alt

উপ-সম্পাদকীয়

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

জাঁ- নেসার ওসমান

: বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘ইয়ে-য়...আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...আজি রহি রহি আনন্দ তরঙ্গ জাগে... বিপুল তরঙ্গ রে...’

‘ব্যাপার কি? এই ত্যেড়াব্যেকা সমাজের মাঝে এতো আনন্দ কোই খুঁইজ্জাপান? কথা নাই

বার্তা নাই আনন্দ তরঙ্গ জাগে!’

‘তোর মতো হতাশাপীড়িত ব্যাক্তি সব কিছুতেই প্যাঁচ দেখিস আর প্যাঁচ খুঁজিস। জীবনে কোনো কিছুতো সহজভাবে নিতে শিখলি না।’

‘সহজভাবে কি নিবো অবন্তীকার আত্মহত্যা, সাদী ভাইেিয়র অকাল প্রয়াণ, তিনশত দফা পেছিয়ে যাওয়া সাগর রুনির কিচ্ছা-কাহিনি! এসব আমি সহজভাবে নিবো? সব কিছু সহজভাবে মেনে নিয়ে, মেরুদন্ডহীন কাপুরুষ সাপের মতো মাটিতে বুক ঘষড়ে ঘষড়ে ঘুরে বেড়াবো! এটা আপনি কি বলছেন? এসব মেনে নিয়ে আমি আনন্দ করবো দ্বিগুন আনন্দ করবো?’

‘আরে আমি তোর মতো অতো সমাজের ক্লেদের বিবরণ দিচ্ছি না;, আমি কেবল বলছিলাম এবার ঈদুল ফিতর আর পয়লা বৈশাখ পাশাপাশি পড়াতে আমাদের আনন্দ দ্বিগুন হচ্ছে। শুক্র’শনিবার ও দু’টো ছুটি মিলিয়ে প্রায় দশ দিনের মতো লম্বা একটানা ছুটি পড়েছে, নাড়ীর টানে সব গ্রামমুখী হয়েছে, ভাবতে পারিস প্রিয়জনদের সাথে একনাগাড়ে কোনো প্রকার টেনশনবিহীন দশ দিন! এ যেন রাশিয়ার সেই দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন। টেন ডেয়েস দ্যাট শুক দি ওর্য়াল্ড। তাই বলছিলাম আনন্দ দ্বিগুণ আনন্দ...’।

‘এই দ্বিগুণ আনন্দের খরচাপাতি কি আপনে জুটাইবেন?’

‘তুমি মিয়া বোজো না? এবার সব অফিসে ঈদের বোনাস আর পয়লা বৈশাখের জন্য উৎসবভাতা, বেতনের সাথে দুটোই প্রদান করা হয়েছে; তাই বলছিলাম এবার সবের আনন্দ দ্বিগুণ আনন্দ। বুঝছস, বলদ জানি কোনখানকার।’

‘আপনারা তো দ্বিগুণ আনন্দ করলেন কিন্তু এই যে সেদিন থানা থেকে কয়েদি ছাড়িয়ে আনতে যেয়ে যাদের আপনি গ্রেপ্তার করলেন, তাদের আনন্দের কি হলো? ভাবতে পারেন! এই ঈদ তাদের জন্য কিরুপ বেদনাদায়ক ছিল তা কি আপনি বুঝতে পারছেন? তাদের আনন্দতো অংকুরেই বিনষ্ট হয়েছে।’

‘সমাজের প্রচলিত আচার অনুষ্ঠানের মাঝে এমনি এক বিরল মুহূর্তের ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের সময় মানুষ যখন সবাই আনন্দটা ডবল করেছে তখন তোরা একটু ধৈর্য্যধরে বিষয়টার মীমাংসা করতে পারতি।’

‘কোন বিষয়টার মীমাংসা করবেন, আপনার পয়লা বৈশাখের প্রবক্তা মোঘল স¤্রাট মহামতি আকবরের নাম তো আপনারা ভুলেই গেছেন। আপনরা স্বয়ং নোবেল লোরেট অমর্ত্য সেন যে বললেন, বঙ্গাব্দের প্রবক্তা মহামতি মোঘল সামারাজ্যের তৃতীয় স¤্রাট জালালুদ্দিন আকবর, সে কথার সাথেও তো একমত হতে পারলেন না? আপনারা বলছেন গৌড়েশ্বর শশাঙ্কই হচ্ছেন বঙ্গাব্দের প্রবক্তা।

তাহলে বলেন তো আমি কিসের মীমাংসা করবো? কিসের ধৈর্য ধরবো?’

‘তাই বলে তুই বাস্তব মানবি না! তোর মহামতি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় স¤্রাট জালালুদ্দিন আকবর ১৫৩০ সালের, আর বঙ্গাব্দ শুরু হচ্ছে ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে, ফলে তুই ইতিহাসকে বিশ্বাস করবি না?’

‘ধরলাম, আপনার বঙ্গাব্দ ৫৯৪ সালেই শুরু তাহলে বাংলার এই নবান্ন বা ধানকাটা উৎসব কবে থেকে শুরু হলো বলেন?’

‘আরে রাখ তোর নবান্ন, এখন সব বাংলার কৃষককুল গ্রামে ধানকাটা বাদ দিয়ে ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছে। ওদের ভাষায় রিকশা বাইছে।’

‘ধানকাটা ছেড়ে রিকশা! বলছেন কী?’

‘কি আর বলবো, এখন ঈদের মৌসুম সব কৃষকরা ঢাকায় এসে ডবল ডবল ভাড়া পাচ্ছে, আর সপ্তাহ দু’এক রিকশা চালিয়ে চটজলদি কিছু টাকা কামিয়ে গ্রামে যেয়ে আনন্দ দ্বিগুণ আনন্দ করবে, এই আর কি।’

‘ঢাকার পাবলিক অযথা ডবল ভাড়া দেবে কেন?’

‘ঈদ ও বাংলা নববর্ষের মানে পয়লা বৈশাখ, তোকে তো আগেই বলেছি ঈদের বোনাস ও উৎসবভাতা দু’ই মিলিয়ে বাঙালির পকেট গরম, তাই গরিব রিকশাওয়ালাও যাতে ঈদের ও পয়লা বৈশাখের আনন্দ শেয়ার করতে পারে তাই এই সময় সবাই রিকশা ভাড়া একটু বেশিই দেয়। বুঝতেই তো পারিস, সেই আদ্যিকালের সামন্ত প্রভুর মতো তুই বসে আছিস, তোকে ঘাড়ে করে তোর প্রজা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বর্তমান রিকশাওয়ালা ঠিক তোর সেই প্রজার মতো তোকে সিটে বসিয়ে বাঙালি হয়ে বাঙালিকে, প্রখর রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, একটু হলেও বাঙালির কিছু লজ্জাবোধ এখনো তলানিতে রয়েছে, সেই লজ্জাবোধ থেকে এই পূজা-পার্বণের সময় ভাড়া একটু বেশি দেয় এই আর কি।’

‘বাঙালির লজ্জা থাকলে এক বাঙালি সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছে, রাশিয়া থেকে মিস্ত্রি এনে বিয়ের প্যান্ডেল বানাচ্ছে, তুরস্কের ললনা এসে বৌ সাজাচ্ছে আর একদল বাঙালি না খেয়ে ভূলুন্ঠিত; অপর দল রিকশা চালাচ্ছে, ক্ষুধার জ্বালায় জঠরের সন্তান বিক্রয় করছে...এই তোর বাঙালির লজ্জাবোধ?’

‘কি করবি বল, বাস্তব তোকে মানতে হবে। বাস্তবে তোর প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য, কিন্তু দেখ এর মাঝেও তোর রিকশাওয়ালা রিকশা চালাতে চালাতে গান গায়, তোর বাজারের ঝাঁকামুটে গান গাইতে গাইতে পথ চলে। কিছু বলার নেই, ভাই বাস্তব কঠিন, সত্যটা মেনে নে।’

‘কিন্তু ভাই তুমি যে আনন্দ দ্বিগুণ করতে বলছো, বলাইরা কি করে আনন্দ দ্বিগুণ করবে বলো?’

‘কেন? বলাই মানে আমাদের গলির মুখের হকারটি? হকার হয়েছে তো কি হয়েছে? বলাইও ওর আনন্দ দ্বিগুণ করবে?’

‘কিন্তু বলাই যে বলছিলো তোদের আনন্দ দ্বিগুণ হতে পারে কিন্তু বলাইদের মানে বাংলার সব হকারদের আনন্দ এবার দ্বিগুণ তো দূরের কথা, পুরোও হবে না হবে অর্ধেক!’

‘কেন কেন? হকারদের আনন্দ দ্বিগুণ হবে না, পুরোও হবে না হবে অর্ধেক! কেন এর শানে-নজুল কী?’

‘শানে-নজুল আবার কি, এমনি সময় নাকি ফুটপাথের হকারদের প্রতিদিন যা খরচ দিতে হতো এখন দিতে হচ্ছে ডবল মানে দ্বিগুণ। মনে কর আগে ওরা প্রতিদিন খরচ দিতো ১০০ টাকা আর এবার ঈদ ও নববর্ষের জন্য প্রতিদিনের খরচ দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ মানে ২০০ টাকা। ফলে এবার ফুটপাথের হকারদের ঈদ ও নববর্ষের আনন্দ অর্ধেকে নেমে এসেছে।’

‘অর্ধেকে!’

‘জ্বি স্যার অর্ধেকে। এ বিষয়ে আপনি কিছু বলবেন স্যার?’

‘বোবার কোনো শত্রু নেই...তাই মৌনতা অবলম্বন করিলাম...’।

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

জাঁ- নেসার ওসমান

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘ইয়ে-য়...আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে...আজি রহি রহি আনন্দ তরঙ্গ জাগে... বিপুল তরঙ্গ রে...’

‘ব্যাপার কি? এই ত্যেড়াব্যেকা সমাজের মাঝে এতো আনন্দ কোই খুঁইজ্জাপান? কথা নাই

বার্তা নাই আনন্দ তরঙ্গ জাগে!’

‘তোর মতো হতাশাপীড়িত ব্যাক্তি সব কিছুতেই প্যাঁচ দেখিস আর প্যাঁচ খুঁজিস। জীবনে কোনো কিছুতো সহজভাবে নিতে শিখলি না।’

‘সহজভাবে কি নিবো অবন্তীকার আত্মহত্যা, সাদী ভাইেিয়র অকাল প্রয়াণ, তিনশত দফা পেছিয়ে যাওয়া সাগর রুনির কিচ্ছা-কাহিনি! এসব আমি সহজভাবে নিবো? সব কিছু সহজভাবে মেনে নিয়ে, মেরুদন্ডহীন কাপুরুষ সাপের মতো মাটিতে বুক ঘষড়ে ঘষড়ে ঘুরে বেড়াবো! এটা আপনি কি বলছেন? এসব মেনে নিয়ে আমি আনন্দ করবো দ্বিগুন আনন্দ করবো?’

‘আরে আমি তোর মতো অতো সমাজের ক্লেদের বিবরণ দিচ্ছি না;, আমি কেবল বলছিলাম এবার ঈদুল ফিতর আর পয়লা বৈশাখ পাশাপাশি পড়াতে আমাদের আনন্দ দ্বিগুন হচ্ছে। শুক্র’শনিবার ও দু’টো ছুটি মিলিয়ে প্রায় দশ দিনের মতো লম্বা একটানা ছুটি পড়েছে, নাড়ীর টানে সব গ্রামমুখী হয়েছে, ভাবতে পারিস প্রিয়জনদের সাথে একনাগাড়ে কোনো প্রকার টেনশনবিহীন দশ দিন! এ যেন রাশিয়ার সেই দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন। টেন ডেয়েস দ্যাট শুক দি ওর্য়াল্ড। তাই বলছিলাম আনন্দ দ্বিগুণ আনন্দ...’।

‘এই দ্বিগুণ আনন্দের খরচাপাতি কি আপনে জুটাইবেন?’

‘তুমি মিয়া বোজো না? এবার সব অফিসে ঈদের বোনাস আর পয়লা বৈশাখের জন্য উৎসবভাতা, বেতনের সাথে দুটোই প্রদান করা হয়েছে; তাই বলছিলাম এবার সবের আনন্দ দ্বিগুণ আনন্দ। বুঝছস, বলদ জানি কোনখানকার।’

‘আপনারা তো দ্বিগুণ আনন্দ করলেন কিন্তু এই যে সেদিন থানা থেকে কয়েদি ছাড়িয়ে আনতে যেয়ে যাদের আপনি গ্রেপ্তার করলেন, তাদের আনন্দের কি হলো? ভাবতে পারেন! এই ঈদ তাদের জন্য কিরুপ বেদনাদায়ক ছিল তা কি আপনি বুঝতে পারছেন? তাদের আনন্দতো অংকুরেই বিনষ্ট হয়েছে।’

‘সমাজের প্রচলিত আচার অনুষ্ঠানের মাঝে এমনি এক বিরল মুহূর্তের ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের সময় মানুষ যখন সবাই আনন্দটা ডবল করেছে তখন তোরা একটু ধৈর্য্যধরে বিষয়টার মীমাংসা করতে পারতি।’

‘কোন বিষয়টার মীমাংসা করবেন, আপনার পয়লা বৈশাখের প্রবক্তা মোঘল স¤্রাট মহামতি আকবরের নাম তো আপনারা ভুলেই গেছেন। আপনরা স্বয়ং নোবেল লোরেট অমর্ত্য সেন যে বললেন, বঙ্গাব্দের প্রবক্তা মহামতি মোঘল সামারাজ্যের তৃতীয় স¤্রাট জালালুদ্দিন আকবর, সে কথার সাথেও তো একমত হতে পারলেন না? আপনারা বলছেন গৌড়েশ্বর শশাঙ্কই হচ্ছেন বঙ্গাব্দের প্রবক্তা।

তাহলে বলেন তো আমি কিসের মীমাংসা করবো? কিসের ধৈর্য ধরবো?’

‘তাই বলে তুই বাস্তব মানবি না! তোর মহামতি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় স¤্রাট জালালুদ্দিন আকবর ১৫৩০ সালের, আর বঙ্গাব্দ শুরু হচ্ছে ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে, ফলে তুই ইতিহাসকে বিশ্বাস করবি না?’

‘ধরলাম, আপনার বঙ্গাব্দ ৫৯৪ সালেই শুরু তাহলে বাংলার এই নবান্ন বা ধানকাটা উৎসব কবে থেকে শুরু হলো বলেন?’

‘আরে রাখ তোর নবান্ন, এখন সব বাংলার কৃষককুল গ্রামে ধানকাটা বাদ দিয়ে ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছে। ওদের ভাষায় রিকশা বাইছে।’

‘ধানকাটা ছেড়ে রিকশা! বলছেন কী?’

‘কি আর বলবো, এখন ঈদের মৌসুম সব কৃষকরা ঢাকায় এসে ডবল ডবল ভাড়া পাচ্ছে, আর সপ্তাহ দু’এক রিকশা চালিয়ে চটজলদি কিছু টাকা কামিয়ে গ্রামে যেয়ে আনন্দ দ্বিগুণ আনন্দ করবে, এই আর কি।’

‘ঢাকার পাবলিক অযথা ডবল ভাড়া দেবে কেন?’

‘ঈদ ও বাংলা নববর্ষের মানে পয়লা বৈশাখ, তোকে তো আগেই বলেছি ঈদের বোনাস ও উৎসবভাতা দু’ই মিলিয়ে বাঙালির পকেট গরম, তাই গরিব রিকশাওয়ালাও যাতে ঈদের ও পয়লা বৈশাখের আনন্দ শেয়ার করতে পারে তাই এই সময় সবাই রিকশা ভাড়া একটু বেশিই দেয়। বুঝতেই তো পারিস, সেই আদ্যিকালের সামন্ত প্রভুর মতো তুই বসে আছিস, তোকে ঘাড়ে করে তোর প্রজা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বর্তমান রিকশাওয়ালা ঠিক তোর সেই প্রজার মতো তোকে সিটে বসিয়ে বাঙালি হয়ে বাঙালিকে, প্রখর রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, একটু হলেও বাঙালির কিছু লজ্জাবোধ এখনো তলানিতে রয়েছে, সেই লজ্জাবোধ থেকে এই পূজা-পার্বণের সময় ভাড়া একটু বেশি দেয় এই আর কি।’

‘বাঙালির লজ্জা থাকলে এক বাঙালি সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছে, রাশিয়া থেকে মিস্ত্রি এনে বিয়ের প্যান্ডেল বানাচ্ছে, তুরস্কের ললনা এসে বৌ সাজাচ্ছে আর একদল বাঙালি না খেয়ে ভূলুন্ঠিত; অপর দল রিকশা চালাচ্ছে, ক্ষুধার জ্বালায় জঠরের সন্তান বিক্রয় করছে...এই তোর বাঙালির লজ্জাবোধ?’

‘কি করবি বল, বাস্তব তোকে মানতে হবে। বাস্তবে তোর প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য, কিন্তু দেখ এর মাঝেও তোর রিকশাওয়ালা রিকশা চালাতে চালাতে গান গায়, তোর বাজারের ঝাঁকামুটে গান গাইতে গাইতে পথ চলে। কিছু বলার নেই, ভাই বাস্তব কঠিন, সত্যটা মেনে নে।’

‘কিন্তু ভাই তুমি যে আনন্দ দ্বিগুণ করতে বলছো, বলাইরা কি করে আনন্দ দ্বিগুণ করবে বলো?’

‘কেন? বলাই মানে আমাদের গলির মুখের হকারটি? হকার হয়েছে তো কি হয়েছে? বলাইও ওর আনন্দ দ্বিগুণ করবে?’

‘কিন্তু বলাই যে বলছিলো তোদের আনন্দ দ্বিগুণ হতে পারে কিন্তু বলাইদের মানে বাংলার সব হকারদের আনন্দ এবার দ্বিগুণ তো দূরের কথা, পুরোও হবে না হবে অর্ধেক!’

‘কেন কেন? হকারদের আনন্দ দ্বিগুণ হবে না, পুরোও হবে না হবে অর্ধেক! কেন এর শানে-নজুল কী?’

‘শানে-নজুল আবার কি, এমনি সময় নাকি ফুটপাথের হকারদের প্রতিদিন যা খরচ দিতে হতো এখন দিতে হচ্ছে ডবল মানে দ্বিগুণ। মনে কর আগে ওরা প্রতিদিন খরচ দিতো ১০০ টাকা আর এবার ঈদ ও নববর্ষের জন্য প্রতিদিনের খরচ দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ মানে ২০০ টাকা। ফলে এবার ফুটপাথের হকারদের ঈদ ও নববর্ষের আনন্দ অর্ধেকে নেমে এসেছে।’

‘অর্ধেকে!’

‘জ্বি স্যার অর্ধেকে। এ বিষয়ে আপনি কিছু বলবেন স্যার?’

‘বোবার কোনো শত্রু নেই...তাই মৌনতা অবলম্বন করিলাম...’।

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

back to top