alt

উপ-সম্পাদকীয়

মাদকমুক্ত দেশ গড়তে প্রয়োজন প্রতিরোধ কার্যক্রম

অরূপরতন চৌধুরী

: শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

দেশে অনেক সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান। তার মধ্যে মাদকাসক্তি বড় একটি সমস্যা এবং এটি বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকদ্রব্য, ধূমপান ও তামাক সেবন মানুষের অকাল মৃত্যু এবং স্বাস্থ্যহানির অন্যতম প্রধান কারণ। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মের বিপথগামিতাও সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের বড় অংশের জনগোষ্ঠী কিশোর-তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বলা হয় ইয়ুথ ডিভিডেন্ট। বাংলাদেশে ৪৯% মানুষের বয়স ২৪ বা এর নিচে অর্থাৎ ৪৯% জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। বেসরকারি হিসাব মতে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। মাদকসেবীদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, ইয়াবা সেবনকারী শতকরা ৮৫ ভাগই তরুণ যুবসমাজ! ধারণা করা হচ্ছে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকাসক্ত ব্যক্তির আসক্তি তাকে মানসিক ও শারীরিক রোগসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার আশঙ্কা সৃষ্টি করে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন রোগের মতো এইচআইভি এইডসের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা মাদক গ্রহণকালীন সময়ে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ঝুঁকির্পূণ আচরণ।

মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত, যা গবেষণায় প্রমাণিত। ধূমপানে অভ্যস্ততার মধ্য দিয়ে তরুণরা মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীতে ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেন, আফিস, কোডিন, মরফিন, এলএসডিসহ বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে মাদকাসক্তরা কিডনি, লিভার, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি। কিন্তু, মাদকের সঙ্গে জড়িত অসাধু চক্র আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের মাদকের রাজ্যে টানতে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করছে অসাধু মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীরা। এটিও বড় চ্যালেঞ্জরূপে আবির্ভূত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে ৮০ শতাংশেরও বেশি কিশোর অপরাধী মাদকাসক্ত এবং তাদের বেশির ভাগই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। উপরন্তু, ৮৫ শতাংশ কিশোর অপরাধী মাদক কেনার কথা স্বীকার করেছে এবং ৫৫ শতাংশ স্বীকার করেছে যে তারা মাদক বিক্রি করেছে। এদের অধিকাংশ স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকেই পরিচয় ঘটছে মাদকের সঙ্গে।

মূল্যবোধের অবক্ষয় সামাজিক অপরাধের বিস্তার ঘটাচ্ছে। সন্তানের কাছে বাবা পরম নির্ভরতার স্থান। স্ত্রীর কাছে স্বামী নিরাপত্তার অনুষঙ্গ। অথচ সম্প্রতি, বগুড়ায় এক পাষ- স্বামী তার স্ত্রী ও এক বছর বয়সী ছেলেকে স্থানীয় একটি হোটেলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। চলতি মাসে নেশার গাজীপুরের কাপাসিয়ায় টাকার জন্য ঘরে টানা দুই দিন দুই দফায় নিজেদের বাড়িতে আগুন দেন কামরুজ্জামান নামক এক মাদকাসক্ত। এতে বাড়ির পাঁচ কক্ষের সব আসবাব পুড়ে যায়। ঈশ্বরদীতে ইপিজেডে এক নারী কর্মী নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার হন। তার ওপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাবেক স্বামী। তার অপরাধ, তিনি মাদকাসক্ত সাবেক স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসারের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিলেন না। আবার সম্প্রতি, ঢাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের গার্ডরুমের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ কনস্টেবল কাউসার আলী এসএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে তার সহকর্মী কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে হত্যা করেন। এ দুর্ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন শাখরুখও আহত হন। ঘাতক পুলিশ কনস্টেবল মাদকাসক্ত ছিলেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছে। এ ঘটনায় নতুন করে পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করার বিষয়টি সামনে উঠে আসে, যা অনেকদিন যাবত নীতিনির্ধারণী সভায় বারবার আলোকপাত করে আসছি কিন্তু ফল আসছে না। এরকম ঘটনায় শুধু বিষয়টি কিছুটা আলোচনায় আসে। আশা করছি, এবার পুলিশ সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’ জোরালো গতি পাবে।

ডোপ টেস্ট কী? মূলত, যারা নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে ওই নেশাজাতীয় পদার্থের কিছুটা হলেও থেকে যায়। আর সেটিই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। কোনো ব্যক্তি আদৌ মাদকাসক্ত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় তাকেই ডোপ টেস্ট বলে। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মূত্র বা রক্ত, আবার কখনো দুটির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মাদক গ্রহণ করা ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শেষ ১ সপ্তাহে মুখের লালার মাধ্যমে, শেষ ২ মাস রক্তের মাধ্যমে, শেষ ১২ মাস বা ১ বছরে চুল পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যায় মাদকের নমুনা। বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সব চাকরিতে প্রবেশকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে মাদক পরীক্ষার সনদ বা ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয়। আবার চাকরিতে থাকাকালীন কোনো কর্মচারী বা কর্মকর্তার আচরণ সন্দেহজনক হলে যে কোনো সময় তার ডোপ টেস্ট করানোও হতে পারে।

মাদকাসক্তি সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন মাদক সংক্রান্ত অপরাধে। মাদকজনিত অপরাধের মাঝে বর্তমানে কিশোর গ্যাং অন্যতম সমস্যা। মাদকের খরচ জোগাতে কিশোর ও কিশোরী উভয়ই এই অপরাধ কর্মকা- পরিচালনাকারী গ্যাংয়ের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। মাদক ব্যবসা, হত্যা, খুন, এলাকাতে আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, রাস্তায় পরিকল্পিত সংঘাত তৈরির মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রাজধানীতে সক্রিয় অপরাধী চক্র কিশোর গ্যাং। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বিভিন্ন অভিযান ও গ্রেপ্তার বাড়লেও কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন নতুন গ্যাংয়ের নাম। ফলে মাদক সমস্যা প্রতিরোধে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমন্বিত প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি। যেখানে মনোসামাজিক, নৈতিক ও সামাজিকরণ শিক্ষা প্রদান এর বিষয়সমূহ সর্বস্তরে পরিচালনার উদ্যেগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বর্তমানে উদ্বেগজনক বিষয় হলোÑ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সম্পৃক্ততা! সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় অন্যতম বড় অনুষঙ্গ হলো ইন্টারনেট। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসাবাণিজ্য প্রায় সবখানেই ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগণ্য ভূমিকা এখন দৃশ্যমান। পক্ষান্তরে, কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের অপব্যবহারও আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বর্তমানে দেশে শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে খোলামেলাভাবেই বিক্রি হচ্ছে মাদকজাতীয় দ্রব্য। অসাধু মাদক মাদক ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা ক্রেতাদেরকে (বিশেষত: তরুণ জনগোষ্ঠী যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বেশি ব্যবহার করে) তারা নিজেদের মধ্যে নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে মাধ্যমটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি হচ্ছে ফেসবুক।

মাদকের বিস্তারের ক্ষেত্রে বড় উপাদান হলোÑ তামাকজাত দ্রব্য। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত। যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে তারা প্রথমে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়, তারপর মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হয়। ফ্যাশন হিসেবে অসংখ্য তরুণ আজকাল মাদক সেবনের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার কিছু কিছু প্রকাশ পাচ্ছে। এগুলো মানুষকে ক্ষতিকর নেশা সেবনে উদ্বুদ্ধ করে। বিষণœতা থেকে মাদক গ্রহণ এমনকি জীবনকে বিপন্ন করে তুলছেন অনেকে। তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার হতে বিরত রাখতে হবে। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি।

মাদকাসক্তি বর্তমান বিশে^ ক্রমবর্ধমান সমস্যারগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাদক শব্দটি শুনলে বেশির ভাগ মানুষই বিচলিত হয় বা ভয় পায়, আর মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ঘৃণা ও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। আমাদের আশপাশে আত্মীয় পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব যে কারও মাদকাসক্তি সমস্যার কথা জানলে তাকে সবাই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। এমনকি তার পরিবারকে বিভিন্ন অপবাদমূলক ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে। যেমনÑ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে অপমান করা, যোগ্যতা থাকলেও কর্মক্ষেত্রে চাকুরিচ্যুত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন নেতিবাচক আচরণ করা হয়। ফলে একজন মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবারও অনেক সময় সমাজের এই সমস্ত নেতিবাচক আচরণের ভয়ে মাদক সমস্যা সমাধানের জন্য কারো কাছে সহায়তা চাইতে লজ্জা ও সংকোচ করে থাকেন এবং এই সমস্যা সামনে নিয়ে আসতে চায় না। ফলস্বরূপ সমস্যার তীব্রতা যখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়, তখন মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির সমস্যার ধরণ অনুযায়ী কি ধরণের চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন তা না বিবেচনা করেই চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেন, আবার কখনো বিয়ে দেয়া, তার ওপর শারিরীক ও মানসিক অত্যাচারসহ বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়।

মাদকাসক্তদের শাষণ বা ঘৃণা অবহেলা না করে তাকে ¯েœহ ভালোবাসা দিয়ে নিরাময় কেন্দ্রে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে হবে। যাতে তারা সমাজের বোঝা না হয়ে সুস্থ হয়ে আবার পরিবারে ফিরে আসতে পারে। তাই পিতামাতার প্রতি অনুরোধ আপনার সন্তানকে মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে লুকিয়ে রাখবেন না, ঘৃণা করবেন না বরং তাকে ¯েœহ ভালোবাসা দিয়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যান। তাকে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দিন। সঠিক চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে একদিন তারাই সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।

আমাদের দেশের বর্তমানে মাদক পরিস্থিতিতে কিশোর-তরুণরা যেভাবে অপরাধের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে, তা চলমান থাকলে দেশে মাদক ও সামাজিক অপরাধের বিস্তৃতি থামানো কঠিন হয়ে পড়বে। দেশে মাদক প্রতিরোধ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য বিনিয়োগ জরুরি।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা]

বেঁটে নারকেল গাছ নিয়ে কিছু কথা

রাসেলস ভাইপার : আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা

ব্যাংকিং সেক্টরের অনিয়ম দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে

হুমকিতে সমুদ্র, ঝুঁকিতে উন্নয়নশীল দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে কি জলাঞ্জলি দিয়েছে মোদি প্রশাসন

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ : আইন কী বলে

হাজার টাকার বাগান খাইল পাঁচ সিকার ছাগলে

বাংলাদেশের উন্নতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর লজ্জা

রম্যগদ্য : ‘ন্যায়-অন্যায় জানি নে, জানি নে...’

ছবি

কুরবানির ছাগল তাকে চিনতে পেরেছে

ছবি

সুইডিশ মিডসামার : এক আনন্দময় দিনের সূচনা

ছবি

আধুনিক রূপকথা এবং আমাদের রাজাদের গল্প

গাছে গাছে সবুজ হোক দেশ

কত বিষে আমাদের বসবাস

ছবি

তিস্তার দুই নয়নে দুই অশ্রুধারা

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

আদিবাসীরা বৈষম্যের শিকার

ছবি

নারীর অগ্রযাত্রা

ছবি

সিলেট-সুনামগঞ্জের ‘জলাবদ্ধ বন্যার’ দায় কার?

ছবি

বুড়িতিস্তা রিজার্ভার খনন : কৃষক কি উপকৃত হবে?

সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে কী হচ্ছে?

উচ্ছেদকৃত দলিতদের পুনর্বাসন করুন

রম্যগদ্য : অভিযোগ ‘অভিযোগ’ নয়

কেন হেরে গেলেন সেলিম

নীরবে-নিভৃতে কাজ করা এক কৃষিবিজ্ঞানীর কথা

অর্থনীতি কী অবস্থায় আছে?

কোরবানির চামড়ার হকদার

যোগাযোগ অধ্যয়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ

এমপি আনারকে নিয়ে যত আইনি জটিলতা

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন

দূর হোক মনের পশুত্ব

মনের পশুত্বের প্রতীকী ত্যাগের আরেক নাম কোরবানি

ঈদে সুস্থ খাদ্যাভ্যাস

এমআইটি : প্রযুক্তির সৃষ্টি রহস্যের খোঁজ

কবিগুরুর বাণী ‘প্রমাণিত মিথ্যা’

কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধ হবে কিভাবে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মাদকমুক্ত দেশ গড়তে প্রয়োজন প্রতিরোধ কার্যক্রম

অরূপরতন চৌধুরী

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

দেশে অনেক সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান। তার মধ্যে মাদকাসক্তি বড় একটি সমস্যা এবং এটি বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকদ্রব্য, ধূমপান ও তামাক সেবন মানুষের অকাল মৃত্যু এবং স্বাস্থ্যহানির অন্যতম প্রধান কারণ। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মের বিপথগামিতাও সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের বড় অংশের জনগোষ্ঠী কিশোর-তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে বলা হয় ইয়ুথ ডিভিডেন্ট। বাংলাদেশে ৪৯% মানুষের বয়স ২৪ বা এর নিচে অর্থাৎ ৪৯% জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। বেসরকারি হিসাব মতে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। মাদকসেবীদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, ইয়াবা সেবনকারী শতকরা ৮৫ ভাগই তরুণ যুবসমাজ! ধারণা করা হচ্ছে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকাসক্ত ব্যক্তির আসক্তি তাকে মানসিক ও শারীরিক রোগসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার আশঙ্কা সৃষ্টি করে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন রোগের মতো এইচআইভি এইডসের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা মাদক গ্রহণকালীন সময়ে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ঝুঁকির্পূণ আচরণ।

মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত, যা গবেষণায় প্রমাণিত। ধূমপানে অভ্যস্ততার মধ্য দিয়ে তরুণরা মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীতে ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেন, আফিস, কোডিন, মরফিন, এলএসডিসহ বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে মাদকাসক্তরা কিডনি, লিভার, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি। কিন্তু, মাদকের সঙ্গে জড়িত অসাধু চক্র আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের মাদকের রাজ্যে টানতে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করছে অসাধু মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীরা। এটিও বড় চ্যালেঞ্জরূপে আবির্ভূত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে ৮০ শতাংশেরও বেশি কিশোর অপরাধী মাদকাসক্ত এবং তাদের বেশির ভাগই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। উপরন্তু, ৮৫ শতাংশ কিশোর অপরাধী মাদক কেনার কথা স্বীকার করেছে এবং ৫৫ শতাংশ স্বীকার করেছে যে তারা মাদক বিক্রি করেছে। এদের অধিকাংশ স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকেই পরিচয় ঘটছে মাদকের সঙ্গে।

মূল্যবোধের অবক্ষয় সামাজিক অপরাধের বিস্তার ঘটাচ্ছে। সন্তানের কাছে বাবা পরম নির্ভরতার স্থান। স্ত্রীর কাছে স্বামী নিরাপত্তার অনুষঙ্গ। অথচ সম্প্রতি, বগুড়ায় এক পাষ- স্বামী তার স্ত্রী ও এক বছর বয়সী ছেলেকে স্থানীয় একটি হোটেলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। চলতি মাসে নেশার গাজীপুরের কাপাসিয়ায় টাকার জন্য ঘরে টানা দুই দিন দুই দফায় নিজেদের বাড়িতে আগুন দেন কামরুজ্জামান নামক এক মাদকাসক্ত। এতে বাড়ির পাঁচ কক্ষের সব আসবাব পুড়ে যায়। ঈশ্বরদীতে ইপিজেডে এক নারী কর্মী নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার হন। তার ওপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাবেক স্বামী। তার অপরাধ, তিনি মাদকাসক্ত সাবেক স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসারের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিলেন না। আবার সম্প্রতি, ঢাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের গার্ডরুমের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ কনস্টেবল কাউসার আলী এসএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে তার সহকর্মী কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে হত্যা করেন। এ দুর্ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন শাখরুখও আহত হন। ঘাতক পুলিশ কনস্টেবল মাদকাসক্ত ছিলেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছে। এ ঘটনায় নতুন করে পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করার বিষয়টি সামনে উঠে আসে, যা অনেকদিন যাবত নীতিনির্ধারণী সভায় বারবার আলোকপাত করে আসছি কিন্তু ফল আসছে না। এরকম ঘটনায় শুধু বিষয়টি কিছুটা আলোচনায় আসে। আশা করছি, এবার পুলিশ সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’ জোরালো গতি পাবে।

ডোপ টেস্ট কী? মূলত, যারা নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে ওই নেশাজাতীয় পদার্থের কিছুটা হলেও থেকে যায়। আর সেটিই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। কোনো ব্যক্তি আদৌ মাদকাসক্ত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় তাকেই ডোপ টেস্ট বলে। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মূত্র বা রক্ত, আবার কখনো দুটির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মাদক গ্রহণ করা ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শেষ ১ সপ্তাহে মুখের লালার মাধ্যমে, শেষ ২ মাস রক্তের মাধ্যমে, শেষ ১২ মাস বা ১ বছরে চুল পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যায় মাদকের নমুনা। বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সব চাকরিতে প্রবেশকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে মাদক পরীক্ষার সনদ বা ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয়। আবার চাকরিতে থাকাকালীন কোনো কর্মচারী বা কর্মকর্তার আচরণ সন্দেহজনক হলে যে কোনো সময় তার ডোপ টেস্ট করানোও হতে পারে।

মাদকাসক্তি সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন মাদক সংক্রান্ত অপরাধে। মাদকজনিত অপরাধের মাঝে বর্তমানে কিশোর গ্যাং অন্যতম সমস্যা। মাদকের খরচ জোগাতে কিশোর ও কিশোরী উভয়ই এই অপরাধ কর্মকা- পরিচালনাকারী গ্যাংয়ের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। মাদক ব্যবসা, হত্যা, খুন, এলাকাতে আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, রাস্তায় পরিকল্পিত সংঘাত তৈরির মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রাজধানীতে সক্রিয় অপরাধী চক্র কিশোর গ্যাং। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বিভিন্ন অভিযান ও গ্রেপ্তার বাড়লেও কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই সামনে আসছে নতুন নতুন গ্যাংয়ের নাম। ফলে মাদক সমস্যা প্রতিরোধে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমন্বিত প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি। যেখানে মনোসামাজিক, নৈতিক ও সামাজিকরণ শিক্ষা প্রদান এর বিষয়সমূহ সর্বস্তরে পরিচালনার উদ্যেগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বর্তমানে উদ্বেগজনক বিষয় হলোÑ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সম্পৃক্ততা! সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় অন্যতম বড় অনুষঙ্গ হলো ইন্টারনেট। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসাবাণিজ্য প্রায় সবখানেই ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগণ্য ভূমিকা এখন দৃশ্যমান। পক্ষান্তরে, কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের অপব্যবহারও আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বর্তমানে দেশে শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে খোলামেলাভাবেই বিক্রি হচ্ছে মাদকজাতীয় দ্রব্য। অসাধু মাদক মাদক ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা ক্রেতাদেরকে (বিশেষত: তরুণ জনগোষ্ঠী যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বেশি ব্যবহার করে) তারা নিজেদের মধ্যে নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে মাধ্যমটি ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি হচ্ছে ফেসবুক।

মাদকের বিস্তারের ক্ষেত্রে বড় উপাদান হলোÑ তামাকজাত দ্রব্য। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত। যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে তারা প্রথমে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়, তারপর মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত হয়। ফ্যাশন হিসেবে অসংখ্য তরুণ আজকাল মাদক সেবনের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার কিছু কিছু প্রকাশ পাচ্ছে। এগুলো মানুষকে ক্ষতিকর নেশা সেবনে উদ্বুদ্ধ করে। বিষণœতা থেকে মাদক গ্রহণ এমনকি জীবনকে বিপন্ন করে তুলছেন অনেকে। তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার হতে বিরত রাখতে হবে। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপান, মাদকসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা জরুরি।

মাদকাসক্তি বর্তমান বিশে^ ক্রমবর্ধমান সমস্যারগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাদক শব্দটি শুনলে বেশির ভাগ মানুষই বিচলিত হয় বা ভয় পায়, আর মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ঘৃণা ও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। আমাদের আশপাশে আত্মীয় পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব যে কারও মাদকাসক্তি সমস্যার কথা জানলে তাকে সবাই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। এমনকি তার পরিবারকে বিভিন্ন অপবাদমূলক ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে। যেমনÑ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মাদকাসক্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে অপমান করা, যোগ্যতা থাকলেও কর্মক্ষেত্রে চাকুরিচ্যুত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন নেতিবাচক আচরণ করা হয়। ফলে একজন মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবারও অনেক সময় সমাজের এই সমস্ত নেতিবাচক আচরণের ভয়ে মাদক সমস্যা সমাধানের জন্য কারো কাছে সহায়তা চাইতে লজ্জা ও সংকোচ করে থাকেন এবং এই সমস্যা সামনে নিয়ে আসতে চায় না। ফলস্বরূপ সমস্যার তীব্রতা যখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়, তখন মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির সমস্যার ধরণ অনুযায়ী কি ধরণের চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন তা না বিবেচনা করেই চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেন, আবার কখনো বিয়ে দেয়া, তার ওপর শারিরীক ও মানসিক অত্যাচারসহ বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়।

মাদকাসক্তদের শাষণ বা ঘৃণা অবহেলা না করে তাকে ¯েœহ ভালোবাসা দিয়ে নিরাময় কেন্দ্রে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে হবে। যাতে তারা সমাজের বোঝা না হয়ে সুস্থ হয়ে আবার পরিবারে ফিরে আসতে পারে। তাই পিতামাতার প্রতি অনুরোধ আপনার সন্তানকে মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে লুকিয়ে রাখবেন না, ঘৃণা করবেন না বরং তাকে ¯েœহ ভালোবাসা দিয়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যান। তাকে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দিন। সঠিক চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে একদিন তারাই সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।

আমাদের দেশের বর্তমানে মাদক পরিস্থিতিতে কিশোর-তরুণরা যেভাবে অপরাধের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে, তা চলমান থাকলে দেশে মাদক ও সামাজিক অপরাধের বিস্তৃতি থামানো কঠিন হয়ে পড়বে। দেশে মাদক প্রতিরোধ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য বিনিয়োগ জরুরি।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা]

back to top