শঙ্কর প্রসাদ দে
ইউ এস ক্যাপিটল। সোজা কথায় আমেরিকান জাতীয় সংসদ ভবন। ভবনটি পৃথিবীব্যাপী পরিচিত ক্ষমতার শীর্ষবিন্দু হিসেবে। প্রতিনিধি পরিষদ (লেজিসলেটিড) ও সিনেট (উচ্চকক্ষ) অধিবেশন বসে এই ভবনে। ৫২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ফেডারেল রাষ্ট্র। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে জাতীয় সংসদ। ব্যতিক্রম দৃষ্টান্তে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ক্যাপিটল বিল্ডিং বা ‘সিনেট ও লেজিসলেটিভ’ ভারত, ব্রিটেন, বাংলাদেশের মতো প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের আয়-ব্যয়ের (বাজেট) অনুমোদন নিতে হয় সংসদ থেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টও আয় ব্যয়ের অনুমোদন নিয়ে থাকেন ক্যাপিটল বিল্ডিং থেকে। ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেনের মতো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদের জবাবদিহি করতে হয় সংসদের কাছে। তুরস্ক মিশর আমেরিকার মতো প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির রাষ্ট্রগুলোর মন্ত্রী পরিষদকে (প্রধানমন্ত্রীসহ) জবাবদিহি করতে হয় প্রেসিডেন্টের কাছে।
মার্কিন মন্ত্রীপরিষদের কাঠামো আরো ব্যতিক্রম। কোন প্রধানমন্ত্রী নেই। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সচিব (সেক্রেটারি) হিসেবে ডাকা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বা সচিবপরিষদ নিয়োগের একক কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের হাতে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিজের জন্য একটি উপদেষ্টা (মন্ত্রী মর্যাদায়) পরিষদ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই নিজের জন্য একটি উপদেষ্টা (সচিব বা মন্ত্রী মর্যাদায়) পরিষদ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ১৯৭১ সালে কট্টর বাংলাদেশবিরোধী কুখ্যাত হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ রাত ১০টার দিকে বেরিয়ে পড়লাম। মামুন তার ল্যান্ড রোভার স্ট্যার্ট দিয়ে চক্কর লাগালো প্রচ- ঠা-ায় জুবুথুবু ওয়াশিংটন শহর। ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার সময় নিউইয়র্ক শহরকে রাজধানী করে পথ চলা শুরু হয়। অতঃপর কিছুদিনের জন্য ফিলাডেলফিয়ায় রাজধানী স্থানান্তরিত হলেও রাজনীতিবিদদের কাছে শহরটি যুতসই মনে হয়নি। জর্জ ওয়াশিংটন পটমাক নদীর তীরবর্তী এই প্রায় জনশূন্য এলাকাটি নির্বাচন করেন। ১৭৯২ সালে ক্যাপিটাল হিলের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৮০০ সালে নির্মাণ পর্ব শেষ হয়। মাত্র ১৭৯ বর্গকিলোমিটারের ঝকঝকে শহরটির শানসৌকত দেখলে কে বলবে সোয়া দুশ বছর আগে জায়গাটি ছিল নদী বিধৌত ঘাসে পরিপূর্ণ এক পশু চারণভূমি মাত্র। প্রখ্যাত প্রকৌশলী পিয়ের শার্ল লঁফঁ প্রণীত নগর নকশা জর্জ ওয়াশিংটনের ভালো লেগে যায়।
ওয়াশিংটন শহরটি প্রশাসনিকভাবে বিস্তৃতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলাম্বিয়া নদী তীরবর্তী অংশসহ একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা বিকশিত হয়। শেষ পর্যন্ত ১৮৭৮ সালে জর্জটাউন শহরসহ সন্নিহির অঞ্চল নিয়ে ছোট্ট এই কেন্দ্রশাসিত ওয়াশিংটন ডি সি রাজ্য আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ যা রাজধানী ওয়াশিংটন তাইই ওয়াশিংটন ডি সি রাজ্য। মার্কিন গৃহযুদ্ধের অবসান হয় ১৮৬৫ সালে। মুক্ত ক্রীতদাসরা দলে দলে ভিড় জমাতে থাকে ক্রমবর্ধিষ্ণু এই নতুন শহরে। এরপরও জনসংখ্যা বড়জোর ৭ লক্ষ। দুর্ভাগ্যের বিষয় চোখ ধাঁধানো এই শহর গড়ে উঠেছে বাংলার লুণ্ঠিত টাকায়। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রচলন করেন। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা টমাস ল। ইতিহাস বলছে যে ব্যক্তি টাকার বস্তা নিয়ে আগে হাজির হতে পারত তাকেই তিনি জমিদারি বন্দোবস্ত দিতেন। লাখ লাখ ঘুষের টাকা নিয়ে টিলবারি বন্দর থেকে বাড়ি ফিরতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন।
কারণ ইতোমধ্যে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে মর্মে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে টিলবারি বন্দর থেকেই টমাস ল আমেরিকাগামী জাহাজে চড়ে বসেন এবং ওয়াশিংটন গিয়ে হাজির হন। অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে মার্কিন সরকারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। ওয়াশিংটনের আজকের প্রজন্মও বলে থাকেন এই শহর প্রতিষ্ঠায় ‘টমাস ল’ এর অবদান স্মরণীয় অথচ ঘুনাক্ষরেও বলা হয় না বাংলা থেকে লুণ্ঠিত টাকা দিয়ে গড়ে উঠেছে বিশে^র রাজধানী খ্যাত ওয়াশিংটন।
দ্য ক্যাপিটলের প্রথম নকশাকার ছিলেন স্থপতি বেঞ্জামিন ল্যাট্রোব। পরবর্তীতে চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটলে বর্তমান ডিজাইনটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রথম নকশার ওপর ভিত্তি করে আজকের এই ডিজাইনটির প্রণেতা হলেন ১৭৫৯ সালে ব্রিটেনের টর্টোলায় জন্ম নেয়া উইলিয়াম থর্নটন। ১৭৮৪ সালে অ্যাবারডিন বিশ^বিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি অর্জন করে পেনসিলভানিয়াতে বসতি গড়েন। নব্য গড়ে উঠতে থাকা ওয়াশিংটন শহরের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তাকে পেটেন্ট অফিসের সুপার পদে নিয়োগ দেয়া হয়। থর্নটন ছিলেন একজন সৌখিন আর্কিটেক্ট। ফিলাডেলফিয়ার লাইব্রেরি ভবনের নকশা প্রতিযোগিতায় তার নকশা গৃহীত হলে মার্কিন মুল্লুকে স্থপতি হিসেবে নাম ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর ইউ এস ক্যাপিটল বিল্ডিং তার প্রণীত নকশায় সোয়া দুশ বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে গোটা বিশে^র রাজনৈতিক মুকুটে সংযোজিত হীরক খ-ের মতো। এ যেন মার্কিন রাজমুকুটের কোহিনুর হীরা।
প্রায় ঘণ্টাখানেক ক্যাপিটলের পশ্চিম প্রবেশদ্বারের লনে হাঁটাহাঁটি করলাম। এত রাতে এমন ঠা-ায়ও অনেক শেতাঙ্গকে কুকুর-বিড়াল নিয়ে হাঁটতে দেখলাম। বড় দিনের প্রায় ১০ দিন আগে ক্যাপিটল বিল্ডিংকে আলোর হরেক রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। চতুর্দিক বিক্ষিপ্ত ছিটিয়ে থাকা ক্রীসমাস ট্রিগুলো আলোয় আলোয় আলোকিত। ক্যাপিটল ভবন নিঃসন্দেহে নিও ক্ল্যাসিক্যাল স্থাপত্যরীতির চমৎকার দৃষ্টান্ত। তবে গ্রানাইট, মার্বেলসহ নানা ধরনের পাথর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি রাতের আলোতে। পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ সকাল বেলায় একচক্কর লাগিয়েছি। দিনের আলোয় পরিষ্কার বুঝলাম থর্নটন তাজমহলে ব্যবহৃত গ্রানাইট মার্বেল পাথর ডিসপ্লে দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। সন্ধ্যার পর তাজমহল হয়ে ওঠে আলোয় আলোকিত। ঠিক তেমনি ক্যাপিটল বিল্ডিং নিঝুম অন্ধকারেও আলোকিত হওয়ার জন্য নিজেই যথেষ্ঠ। নিও ক্ল্যাসিকাল স্থাপত্য রীতি ও ক্লাসিকাল গ্রানাইট পাথরের যুগলবন্দী আধুনিক বিশে^র এক বিষ্ময়কর রাজনৈতিক স্থাপত্য নিদর্শন হলো ক্যাপিটল।
[লেখক : আইনজীবী, আপিল বিভাগ]
শঙ্কর প্রসাদ দে
মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪
ইউ এস ক্যাপিটল। সোজা কথায় আমেরিকান জাতীয় সংসদ ভবন। ভবনটি পৃথিবীব্যাপী পরিচিত ক্ষমতার শীর্ষবিন্দু হিসেবে। প্রতিনিধি পরিষদ (লেজিসলেটিড) ও সিনেট (উচ্চকক্ষ) অধিবেশন বসে এই ভবনে। ৫২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ফেডারেল রাষ্ট্র। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে জাতীয় সংসদ। ব্যতিক্রম দৃষ্টান্তে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ক্যাপিটল বিল্ডিং বা ‘সিনেট ও লেজিসলেটিভ’ ভারত, ব্রিটেন, বাংলাদেশের মতো প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের আয়-ব্যয়ের (বাজেট) অনুমোদন নিতে হয় সংসদ থেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টও আয় ব্যয়ের অনুমোদন নিয়ে থাকেন ক্যাপিটল বিল্ডিং থেকে। ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেনের মতো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদের জবাবদিহি করতে হয় সংসদের কাছে। তুরস্ক মিশর আমেরিকার মতো প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির রাষ্ট্রগুলোর মন্ত্রী পরিষদকে (প্রধানমন্ত্রীসহ) জবাবদিহি করতে হয় প্রেসিডেন্টের কাছে।
মার্কিন মন্ত্রীপরিষদের কাঠামো আরো ব্যতিক্রম। কোন প্রধানমন্ত্রী নেই। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সচিব (সেক্রেটারি) হিসেবে ডাকা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বা সচিবপরিষদ নিয়োগের একক কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের হাতে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিজের জন্য একটি উপদেষ্টা (মন্ত্রী মর্যাদায়) পরিষদ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই নিজের জন্য একটি উপদেষ্টা (সচিব বা মন্ত্রী মর্যাদায়) পরিষদ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ১৯৭১ সালে কট্টর বাংলাদেশবিরোধী কুখ্যাত হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ রাত ১০টার দিকে বেরিয়ে পড়লাম। মামুন তার ল্যান্ড রোভার স্ট্যার্ট দিয়ে চক্কর লাগালো প্রচ- ঠা-ায় জুবুথুবু ওয়াশিংটন শহর। ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার সময় নিউইয়র্ক শহরকে রাজধানী করে পথ চলা শুরু হয়। অতঃপর কিছুদিনের জন্য ফিলাডেলফিয়ায় রাজধানী স্থানান্তরিত হলেও রাজনীতিবিদদের কাছে শহরটি যুতসই মনে হয়নি। জর্জ ওয়াশিংটন পটমাক নদীর তীরবর্তী এই প্রায় জনশূন্য এলাকাটি নির্বাচন করেন। ১৭৯২ সালে ক্যাপিটাল হিলের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৮০০ সালে নির্মাণ পর্ব শেষ হয়। মাত্র ১৭৯ বর্গকিলোমিটারের ঝকঝকে শহরটির শানসৌকত দেখলে কে বলবে সোয়া দুশ বছর আগে জায়গাটি ছিল নদী বিধৌত ঘাসে পরিপূর্ণ এক পশু চারণভূমি মাত্র। প্রখ্যাত প্রকৌশলী পিয়ের শার্ল লঁফঁ প্রণীত নগর নকশা জর্জ ওয়াশিংটনের ভালো লেগে যায়।
ওয়াশিংটন শহরটি প্রশাসনিকভাবে বিস্তৃতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলাম্বিয়া নদী তীরবর্তী অংশসহ একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা বিকশিত হয়। শেষ পর্যন্ত ১৮৭৮ সালে জর্জটাউন শহরসহ সন্নিহির অঞ্চল নিয়ে ছোট্ট এই কেন্দ্রশাসিত ওয়াশিংটন ডি সি রাজ্য আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ যা রাজধানী ওয়াশিংটন তাইই ওয়াশিংটন ডি সি রাজ্য। মার্কিন গৃহযুদ্ধের অবসান হয় ১৮৬৫ সালে। মুক্ত ক্রীতদাসরা দলে দলে ভিড় জমাতে থাকে ক্রমবর্ধিষ্ণু এই নতুন শহরে। এরপরও জনসংখ্যা বড়জোর ৭ লক্ষ। দুর্ভাগ্যের বিষয় চোখ ধাঁধানো এই শহর গড়ে উঠেছে বাংলার লুণ্ঠিত টাকায়। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রচলন করেন। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা টমাস ল। ইতিহাস বলছে যে ব্যক্তি টাকার বস্তা নিয়ে আগে হাজির হতে পারত তাকেই তিনি জমিদারি বন্দোবস্ত দিতেন। লাখ লাখ ঘুষের টাকা নিয়ে টিলবারি বন্দর থেকে বাড়ি ফিরতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন।
কারণ ইতোমধ্যে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে মর্মে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে টিলবারি বন্দর থেকেই টমাস ল আমেরিকাগামী জাহাজে চড়ে বসেন এবং ওয়াশিংটন গিয়ে হাজির হন। অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে মার্কিন সরকারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। ওয়াশিংটনের আজকের প্রজন্মও বলে থাকেন এই শহর প্রতিষ্ঠায় ‘টমাস ল’ এর অবদান স্মরণীয় অথচ ঘুনাক্ষরেও বলা হয় না বাংলা থেকে লুণ্ঠিত টাকা দিয়ে গড়ে উঠেছে বিশে^র রাজধানী খ্যাত ওয়াশিংটন।
দ্য ক্যাপিটলের প্রথম নকশাকার ছিলেন স্থপতি বেঞ্জামিন ল্যাট্রোব। পরবর্তীতে চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটলে বর্তমান ডিজাইনটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রথম নকশার ওপর ভিত্তি করে আজকের এই ডিজাইনটির প্রণেতা হলেন ১৭৫৯ সালে ব্রিটেনের টর্টোলায় জন্ম নেয়া উইলিয়াম থর্নটন। ১৭৮৪ সালে অ্যাবারডিন বিশ^বিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি অর্জন করে পেনসিলভানিয়াতে বসতি গড়েন। নব্য গড়ে উঠতে থাকা ওয়াশিংটন শহরের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তাকে পেটেন্ট অফিসের সুপার পদে নিয়োগ দেয়া হয়। থর্নটন ছিলেন একজন সৌখিন আর্কিটেক্ট। ফিলাডেলফিয়ার লাইব্রেরি ভবনের নকশা প্রতিযোগিতায় তার নকশা গৃহীত হলে মার্কিন মুল্লুকে স্থপতি হিসেবে নাম ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর ইউ এস ক্যাপিটল বিল্ডিং তার প্রণীত নকশায় সোয়া দুশ বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে গোটা বিশে^র রাজনৈতিক মুকুটে সংযোজিত হীরক খ-ের মতো। এ যেন মার্কিন রাজমুকুটের কোহিনুর হীরা।
প্রায় ঘণ্টাখানেক ক্যাপিটলের পশ্চিম প্রবেশদ্বারের লনে হাঁটাহাঁটি করলাম। এত রাতে এমন ঠা-ায়ও অনেক শেতাঙ্গকে কুকুর-বিড়াল নিয়ে হাঁটতে দেখলাম। বড় দিনের প্রায় ১০ দিন আগে ক্যাপিটল বিল্ডিংকে আলোর হরেক রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। চতুর্দিক বিক্ষিপ্ত ছিটিয়ে থাকা ক্রীসমাস ট্রিগুলো আলোয় আলোয় আলোকিত। ক্যাপিটল ভবন নিঃসন্দেহে নিও ক্ল্যাসিক্যাল স্থাপত্যরীতির চমৎকার দৃষ্টান্ত। তবে গ্রানাইট, মার্বেলসহ নানা ধরনের পাথর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি রাতের আলোতে। পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ সকাল বেলায় একচক্কর লাগিয়েছি। দিনের আলোয় পরিষ্কার বুঝলাম থর্নটন তাজমহলে ব্যবহৃত গ্রানাইট মার্বেল পাথর ডিসপ্লে দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। সন্ধ্যার পর তাজমহল হয়ে ওঠে আলোয় আলোকিত। ঠিক তেমনি ক্যাপিটল বিল্ডিং নিঝুম অন্ধকারেও আলোকিত হওয়ার জন্য নিজেই যথেষ্ঠ। নিও ক্ল্যাসিকাল স্থাপত্য রীতি ও ক্লাসিকাল গ্রানাইট পাথরের যুগলবন্দী আধুনিক বিশে^র এক বিষ্ময়কর রাজনৈতিক স্থাপত্য নিদর্শন হলো ক্যাপিটল।
[লেখক : আইনজীবী, আপিল বিভাগ]