alt

উপ-সম্পাদকীয়

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

আর কে চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

মাদক দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স সত্ত্বেও এর আগ্রাসন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মাদক কারবারিরা নৌ, সড়ক, রেল ও আকাশপথ ব্যবহার করে রাজধানীসহ সারাদেশে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাচার ও বিক্রির ক্ষেত্রে তারা নিত্যনতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে টার্গেট করেও দেশে মাদকের ব্যবসা জমে উঠছে।

বিজিবি গত বছর তাদের মাদকবিরোধী অভিযানে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭৪ ইয়াবা, প্রায় ১৪৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৩ বোতল ফেনসিডিল, ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৪৯ বোতল বিদেশি মদ, ৯ হাজার ২৬৩ লিটার বাংলা মদ, ৫৭ হাজার ৮৯৯ ক্যান বিয়ার, ২২ হাজার ২২৯ কেজি গাঁজা, ৩৩১ কেজি হেরোইন, প্রায় ১৩ কেজি কোকেন, ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৯ নেশাজাতীয় ও উত্তেজক ইনজেকশন, ১ লাখ ৫৩ হাজার ২১০টি অ্যানেগ্রা বা সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৬৫ হাজার ৬৬৪টি ইস্কাফ সিরাপসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দৃশ্যত সদা তৎপর; কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরাও স্বীকার করেন, উদ্ধারকৃত মাদকের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি নয়। অভিজ্ঞজনদের ধারণা- এ হার সর্বাধিক ৫ শতাংশ। অভিযোগ রয়েছে- চোরাচালান ও মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িতদের বড় অংশের মধ্যে সততার সংকট প্রবল। মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বাগ্রে সংশ্লিষ্টদের সততা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি।

দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সব বয়সের মানুষই মাদকের দিকে ঝুঁকছে। এমনকি তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। একবার যারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে তারা আর তা থেকে মুক্ত হতে পারে না।

অন্যদিকে মাদক সহজলভ্য হওয়ায় নতুন করে অনেকেই আসক্ত হচ্ছে। এখন মাদক এতটাই সহজলভ্য যে শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামেও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই মাদকের প্রভাব কমানো যাচ্ছে না। বরং এর প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মাদকের উপকরণে বদল ঘটছে। বছর দুয়েক আগে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের পর পত্রিকার খবরেই বলা হয়েছিল ইয়াবার চালান আরো বেড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞই তখন বলেছিলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিল না। তার কারণেই সমস্যাগুলো হচ্ছে মাদক না কমে বরং পরিমাণে ও উপকরণে বাড়ছে।

মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই ইয়াবা-আইসসহ সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

তরুণ-যুবকদের বেশ বড় একটা অংশ এই আত্মঘাতী আসক্তির শিকার। তবে মাদকাসক্তি শুধু এই বয়সিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পূর্ণবয়স্ক, এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তির এলাকাও সীমাবদ্ধ নেইÑ রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-মফস্বল পর্যন্ত সারা দেশে মাদকাসক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে; কিন্তু এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। বাংলাদেশে কতসংখ্যক মানুষ মাদকাসক্ত, এ বিষয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কিংবা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। জানা যায়, সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তারা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করেছিল, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

পরিসংখ্যান না থাকা কোনো সামান্য ব্যাপার নয়; এ থেকে বোঝা যায় সমস্যাটি সরকারের কাছে গুরুত্ব পায় কিনা। সংখ্যার হিসাব প্রকাশ পেলে সমস্যাটা যে কত ব্যাপক, তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেত এবং সমাজে এ বিষয়ে কিছু করার জোরালো তাগিদ সৃষ্টি হতো।

মাদকাসক্তি স্থায়ী রূপধারণ করেছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারহীনতার কারণে। দেশের অসংখ্য স্থানে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা চলে। নির্মূল করা দূরে থাক, নিয়ন্ত্রণও করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ মাদকদ্রব্য আসে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে। সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান ও দেশের ভেতরে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা অত্যন্ত কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জবাবদিহি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। কারণ তাদের একাংশের সহযোগিতা ছাড়া এই মাত্রায় মাদকের ব্যবসা চলা সম্ভব নয়।

মাদকাসক্তি দূর করার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক প্রচেষ্টাও খুব জরুরি। প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ইত্যাদি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

মাদককে বলা হয় মরণনেশা। এই নেশায় যারা একবার আসক্ত হয়, তারা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। বিজ্ঞজনদের কোনো পরামর্শ-উপদেশ এই নেশা আসক্তদের সুপথে ফেরাতে পারে না। এভাবে সমাজে বেড়ে যায় মাদকসেবীর সংখ্যা। এই মাদক এখন দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বিস্তার লাভ করছে। লাখো মানুষ আসক্ত হচ্ছে এই মরণনেশায়।

এর আগে হেরোইন নামে এক মাদক দ্রুত প্রভাব বিস্তার করেছিল মাদকসেবীদের মাঝে। এই নেশায় একবার আসক্ত হলে মাদকসেবীরা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতো। অবশেষে এসব মাদককে অতিক্রম করে সর্বগ্রাসী প্রভাব বিস্তার করে এক নম্বর স্থান দখল করে আছে সেই ইয়াবা। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করার পরও দেশে মাদকের ব্যবহার ও পাচার সন্তোষজনক মাত্রায় রোধ করা যায়নি। সরাসরি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে অনেক মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এত সব কঠোর সিদ্ধান্তের পরও থামানো যাচ্ছে না মাদকের কারবার। দেশে আইনি শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি থাকতে পারে না।

তারা যতই ক্ষমতাধর হোক আইনি শক্তির কাছে এক সময় তাদের মাথা নত করতে হবে। সরকারকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীরা যেমন পাচারের কৌশল পাল্টায়, তেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচক্ষণ কর্মকর্তাদেরও কৌশলী হতে হবে। তাহলেই তাদের পরাজিত করা সম্ভব।

আমরা মনে করি, সরকারের নীতি-কৌশলের রূপান্তর ঘটিয়ে হলেও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে আগামী দিনের কর্ণধার দেশের যুব সমাজ। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান সফল হোক- এই প্রত্যাশা আমাদের।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে

বন্যার বিভিন্ন ঝুঁকি ও করণীয়

প্রশ্নে জর্জরিত মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব

রম্যগদ্য : এ-পাস, না ও-পাস?

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি, উত্তরণের উপায়

গৃহকর্মী নির্যাতনের অবসান হোক

মাঙ্কিপক্স : সতর্কতা ও সচেতনতা

সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

বাদী কিংবা বিবাদীর মৃত্যুতে আইনি ফলাফল কী?

নদ-নদীর সংজ্ঞার্থ ও সংখ্যা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

রাষ্ট্র সংস্কার ও পরিবেশ ন্যায়বিচার

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য কি দূর হবে

আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তহীন কাজ

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

ছবি

ইসমাইল হানিয়ের করুণ মৃত্যু

ক্যাপিটল : মার্কিনিদের গণতন্ত্রের প্রতীক

হাওর উন্নয়নে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

আর কে চৌধুরী

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

মাদক দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স সত্ত্বেও এর আগ্রাসন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মাদক কারবারিরা নৌ, সড়ক, রেল ও আকাশপথ ব্যবহার করে রাজধানীসহ সারাদেশে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাচার ও বিক্রির ক্ষেত্রে তারা নিত্যনতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে টার্গেট করেও দেশে মাদকের ব্যবসা জমে উঠছে।

বিজিবি গত বছর তাদের মাদকবিরোধী অভিযানে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭৪ ইয়াবা, প্রায় ১৪৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৩ বোতল ফেনসিডিল, ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৪৯ বোতল বিদেশি মদ, ৯ হাজার ২৬৩ লিটার বাংলা মদ, ৫৭ হাজার ৮৯৯ ক্যান বিয়ার, ২২ হাজার ২২৯ কেজি গাঁজা, ৩৩১ কেজি হেরোইন, প্রায় ১৩ কেজি কোকেন, ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৯ নেশাজাতীয় ও উত্তেজক ইনজেকশন, ১ লাখ ৫৩ হাজার ২১০টি অ্যানেগ্রা বা সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৬৫ হাজার ৬৬৪টি ইস্কাফ সিরাপসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দৃশ্যত সদা তৎপর; কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরাও স্বীকার করেন, উদ্ধারকৃত মাদকের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি নয়। অভিজ্ঞজনদের ধারণা- এ হার সর্বাধিক ৫ শতাংশ। অভিযোগ রয়েছে- চোরাচালান ও মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িতদের বড় অংশের মধ্যে সততার সংকট প্রবল। মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বাগ্রে সংশ্লিষ্টদের সততা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি।

দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সব বয়সের মানুষই মাদকের দিকে ঝুঁকছে। এমনকি তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। একবার যারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে তারা আর তা থেকে মুক্ত হতে পারে না।

অন্যদিকে মাদক সহজলভ্য হওয়ায় নতুন করে অনেকেই আসক্ত হচ্ছে। এখন মাদক এতটাই সহজলভ্য যে শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামেও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই মাদকের প্রভাব কমানো যাচ্ছে না। বরং এর প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মাদকের উপকরণে বদল ঘটছে। বছর দুয়েক আগে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের পর পত্রিকার খবরেই বলা হয়েছিল ইয়াবার চালান আরো বেড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞই তখন বলেছিলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিল না। তার কারণেই সমস্যাগুলো হচ্ছে মাদক না কমে বরং পরিমাণে ও উপকরণে বাড়ছে।

মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই ইয়াবা-আইসসহ সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

তরুণ-যুবকদের বেশ বড় একটা অংশ এই আত্মঘাতী আসক্তির শিকার। তবে মাদকাসক্তি শুধু এই বয়সিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পূর্ণবয়স্ক, এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তির এলাকাও সীমাবদ্ধ নেইÑ রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-মফস্বল পর্যন্ত সারা দেশে মাদকাসক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে; কিন্তু এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। বাংলাদেশে কতসংখ্যক মানুষ মাদকাসক্ত, এ বিষয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কিংবা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। জানা যায়, সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তারা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করেছিল, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

পরিসংখ্যান না থাকা কোনো সামান্য ব্যাপার নয়; এ থেকে বোঝা যায় সমস্যাটি সরকারের কাছে গুরুত্ব পায় কিনা। সংখ্যার হিসাব প্রকাশ পেলে সমস্যাটা যে কত ব্যাপক, তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেত এবং সমাজে এ বিষয়ে কিছু করার জোরালো তাগিদ সৃষ্টি হতো।

মাদকাসক্তি স্থায়ী রূপধারণ করেছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারহীনতার কারণে। দেশের অসংখ্য স্থানে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা চলে। নির্মূল করা দূরে থাক, নিয়ন্ত্রণও করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ মাদকদ্রব্য আসে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে। সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান ও দেশের ভেতরে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা অত্যন্ত কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জবাবদিহি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। কারণ তাদের একাংশের সহযোগিতা ছাড়া এই মাত্রায় মাদকের ব্যবসা চলা সম্ভব নয়।

মাদকাসক্তি দূর করার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক প্রচেষ্টাও খুব জরুরি। প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ইত্যাদি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

মাদককে বলা হয় মরণনেশা। এই নেশায় যারা একবার আসক্ত হয়, তারা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। বিজ্ঞজনদের কোনো পরামর্শ-উপদেশ এই নেশা আসক্তদের সুপথে ফেরাতে পারে না। এভাবে সমাজে বেড়ে যায় মাদকসেবীর সংখ্যা। এই মাদক এখন দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বিস্তার লাভ করছে। লাখো মানুষ আসক্ত হচ্ছে এই মরণনেশায়।

এর আগে হেরোইন নামে এক মাদক দ্রুত প্রভাব বিস্তার করেছিল মাদকসেবীদের মাঝে। এই নেশায় একবার আসক্ত হলে মাদকসেবীরা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতো। অবশেষে এসব মাদককে অতিক্রম করে সর্বগ্রাসী প্রভাব বিস্তার করে এক নম্বর স্থান দখল করে আছে সেই ইয়াবা। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করার পরও দেশে মাদকের ব্যবহার ও পাচার সন্তোষজনক মাত্রায় রোধ করা যায়নি। সরাসরি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে অনেক মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এত সব কঠোর সিদ্ধান্তের পরও থামানো যাচ্ছে না মাদকের কারবার। দেশে আইনি শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি থাকতে পারে না।

তারা যতই ক্ষমতাধর হোক আইনি শক্তির কাছে এক সময় তাদের মাথা নত করতে হবে। সরকারকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীরা যেমন পাচারের কৌশল পাল্টায়, তেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচক্ষণ কর্মকর্তাদেরও কৌশলী হতে হবে। তাহলেই তাদের পরাজিত করা সম্ভব।

আমরা মনে করি, সরকারের নীতি-কৌশলের রূপান্তর ঘটিয়ে হলেও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে আগামী দিনের কর্ণধার দেশের যুব সমাজ। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান সফল হোক- এই প্রত্যাশা আমাদের।

[লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক]

back to top