সিরাজ প্রামাণিক
কেউ যদি দ্বিতীয় বিবাহ বা একাধিক বিয়ে করতে চান, তবে তার জন্যও আইনি বিধান রয়েছে। আবার স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া পরবর্তী বিয়ে কিংবা আইনি বিধান না মানলে তার জন্য আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে। আমরা সবাই জানি এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলে; কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ধারা ৬ মতেÑ দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট হতে অনুমতি নিতে হয়। নতুবা পরবর্তী বিয়ে আইনগতভাবে রেজিস্ট্রি হবে না।
পরবর্তী বিয়ের অনুমতি নিতে হলে স্বামীর পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা স্থানটি পৌরসভা হলে পৌর মেয়রের কাছে, সিটি কর্পোরেশন হলে সিটি মেয়রের কাছে ২৫ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে সাদা কাগজে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত প্রতিষ্ঠান একটি বোর্ড গঠন করবে এবং স্ত্রীর উপস্থিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সবাই বিষয়ের প্রতি বোর্ড বিবেচনা করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব, ২. দৈহিক দুর্বলতা, ৩. দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৪. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি। এগুলো প্রমাণ হলে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি হতে পারে।
কোনো পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে তিনি অবিলম্বে ১ম স্ত্রীর দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাবা আইনত বাধ্য হবে। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে আইনগতভাবে আদায়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৬(৫)বি ধারার অভিযোগে ১ম স্ত্রী মামলা করতে পারবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে স্বামীর এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- কিংবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। তবে এ মামলা করতে হলে পরবর্তী বিয়ের কাবিননামা অর্থাৎ ডকুমেন্টস লাগবে। আবার স্ত্রী ইচ্ছা করলে দন্ডবিধির ৪৯৪ ধারায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারবেন। কারণ এ ধারায় বলা হয়েছে স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও যদি স্বামী ২য় বিয়ে করেন, তাহলে স্বামী দ-নীয় অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হইবেন।
পাশাপাশি স্বামী যদি ১ম স্ত্রী আছে এরকম তথ্য গোপন করে পরবর্তী স্ত্রীর কাছে যদি বলে আমিই প্রথম। এরপর ২য় স্ত্রী ১ম স্ত্রীর কথা জানতে পেরে প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪৯৫ ধারায় মামলা করে ১০ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারবেন। কারণ এ ধারা বলছে দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় ১ম বিয়ের তথ্য গোপন রাখলে এ অপরাধ হবে।
আবার স্ত্রীও যদি স্বামী বহাল থাকা অবস্থায় আইনগতভাবে বিচ্ছেদ না করেই আরেকটি বিয়ে করে থাকেন, তাহলে ১ম স্বামী কিন্তু ওই স্ত্রীর বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে মামলা করে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারেন। তবে এ জাতীয় মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সিরাজ প্রামাণিক
বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪
কেউ যদি দ্বিতীয় বিবাহ বা একাধিক বিয়ে করতে চান, তবে তার জন্যও আইনি বিধান রয়েছে। আবার স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া পরবর্তী বিয়ে কিংবা আইনি বিধান না মানলে তার জন্য আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে। আমরা সবাই জানি এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলে; কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ধারা ৬ মতেÑ দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট হতে অনুমতি নিতে হয়। নতুবা পরবর্তী বিয়ে আইনগতভাবে রেজিস্ট্রি হবে না।
পরবর্তী বিয়ের অনুমতি নিতে হলে স্বামীর পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা স্থানটি পৌরসভা হলে পৌর মেয়রের কাছে, সিটি কর্পোরেশন হলে সিটি মেয়রের কাছে ২৫ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে সাদা কাগজে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত প্রতিষ্ঠান একটি বোর্ড গঠন করবে এবং স্ত্রীর উপস্থিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সবাই বিষয়ের প্রতি বোর্ড বিবেচনা করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো- ১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব, ২. দৈহিক দুর্বলতা, ৩. দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৪. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি। এগুলো প্রমাণ হলে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি হতে পারে।
কোনো পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে তিনি অবিলম্বে ১ম স্ত্রীর দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাবা আইনত বাধ্য হবে। ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে আইনগতভাবে আদায়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৬(৫)বি ধারার অভিযোগে ১ম স্ত্রী মামলা করতে পারবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে স্বামীর এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- কিংবা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। তবে এ মামলা করতে হলে পরবর্তী বিয়ের কাবিননামা অর্থাৎ ডকুমেন্টস লাগবে। আবার স্ত্রী ইচ্ছা করলে দন্ডবিধির ৪৯৪ ধারায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারবেন। কারণ এ ধারায় বলা হয়েছে স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও যদি স্বামী ২য় বিয়ে করেন, তাহলে স্বামী দ-নীয় অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হইবেন।
পাশাপাশি স্বামী যদি ১ম স্ত্রী আছে এরকম তথ্য গোপন করে পরবর্তী স্ত্রীর কাছে যদি বলে আমিই প্রথম। এরপর ২য় স্ত্রী ১ম স্ত্রীর কথা জানতে পেরে প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে দ-বিধির ৪৯৫ ধারায় মামলা করে ১০ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারবেন। কারণ এ ধারা বলছে দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় ১ম বিয়ের তথ্য গোপন রাখলে এ অপরাধ হবে।
আবার স্ত্রীও যদি স্বামী বহাল থাকা অবস্থায় আইনগতভাবে বিচ্ছেদ না করেই আরেকটি বিয়ে করে থাকেন, তাহলে ১ম স্বামী কিন্তু ওই স্ত্রীর বিরুদ্ধে দ-বিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে মামলা করে ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ- দিতে পারেন। তবে এ জাতীয় মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]