alt

উপ-সম্পাদকীয়

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী নেতা ডা. মাসুদ পেজেশকিয়ান। দ্বিতীয় দফা ভোটে কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলিকে ২৮ হাজার ভোটে পরাজিত করে সংস্কারপন্থী এই নেতা ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ ভোট এবং সাঈদ জলিলি পেয়েছেন ১ কোটি ৩৫ লাখ ভোট। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলে আড়াই বছরের মাথায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পেজেশকিয়ানকে যারা ভোট দিয়েছে তাদের অধিকাংশই তরুণ, তারা ইরানের ধর্মীয় অনুশাসনে অতিষ্ঠ। ইরানের কট্টরপন্থী শাসনের প্রতি জনগণের অসন্তোষই পেজেশকিয়ানের জয়ের মূল কারণ। ইরানের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ভোটারের আস্থা না থাকায় নির্বাচনের প্রথম ধাপে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে। নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কট্টরপন্থী প্রার্থী সাইদ জালিলির ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে তরুণরা ভোট দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং দ্বিতীয় দফায় ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশ। এই তরুণ সমাজ বহুর্বিশ্ব থেকে ইরানের এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকাটাকেও পছন্দ করছে না। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট সংস্কারপন্থী, তিনি ইরানকে একঘরে হয়ে থাকা থেকে মুক্ত করতে চান। কিন্তু ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্সিয়াল সরকারের মতো নয়। দেশটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা; তিনি হচ্ছেন সৈয়দ আলী হোসেইনী খামেনি। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত খামেনি ইরানের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ১৯৮৯ সন থেকে অদ্যাবধি তিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত আছেন। মৃত্যুর পূর্বে রুহুল্লাহ খোমেনি তার উত্তরসূরি হিসেবে খামেনিকে মনোনীত করে যান। মনে হচ্ছে তিনি আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকবেন এবং তার একক কর্তৃত্বে দেশ পরিচালনা করবেন। সরকারের শুধু নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ নয়, সামরিক বাহিনী ও গণমাধ্যমও পরিচালিত হয় তার নির্দেশে। তার মতো ক্ষমতাধর একনায়ক পৃথিবীতে আরও কয়েকজন আছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মূলত তার প্রধান সহকারী মাত্র। শুধু দেশ শাসন নয়, তিনি ফতোয়াও দেন, তার ফতোয়া অনুযায়ী পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার ইসলামি বিধান অনুযায়ী নিষিদ্ধ। ইরানের প্রেসিডেন্ট বা সংসদীয় নির্বাচন পশ্চিমা দেশের মতো গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচন নয়। ইচ্ছা করলেই যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ইরানি নাগরিক নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে না। রাষ্ট্রপতি পদে কে বা কারা প্রার্থী হবে তা নির্ধারণ করে ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল। রাষ্ট্রপতি পদে চার নারীসহ মোট ৮০ জন প্রার্থিতা জমা দিলেও গার্ডিয়ান কাউন্সিল মাত্র ৪ জনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সুযোগ দেয়। প্রেসিডেন্ট পদে কোনো নারীকে আজ পর্যন্ত নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হয়নি। গার্ডিয়ান কাউন্সিল বা অভিভাবক পরিষদও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নয়। ১২ সদস্য বিশিষ্ট এই গার্ডিয়ান কাউন্সিলে কে সদস্য হবেন, আর কে হবেন না তাও নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনি। প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সব প্রার্থীকে গার্ডিয়ান কাউন্সিল দ্বারা যোগ্য হতে হয়। গার্ডিয়ান কাউন্সিল সংস্কারপন্থী প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সচরাচর বিরত রাখে। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ানকে বাদ দেয়া হয়নি; বাদ না দেয়ার অন্যতম প্রধান কারণ পেজেশকিয়ান সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনির বিশ্বস্ত। আরও একটি কারণও থাকতে পারে এবং তা হচ্ছেÑ ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে ইরান সম্ভবত নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে দিয়ে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চায়। অবশ্য কট্টরপন্থী হলেও যে নির্বাচন করার সুযোগ পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, প্রার্থীকে ইসলামিক অনুশাসন ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার প্রতি অনুগতও হতে হয়, একটু স্বাধীনচেতা হলেই আর মনোনয়ন পাওয়া যায় না। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহমুদ আহমাদিনেজাদও মনোনয়ন চেয়ে পাননি, কারণ তিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনির বিশ্বস্ততা হারিয়েছেন। ২০০৫ সালে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে আহমাদিনেজাদ প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সনে দ্বিতীয় বার। গরিব এক কামারের ঘরে জন্ম নেয়া ড. মাহমুদ আহমাদিনেজাদ খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। তাদের দুই রুমের বাসায় কয়েকটি কাঠের চেয়ার ছাড়া আর কোনো আসবাবপত্র নেই। প্রেসিডেন্ট ভবনেও তিনি ফ্লোরে কার্পেটের ওপর ঘুমাতেন, কার্পেটও দামি ছিল না, প্রেসিডেন্ট ভবনের দামি কার্পেটগুলো তিনি মসজিদে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্র থেকে কোনো বেতন-ভাতা নেননি, তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি মাসে প্রাপ্ত ২৫০ ডলার দিয়ে সংসার চালাতেন। ২০১৩ সনে ইরানের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেয়ার সময় তার সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছিল শুধু একটি ক্ষেত্রে এবং তা হচ্ছে ঋণের টাকায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বাড়ির সংস্কার হয়েছিল। পিএইচডি ডিগ্রিধারী মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এবারও নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গার্ডিয়ান কাউন্সিল তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বিরাগভাজন হলে প্রেসিডেন্টের জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আবুল হাসান বনি সদর। ক্ষমতায় থাকা আলেমদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার পদক্ষেপ নেয়ার কারণে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হলে তিনি তার ভ্রু ও গোঁফ কামিয়ে স্কার্ট পরে ফ্রান্সে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, ধর্মের কঠিন ও কঠোর অনুশাসন না থাকলে ইরানের জনগণকে এভাবে বাকরুদ্ধ করে রাখা যেত না। কিছুদিন আগে ইব্রাহিম রাইসি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন হিজাব পরিহিতা মাসা আমিনির কয়েকটি চুল হিজাব থেকে বেরিয়ে পড়ায় তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় রাস্তায় সেøাগান ওঠে, ‘হিজাব নয়, স্বাধীনতা ও সাম্য চাই’। ইরানের শাসকরা সরকার বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করার চেষ্টা করেছে। ২০২৩ সালে ইরানে ৮৫৩ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে শাসকদের একটাই সুবিধা, শরিয়া আইনের বিরোধিতা করা যায় না। ইরান, সৌদি আরব এবং তুরস্ক আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতিপক্ষ। চীনের দুতিয়ালিতে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের কিছুটা উন্নয়ন হলেও মুসলিম দেশগুলোর মোড়ল হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ইরান, তুরস্ক বা সউদি আরব বিরত থাকছে না। সউদি আরব হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার অকৃত্রিম বন্ধু, অন্যদিকে আমেরিকার প্ররোচনায় পশ্চিমা বিশ্ব ইরানকে বর্জন করে চলছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে পৃথিবীর অর্থনীতি দুই ভাগে বিভাজিত হওয়ায় ইরানের কিছুটা সামরিক রক্ষাকবচ তৈরি হলেই অর্থনৈতিক দুরবস্থা দিন দিন বাড়ছে। ১৯৭৯ সনের পূর্বে রেজা শাহ পাহলভীর আমলে ইরান কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্পায়নের দিকে অনেক দূর এগিয়েছিল, ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ অর্থবছরের মধ্যে ইরানের মোট জাতীয় পণ্য স্থির মূল্যে ১৩.২ শতাংশ বার্ষিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তেল, গ্যাস এবং নির্মাণ শিল্প প্রায় ৫০০ শতাংশ প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর অধিকাংশ শিল্প-কারখানা ব্যক্তি মালিকানা থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে যায়। ১৯৮০ সনে ইরাকের আক্রমণ এবং ৮ বছরব্যাপী চলা যুদ্ধে ইরানের ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো ইরানের জনসংখ্যাও বাড়ছে দ্রুত গতিতে; ১৯৮০ থেকে ২০০০ সনের মধ্যে মাত্র ২০ বছরে ইরানের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়। পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শুধু পরমাণু কর্মসূচি নয়, ইরানের আঞ্চলিক সামরিক তৎপরতার স্থপতি জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে ২০২০ সালে আমেরিকা হত্যা করার পর দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। অন্যদিকে সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার আধিপত্য খর্ব করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই ইরানকে দমিয়ে রাখার সব রকম কূটকৌশল আমেরিকা প্রয়োগ করে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সনে মার্কিন সরকার ‘ইরান ও লিবিয়া নিষেধাজ্ঞা আইন’ পাস করার সঙ্গে সঙ্গে বহির্বিশ্বে ইরানের ব্যবসা-বাণিজ্য হ্রাস পেতে থাকে। ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা এত কঠোর অবস্থানে চলে যায় যে, কোনো দেশ ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করলে সেই দেশকেও আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে তেল রপ্তানি অর্ধেক হ্রাস পাওয়ায় ইরানের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে ইরান চোরাইপথে কম দামে তেল বিক্রি করছে। ২০১২ সনে ইরানি রিয়ালের মূল্য অর্ধেক কমে যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের ১ টাকা সমান ইরানের ৩৫৮. ৪০ রিয়াল। ইরানে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ শতাংশের বেশি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি ও উন্নয়ন হচ্ছে না। নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান তার নির্বাচনী প্রচারণায় ইরানকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নতা মুক্ত করে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বাধ্যতামূলক হিজাব পরার বিধানেরও বিরোধী। ইরানের অভ্যন্তরীণ নীতি-পদ্ধতি এবং পররাষ্ট্র নীতিতে সংস্কার করার ব্যাপারেও নতুন প্রেসিডেন্ট আশাবাদী। কিন্তু ভোট দিলেও ইরানের সংস্কারবাদী জনগণ তার ক্ষমতা ও সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান; কারণ প্রশাসনের সর্বত্র কট্টরপন্থীদের একচ্ছত্র আধিপত্য, তারা তাদের কর্তৃত্ব অনবচ্ছিন্নভাবে অক্ষুণœ রাখবে, প্রেসিডেন্টের পক্ষে কোনো সংস্কারের বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। এছাড়া ইরানের পররাষ্ট্রবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল; এই কাউন্সিলে সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সামরিক বাহিনী, সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এবং পার্লামেন্ট সদস্যরা রয়েছেন, এদের সম্মতি ব্যতিরেকে সংস্কারমূলক পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা নতুন প্রেসিডেন্টের পক্ষে সম্ভব হবে না। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পেজেশকিয়ানকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নির্দেশ পালন করেই প্রেসিডেন্টের পদ রক্ষা করতে হবে, নতুবা বনি সদরের মতো দাড়ি-গোঁফ-ভ্রু কেটে ছদ্মবেশে দেশত্যাগ করে জীবন বাঁচাতে হবে।

সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক এমডি, টাকশাল ধযসবফুবধঁফফরহ০@মসধরষ.পড়স

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে

বন্যার বিভিন্ন ঝুঁকি ও করণীয়

প্রশ্নে জর্জরিত মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব

রম্যগদ্য : এ-পাস, না ও-পাস?

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি, উত্তরণের উপায়

গৃহকর্মী নির্যাতনের অবসান হোক

মাঙ্কিপক্স : সতর্কতা ও সচেতনতা

সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

বাদী কিংবা বিবাদীর মৃত্যুতে আইনি ফলাফল কী?

নদ-নদীর সংজ্ঞার্থ ও সংখ্যা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

রাষ্ট্র সংস্কার ও পরিবেশ ন্যায়বিচার

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য কি দূর হবে

আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তহীন কাজ

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

ছবি

ইসমাইল হানিয়ের করুণ মৃত্যু

ক্যাপিটল : মার্কিনিদের গণতন্ত্রের প্রতীক

হাওর উন্নয়নে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী নেতা ডা. মাসুদ পেজেশকিয়ান। দ্বিতীয় দফা ভোটে কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলিকে ২৮ হাজার ভোটে পরাজিত করে সংস্কারপন্থী এই নেতা ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ ভোট এবং সাঈদ জলিলি পেয়েছেন ১ কোটি ৩৫ লাখ ভোট। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলে আড়াই বছরের মাথায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পেজেশকিয়ানকে যারা ভোট দিয়েছে তাদের অধিকাংশই তরুণ, তারা ইরানের ধর্মীয় অনুশাসনে অতিষ্ঠ। ইরানের কট্টরপন্থী শাসনের প্রতি জনগণের অসন্তোষই পেজেশকিয়ানের জয়ের মূল কারণ। ইরানের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ভোটারের আস্থা না থাকায় নির্বাচনের প্রথম ধাপে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে। নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কট্টরপন্থী প্রার্থী সাইদ জালিলির ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে তরুণরা ভোট দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং দ্বিতীয় দফায় ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশ। এই তরুণ সমাজ বহুর্বিশ্ব থেকে ইরানের এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকাটাকেও পছন্দ করছে না। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট সংস্কারপন্থী, তিনি ইরানকে একঘরে হয়ে থাকা থেকে মুক্ত করতে চান। কিন্তু ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্সিয়াল সরকারের মতো নয়। দেশটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা; তিনি হচ্ছেন সৈয়দ আলী হোসেইনী খামেনি। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত খামেনি ইরানের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ১৯৮৯ সন থেকে অদ্যাবধি তিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত আছেন। মৃত্যুর পূর্বে রুহুল্লাহ খোমেনি তার উত্তরসূরি হিসেবে খামেনিকে মনোনীত করে যান। মনে হচ্ছে তিনি আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকবেন এবং তার একক কর্তৃত্বে দেশ পরিচালনা করবেন। সরকারের শুধু নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ নয়, সামরিক বাহিনী ও গণমাধ্যমও পরিচালিত হয় তার নির্দেশে। তার মতো ক্ষমতাধর একনায়ক পৃথিবীতে আরও কয়েকজন আছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মূলত তার প্রধান সহকারী মাত্র। শুধু দেশ শাসন নয়, তিনি ফতোয়াও দেন, তার ফতোয়া অনুযায়ী পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার ইসলামি বিধান অনুযায়ী নিষিদ্ধ। ইরানের প্রেসিডেন্ট বা সংসদীয় নির্বাচন পশ্চিমা দেশের মতো গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচন নয়। ইচ্ছা করলেই যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ইরানি নাগরিক নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে না। রাষ্ট্রপতি পদে কে বা কারা প্রার্থী হবে তা নির্ধারণ করে ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল। রাষ্ট্রপতি পদে চার নারীসহ মোট ৮০ জন প্রার্থিতা জমা দিলেও গার্ডিয়ান কাউন্সিল মাত্র ৪ জনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সুযোগ দেয়। প্রেসিডেন্ট পদে কোনো নারীকে আজ পর্যন্ত নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হয়নি। গার্ডিয়ান কাউন্সিল বা অভিভাবক পরিষদও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নয়। ১২ সদস্য বিশিষ্ট এই গার্ডিয়ান কাউন্সিলে কে সদস্য হবেন, আর কে হবেন না তাও নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনি। প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সব প্রার্থীকে গার্ডিয়ান কাউন্সিল দ্বারা যোগ্য হতে হয়। গার্ডিয়ান কাউন্সিল সংস্কারপন্থী প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সচরাচর বিরত রাখে। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ানকে বাদ দেয়া হয়নি; বাদ না দেয়ার অন্যতম প্রধান কারণ পেজেশকিয়ান সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনির বিশ্বস্ত। আরও একটি কারণও থাকতে পারে এবং তা হচ্ছেÑ ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে ইরান সম্ভবত নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে দিয়ে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চায়। অবশ্য কট্টরপন্থী হলেও যে নির্বাচন করার সুযোগ পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, প্রার্থীকে ইসলামিক অনুশাসন ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার প্রতি অনুগতও হতে হয়, একটু স্বাধীনচেতা হলেই আর মনোনয়ন পাওয়া যায় না। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহমুদ আহমাদিনেজাদও মনোনয়ন চেয়ে পাননি, কারণ তিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনির বিশ্বস্ততা হারিয়েছেন। ২০০৫ সালে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে আহমাদিনেজাদ প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সনে দ্বিতীয় বার। গরিব এক কামারের ঘরে জন্ম নেয়া ড. মাহমুদ আহমাদিনেজাদ খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। তাদের দুই রুমের বাসায় কয়েকটি কাঠের চেয়ার ছাড়া আর কোনো আসবাবপত্র নেই। প্রেসিডেন্ট ভবনেও তিনি ফ্লোরে কার্পেটের ওপর ঘুমাতেন, কার্পেটও দামি ছিল না, প্রেসিডেন্ট ভবনের দামি কার্পেটগুলো তিনি মসজিদে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্র থেকে কোনো বেতন-ভাতা নেননি, তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি মাসে প্রাপ্ত ২৫০ ডলার দিয়ে সংসার চালাতেন। ২০১৩ সনে ইরানের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেয়ার সময় তার সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছিল শুধু একটি ক্ষেত্রে এবং তা হচ্ছে ঋণের টাকায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বাড়ির সংস্কার হয়েছিল। পিএইচডি ডিগ্রিধারী মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এবারও নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গার্ডিয়ান কাউন্সিল তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বিরাগভাজন হলে প্রেসিডেন্টের জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আবুল হাসান বনি সদর। ক্ষমতায় থাকা আলেমদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার পদক্ষেপ নেয়ার কারণে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হলে তিনি তার ভ্রু ও গোঁফ কামিয়ে স্কার্ট পরে ফ্রান্সে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, ধর্মের কঠিন ও কঠোর অনুশাসন না থাকলে ইরানের জনগণকে এভাবে বাকরুদ্ধ করে রাখা যেত না। কিছুদিন আগে ইব্রাহিম রাইসি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন হিজাব পরিহিতা মাসা আমিনির কয়েকটি চুল হিজাব থেকে বেরিয়ে পড়ায় তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় রাস্তায় সেøাগান ওঠে, ‘হিজাব নয়, স্বাধীনতা ও সাম্য চাই’। ইরানের শাসকরা সরকার বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করার চেষ্টা করেছে। ২০২৩ সালে ইরানে ৮৫৩ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে শাসকদের একটাই সুবিধা, শরিয়া আইনের বিরোধিতা করা যায় না। ইরান, সৌদি আরব এবং তুরস্ক আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতিপক্ষ। চীনের দুতিয়ালিতে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের কিছুটা উন্নয়ন হলেও মুসলিম দেশগুলোর মোড়ল হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ইরান, তুরস্ক বা সউদি আরব বিরত থাকছে না। সউদি আরব হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার অকৃত্রিম বন্ধু, অন্যদিকে আমেরিকার প্ররোচনায় পশ্চিমা বিশ্ব ইরানকে বর্জন করে চলছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে পৃথিবীর অর্থনীতি দুই ভাগে বিভাজিত হওয়ায় ইরানের কিছুটা সামরিক রক্ষাকবচ তৈরি হলেই অর্থনৈতিক দুরবস্থা দিন দিন বাড়ছে। ১৯৭৯ সনের পূর্বে রেজা শাহ পাহলভীর আমলে ইরান কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্পায়নের দিকে অনেক দূর এগিয়েছিল, ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ অর্থবছরের মধ্যে ইরানের মোট জাতীয় পণ্য স্থির মূল্যে ১৩.২ শতাংশ বার্ষিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তেল, গ্যাস এবং নির্মাণ শিল্প প্রায় ৫০০ শতাংশ প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর অধিকাংশ শিল্প-কারখানা ব্যক্তি মালিকানা থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে যায়। ১৯৮০ সনে ইরাকের আক্রমণ এবং ৮ বছরব্যাপী চলা যুদ্ধে ইরানের ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো ইরানের জনসংখ্যাও বাড়ছে দ্রুত গতিতে; ১৯৮০ থেকে ২০০০ সনের মধ্যে মাত্র ২০ বছরে ইরানের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়। পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শুধু পরমাণু কর্মসূচি নয়, ইরানের আঞ্চলিক সামরিক তৎপরতার স্থপতি জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে ২০২০ সালে আমেরিকা হত্যা করার পর দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। অন্যদিকে সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার আধিপত্য খর্ব করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই ইরানকে দমিয়ে রাখার সব রকম কূটকৌশল আমেরিকা প্রয়োগ করে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সনে মার্কিন সরকার ‘ইরান ও লিবিয়া নিষেধাজ্ঞা আইন’ পাস করার সঙ্গে সঙ্গে বহির্বিশ্বে ইরানের ব্যবসা-বাণিজ্য হ্রাস পেতে থাকে। ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা এত কঠোর অবস্থানে চলে যায় যে, কোনো দেশ ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করলে সেই দেশকেও আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে তেল রপ্তানি অর্ধেক হ্রাস পাওয়ায় ইরানের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে ইরান চোরাইপথে কম দামে তেল বিক্রি করছে। ২০১২ সনে ইরানি রিয়ালের মূল্য অর্ধেক কমে যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের ১ টাকা সমান ইরানের ৩৫৮. ৪০ রিয়াল। ইরানে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ শতাংশের বেশি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি ও উন্নয়ন হচ্ছে না। নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান তার নির্বাচনী প্রচারণায় ইরানকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নতা মুক্ত করে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বাধ্যতামূলক হিজাব পরার বিধানেরও বিরোধী। ইরানের অভ্যন্তরীণ নীতি-পদ্ধতি এবং পররাষ্ট্র নীতিতে সংস্কার করার ব্যাপারেও নতুন প্রেসিডেন্ট আশাবাদী। কিন্তু ভোট দিলেও ইরানের সংস্কারবাদী জনগণ তার ক্ষমতা ও সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান; কারণ প্রশাসনের সর্বত্র কট্টরপন্থীদের একচ্ছত্র আধিপত্য, তারা তাদের কর্তৃত্ব অনবচ্ছিন্নভাবে অক্ষুণœ রাখবে, প্রেসিডেন্টের পক্ষে কোনো সংস্কারের বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। এছাড়া ইরানের পররাষ্ট্রবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল; এই কাউন্সিলে সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সামরিক বাহিনী, সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এবং পার্লামেন্ট সদস্যরা রয়েছেন, এদের সম্মতি ব্যতিরেকে সংস্কারমূলক পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা নতুন প্রেসিডেন্টের পক্ষে সম্ভব হবে না। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পেজেশকিয়ানকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নির্দেশ পালন করেই প্রেসিডেন্টের পদ রক্ষা করতে হবে, নতুবা বনি সদরের মতো দাড়ি-গোঁফ-ভ্রু কেটে ছদ্মবেশে দেশত্যাগ করে জীবন বাঁচাতে হবে।

সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক এমডি, টাকশাল ধযসবফুবধঁফফরহ০@মসধরষ.পড়স

back to top