সিরাজ প্রামাণিক
শুধুমাত্র দেওয়ানি মোকদ্দমাগুলোতে বাদী কিংবা বিবাদী যারই মৃত্যু ঘটুক না কেন, তার প্রতিনিধির মাধ্যমে মৃত্যুর পরও মামলাগুলো চলমান রাখা যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিনিধিরা মামলাগুলোর পক্ষ হয়ে সেগুলো সচল রাখে; কিন্তু ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে সেই সুযোগ আর নেই। এজাহার কিংবা নালিশে যদি সংবাদদাতা বা নালিশকারী কোনো মৃত ব্যক্তিকে আসামি হিসেবে দেখান, তাহলে তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব হলো অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ওই মৃত ব্যক্তিকে আসামি হিসেবে প্রদর্শন না করা। তার মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ ধরনের মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত, বিচার বা সাজা প্রদান করা সম্ভব নয়।
অবশ্য বিচারে দ-িত হওয়ার পর আসামির মৃত্যু ঘটলে তার কারাদ- অবধারিতভাবে মওকুফ হয়ে গেলেও অর্থদ- মওকুফ হয় না। উদাহরণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের মামলাটির উলেœখ করা যেতে পারে। এ মামলাটি ১৯৭৫ সালে সংঘটিত হয়েছিল। এ হত্যাকা- সংঘটনের দিন অপরাধীদের নাম উল্লেখ না করে একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার আগপর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর সেই এজাহারের ভিত্তিতে কোনো তদন্ত হয়নি। ১৯৯৬ সালের পরে ৭৫ সালে দায়ের করা এজাহারের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হলে অনেকের মনে প্রশ্নের উদয় হয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্যের মূলনায়ক খন্দকার মোশতাকের নাম কেন অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত নেই। এর উত্তর হলো- এই মামলাটির তদন্ত কাজ শুরুর আগেই খন্দকার মোশতাক আহমেদের মৃত্যু ঘটে। সেই কারণ তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে অভিযোগপত্রে তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে বিচারের জন্য সোপর্দ করার কোনো সুযোগ ছিল না।
সাজার বিরুদ্ধে আসামির আপিল, অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে নালিশকারী বা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল, আসামিকে খালাস দেয়ার বিরুদ্ধে নালিশকারী বা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল। এসব আপিল চলাকালে যদি আসামির মৃত্যু ঘটে, সেক্ষেত্রে আপিলটি বাতিল হিসেবে গণ্য হয়। ফলে আপিলের বিচারিক কার্যক্রম থেমে যায়।
তবে আসামির যদি অর্থদ- হয়ে থাকে, আর সেই অর্থদ-ের বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য যদি কোনো পক্ষ আপিল করে থাকে, সেই আপিল আসামির মৃত্যুর পরও চলমান থাকবে এবং আসামির অনুপস্থিতিতে তার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কিংবা একতরফাভাবে এর নিষ্পত্তি হতে পারে।
সাজা ভোগকালে আসামির মৃত্যু হলে আসামির লাশ জেল কর্তৃপক্ষ তার আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করে এবং আত্মীয়স্বজন যথারীতি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তার দাফন সম্পন্ন করেন। আবার মামলার ফলস্বরূপ যদি একজন অপরাধী বা আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়, সেক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে। এক্ষেত্রেও আত্মীয়স্বজন ধর্মীয় বিধানমতে লাশের দাফন বা সৎকার সম্পন্ন করেন। তবে সাজা যদি অর্থদ- হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আসামি মৃত্যুবরণ করলেও তার অর্থদ- মওকুফ হয় না। মৃত্যুর পরও অর্থদ- আসামির সম্পত্তি থেকে আদায় করার বিধান রয়েছে।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]
সিরাজ প্রামাণিক
সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪
শুধুমাত্র দেওয়ানি মোকদ্দমাগুলোতে বাদী কিংবা বিবাদী যারই মৃত্যু ঘটুক না কেন, তার প্রতিনিধির মাধ্যমে মৃত্যুর পরও মামলাগুলো চলমান রাখা যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিনিধিরা মামলাগুলোর পক্ষ হয়ে সেগুলো সচল রাখে; কিন্তু ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে সেই সুযোগ আর নেই। এজাহার কিংবা নালিশে যদি সংবাদদাতা বা নালিশকারী কোনো মৃত ব্যক্তিকে আসামি হিসেবে দেখান, তাহলে তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব হলো অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ওই মৃত ব্যক্তিকে আসামি হিসেবে প্রদর্শন না করা। তার মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ ধরনের মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত, বিচার বা সাজা প্রদান করা সম্ভব নয়।
অবশ্য বিচারে দ-িত হওয়ার পর আসামির মৃত্যু ঘটলে তার কারাদ- অবধারিতভাবে মওকুফ হয়ে গেলেও অর্থদ- মওকুফ হয় না। উদাহরণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের মামলাটির উলেœখ করা যেতে পারে। এ মামলাটি ১৯৭৫ সালে সংঘটিত হয়েছিল। এ হত্যাকা- সংঘটনের দিন অপরাধীদের নাম উল্লেখ না করে একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার আগপর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর সেই এজাহারের ভিত্তিতে কোনো তদন্ত হয়নি। ১৯৯৬ সালের পরে ৭৫ সালে দায়ের করা এজাহারের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হলে অনেকের মনে প্রশ্নের উদয় হয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্যের মূলনায়ক খন্দকার মোশতাকের নাম কেন অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত নেই। এর উত্তর হলো- এই মামলাটির তদন্ত কাজ শুরুর আগেই খন্দকার মোশতাক আহমেদের মৃত্যু ঘটে। সেই কারণ তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে অভিযোগপত্রে তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে বিচারের জন্য সোপর্দ করার কোনো সুযোগ ছিল না।
সাজার বিরুদ্ধে আসামির আপিল, অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে নালিশকারী বা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল, আসামিকে খালাস দেয়ার বিরুদ্ধে নালিশকারী বা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল। এসব আপিল চলাকালে যদি আসামির মৃত্যু ঘটে, সেক্ষেত্রে আপিলটি বাতিল হিসেবে গণ্য হয়। ফলে আপিলের বিচারিক কার্যক্রম থেমে যায়।
তবে আসামির যদি অর্থদ- হয়ে থাকে, আর সেই অর্থদ-ের বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য যদি কোনো পক্ষ আপিল করে থাকে, সেই আপিল আসামির মৃত্যুর পরও চলমান থাকবে এবং আসামির অনুপস্থিতিতে তার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কিংবা একতরফাভাবে এর নিষ্পত্তি হতে পারে।
সাজা ভোগকালে আসামির মৃত্যু হলে আসামির লাশ জেল কর্তৃপক্ষ তার আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করে এবং আত্মীয়স্বজন যথারীতি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তার দাফন সম্পন্ন করেন। আবার মামলার ফলস্বরূপ যদি একজন অপরাধী বা আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়, সেক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে। এক্ষেত্রেও আত্মীয়স্বজন ধর্মীয় বিধানমতে লাশের দাফন বা সৎকার সম্পন্ন করেন। তবে সাজা যদি অর্থদ- হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আসামি মৃত্যুবরণ করলেও তার অর্থদ- মওকুফ হয় না। মৃত্যুর পরও অর্থদ- আসামির সম্পত্তি থেকে আদায় করার বিধান রয়েছে।
[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট]