alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ: আলী আহমদ চুনকা, সাধারণ মানুষের নেতা

আহমদ সাইফুল

: সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
image

আলী আহমদ চুনকা

নারায়ণগঞ্জের জননেতা আলী আহমদ চুনকা জীবদ্দশায় নীতি-আদর্শের রাজনীতির একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। কী রাজনীতি, কী সামাজিক কর্মকা-Ñ সবখানেই আলী আহমদ চুনকা আপসহীন একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে এবং অন্যদের কাছেও পরিচিত হতে পছন্দ করতেন। এজন্য নারায়ণগঞ্জের সব বয়স এবং শ্রেণীপেশার মানুষ তাকে আপসহীন ব্যক্তিত্ব হিসেবেই বিবেচনা করতেন। তিনি অশীতিপর প্রবীণের কাছে যেমন তেমনি তার সন্তানতুল্য নতুন প্রজন্মের তরুণদের কাছেও ছিলেন ‘আমাদের চুনকা ভাই’। এই সম্মান তাকে অর্জন করতে হয়েছে সবার জন্যইÑ বয়সের পার্থক্যের ঊর্ধে উঠে, নিরলস এবং নিঃস্বার্থভাবে কাজের মধ্যে ডুবে থেকে। বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জে তিনি ছিলেন প্রায় প্রবাদ পুরুষের মতো। আর এসব গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের তিন প্রজন্মের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘আপন মানুষ’।

নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণীপেশানির্বিশেষেÑ সব শ্রেণীপেশার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসের মানুষ, সবাই ভালোবাসতেন তাকে, একদিকে রাজনীতি সচেতন মানুষ, অন্যদিকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ। তিনি নারায়ণগঞ্জকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ এর চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন তাকে। এই আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আলী আহমদ চুনকার যে আন্তরিক ও সজ্জন সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তাই তাকে নারায়ণগঞ্জের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে জাতীয়ভাবে গৌরবাহ্নিত করেছে।

আলী আহমদ চুনকা জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে, একই সঙ্গে মানুষের মনে এবং ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। বিশেষভাবে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে যার সহজ-সরল পরিচিতি ‘আমাদের চুনকা ভাই’ হিসেবে। বাংলাদেশের আর কোন অঞ্চলে একজন রাজনৈতিক নেতাকে এভাবে নিজেদের লোক হিসেবে মেনে নেয়া বা আপন করে নেয়ার উদারণ খুব কমই আছে।

আলী আহমদ চুনকাকে নিয়ে এসব কথা, এসব অনুভব শুধু আমার নয়, নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মানুষেরÑ স্বাধীনতা পূর্ব প্রজন্ম, বিশেষ করে পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকের প্রজন্ম থেকে শুরু করে তার মৃত্যুর পরবর্তী প্রজন্মÑ সবার মনেই আলোড়ন তোলে। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর, উৎস বা শিকড় যা-ই বলি না কেন, জানতে হলে নারায়ণগঞ্জের আর্থসামাজিক অবস্থা ও রাজনীতির পূর্বাপর পরিস্থিতি সত্যনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। নারায়ণগঞ্জে সেই ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনÑ ছয় দফার আন্দোলন থেকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং সবশেষে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন দেশে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনÑ প্রতিটি ক্ষেত্রে আলী আহমদ চুনকা ছিলেন নেতৃত্বের প্রতিভূ, প্রাণপুরুষ। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি একদিকে আদর্শবাদী রাজনীতি, অন্যদিকে সামাজিক জনকল্যাণমূলক কর্মকা-ের জন্য তিনি একজন জনহিতৈষী মানুষ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের ‘কাছের মানুষ’ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সক্ষমতা সব নেতা বা সমাজকর্মীর জীবনে পাওয়া হয়ে ওঠে না। আলী আহমদ চুনকা পেয়েছিলেন। সেজন্য তিনি শুধু শিল্পশহর নারায়ণগঞ্জই নয় সারাদেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘নারায়ণগঞ্জের চুনকা’ হিসেবে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদর্শবাদী রাজনীতিক হিসেবে আলী আহমদ চুনকা অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি একাধারে প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের ত্রিপুরায় বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প এবং শরণার্থীশিবির ঘুরে ঘুরে তিনি নারায়ণগঞ্জের যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে আগরতলা গিয়েছেন তাদের খোঁজ-খবর নিতেন। তারা কিভাবে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেবেন তার ব্যবস্থা করে দিতেন। তাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় গ্রুপ সংগঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও চুনকা সবাইকে যুদ্ধের মাঠে ফেলে নিজে বাড়ি ফিরে যাননি। যুদ্ধের অস্ত্র নিয়ে এলাকায় ফিরে মুক্তিযোদ্ধারা কে কিভাবে কোথায় আছেন তার খোঁজ-খবর নিতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছেন। এভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বজন হিসেবে কাজ করেছেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে প্রায় দুই সপ্তাহ তিনি বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে তারপর নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। নারায়ণগঞ্জের আর কোন নেতার ক্ষেত্রে এমনটা শোনা যায় না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তরপরবর্তী দুই দশক ছিল অত্যন্ত সংকটকাল। সে সংকট নিরসনের জন্য যারা ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলা শহরে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা পালনে করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন আলী আহমদ চুনকা। তিনি সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু এবং জেলা-জুলুমের ভয় উপেক্ষা তখন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে দিনরাত কাজ করেছেন। এজন্য তাকে সরকারের নজরদারির মধ্যে এবং গৃহবন্দী অবস্থায় তাকতে হয়েছে। বৈরী পরিবেশে রাজনীতি করে যাওয়ার যে সাহস এবং আপসহীনতা আলী আহমদ চুনকা দেখিয়েছে তার ধারাবাহিকতা পরবর্তীদের তার সন্তানরাও বজায় রেখেছেন।

নারায়ণগঞ্জের শ্রেণীপেশা-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব আলী আহমদ চুনকার মৃত্যুবার্ষিকী ২৫ ফেব্রুয়ারি। এই দিনে নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাকে স্মরণ করে একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক এবং সমাজহিতৈষী আদর্শবাদী মানুষ হিসেবে। তার স্মৃতি এখনো নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে সজীব হয়ে আছে। আগামী দিনগুলোতেও মানুষ তাকে ভুলবে নাÑ এটাই একজন নেতা হিসেবে আলী আহমদ চুনকার জীবনের সাফল্য। এ সাফল্য আগামী প্রজন্মের মানুষকে দেশপ্রেমে এবং আদর্শবাদী সৃজনশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে অনুপ্রাণিত করবে।

[লেখক: কবি ও গল্পকার]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ: আলী আহমদ চুনকা, সাধারণ মানুষের নেতা

আহমদ সাইফুল

image

আলী আহমদ চুনকা

সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নারায়ণগঞ্জের জননেতা আলী আহমদ চুনকা জীবদ্দশায় নীতি-আদর্শের রাজনীতির একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। কী রাজনীতি, কী সামাজিক কর্মকা-Ñ সবখানেই আলী আহমদ চুনকা আপসহীন একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে এবং অন্যদের কাছেও পরিচিত হতে পছন্দ করতেন। এজন্য নারায়ণগঞ্জের সব বয়স এবং শ্রেণীপেশার মানুষ তাকে আপসহীন ব্যক্তিত্ব হিসেবেই বিবেচনা করতেন। তিনি অশীতিপর প্রবীণের কাছে যেমন তেমনি তার সন্তানতুল্য নতুন প্রজন্মের তরুণদের কাছেও ছিলেন ‘আমাদের চুনকা ভাই’। এই সম্মান তাকে অর্জন করতে হয়েছে সবার জন্যইÑ বয়সের পার্থক্যের ঊর্ধে উঠে, নিরলস এবং নিঃস্বার্থভাবে কাজের মধ্যে ডুবে থেকে। বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জে তিনি ছিলেন প্রায় প্রবাদ পুরুষের মতো। আর এসব গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের তিন প্রজন্মের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘আপন মানুষ’।

নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণীপেশানির্বিশেষেÑ সব শ্রেণীপেশার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসের মানুষ, সবাই ভালোবাসতেন তাকে, একদিকে রাজনীতি সচেতন মানুষ, অন্যদিকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ। তিনি নারায়ণগঞ্জকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ এর চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন তাকে। এই আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আলী আহমদ চুনকার যে আন্তরিক ও সজ্জন সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তাই তাকে নারায়ণগঞ্জের অবিসংবাদিত রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে জাতীয়ভাবে গৌরবাহ্নিত করেছে।

আলী আহমদ চুনকা জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে, একই সঙ্গে মানুষের মনে এবং ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। বিশেষভাবে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে যার সহজ-সরল পরিচিতি ‘আমাদের চুনকা ভাই’ হিসেবে। বাংলাদেশের আর কোন অঞ্চলে একজন রাজনৈতিক নেতাকে এভাবে নিজেদের লোক হিসেবে মেনে নেয়া বা আপন করে নেয়ার উদারণ খুব কমই আছে।

আলী আহমদ চুনকাকে নিয়ে এসব কথা, এসব অনুভব শুধু আমার নয়, নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মানুষেরÑ স্বাধীনতা পূর্ব প্রজন্ম, বিশেষ করে পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকের প্রজন্ম থেকে শুরু করে তার মৃত্যুর পরবর্তী প্রজন্মÑ সবার মনেই আলোড়ন তোলে। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর, উৎস বা শিকড় যা-ই বলি না কেন, জানতে হলে নারায়ণগঞ্জের আর্থসামাজিক অবস্থা ও রাজনীতির পূর্বাপর পরিস্থিতি সত্যনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। নারায়ণগঞ্জে সেই ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনÑ ছয় দফার আন্দোলন থেকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং সবশেষে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন দেশে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনÑ প্রতিটি ক্ষেত্রে আলী আহমদ চুনকা ছিলেন নেতৃত্বের প্রতিভূ, প্রাণপুরুষ। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি একদিকে আদর্শবাদী রাজনীতি, অন্যদিকে সামাজিক জনকল্যাণমূলক কর্মকা-ের জন্য তিনি একজন জনহিতৈষী মানুষ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের ‘কাছের মানুষ’ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সক্ষমতা সব নেতা বা সমাজকর্মীর জীবনে পাওয়া হয়ে ওঠে না। আলী আহমদ চুনকা পেয়েছিলেন। সেজন্য তিনি শুধু শিল্পশহর নারায়ণগঞ্জই নয় সারাদেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘নারায়ণগঞ্জের চুনকা’ হিসেবে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদর্শবাদী রাজনীতিক হিসেবে আলী আহমদ চুনকা অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি একাধারে প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের ত্রিপুরায় বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প এবং শরণার্থীশিবির ঘুরে ঘুরে তিনি নারায়ণগঞ্জের যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে আগরতলা গিয়েছেন তাদের খোঁজ-খবর নিতেন। তারা কিভাবে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেবেন তার ব্যবস্থা করে দিতেন। তাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় গ্রুপ সংগঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও চুনকা সবাইকে যুদ্ধের মাঠে ফেলে নিজে বাড়ি ফিরে যাননি। যুদ্ধের অস্ত্র নিয়ে এলাকায় ফিরে মুক্তিযোদ্ধারা কে কিভাবে কোথায় আছেন তার খোঁজ-খবর নিতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছেন। এভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বজন হিসেবে কাজ করেছেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে প্রায় দুই সপ্তাহ তিনি বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে তারপর নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। নারায়ণগঞ্জের আর কোন নেতার ক্ষেত্রে এমনটা শোনা যায় না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তরপরবর্তী দুই দশক ছিল অত্যন্ত সংকটকাল। সে সংকট নিরসনের জন্য যারা ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলা শহরে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা পালনে করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন আলী আহমদ চুনকা। তিনি সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু এবং জেলা-জুলুমের ভয় উপেক্ষা তখন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে দিনরাত কাজ করেছেন। এজন্য তাকে সরকারের নজরদারির মধ্যে এবং গৃহবন্দী অবস্থায় তাকতে হয়েছে। বৈরী পরিবেশে রাজনীতি করে যাওয়ার যে সাহস এবং আপসহীনতা আলী আহমদ চুনকা দেখিয়েছে তার ধারাবাহিকতা পরবর্তীদের তার সন্তানরাও বজায় রেখেছেন।

নারায়ণগঞ্জের শ্রেণীপেশা-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব আলী আহমদ চুনকার মৃত্যুবার্ষিকী ২৫ ফেব্রুয়ারি। এই দিনে নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাকে স্মরণ করে একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক এবং সমাজহিতৈষী আদর্শবাদী মানুষ হিসেবে। তার স্মৃতি এখনো নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে সজীব হয়ে আছে। আগামী দিনগুলোতেও মানুষ তাকে ভুলবে নাÑ এটাই একজন নেতা হিসেবে আলী আহমদ চুনকার জীবনের সাফল্য। এ সাফল্য আগামী প্রজন্মের মানুষকে দেশপ্রেমে এবং আদর্শবাদী সৃজনশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে অনুপ্রাণিত করবে।

[লেখক: কবি ও গল্পকার]

back to top