

২০১০ সালে ইউনেস্কোর একদল ভাষা বিজ্ঞানী দীর্ঘ গবেষণার পর বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। এখন পর্যন্ত বাংলা তার অবস্থান ধরে রেখেছে। যে ভাষাতে রবীন্দ্রনাথ নজরুল লিখেছে সে ভাষা এত সহজে হারিয়ে যাবার নয়।

স্প্যানিশ : মধুর ভাষার বিবেচনায় স্প্যানিস দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ল্যাটিন, গ্রিক এবং আরবি ভাষাসহ একাধিক ভাষা থেকে স্প্যানিশ ভাষা উদ্ভূত হয়েছে। রোমান ভাষার মধ্যে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা। স্পেনের কাস্টিল অঞ্চলে উৎপত্তি হওয়ার কারণে এটি কাস্টিলিয়ান ভাষা নামেও পরিচিত। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশের অফিসিয়াল ভাষাগুলোর এটি একটি এবং বিশ্বের দ্বিতীয় মিষ্টি ভাষা হিসেবে স্থান পেয়েছে স্প্যানিশ ভাষা।

ডাচ : মধুর ভাষার হিসেবে তৃতীয় স্থান ডেনিসের। পুরনো ফ্রাঙ্কিশ উপভাষা থেকে ডাচ ভাষা উদ্ভূত হয়েছে। পশ্চিম জার্মানিক ভাষা, জার্মান এবং ইংরেজির নিকটতম ভাষা এটি। ইয়ট, ব্র্যান্ডি, স্পুক, ডক, স্টুপ ইত্যাদি ইংরেজি শব্দভান্ডারের অনেক শব্দ ডাচ থেকে এসেছে। এটি নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের কিছু অংশে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হয়। ডাচ তিনটি ভাষায় লিপিবদ্ধ রয়েছে- ওল্ড ডাচ, মিডল ডাচ এবং স্ট্যান্ডার্ডাইজড বা আধুনিক ডাচ।

ফরাসি : স্প্যানিশের মতো ফরাসিও একটি রোমান্স ভাষা। এটি গ্যালো-রোম্যান্স থেকে বিকশিত হয়েছে যা গল, বিশেষ করে উত্তর গলে কথিত ভাষা ছিল। প্রাথমিকভাবে রোমান সাম্রাজ্যের অমার্জিত ল্যাটিন থেকে এসেছে। ফরাসি ইংরেজি ভাষাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ফরাসি ৫টি ভিন্ন দেশের ২৫টি দেশের একটি অফিসিয়াল ভাষা এবং বিশ্বের চতুর্থ মিষ্টি ভাষা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

তামিল : বাংলার মতো তামিলও সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এটি শ্রীলঙ্কা এবং সিঙ্গাপুরের সরকারি ভাষা। ভারতের তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতেও সরকারি ভাষার মর্যাদা বহন করে। তামিল ছাড়া কেরালা, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার ছোট অংশেও তামিল বলা হয়। তামিলকে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রাচীনতম ভাষাগুলোর একটি হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। এবং ৫ম মিষ্টি ভাষা হিসেবে এটি স্থান পেয়েছে। যদিও এগুলো নথিভুক্ত তথ্য, এটি কোন ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করতে পারে না এবং করা উচিত নয়।

প্রতিটি ভাষা সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং সমান সম্মান দেওয়া উচিত। প্রতিটি ভাষা তার নিজস্ব উপায়ে সুন্দর। আমাদের মনে রাখা উচিত যে প্রত্যেকের কাছে তাদের মাতৃভাষা সবচেয়ে মধুর।

আসামে বাংলা ভাষার লড়াই : আমরা মনে করি বাংলা ভাষার জন্য কেবল বাংলাদেশেই রক্ত দেয়া হয়েছে। সেটি সত্য নয়। আর ভাষা শহীদও কেবল বাংলাদেশেই হয়নি। আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল আসাম সরকারের অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। যেহেতু ঐ অঞ্চলের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল বাংলাভাষী সেহেতু পাকিস্তানের বাঙালীদের মতো আসামের বাঙালীরাও অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে রাস্তায় নামে। এই গণআন্দোলনের প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ১৯৬১ সালের ১৯ মে ঘটে, সেদিন ১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে প্রাদেশিক পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। ১৯৬০ সালের এপ্রিলে, আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে অসমীয়া ভাষাকে প্রদেশের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার একটি প্রস্তাবের সূচনা হয়। এতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অসমীয়া উত্তেজিত জনতা বাঙালি অভিবাসীদের আক্রমণ করে। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে সহিংসতা যখন উচ্চ রূপ নেয়, তখন প্রায় ৫০,০০০ বাঙালি হিন্দু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায়। অন্য ৯০,০০০ বরাক উপত্যকা ও উত্তর-পূর্বের অন্যত্র পালিয়ে যায়। ন্যায়াধীশ গোপাল মেহরোত্রার নেতৃত্বে এক ব্যক্তির একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী,কামরূপ জেলার গোরেশ্বর অঞ্চলের ২৫টি গ্রামের ৪,০১৯টি কুঁড়েঘর এবং ৫৮টি বাড়ি ধ্বংস ও আক্রমণ করা হয়; এই জেলা ছিল সহিংসতার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা। নয়জন বাঙালিকে হত্যা করা হয় এবং শতাধিক লোক আহত হয়।

১০ অক্টোবর ১৯৬০ সালের সেই সময়ের অসমের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চলিহা অসমীয়াকে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক রণেন্দ্র মোহন দাস এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ২৪ অক্টোবর প্রস্তাবটি বিধানসভায় গৃহীত হয। বরাক উপত্যকার বাঙালিদের ওপরে অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ নামক সংগঠনটির জন্ম হয়। অসম সরকারের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ১৪ এপ্রিল তারিখে শিলচর,করিমগঞ্জ আর হাইলাকান্দির লোকেরা সংকল্প দিবস পালন করেন। বরাকের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য এ পরিষদ ২৪ এপ্রিল একপক্ষ দীর্ঘ একটি পদযাত্রা শুরু করেছিল। ২ মে শেষ হওয়া এ পদযাত্রাটিতে অংশ নেওয়া সত্যাগ্রহীরা প্রায় ২০০ মাইল উপত্যকাটির গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালিয়েছিলেন। পদযাত্রার শেষে পরিষদের মুখ্যাধিকারী রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেছিলেন যে, যদি ১৩ এপ্রিল ১৯৬১ সালের ভিতর বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা না হয়, ১৯ মে তারা ব্যাপক হরতাল করবেন। ১২ মে অসম রাইফেল, মাদ্রাজ রেজিমেন্ট ও কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনী শিলচরে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছিল। ১৮ মে তে অসম পুলিশ আন্দোলনের তিনজন নেতা নলিনীকান্ত দাস, রথীন্দ্রনাথ সেন ও বিধুভূষণ চৌধুরীকে (সাপ্তাহিক যুগশক্তির সম্পাদক) গ্রেপ্তার করে।

১৯ মে শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে হরতাল ও পিকেটিং আরম্ভ হয়। করিমগঞ্জে আন্দোলনকারীরা সরকারি কার্যালয়, রেলওয়ে স্টেশন, কোর্ট ইত্যাদিতে পিকেটিং করেন। শিলচরে তারা রেলওয়ে স্টেশনে সত্যাগ্রহ করেছিলেন। বিকেল ৪টার সময়সূচির ট্রেনটির সময় পার হওয়ার পর হরতাল শেষ করার কথা ছিল। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের ট্রেনটির একটি টিকিটও বিক্রি হয়নি। সকালে হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়েছিল; কিন্তু বিকালে স্টেশনে অসম রাইফেল এসে উপস্থিত হয়। বিকাল প্রায় ২টা ৩০ মিনিটের সময় নয়জন সত্যাগ্রহীকে কাটিগোরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি ট্রাক তারাপুর স্টেশনের (বর্তমানের শিলচর রেলওয়ে স্টেশন) কাছ থেকে পার হয়ে যাচ্ছিল। পিকেটিংকারী সবাই তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে দেখে তীব্র প্রতিবাদ করেন। ভয় পেয়ে ট্রাকচালকসহ পুলিশরা বন্দীদের নিয়ে পালিয়ে যায়। এর পর কোনো অসনাক্ত লোক ট্রাকটি জ্বালিয়ে দেয়, যদিও দমকল বাহিনী এসে তৎপরতার সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তারপর প্রায ২টা ৩৫ মিনিট নাগাদ স্টেশনের সুরক্ষায় থাকা প্যারামিলিটারি বাহিনী আন্দোলনকারীদের বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে। এরপর সাত মিনিটের ভিতর তারা ১৭ রাউন্ড গুলি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চালায়। ১২ জন লোকের দেহে গুলি লেগেছিল। তাদের মধ্যে নয়জন সেদিনই নিহত হয়েছিলেন; দুজন পরে মারা যান। ২০ মে শিলচরের জনগণ শহীদদের শবদেহ নিয়ে শোক মিছিল করে প্রতিবাদ করেছিলেন। এ ঘটনার পর অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। আরও একবার বিজয়ী হয় বাংলা ভাষা। এরপর শিলচর রেলস্টেশনকে ভাষা শহীদ স্টেশন নামকরণ করা হয়। সেখানে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ। ২০১১ সালে ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শহীদ কমলা ভট্টাচার্য মূর্তি স্থাপন কমিটির পক্ষ থেকে গোপা দত্ত আইচ ছোটেলাল শেঠ ইনস্টিটিউটের প্রাঙ্গণে কমলার একটি ব্রোঞ্জের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেন।

এ আন্দোলনে যারা শহীদ হন তারা হলেনÑ কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডীচরণ সূত্রধর, হিতেশ বিশ্বাস, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, কুমুদরঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তরণী দেবনাথ, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুকোমল পুরকায়স্থ এবং কমলা ভট্টাচার্য। এছাডাও আসামেই বাংলা ভাষার জন্য ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট বিজন চক্রবর্তী নামের আরো একজন শহীদ হন। অন্যদিকে ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই শহীদ হন দুজনÑ জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস। ভারতের তামিলনাড়–তে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধেও ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে।

[লেখক : সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক]

back to top