alt

উপ-সম্পাদকীয়

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

সেকেন্দার আলী

: রোববার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী নয়টি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ ¯œাতক (সম্মান) শ্রেণীর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং তারিখে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ ও ফলাফল প্রস্তুতিতে কিছু বৈষম্য দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমি প্রক্টর; এডভাইজার; উপ-উপাচার্য হিসেবে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ¯œাতক ভর্তি কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষার ৪র্থ বিষয়সহ জিপিএ উল্লেখ করা হতো এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সমূহের প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদাভাবে কমপক্ষে ৩.০০ জিপি থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে কৃষিতে ¯œাতক শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর (২০১৯-২০ থেকে) আবেদনকারীদের ভোগান্তি কমলেও আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয় ব্যতিত) ন্যূনতম জিপিএ নির্ধারণ করায় আবেদনকারীরা সমসুযোগ পাবে না। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সমূহের প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ উল্লেখ না থাকায় উল্লেখিত বিষয়সমূহে শুধুমাত্র উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরই আবেদনের সুযোগ থাকছে।

আবার ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ফলাফল প্রস্তুতির সময়ে এসএসসি/সমমান পরীক্ষার মোট জিপিএ এর ৮ গুণ ও এইসএসসি/সমমান পরীক্ষার মোট জিপিএ এর ১২ গুণ করে প্রাপ্ত স্কোর ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের সঙ্গে যোগ করে ফলাফল তৈরি করা হতো, ফলে কোন প্রার্থীর ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হতো না। এপ্রিল ১৬ তারিখে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্যসমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণে বৈষম্য বিজ্ঞপ্তির ২নং ক্রমিকে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা নি¤œরূপে নির্ধারণ করা হয়েছে:

ক) ২০১৯/২০২০/২০২১ সালে এসএসসি/সমমান এবং ২০২২/২০২৩ সালে এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় যারা বিজ্ঞান বিভাগ হতে জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সহ উত্তীর্ণ হয়েছে, কেবলমাত্র তারাই আবেদন করতে পারবে।

খ) আবেদনকারীর এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উভয় ক্ষেত্রে প্রতিটিতে চতুর্থ বিষয় ব্যতীত ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ এবং সর্বমোট ন্যূনতম জিপিএ ৮.৫০ থাকতে হবে। বাংলাদেশে কৃষি গুচ্ছে ¯œাতক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সমূহে উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক।

কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত ৪ বিষয়ের প্রতিটিতে আলাদাভাবে কত জিপি থাকতে হবে, তা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ উক্ত ৪ বিষয়ে শুধু উত্তীর্ণ হলেই চলবে। উক্ত ৪ বিষয়ের মধ্যে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান সবার জন্য আবশ্যিক। সব প্রার্থীর ক্ষেত্রেই জীববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের একটি ৩য় আবশ্যিক, অন্যটি অতিরিক্ত (৪র্থ) বিষয় হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ কৃষিতে ভর্তির জন্য সব আবেদনকারীকেই উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে উক্ত ৪ বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। জীববিজ্ঞান ও গণিত ব্যতিত অন্য কোন বিষয় ৪র্থ বিষয় হিসেবে থাকলে তিনি ভর্তির অযোগ্য। কিন্তু ভর্তির জন্য আবেদনের যোগ্যতা এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় ৪র্থ বিষয় ব্যতিত ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ নির্ধারণ করায় একই যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে কেউ ভর্তির সুযোগ পাবে, আবার কেউ সুযোগ পাবে না। বিষয়টির ধারণা অধিকতর পরিষ্কার করার জন্য নি¤েœ দুইজন আবেদনকারীর উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ফলাফলের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ‘ক’ ও ‘খ’ উভয় আবেদনকারীর এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৪.৩৩ হওয়া সত্ত্বেও ‘ক’ আবেদনকারীর ৩য় আবশ্যিক বিষয়ে কম জিপি (৩.৫) ও ৪র্থ বিষয়ে বেশি জিপি (৫) থাকায় ৪র্থ বিষয় ব্যতিত তার জিপিএ ৩.৮৩ থাকার কারণে তিনি ভর্তির অযোগ্য। অন্যদিকে, ‘খ’ আবেদনকারীর ৩য় আবশ্যিক বিষয়ে বেশি জিপি (৫) ও ৪র্থ বিষয়ে কম জিপি (৩.৫) থাকায় ৪র্থ বিষয় ব্যতিত তার জিপিএ ৪.০৮ থাকার কারণে তিনি ভর্তির যোগ্য। অথচ উভয়েরই জীববিজ্ঞান ও গণিতের একটি ৩য় আবশ্যিক ও অন্যটি ৪র্থ বিষয় হিসেবে উত্তীর্ণ। একই যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও আবশ্যিক বিষয়ে কম ও অতিরিক্ত বিষয় বেশি জিপি থাকার কারণে একজন আবেদনকারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অযোগ্য বিবেচিত হচ্ছে; অথচ একই যোগ্যতা থাকা অন্য আবেদনকারী আবশ্যিক বিষয়ে বেশি ও অতিরিক্ত বিষয় কম জিপি থাকার কারণে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য বিবেচিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সমূহের প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদাভাবে কমপক্ষে ৩.০০ অথবা ৩.৫ জিপিসহ এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার প্রত্যেকটিতে ৪র্থ বিষয়সহ জিপিএ ৪.০০ সহ মোট জিপিএ ৮.৫০ বা ৮.৭৫ বা ৯.০০ থাকা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য :

বিজ্ঞপ্তির ৬নং ক্রমিকে ফলাফল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নি¤œরূপে পদ্ধতি উল্লেখ করা হযেছে : ‘মোট ১৫০ নম্বরের ভিত্তিতে ফলাফল প্রস্তুত করা হবে। ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের সঙ্গে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের (চতুর্থ বিষয় ব্যতীত) ভিত্তিতে ২৫ এবং এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের (চতুর্থ বিষয় ব্যতীত) ভিত্তিতে ২৫ নম্বর যোগ করে ফলাফল প্রস্তুত করে মেধা ও অপেক্ষমান তালিকা তৈরি করা হবে।’ প্রত্যেক আবেদনকারীর ক্ষেত্রেই জীববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের একটি ৩য় আবশ্যিক ও অন্যটি চতুর্থ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। অতএব, এক্ষেত্রেও যার ৩য় আবশ্যিক বিষয়ে বেশি নম্বর ও চতুর্থ বিষয়ে কম নম্বর, তার ২৫ নম্বরের মধ্যে বেশি নম্বর যুক্ত হবে, অথচ একই বিষয় পড়েও যার ৩য় আবশ্যিক বিষয়ে কম নম্বর ও চতুর্থ বিষয়ে বেশি নম্বর আছে, তার কম নম্বর যুক্ত হবে। সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এ নিয়মটি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

উপরোক্ত বিষয়াবলির সঠিক অনুধাবনের জন্য গভীর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। আশাকরি কৃষি বিশ^দ্যিালয়সমূহের উপাচার্যবৃন্দের সঠিক পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা রয়েছে এবং একই যোগ্যতাসম্পন্ন সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেয়ার মানসিকতা পোষণ করেন।

অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য নি¤েœাক্ত শর্ত আরোপ করা যেতে পারে :

১। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিটিতে কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ (৪র্থ বিষয়সহ) এবং মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮.৫ এর স্থলে ৮.৭৫ বা ৯.০০ (৪র্থ বিষয়সহ) নির্ধারণ করা যেতে পারে।

২। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে জিপি ৩.৫ নির্ধারণ করা যেতে পারে, এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ইংরেজি বিষয়েরও ন্যূনতম জিপি ৩.৫ নির্ধারণ করা যেতে পারে।

৩। ফলাফল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষার মোট জিপিএ বা মোট নম্বর যোগ করে প্রস্তুত করতে হবে।

উল্লেখ্য যে সাধারণ গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শাখা হতে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আবেদনকারীদের এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ সহ সর্বমোট জিপিএ কমপক্ষে ৮.০০ নির্ধারণ করা আছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের মত স্বনামধন্য বিশ^বিদ্যলয়সমূহ এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অকৃষি অংশ উল্লেখিত ২৪ বিশ^বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত।

আশাকরি সমযোগ্যতাসম্পন্ন সব শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে কৃষি বিশ^বিদ্যালয়সমূহের উপাচার্যবৃন্দ বিষয়টি আমলে নিয়ে পূনঃভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তা না হলে ভুক্তভোগী যে কেহই আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে।

[লেখক : সাবেক উপ-উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়]

হ্যালোইনে আমি একা

প্রসঙ্গ : প্রতিযোগিতামূলক দর

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, ফ্যাসিবাদী প্রবণতা কি বন্ধ হয়েছে

ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের সমস্যা

মানুষ গড়ার কারিগর

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মানসিক স্বাস্থ্য সংকট

‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’

বাদ, প্রতিবাদ ও সম্বাদ

জলবায়ুর পরিবর্তন নির্ণয়ে প্রযুক্তি

অটিজম প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয়

বাজারে কৃষিপণ্যের দাম কেন বেশি?

জাতিসংঘ ভবন

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ

ধর্মভিত্তিক জোট কোন পথে

ছবি

বিদায় অগ্নিকন্যা

রিমান্ড সংস্কৃতি : আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি মানবাধিকার পরিপ্রেক্ষিত

ছবি

ডেঙ্গুজ্বর : সচেতনতার বিকল্প নেই

ছবি

উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কেন জরুরি

ছবি

মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল

নদীর প্রাণ শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক

ভবন নির্মাণ ও বিল্ডিং কোড

রম্যগদ্য : গণতন্ত্রের গলিতে গলিতে হিটলার

রাষ্ট্র সংস্কার ও আদিবাসী

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান ও অতীত-ইতিহাস

শিক্ষাকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার উপায়

দিবস যায় দিবস আসে, নিরাপদ হয় না সড়ক

‘ক্ষুদ্রতার মন্দিরেতে বসায়ে আপনারে আপন পায়ে না দিই যেন অর্ঘ্য ভারে ভারে’

একাকিত্ব : নিজেকে আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা বিকাশের পথ

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

বাঁশের বংশবৃদ্ধিতে অন্তরায় বাঁশকরুল সংগ্রহ

একতার অভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

শিক্ষা খাতে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

কোন পথে জামায়াতের রাজনীতি?

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

সেকেন্দার আলী

রোববার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী নয়টি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ ¯œাতক (সম্মান) শ্রেণীর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং তারিখে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ ও ফলাফল প্রস্তুতিতে কিছু বৈষম্য দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমি প্রক্টর; এডভাইজার; উপ-উপাচার্য হিসেবে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ¯œাতক ভর্তি কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষার ৪র্থ বিষয়সহ জিপিএ উল্লেখ করা হতো এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সমূহের প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদাভাবে কমপক্ষে ৩.০০ জিপি থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে কৃষিতে ¯œাতক শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর (২০১৯-২০ থেকে) আবেদনকারীদের ভোগান্তি কমলেও আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয় ব্যতিত) ন্যূনতম জিপিএ নির্ধারণ করায় আবেদনকারীরা সমসুযোগ পাবে না। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সমূহের প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ উল্লেখ না থাকায় উল্লেখিত বিষয়সমূহে শুধুমাত্র উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরই আবেদনের সুযোগ থাকছে।

আবার ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ফলাফল প্রস্তুতির সময়ে এসএসসি/সমমান পরীক্ষার মোট জিপিএ এর ৮ গুণ ও এইসএসসি/সমমান পরীক্ষার মোট জিপিএ এর ১২ গুণ করে প্রাপ্ত স্কোর ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের সঙ্গে যোগ করে ফলাফল তৈরি করা হতো, ফলে কোন প্রার্থীর ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হতো না। এপ্রিল ১৬ তারিখে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্যসমূহ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণে বৈষম্য বিজ্ঞপ্তির ২নং ক্রমিকে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা নি¤œরূপে নির্ধারণ করা হয়েছে:

ক) ২০১৯/২০২০/২০২১ সালে এসএসসি/সমমান এবং ২০২২/২০২৩ সালে এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় যারা বিজ্ঞান বিভাগ হতে জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সহ উত্তীর্ণ হয়েছে, কেবলমাত্র তারাই আবেদন করতে পারবে।

খ) আবেদনকারীর এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উভয় ক্ষেত্রে প্রতিটিতে চতুর্থ বিষয় ব্যতীত ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ এবং সর্বমোট ন্যূনতম জিপিএ ৮.৫০ থাকতে হবে। বাংলাদেশে কৃষি গুচ্ছে ¯œাতক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সমূহে উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক।

কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত ৪ বিষয়ের প্রতিটিতে আলাদাভাবে কত জিপি থাকতে হবে, তা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ উক্ত ৪ বিষয়ে শুধু উত্তীর্ণ হলেই চলবে। উক্ত ৪ বিষয়ের মধ্যে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান সবার জন্য আবশ্যিক। সব প্রার্থীর ক্ষেত্রেই জীববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের একটি ৩য় আবশ্যিক, অন্যটি অতিরিক্ত (৪র্থ) বিষয় হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ কৃষিতে ভর্তির জন্য সব আবেদনকারীকেই উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে উক্ত ৪ বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। জীববিজ্ঞান ও গণিত ব্যতিত অন্য কোন বিষয় ৪র্থ বিষয় হিসেবে থাকলে তিনি ভর্তির অযোগ্য। কিন্তু ভর্তির জন্য আবেদনের যোগ্যতা এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় ৪র্থ বিষয় ব্যতিত ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ নির্ধারণ করায় একই যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে কেউ ভর্তির সুযোগ পাবে, আবার কেউ সুযোগ পাবে না। বিষয়টির ধারণা অধিকতর পরিষ্কার করার জন্য নি¤েœ দুইজন আবেদনকারীর উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ফলাফলের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ‘ক’ ও ‘খ’ উভয় আবেদনকারীর এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৪.৩৩ হওয়া সত্ত্বেও ‘ক’ আবেদনকারীর ৩য় আবশ্যিক বিষয়ে কম জিপি (৩.৫) ও ৪র্থ বিষয়ে বেশি জিপি (৫) থাকায় ৪র্থ বিষয় ব্যতিত তার জিপিএ ৩.৮৩ থাকার কারণে তিনি ভর্তির অযোগ্য। অন্যদিকে, ‘খ’ আবেদনকারীর ৩য় আবশ্যিক বিষয়ে বেশি জিপি (৫) ও ৪র্থ বিষয়ে কম জিপি (৩.৫) থাকায় ৪র্থ বিষয় ব্যতিত তার জিপিএ ৪.০৮ থাকার কারণে তিনি ভর্তির যোগ্য। অথচ উভয়েরই জীববিজ্ঞান ও গণিতের একটি ৩য় আবশ্যিক ও অন্যটি ৪র্থ বিষয় হিসেবে উত্তীর্ণ। একই যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও আবশ্যিক বিষয়ে কম ও অতিরিক্ত বিষয় বেশি জিপি থাকার কারণে একজন আবেদনকারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অযোগ্য বিবেচিত হচ্ছে; অথচ একই যোগ্যতা থাকা অন্য আবেদনকারী আবশ্যিক বিষয়ে বেশি ও অতিরিক্ত বিষয় কম জিপি থাকার কারণে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য বিবেচিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়সমূহের প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদাভাবে কমপক্ষে ৩.০০ অথবা ৩.৫ জিপিসহ এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার প্রত্যেকটিতে ৪র্থ বিষয়সহ জিপিএ ৪.০০ সহ মোট জিপিএ ৮.৫০ বা ৮.৭৫ বা ৯.০০ থাকা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য :

বিজ্ঞপ্তির ৬নং ক্রমিকে ফলাফল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নি¤œরূপে পদ্ধতি উল্লেখ করা হযেছে : ‘মোট ১৫০ নম্বরের ভিত্তিতে ফলাফল প্রস্তুত করা হবে। ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের সঙ্গে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের (চতুর্থ বিষয় ব্যতীত) ভিত্তিতে ২৫ এবং এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের (চতুর্থ বিষয় ব্যতীত) ভিত্তিতে ২৫ নম্বর যোগ করে ফলাফল প্রস্তুত করে মেধা ও অপেক্ষমান তালিকা তৈরি করা হবে।’ প্রত্যেক আবেদনকারীর ক্ষেত্রেই জীববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের একটি ৩য় আবশ্যিক ও অন্যটি চতুর্থ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। অতএব, এক্ষেত্রেও যার ৩য় আবশ্যিক বিষয়ে বেশি নম্বর ও চতুর্থ বিষয়ে কম নম্বর, তার ২৫ নম্বরের মধ্যে বেশি নম্বর যুক্ত হবে, অথচ একই বিষয় পড়েও যার ৩য় আবশ্যিক বিষয়ে কম নম্বর ও চতুর্থ বিষয়ে বেশি নম্বর আছে, তার কম নম্বর যুক্ত হবে। সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এ নিয়মটি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

উপরোক্ত বিষয়াবলির সঠিক অনুধাবনের জন্য গভীর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। আশাকরি কৃষি বিশ^দ্যিালয়সমূহের উপাচার্যবৃন্দের সঠিক পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা রয়েছে এবং একই যোগ্যতাসম্পন্ন সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেয়ার মানসিকতা পোষণ করেন।

অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য নি¤েœাক্ত শর্ত আরোপ করা যেতে পারে :

১। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিটিতে কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ (৪র্থ বিষয়সহ) এবং মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮.৫ এর স্থলে ৮.৭৫ বা ৯.০০ (৪র্থ বিষয়সহ) নির্ধারণ করা যেতে পারে।

২। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে জিপি ৩.৫ নির্ধারণ করা যেতে পারে, এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর ইংরেজি বিষয়েরও ন্যূনতম জিপি ৩.৫ নির্ধারণ করা যেতে পারে।

৩। ফলাফল প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষার মোট জিপিএ বা মোট নম্বর যোগ করে প্রস্তুত করতে হবে।

উল্লেখ্য যে সাধারণ গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শাখা হতে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আবেদনকারীদের এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ সহ সর্বমোট জিপিএ কমপক্ষে ৮.০০ নির্ধারণ করা আছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের মত স্বনামধন্য বিশ^বিদ্যলয়সমূহ এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অকৃষি অংশ উল্লেখিত ২৪ বিশ^বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত।

আশাকরি সমযোগ্যতাসম্পন্ন সব শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে কৃষি বিশ^বিদ্যালয়সমূহের উপাচার্যবৃন্দ বিষয়টি আমলে নিয়ে পূনঃভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তা না হলে ভুক্তভোগী যে কেহই আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে।

[লেখক : সাবেক উপ-উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়]

back to top