জাঁ-নেসার ওসমান
“কি রে ভাই, সক্কাল সক্কাল হায়দ্রাবাদের চুড়ির টাল লাগাইছেন! ভাবিরে কি ঈদের গিফট দিবেননি?”
“ওই বেক্কল তোর ভাবি কয়টারে?”
“ক্যা, আমি তো জানি একটা। আবার চামেচুমে নতুন কুনো কামের বেটিরে বিয়া করেন নাই তো?”
“আবে চুগলীখোর, কামের বেটি পেটের দায়ে খাইতে পায় না তাই তোর বাড়িতে ঝির কাম করে তাই বইলা হ্যের দারিদ্র্যের সুযোগে হ্যের লগে আদিরস, না ভাই সৃষ্টিকর্তা আমারে অতো
কাঙ্গাল বানাই নাই।”
“তয় ভাবির কথা জিগাইলেন যে ?”
“নিচে চুড়ি দেখছস কয়টা? ”
“তয় গোডাউন টোডাউন দ্যেইখ্যা তো মনে হইলো এক কোটি চুড়িতো হইবোই! ”
“এক কোটি না রে ব্যেটা, ষুল্লো কোটি চুড়ি।”
“এই ষোলো কোটি চুড়ি ভাবিরে ঈদে গিফট দিবেন !”
“তখন থেইক্যা খালি ভাবি ভাবি করতাছোস; ওই খাচ্চর একটা বৌর কয়টা চুড়ি লাগে?
এক ডজন, দুই ডজন, তিন ডজন, দশ ডজন, বারো ডজন’ একশ ডজনের বেশি তো না ?”
“ওকে, ঠিক আছে, এক বৌর তো এত চুড়ি লাগে না।”
“তায়লে বুঝ! আমার গো ডাউনে চুড়ি আনছি, ষুল্লো কুটি।”
“ষোল কোটি চুড়ি! এ্যাতো চুড়ি! বেচবেন ক্যেমনে ?”
“আরে টিকটিকির পো, তুই কস কি? ষুল্ল কুটি ব্যেচা কুনো ব্যাপার। ভারতের হায়দ্রাবাদের একটা চুড়ির কারখানায় বছরে তৈরি করে পঞ্চাশ কুটি চুড়ি। আর আমি তো মাত্র ষুল্লো কুটি চুড়ি আনছি, হালাগো তিন মাসের প্রডাকশন।”
“আরে ভাই যে দেশে মহিলা মাত্র আট কুটি সেখানে আবার আজকালকার ডিজিটাল মাইয়ারা চুড়িতো পরেই না, তারা আবার গুরু নানাকের কড়া পরে ফলে এ্যতো চুড়ি বেঁচতে, কষ্ট হইবো।
অবশ্য বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ গার্মেন্টস এক্সপোর্টার, ফলে গার্মেন্টসের কর্মীরা কিছু কিনতে পারে।”
“তুই কি মনে কর, এতো দিন, গার্মেন্টস মহিলারা চুড়ি কিনে নাই?”
“তাতো কিনছে।”
“ওই গার্মেন্টসের কর্মীর কথা চিন্তা করে আমি চুড়ি আমদানি করি নাই রে আমি সারাদেশের আঠারো কুটি জনগণের কথা চিন্তা করে ষুল্লো কুটি চুড়ি আনছি, কারণ সবাই যদি এক হাতে একটা করে চুড়ি পরে তাহলে লাগবে ষুল্লো কুটি আর যদি দুই হাতে অন্তত
দুইটা করে চুড়ি পরে তাইলে লাগবো বত্রিশ কুটি। তুই ব্যবসাটা বুজছস?”
“বলেন কি, বাংলাদেশের সকল জনগন পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সবাই চুড়ি পরবে? ”
“কেন নয়? তুই কি জানিস কেন পৃথিবীতে মহিলারা চুড়ি পরে?”
“চুড়ি আবার কেনো পরে? হাতটা খালি খালি লাগবো, তাছাড়া বিয়ার সময় ডাইরেক্ট যৌতুকের আইন ফাঁকি দিয়া সোনার চুড়ির বাহানায়, যৌতুক লইবো।”
“আরে বেকুব যৌতুকের আইন তো সেইদিন হইছে, তার আগে কি ভদ্রমহিলারা চুড়ি পরে নাই?”
“ঠিকইতো যৌতুকের আইনের অনেক আগেই শ্রদ্ধেয় মহিলারা মা-বোনেরা নিশ্চয় চুড়ি পরেছেন। তাহলে ইনার চুড়ি পরে ক্যেন?”
“শোন তোকে বুঝিয়ে বলি, শুরু করিতেছি বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণের নামে যারা পরম করুণাময় এবং অত্যন্ত দয়ালু, এই দয়ালু দেশবাসিকে চুড়ি পরার মাজেজা বুঝিয়ে
বলছি, বিশ্বব্রহ্মা-ের আদিতে দেখা গেলো যে মহিলারা যদি হাতে চুড়ি পরে তাহালে চুড়ির ঠোকাঠুকিতে যে শব্দ হয় এবং ওই শব্দ যত দূরে যায় ততদূর পর্যন্ত কোনো অশুভ আত্মা থাকতে পারে না।”
“হেঁঃ হেঁঃ এগুলাতো মাইথোলজি মানে মিথ্যাওলজি। এইগুলা বিজ্ঞানে মানে ডিজিটাল বাংলাদেশে চলে না।”
“তাহলে বিজ্ঞানে কি বলে সেইটা শুনো। বিজ্ঞান বলে শ্রদ্ধেয় ভদ্র মহিলাদের হাতের সোনার বা রুপার চুড়ির ঘর্ষণের ফলে যে বিদুৎ উৎপাদিত হয় তা রমণীয় তরুণীর ত্বকের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত
হয়ে নারীর শরীরের মাঝে অবস্থিত রোগজীবাণু নির্মূলে সহায়তা করে।”
“ওরেব্বাবারে চুড়ি পরার আবার এতো বিজ্ঞান! আসলেই আমরা বাঙ্গালরা অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ, আমরা আর মানুষ হইলাম না ! জন্তু জানোয়ারের পর্যায়েই থ্যাইক্কা গেলাম।”
“এবার বুঝেছিস, এই হলো সংক্ষেপে চুড়ি পরার শানে-নজুল।”
“তাহলে আমরা পুরুষরাও চুড়ি পরলে এই উপকার পামু? ”
“নিশ্চয় ! তোরাও উপকার পাবি আর সেই চিন্তা থেকেই আমি কুটি কুটি চুড়ি ইম্পোর্ট করছি”
“ভাই আপনি ব্যবসায়ী না, আপনি আসলেই সত্যিকারের দেশ প্রেমিক! দেশের ভালোর জন্য আপনি কত্তো গভীরে চিন্তা করেন। দেন ভাই দেন পায়ের ধুলা দেন মাথায় রাখি।”
“পায়ের ধুলা পরে নিস এখন শোন, এই যে তোর দেশে গৃহভৃত্যের চারশ কোটি টাকা! প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা! রামছাগলের, দুইটা বৌ, রামছাগলের শিশুপার্ক, ড্রাইভারের প্রশ্নপত্র বিক্রি, পিস্তলেরবাঁট দিয়া মাইরা ব্রেন ফাটানো, ডাইরেক্ট রানে নল ঠ্যেকায়া গুল্লি, হকার থ্যেইক্কা
প্রতিদিন লাইনে টাকা তোলা, এসব অন্যায় থ্যেইক্কা তোর সমাজটারে বাঁচাইতে ইচ্ছা করে না?”
“করে না মানে! এইডা কি কন! মুসলমানি করতে যায়া বাচ্চা মারে হালার কুনো বিচার নাই!
দরকার হইলে জানকোরবান এইসব আর ভাল্লাগে না ভাই। এসব অন্যায় দূর করা উচিত।”
“তাই আমি বলছিলাম যদি আঠারো কোটি জনগণ হাতে চুড়ি পরে, তাহলে চুড়ির ঠোকাঠুকির শব্দে সব অন্যায় দূরে মানে পাশের দেশের বার্মা আর ভারতে চলে যাবে, আর আমাদের সোণার বাংলা হীরার বাংলায় পরিণত হবে।”
“গুরু আপনের জবাব নাই, হালার কিসের ক্ষুদিরাম, মাস্টার’দা, আপনে আসলে ডিজিটাল বৈজ্ঞানিক দেশপ্রেমিক। দেন দেন আমারে দশ-বিশ ডজন চুড়ি দেন, নিজে পরুম, পরিবার, মহল্লা, এলাকার সবাইরে চুড়ি পরামু আর সারা দেশের অন্যায় দূর করুম। দেশের সবাই চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকবে আর চুড়ির ঘষার শব্দে অন্যায় সব বিদেশে যাবে। সেøাগানটা কেমন
হইছে?”
“নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!”
[লেখক : চলচ্চিত্রকার ]
জাঁ-নেসার ওসমান
বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪
“কি রে ভাই, সক্কাল সক্কাল হায়দ্রাবাদের চুড়ির টাল লাগাইছেন! ভাবিরে কি ঈদের গিফট দিবেননি?”
“ওই বেক্কল তোর ভাবি কয়টারে?”
“ক্যা, আমি তো জানি একটা। আবার চামেচুমে নতুন কুনো কামের বেটিরে বিয়া করেন নাই তো?”
“আবে চুগলীখোর, কামের বেটি পেটের দায়ে খাইতে পায় না তাই তোর বাড়িতে ঝির কাম করে তাই বইলা হ্যের দারিদ্র্যের সুযোগে হ্যের লগে আদিরস, না ভাই সৃষ্টিকর্তা আমারে অতো
কাঙ্গাল বানাই নাই।”
“তয় ভাবির কথা জিগাইলেন যে ?”
“নিচে চুড়ি দেখছস কয়টা? ”
“তয় গোডাউন টোডাউন দ্যেইখ্যা তো মনে হইলো এক কোটি চুড়িতো হইবোই! ”
“এক কোটি না রে ব্যেটা, ষুল্লো কোটি চুড়ি।”
“এই ষোলো কোটি চুড়ি ভাবিরে ঈদে গিফট দিবেন !”
“তখন থেইক্যা খালি ভাবি ভাবি করতাছোস; ওই খাচ্চর একটা বৌর কয়টা চুড়ি লাগে?
এক ডজন, দুই ডজন, তিন ডজন, দশ ডজন, বারো ডজন’ একশ ডজনের বেশি তো না ?”
“ওকে, ঠিক আছে, এক বৌর তো এত চুড়ি লাগে না।”
“তায়লে বুঝ! আমার গো ডাউনে চুড়ি আনছি, ষুল্লো কুটি।”
“ষোল কোটি চুড়ি! এ্যাতো চুড়ি! বেচবেন ক্যেমনে ?”
“আরে টিকটিকির পো, তুই কস কি? ষুল্ল কুটি ব্যেচা কুনো ব্যাপার। ভারতের হায়দ্রাবাদের একটা চুড়ির কারখানায় বছরে তৈরি করে পঞ্চাশ কুটি চুড়ি। আর আমি তো মাত্র ষুল্লো কুটি চুড়ি আনছি, হালাগো তিন মাসের প্রডাকশন।”
“আরে ভাই যে দেশে মহিলা মাত্র আট কুটি সেখানে আবার আজকালকার ডিজিটাল মাইয়ারা চুড়িতো পরেই না, তারা আবার গুরু নানাকের কড়া পরে ফলে এ্যতো চুড়ি বেঁচতে, কষ্ট হইবো।
অবশ্য বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ গার্মেন্টস এক্সপোর্টার, ফলে গার্মেন্টসের কর্মীরা কিছু কিনতে পারে।”
“তুই কি মনে কর, এতো দিন, গার্মেন্টস মহিলারা চুড়ি কিনে নাই?”
“তাতো কিনছে।”
“ওই গার্মেন্টসের কর্মীর কথা চিন্তা করে আমি চুড়ি আমদানি করি নাই রে আমি সারাদেশের আঠারো কুটি জনগণের কথা চিন্তা করে ষুল্লো কুটি চুড়ি আনছি, কারণ সবাই যদি এক হাতে একটা করে চুড়ি পরে তাহলে লাগবে ষুল্লো কুটি আর যদি দুই হাতে অন্তত
দুইটা করে চুড়ি পরে তাইলে লাগবো বত্রিশ কুটি। তুই ব্যবসাটা বুজছস?”
“বলেন কি, বাংলাদেশের সকল জনগন পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সবাই চুড়ি পরবে? ”
“কেন নয়? তুই কি জানিস কেন পৃথিবীতে মহিলারা চুড়ি পরে?”
“চুড়ি আবার কেনো পরে? হাতটা খালি খালি লাগবো, তাছাড়া বিয়ার সময় ডাইরেক্ট যৌতুকের আইন ফাঁকি দিয়া সোনার চুড়ির বাহানায়, যৌতুক লইবো।”
“আরে বেকুব যৌতুকের আইন তো সেইদিন হইছে, তার আগে কি ভদ্রমহিলারা চুড়ি পরে নাই?”
“ঠিকইতো যৌতুকের আইনের অনেক আগেই শ্রদ্ধেয় মহিলারা মা-বোনেরা নিশ্চয় চুড়ি পরেছেন। তাহলে ইনার চুড়ি পরে ক্যেন?”
“শোন তোকে বুঝিয়ে বলি, শুরু করিতেছি বাংলার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণের নামে যারা পরম করুণাময় এবং অত্যন্ত দয়ালু, এই দয়ালু দেশবাসিকে চুড়ি পরার মাজেজা বুঝিয়ে
বলছি, বিশ্বব্রহ্মা-ের আদিতে দেখা গেলো যে মহিলারা যদি হাতে চুড়ি পরে তাহালে চুড়ির ঠোকাঠুকিতে যে শব্দ হয় এবং ওই শব্দ যত দূরে যায় ততদূর পর্যন্ত কোনো অশুভ আত্মা থাকতে পারে না।”
“হেঁঃ হেঁঃ এগুলাতো মাইথোলজি মানে মিথ্যাওলজি। এইগুলা বিজ্ঞানে মানে ডিজিটাল বাংলাদেশে চলে না।”
“তাহলে বিজ্ঞানে কি বলে সেইটা শুনো। বিজ্ঞান বলে শ্রদ্ধেয় ভদ্র মহিলাদের হাতের সোনার বা রুপার চুড়ির ঘর্ষণের ফলে যে বিদুৎ উৎপাদিত হয় তা রমণীয় তরুণীর ত্বকের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত
হয়ে নারীর শরীরের মাঝে অবস্থিত রোগজীবাণু নির্মূলে সহায়তা করে।”
“ওরেব্বাবারে চুড়ি পরার আবার এতো বিজ্ঞান! আসলেই আমরা বাঙ্গালরা অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগণ, আমরা আর মানুষ হইলাম না ! জন্তু জানোয়ারের পর্যায়েই থ্যাইক্কা গেলাম।”
“এবার বুঝেছিস, এই হলো সংক্ষেপে চুড়ি পরার শানে-নজুল।”
“তাহলে আমরা পুরুষরাও চুড়ি পরলে এই উপকার পামু? ”
“নিশ্চয় ! তোরাও উপকার পাবি আর সেই চিন্তা থেকেই আমি কুটি কুটি চুড়ি ইম্পোর্ট করছি”
“ভাই আপনি ব্যবসায়ী না, আপনি আসলেই সত্যিকারের দেশ প্রেমিক! দেশের ভালোর জন্য আপনি কত্তো গভীরে চিন্তা করেন। দেন ভাই দেন পায়ের ধুলা দেন মাথায় রাখি।”
“পায়ের ধুলা পরে নিস এখন শোন, এই যে তোর দেশে গৃহভৃত্যের চারশ কোটি টাকা! প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা! রামছাগলের, দুইটা বৌ, রামছাগলের শিশুপার্ক, ড্রাইভারের প্রশ্নপত্র বিক্রি, পিস্তলেরবাঁট দিয়া মাইরা ব্রেন ফাটানো, ডাইরেক্ট রানে নল ঠ্যেকায়া গুল্লি, হকার থ্যেইক্কা
প্রতিদিন লাইনে টাকা তোলা, এসব অন্যায় থ্যেইক্কা তোর সমাজটারে বাঁচাইতে ইচ্ছা করে না?”
“করে না মানে! এইডা কি কন! মুসলমানি করতে যায়া বাচ্চা মারে হালার কুনো বিচার নাই!
দরকার হইলে জানকোরবান এইসব আর ভাল্লাগে না ভাই। এসব অন্যায় দূর করা উচিত।”
“তাই আমি বলছিলাম যদি আঠারো কোটি জনগণ হাতে চুড়ি পরে, তাহলে চুড়ির ঠোকাঠুকির শব্দে সব অন্যায় দূরে মানে পাশের দেশের বার্মা আর ভারতে চলে যাবে, আর আমাদের সোণার বাংলা হীরার বাংলায় পরিণত হবে।”
“গুরু আপনের জবাব নাই, হালার কিসের ক্ষুদিরাম, মাস্টার’দা, আপনে আসলে ডিজিটাল বৈজ্ঞানিক দেশপ্রেমিক। দেন দেন আমারে দশ-বিশ ডজন চুড়ি দেন, নিজে পরুম, পরিবার, মহল্লা, এলাকার সবাইরে চুড়ি পরামু আর সারা দেশের অন্যায় দূর করুম। দেশের সবাই চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকবে আর চুড়ির ঘষার শব্দে অন্যায় সব বিদেশে যাবে। সেøাগানটা কেমন
হইছে?”
“নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!”
[লেখক : চলচ্চিত্রকার ]