এম মনির উদ্দিন
বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ যার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ১৩০০ জন। দেশে প্রতিবছর আবাদি জমি কমছে ১ শতাংশ এবং নতুন জনসংখ্যা বাড়ছে ২ মিলিয়ন। তাই, আগামীতে কম পরিমাণ জমি থেকে অধিক ফসল ফলাতে হবে অতিরিক্ত জনসংখ্যার খাদ্যের জন্য। গত দুই দশকে (২০০১-২০২০) দেশের কৃষি উৎপাদন প্রতিবছর ৩.৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যা দেশের জিডিপির প্রায় ১৭ শতাংশ। এর ফলে দারিদ্র্য কমে আসে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং কৃষিতে ৪১ শতাংশ শ্রমশক্তি কর্মসংস্থানের আওতায় আসে।
দেশে সবুজ বিপ্লবের ২০ বছরের মধ্যে উন্নত জাতের সম্প্রসারণ, ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো এবং নিবিড় উপকরণ ব্যবহারের ফলে ধানের ফলন দ্বিগুণ হয়েছে। ফলস্বরূপ, ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে ধান উৎপাদন প্রতিবছর ২.৩-২.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৯০ এর দশকে বৃদ্ধির হার ১.৫ শতাংশে নেমে আসে এবং একুশ শতকের প্রথম দশকে প্রধানত জলবায়ুর পরিবর্তন, ভূমিক্ষয় ও উর্বরতা হ্রাসের কারণে আরও কমে আসে।
বাংলাদেশে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের বৃহত্তম উৎসগুলোর মধ্যে কৃষি অন্যতম। ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, ধান চাষ কৃষি থেকে নির্গত মোট গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখে। ভাত বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য এবং বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ধান চাষের জমি থেকে যে মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন হয় তার মধ্যে মিথেন; কার্বন ডাই অক্সাইড এর তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ২৮ গুণ বেশি দায়ী। আর নাইট্রাস অক্সাইড; কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ২৯৮ গুণ বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। ২০১৮ সালের তথ্য অনুসারে, দেশে মোট মিথেন নির্গমন ছিল ৫৭.২ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমপরিমাণ যেখানে কৃষি ও ধান চাষ থেকে নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন ছিল ৩৩.৫ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমপরিমাণ।
ধান চাষের জন্য মোট গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ ২০টি ধান উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ যার পরিমাণ প্রতি হেক্টরে ৯,৯০৩.০৩ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এই নির্গমনে সেচের পানি ব্যবস্থাপনা এবং রাসায়নিক সারের প্রভাব যথাক্রমে ৩০ ও ৬.৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন ছিল ১৫ মিলিয়ন টন, আউশে প্রায় ৩.৩১ মিলিয়ন টন এবং বোরোতে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন। সব মিলিয়ে দেশে ২০২৩ সালে ধানের হিসেবে মোট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন টন। ১ কেজি ধান উৎপাদন করতে বাংলাদেশে গ্রিনহাউজ গ্যাস; কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয় শুষ্ক ও ভেজা মৌসুমে যথাক্রমে ২.২১ ও ১.৭০ কেজি। সেই হিসেবে দেশে ২০২৩ সালে বোরো ধান চাষে গ্রিনহাউজ গ্যাস; কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয়েছে ৬৮.৫১ মিলিয়ন টন এবং আউশ ও আমন মিলে নির্গমন হয়েছে ৪৪.২ মিলিয়ন টন।
বৈশ্বিক কৃষি খাদ্য ব্যবস্থায় ফসলের ফলন বাড়ানোর জন্য রাসায়নিক ইউরিয়া সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যদিও এটি পরিবেশের জন্য মোটেই টেকসই নয়। ২০১৮ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ইউরিয়া বিশ্বব্যাপী ১.১৩ গেগা টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী যা বৈশ্বিক কৃষি নির্গমনের ১০.৬ শতাংশ এবং বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ২.১০ শতাংশ। আগামীদিনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে প্রবণতা তা কমিয়ে ফসল উৎপাদনে ইউরিয়া সারের কারণে পরিবেশ দূষণ কমানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্যই বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে জলবায়ু বান্ধব প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে মানুষের জন্য যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য কৃষির কারণে যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন বেড়ে চলছে তার রশিকে টানতেই হবে। এজন্য ২১০০ সালের মধ্যে ইউরিয়া সারের দক্ষতা ৭০ শতাংশের উপর বাড়াতে হবে।
ইউরিয়া সারের অপচয় রোধ তথা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলতে থাকে তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আশির দশকে ইউরিয়া সারের অপচয় রোধের উপর গবেষণা চালিয়ে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে যার মাধ্যমে ইউরিয়া সারের অপচয় কমিয়ে আনা যায় এবং এতে প্রায় ৪০ ভাগ ইউরিয়া সাশ্রয় হয়। সারের কার্যকারিতা বেড়ে যাওয়ায় ধানের ফলনও ২৫-৫০% পর্যন্ত বেড়ে যায়। গুঁড়া ইউরিয়াকে ব্রিকোয়েট মেশিনের মাধ্যমে চাপ দিয়ে ন্যাপথলিনের মতো গুটি ইউরিয়া তৈরি করা হয় যার ২.৭ গ্রাম ওজনের একটি গুটি বোরো ধান লাগানোর ৭-১৫ দিনের মধ্যে প্রতি চার গোছার মাঝখানে ৭-১০ সেমি. গভীরে পুঁতে দেয়া হয় আর আমনের ক্ষেত্রে একইভাবে ১.৮ গ্রামের ১টি গুটি ব্যবহার করা হয়। এতে বোরো ধানে হেক্টর প্রতি গুটি ইউরিয়ার দরকার হয় ২৪০ কেজি (১০ ইঞ্চি দ্ধ ৬ ইঞ্চি দূরত্বে) আর আমনের ক্ষেত্রে দরকার হয় ১৫০ কেজি।
গুটি ইউরিয়া একবার ব্যবহার করলেই ধান কাটা পর্যন্ত আর ইউরিয়া সার ব্যবহার করার দরকার হয় না এবং গাছে ইউরিয়াজনিত গুপ্তক্ষুধা থাকে না। গুটি ইউরিয়া যেহেতু মাটির নিচে পুঁতে দেয়া হয়, ফলে আগাছা সারের ওপর ভাগ বসাতে পারে না। এর ফলে আগাছার পরিমাণ খুবই কমে যায় যা নিড়ানি খরচ কমাতে সহায়ক হয়। অথচ গুঁড়া ইউরিয়া ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে ধান গাছের আগে আগাছা সার গ্রহণ করার সুযোগ পায় কারণ আগাছার শিকড় মাটির উপরের দিকে থাকে এবং এতে যত বার ইউরিয়া সার ছিটানো হয় ততবার নিড়ানি দরকার হয়। গুটি ইউরিয়ার ক্ষেত্রে একটি নিড়ানিই যথেষ্ট। ধানের শীষ উৎপাদন পর্যায়ে যদি নাইট্রোজেনের অভাব বা গুপ্তক্ষুধা থাকে তাহলে ফলন অনেক কমে যায়। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করলে ধান গাছ সব সময় তার প্রয়োজন অনুযায়ী নাইট্রোজেন পায় বিধায় শীষ উৎপাদন পর্যায়ে নাইট্রোজেনের কোন অভাব থাকে না। এর ফলে ফলন বেড়ে যায়। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা জমিতে গুছিতে শীষবাহী কুশির সংখ্যা বেড়ে যায়, দানার আকার পুষ্ট হয় যার কারণে বেশি ফলন পাওয়া যায় এবং পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন গ্রহণ করায় দানায় অ্যামাইনি এসিড বেড়ে যায় যা প্রোটিন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে নাইট্রোজেনের অপচয় কমিয়ে দেয় যায় যা ক্ষতিকারক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমাতে সহায়ক।
ধানের জমিতে অবিরত পানি জমিয়ে রাখার কারণে অতিরিক্ত মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। ১ কেজি চাল উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ বা জ্বালানি খরচসহ প্রায় ৪২০০-৪৫০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। ধান চাষে বিকল্প ভেজানো ও শুকানো (এডব্লিউডি) সেচ পানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায় এবং অবিরত পানি রাখার তুলনায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে দেয়। এডব্লিউডি সেচ অবিরত পানি রাখার তুলনায় শস্যের ফলনকে বাড়ানোর পাশাপাশি মিথেন নির্গমন ৩৭ শতাংশ হ্রাস করে। এডব্লিউডি এর জন্য মিথেন নির্গমন অবিরত পানি রাখার নির্গমন; ২.২১ কেজি/হেক্টর/দিন এর তুলনায় কম অর্থাৎ ১.৩৯ কেজি/হেক্টর/দিন। এডব্লিউডি ফসলের ফলন বাড়ানোসহ সেচের পানি সংরক্ষণ করে, ধানের ক্ষেত থেকে গ্রিনহাউজ নির্গমন কমানোর জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল কৌশল হিসেবে বিবেচিত।
প্যারিস চুক্তির স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শর্তসাপেক্ষে ১৫ শতাংশ এবং শর্তহীনভাবে ৫ শতাংশ শক্তি, পরিবহণ ও শিল্প খাত থেকে নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বিশ্ব যদি উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের ২০৫০ সালের মধ্যে জিডিপি এর ২ শতাংশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে জিডিপি এর ৯.৪ শতাংশ বার্ষিক ক্ষতি হতে পারে। এজন্য বাংলাদেশ বিশ্বে তার ভূমিকা পালন করতে চায়।
এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থা পানির সাশ্রয় করে ৩০ শতাংশ, মিথেন নির্গমন ৩৭ শতাংশ হৃাস করে, ধানের ফলন ১৫ শতাংশ বাড়ে, জমিতে প্রয়োগকৃত সারের অপচয় কমে, জ্বালানি খরচও কমে। কিন্তু, তারপরও কৃষক পর্যায়ে এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থা গ্রহণের হার খুবই কম। এর অন্যতম কারণ হিসেবে কৃষক পর্যায়ে জরিপ করে জানা যায় যে, দেশে বর্তমান প্রচলিত ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থার দুর্বল নীতির কারণেই এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। কৃষক জানায়, যেহেতু শ্যালো টিউবওয়েলের মালিকানা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একক মালিকের অধীনে এবং কৃষকদের পানিসেচের খরচ হিসেবে দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২৫-৩০ শতাংশ ধান কর্তনের পর জমিতে পানিসেচ বাবদ শ্যালো মালিককে দিতে হয়। যদিও এডব্লিউডি সেচের ফলে পানি কম লাগে, শ্যালো মালিকের জ্বালানি খরচ কমে যায় তবে এতে ধানচাষিরা কোন উপকার পায়না। কারণ, শ্যালো মালিক ধানের ভাগের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয় না। ফলে, কৃষক পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আগ্রহী হয় না।
সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ধানের উৎপাদন বাড়ানো যা বর্তমানের ধান উৎপাদনের ধারাকে অব্যাহত রেখে ফলন আরও বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি পূরণ। গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি চালু করার মধ্য দিয়ে ইউরিয়া সারের আমদানি ব্যয় কমানো, ইউরিয়া সারের অপচয় কমানো, হেক্টরপ্রতি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে ন্যূনতম ২৫-৩০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি করার এই চমৎকার প্রযুক্তির সঙ্গে এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থার সমন্বয়ে সরকার যেমন গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার স্থায়ী কৌশল হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। সেইসঙ্গে, এই যৌথ প্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশের ধানের ফলন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এই যৌথ প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের জন্য যে কয়টি বিষয় বিবেচনা করলে সহজেই সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব তা হচ্ছেÑ
এগ্রো-ইকোলজিক্যাল জোনভিত্তিক বা ক্লাইমেট হটস্পটভিত্তিক জলবায়ুবান্ধব, বায়োফর্টিফাইড বা বিশেষ পুষ্টিসমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল ধানের জাত নির্বাচন।
বিসিআইসি ডিলার পর্যায়ে গুটি ইউরিয়া প্রস্তুতকারী ব্রিকোয়েট মেশিন নিশ্চিতকরণ এবং ধানচাষে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার বাধ্যতামূলককরণ ও সহজলভ্যকরণ।
শ্যালো মেশিনের একক মালিকানার পরিবর্তে জমি যার পানি তার ভিত্তিতে সবাই কৃষকের মালিকানায় সমবায়ের মাধ্যমে শ্যালো মেশিন পরিচালনা।
বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকের মাঝে গুটি ইউরিয়া বিতরণ।
শ্যালো মেশিনের স্কিমভিত্তিক সমলয় চাষে একই জাতের ধান চাষে কৃষকদের উৎসাহিতকরন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিটি ব্লক পর্যায়ে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ ও নিয়মিত মনিটরিং।
আগামীতে দেশের কম পরিমাণ জমি থেকে বেশি ফসল ফলাতে হবে অতিরিক্ত জনসংখ্যার খাদ্যের জোগানের জন্য। এহেন অবস্থায় বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে উন্নত দেশগুলোর বেপরোয়া গতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোসহ শিল্পায়নের মাধ্যমে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের কারণে। এর ফলে দেশের কৃষিতে ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশকে চিন্তা করতে হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিভাবে ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করা যায়। যদিও দেশে এই মুহূর্তে যে সমস্ত প্রযুক্তি রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার বা প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে প্রতিবছর ধানের ফলন কমপক্ষে ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু পলিসি নির্ধারণের আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং এর অধিদপ্তরগুলোর নিষ্ঠা, সততা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার।
[লেখক : অ্যাগ্রোনমিস্ট অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ ]
এম মনির উদ্দিন
সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪
বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ যার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ১৩০০ জন। দেশে প্রতিবছর আবাদি জমি কমছে ১ শতাংশ এবং নতুন জনসংখ্যা বাড়ছে ২ মিলিয়ন। তাই, আগামীতে কম পরিমাণ জমি থেকে অধিক ফসল ফলাতে হবে অতিরিক্ত জনসংখ্যার খাদ্যের জন্য। গত দুই দশকে (২০০১-২০২০) দেশের কৃষি উৎপাদন প্রতিবছর ৩.৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যা দেশের জিডিপির প্রায় ১৭ শতাংশ। এর ফলে দারিদ্র্য কমে আসে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং কৃষিতে ৪১ শতাংশ শ্রমশক্তি কর্মসংস্থানের আওতায় আসে।
দেশে সবুজ বিপ্লবের ২০ বছরের মধ্যে উন্নত জাতের সম্প্রসারণ, ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো এবং নিবিড় উপকরণ ব্যবহারের ফলে ধানের ফলন দ্বিগুণ হয়েছে। ফলস্বরূপ, ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে ধান উৎপাদন প্রতিবছর ২.৩-২.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৯০ এর দশকে বৃদ্ধির হার ১.৫ শতাংশে নেমে আসে এবং একুশ শতকের প্রথম দশকে প্রধানত জলবায়ুর পরিবর্তন, ভূমিক্ষয় ও উর্বরতা হ্রাসের কারণে আরও কমে আসে।
বাংলাদেশে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের বৃহত্তম উৎসগুলোর মধ্যে কৃষি অন্যতম। ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, ধান চাষ কৃষি থেকে নির্গত মোট গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখে। ভাত বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য এবং বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ধান চাষের জমি থেকে যে মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন হয় তার মধ্যে মিথেন; কার্বন ডাই অক্সাইড এর তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ২৮ গুণ বেশি দায়ী। আর নাইট্রাস অক্সাইড; কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ২৯৮ গুণ বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। ২০১৮ সালের তথ্য অনুসারে, দেশে মোট মিথেন নির্গমন ছিল ৫৭.২ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমপরিমাণ যেখানে কৃষি ও ধান চাষ থেকে নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন ছিল ৩৩.৫ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমপরিমাণ।
ধান চাষের জন্য মোট গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ ২০টি ধান উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ যার পরিমাণ প্রতি হেক্টরে ৯,৯০৩.০৩ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এই নির্গমনে সেচের পানি ব্যবস্থাপনা এবং রাসায়নিক সারের প্রভাব যথাক্রমে ৩০ ও ৬.৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন ছিল ১৫ মিলিয়ন টন, আউশে প্রায় ৩.৩১ মিলিয়ন টন এবং বোরোতে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন। সব মিলিয়ে দেশে ২০২৩ সালে ধানের হিসেবে মোট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন টন। ১ কেজি ধান উৎপাদন করতে বাংলাদেশে গ্রিনহাউজ গ্যাস; কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয় শুষ্ক ও ভেজা মৌসুমে যথাক্রমে ২.২১ ও ১.৭০ কেজি। সেই হিসেবে দেশে ২০২৩ সালে বোরো ধান চাষে গ্রিনহাউজ গ্যাস; কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হয়েছে ৬৮.৫১ মিলিয়ন টন এবং আউশ ও আমন মিলে নির্গমন হয়েছে ৪৪.২ মিলিয়ন টন।
বৈশ্বিক কৃষি খাদ্য ব্যবস্থায় ফসলের ফলন বাড়ানোর জন্য রাসায়নিক ইউরিয়া সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যদিও এটি পরিবেশের জন্য মোটেই টেকসই নয়। ২০১৮ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ইউরিয়া বিশ্বব্যাপী ১.১৩ গেগা টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী যা বৈশ্বিক কৃষি নির্গমনের ১০.৬ শতাংশ এবং বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ২.১০ শতাংশ। আগামীদিনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে প্রবণতা তা কমিয়ে ফসল উৎপাদনে ইউরিয়া সারের কারণে পরিবেশ দূষণ কমানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্যই বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে জলবায়ু বান্ধব প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে মানুষের জন্য যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য কৃষির কারণে যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন বেড়ে চলছে তার রশিকে টানতেই হবে। এজন্য ২১০০ সালের মধ্যে ইউরিয়া সারের দক্ষতা ৭০ শতাংশের উপর বাড়াতে হবে।
ইউরিয়া সারের অপচয় রোধ তথা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৩০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলতে থাকে তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আশির দশকে ইউরিয়া সারের অপচয় রোধের উপর গবেষণা চালিয়ে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে যার মাধ্যমে ইউরিয়া সারের অপচয় কমিয়ে আনা যায় এবং এতে প্রায় ৪০ ভাগ ইউরিয়া সাশ্রয় হয়। সারের কার্যকারিতা বেড়ে যাওয়ায় ধানের ফলনও ২৫-৫০% পর্যন্ত বেড়ে যায়। গুঁড়া ইউরিয়াকে ব্রিকোয়েট মেশিনের মাধ্যমে চাপ দিয়ে ন্যাপথলিনের মতো গুটি ইউরিয়া তৈরি করা হয় যার ২.৭ গ্রাম ওজনের একটি গুটি বোরো ধান লাগানোর ৭-১৫ দিনের মধ্যে প্রতি চার গোছার মাঝখানে ৭-১০ সেমি. গভীরে পুঁতে দেয়া হয় আর আমনের ক্ষেত্রে একইভাবে ১.৮ গ্রামের ১টি গুটি ব্যবহার করা হয়। এতে বোরো ধানে হেক্টর প্রতি গুটি ইউরিয়ার দরকার হয় ২৪০ কেজি (১০ ইঞ্চি দ্ধ ৬ ইঞ্চি দূরত্বে) আর আমনের ক্ষেত্রে দরকার হয় ১৫০ কেজি।
গুটি ইউরিয়া একবার ব্যবহার করলেই ধান কাটা পর্যন্ত আর ইউরিয়া সার ব্যবহার করার দরকার হয় না এবং গাছে ইউরিয়াজনিত গুপ্তক্ষুধা থাকে না। গুটি ইউরিয়া যেহেতু মাটির নিচে পুঁতে দেয়া হয়, ফলে আগাছা সারের ওপর ভাগ বসাতে পারে না। এর ফলে আগাছার পরিমাণ খুবই কমে যায় যা নিড়ানি খরচ কমাতে সহায়ক হয়। অথচ গুঁড়া ইউরিয়া ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে ধান গাছের আগে আগাছা সার গ্রহণ করার সুযোগ পায় কারণ আগাছার শিকড় মাটির উপরের দিকে থাকে এবং এতে যত বার ইউরিয়া সার ছিটানো হয় ততবার নিড়ানি দরকার হয়। গুটি ইউরিয়ার ক্ষেত্রে একটি নিড়ানিই যথেষ্ট। ধানের শীষ উৎপাদন পর্যায়ে যদি নাইট্রোজেনের অভাব বা গুপ্তক্ষুধা থাকে তাহলে ফলন অনেক কমে যায়। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করলে ধান গাছ সব সময় তার প্রয়োজন অনুযায়ী নাইট্রোজেন পায় বিধায় শীষ উৎপাদন পর্যায়ে নাইট্রোজেনের কোন অভাব থাকে না। এর ফলে ফলন বেড়ে যায়। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা জমিতে গুছিতে শীষবাহী কুশির সংখ্যা বেড়ে যায়, দানার আকার পুষ্ট হয় যার কারণে বেশি ফলন পাওয়া যায় এবং পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন গ্রহণ করায় দানায় অ্যামাইনি এসিড বেড়ে যায় যা প্রোটিন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে নাইট্রোজেনের অপচয় কমিয়ে দেয় যায় যা ক্ষতিকারক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমাতে সহায়ক।
ধানের জমিতে অবিরত পানি জমিয়ে রাখার কারণে অতিরিক্ত মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। ১ কেজি চাল উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ বা জ্বালানি খরচসহ প্রায় ৪২০০-৪৫০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। ধান চাষে বিকল্প ভেজানো ও শুকানো (এডব্লিউডি) সেচ পানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায় এবং অবিরত পানি রাখার তুলনায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে দেয়। এডব্লিউডি সেচ অবিরত পানি রাখার তুলনায় শস্যের ফলনকে বাড়ানোর পাশাপাশি মিথেন নির্গমন ৩৭ শতাংশ হ্রাস করে। এডব্লিউডি এর জন্য মিথেন নির্গমন অবিরত পানি রাখার নির্গমন; ২.২১ কেজি/হেক্টর/দিন এর তুলনায় কম অর্থাৎ ১.৩৯ কেজি/হেক্টর/দিন। এডব্লিউডি ফসলের ফলন বাড়ানোসহ সেচের পানি সংরক্ষণ করে, ধানের ক্ষেত থেকে গ্রিনহাউজ নির্গমন কমানোর জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল কৌশল হিসেবে বিবেচিত।
প্যারিস চুক্তির স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শর্তসাপেক্ষে ১৫ শতাংশ এবং শর্তহীনভাবে ৫ শতাংশ শক্তি, পরিবহণ ও শিল্প খাত থেকে নির্গমন কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বিশ্ব যদি উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের ২০৫০ সালের মধ্যে জিডিপি এর ২ শতাংশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে জিডিপি এর ৯.৪ শতাংশ বার্ষিক ক্ষতি হতে পারে। এজন্য বাংলাদেশ বিশ্বে তার ভূমিকা পালন করতে চায়।
এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থা পানির সাশ্রয় করে ৩০ শতাংশ, মিথেন নির্গমন ৩৭ শতাংশ হৃাস করে, ধানের ফলন ১৫ শতাংশ বাড়ে, জমিতে প্রয়োগকৃত সারের অপচয় কমে, জ্বালানি খরচও কমে। কিন্তু, তারপরও কৃষক পর্যায়ে এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থা গ্রহণের হার খুবই কম। এর অন্যতম কারণ হিসেবে কৃষক পর্যায়ে জরিপ করে জানা যায় যে, দেশে বর্তমান প্রচলিত ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থার দুর্বল নীতির কারণেই এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। কৃষক জানায়, যেহেতু শ্যালো টিউবওয়েলের মালিকানা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একক মালিকের অধীনে এবং কৃষকদের পানিসেচের খরচ হিসেবে দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২৫-৩০ শতাংশ ধান কর্তনের পর জমিতে পানিসেচ বাবদ শ্যালো মালিককে দিতে হয়। যদিও এডব্লিউডি সেচের ফলে পানি কম লাগে, শ্যালো মালিকের জ্বালানি খরচ কমে যায় তবে এতে ধানচাষিরা কোন উপকার পায়না। কারণ, শ্যালো মালিক ধানের ভাগের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয় না। ফলে, কৃষক পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আগ্রহী হয় না।
সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ধানের উৎপাদন বাড়ানো যা বর্তমানের ধান উৎপাদনের ধারাকে অব্যাহত রেখে ফলন আরও বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি পূরণ। গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি চালু করার মধ্য দিয়ে ইউরিয়া সারের আমদানি ব্যয় কমানো, ইউরিয়া সারের অপচয় কমানো, হেক্টরপ্রতি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে ন্যূনতম ২৫-৩০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি করার এই চমৎকার প্রযুক্তির সঙ্গে এডব্লিউডি সেচ ব্যবস্থার সমন্বয়ে সরকার যেমন গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার স্থায়ী কৌশল হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। সেইসঙ্গে, এই যৌথ প্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশের ধানের ফলন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এই যৌথ প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের জন্য যে কয়টি বিষয় বিবেচনা করলে সহজেই সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব তা হচ্ছেÑ
এগ্রো-ইকোলজিক্যাল জোনভিত্তিক বা ক্লাইমেট হটস্পটভিত্তিক জলবায়ুবান্ধব, বায়োফর্টিফাইড বা বিশেষ পুষ্টিসমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল ধানের জাত নির্বাচন।
বিসিআইসি ডিলার পর্যায়ে গুটি ইউরিয়া প্রস্তুতকারী ব্রিকোয়েট মেশিন নিশ্চিতকরণ এবং ধানচাষে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার বাধ্যতামূলককরণ ও সহজলভ্যকরণ।
শ্যালো মেশিনের একক মালিকানার পরিবর্তে জমি যার পানি তার ভিত্তিতে সবাই কৃষকের মালিকানায় সমবায়ের মাধ্যমে শ্যালো মেশিন পরিচালনা।
বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকের মাঝে গুটি ইউরিয়া বিতরণ।
শ্যালো মেশিনের স্কিমভিত্তিক সমলয় চাষে একই জাতের ধান চাষে কৃষকদের উৎসাহিতকরন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিটি ব্লক পর্যায়ে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ ও নিয়মিত মনিটরিং।
আগামীতে দেশের কম পরিমাণ জমি থেকে বেশি ফসল ফলাতে হবে অতিরিক্ত জনসংখ্যার খাদ্যের জোগানের জন্য। এহেন অবস্থায় বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে উন্নত দেশগুলোর বেপরোয়া গতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোসহ শিল্পায়নের মাধ্যমে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের কারণে। এর ফলে দেশের কৃষিতে ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশকে চিন্তা করতে হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিভাবে ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করা যায়। যদিও দেশে এই মুহূর্তে যে সমস্ত প্রযুক্তি রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার বা প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে প্রতিবছর ধানের ফলন কমপক্ষে ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু পলিসি নির্ধারণের আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং এর অধিদপ্তরগুলোর নিষ্ঠা, সততা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার।
[লেখক : অ্যাগ্রোনমিস্ট অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ ]