মিথুশিলাক মুরমু
ধর্মীয় কিংবা জাতিগত সংখ্যালঘুরা নানা কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। দেশীয় কিংবা বৈশি^ক রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় ইস্যুতে উগ্রবাদীদের হুমকি-ধামকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় শিকার হয়ে থাকেন। পাশাপাশি সহায়-সম্পত্তি, জায়গা-জমি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিরাট প্রভাব পড়ে থাকে। ফলস্বরূপ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা স্থানান্তর ও দেশত্যাগের মতো হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হোন। দেশে কোনো নাগরিকের বসবাসের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শীর্ষে থাকবে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়, বিশেষ করে গত চার আগস্ট থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে দেশে দুই হাজার দশটি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতন-অত্যাচারের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এই সময় কমপক্ষে ২২টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও হামলার শিকার হয়েছে। অপরদিকে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই থেকে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের জুন পর্যন্ত এক হাজার ৪৫টি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর জোর-জুলুম, নির্যাতন, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, ধর্মান্তকরণ, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি এবং শশ্মান-কবরস্থান দখলের মতো ঘটনা ঘটেছে। একজন ধর্মীয় কিংবা জাতিগত সংখ্যালঘুকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরাপত্তাহীনতার আবর্ত থেকেই প্রতিনিয়ত দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এ যেন ¯্রষ্টার ইচ্ছায় নয়, মানুষ্যের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর তাদের মৃত্যু ও বেঁচে থাকা নির্ভর করছে।
গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরক্ষণেই চিহ্নিত লোকেরাই অপরিচিত হয়ে ওঠেছে।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাশাপাশি জীবন ধারণ করলেও মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি। বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী আদিবাসী, খ্রিস্টান ও অন্ত্যজরা কখনোই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে না, এজন্য এখন তারা হচ্ছে সহজসাধ্য টার্গেট এবং হামলার শীর্ষে। পাঁচ আগস্টের পরবর্তীতে নওগাঁ শহরে অবস্থিত চার্চ অব বাংলাদেশের গির্জাঘরে অগ্নিসংযোগ, দিনাজপুরে ইভানজেলিক্যাল হলিনেস চার্চ হামলা এবং একটি খ্রিস্টান বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট, বরিশালের গৌরনদীতে তিনটি, খুলনা শহরে একটি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে একটি খ্রিস্টান বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে দ্য খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের কালেকশন বুথে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে নিজপাড়া মিশনে মা মারিয়ার মূর্তি চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়; পূর্বে খ্রিস্টানদের ওপর হামলার এরূপ ঊর্ধ্বমুখী ছিল না।
সবচেয়ে অরক্ষিত জায়গা হচ্ছে দিনাজপুর
জেলা। খ্রিস্টান ধর্মের নেতাদের রাজনৈতিক লেবাসধারীরা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা প্রকাশ্যে কাজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ দাবি করে আসছে। সময়ে-অসময়ে রাস্তাঘাটে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে জিম্মি করার কৌশলে ধর্মীয় কর্মকা- যেমন বিঘিœত করে তুলেছে; অনুরূপভাবে সেবামূলক কার্যক্রম যেমনÑ শিক্ষা, মা-শিশু পরিচর্যা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ইত্যাদিও স্থবির হয়ে পড়েছে। ধর্মীয় নেতারা সাধারণ খ্রিস্ট বিশ^াসীদের
দিকে তাকিয়ে নিজেদের চলাচল ও কাজগুলোকে সীমিত করলেও বুঝতে দেননি; এটি যদি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল খ্রিস্ট বিশ^াসী ও আদিবাসীদের নিরাপত্তার
ঝুঁকি যেমন বাড়বে, স্থানান্তরের সংখ্যাও বাড়বে বৈ কমবে না। ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজ বলেছেন, ‘আমরা এ দেশে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কিন্তু নানা সময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়। কিন্তু হামলাকারীদের শাস্তি হয় না। শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে হামলা বন্ধ হবে না।’
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজাতে মাদ্রাসা, প্রতিবেশী মসজিদ কমিটিগুলো নিরাপত্তার স্বার্থে প্রহরা বসানোর পক্ষে নিজেদের আত্মনিয়োগ করছেন। অতীতেও দেখেছি, পুলিশের সরব উপস্থিতি পূজা-অর্চনা করতে; কিন্তু কখনো কী ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা নিশ্চিন্তে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে স্বস্তিবোধ করেছেন! মোটকথা, নিজেদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নিজেদের মতো করার ক্ষেত্রে কোথায় যেন বাধা অনুভব করেন। মন-প্রাণ খুলে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, হাসি-আনন্দ কিংবা ধর্মীয় বিধানানুযায়ী নিজেদের সমর্পণ করতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। আর এটি যখন কোনো বিশ^াস-অবিশ^াসের জায়গা থেকে হয়ে থাকে। জানা গেছে, চলতি বছরে দুর্গাপূজার সংখ্যা কমে যাচ্ছে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে সারাদেশে ৩৩ হাজার ৪৩১টি ছিল; এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬৬৬টি। রাজধানী ঢাকায়ও পুজোম-পের সংখ্যা কম হচ্ছে; তবে পুজো প্যান্ডেলের সংখ্যা বেশি হতে পারে। বিভিন্ন সময় সরকারগুলো দেশবাসীকে আত্মবিশ^াসে উজ্জীবিত করতে সেøাগান দিয়েছেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’; ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’; ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার’। অতঃপরও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রের কর্ণধারদের প্রতিশ্রুতি আস্থা রাখতে পারেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যেকটি শহরের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতেও সম্প্রীতি ও দেশত্মবোধের বহিঃপ্রকাশ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। দেয়ালের গ্রাফিতিতেÑ ‘বিভক্তি নয় সম্প্রীতি চাই’; ‘হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ পাহাড়ি খ্রিষ্টান এ
বাংলায় সবাই সমান’; সংস্কৃতি আমার পরিচয়, আমার সম্পদ’; ‘এই স্বাধীন যেন হিন্দু বৌদ্ধ সবারই হয়’; ‘সমতল থেকে পাহাড়, এবারের মুক্তি সবার’; ‘ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়, বর্ণের চেয়ে কর্ম বড়’; ‘ধর্ম যার যার, দেশ সবার’; ‘আমার সোনার বাংলায়, সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি সেøাগান আমাদের ভারমুক্ত করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম, আদিবাসী, অন্ত্যজরা কিন্তু সেটিতেও ধীরে ধীরে বিষবাষ্প প্রবেশ করেছে। বাংলার আকাশ-বাতাসে কালো মেঘের ঘনঘটাতে আবারো ধর্মীয় ও
জাতিগত সংখ্যালঘুরা আঁতকে উঠেছেন। নিরাপত্তা বিঘিœত হলে সংখ্যালঘুরা নিঃসন্দেহে নিজেরাই নিজেদের পথ বেছে নেবেন; প্রয়োজন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়া।
[লেখক : কলামিস্ট]
মিথুশিলাক মুরমু
মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ধর্মীয় কিংবা জাতিগত সংখ্যালঘুরা নানা কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। দেশীয় কিংবা বৈশি^ক রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় ইস্যুতে উগ্রবাদীদের হুমকি-ধামকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় শিকার হয়ে থাকেন। পাশাপাশি সহায়-সম্পত্তি, জায়গা-জমি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিরাট প্রভাব পড়ে থাকে। ফলস্বরূপ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা স্থানান্তর ও দেশত্যাগের মতো হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হোন। দেশে কোনো নাগরিকের বসবাসের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শীর্ষে থাকবে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার।
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়, বিশেষ করে গত চার আগস্ট থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে দেশে দুই হাজার দশটি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতন-অত্যাচারের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এই সময় কমপক্ষে ২২টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও হামলার শিকার হয়েছে। অপরদিকে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই থেকে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের জুন পর্যন্ত এক হাজার ৪৫টি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর জোর-জুলুম, নির্যাতন, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, ধর্মান্তকরণ, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি এবং শশ্মান-কবরস্থান দখলের মতো ঘটনা ঘটেছে। একজন ধর্মীয় কিংবা জাতিগত সংখ্যালঘুকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরাপত্তাহীনতার আবর্ত থেকেই প্রতিনিয়ত দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এ যেন ¯্রষ্টার ইচ্ছায় নয়, মানুষ্যের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর তাদের মৃত্যু ও বেঁচে থাকা নির্ভর করছে।
গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরক্ষণেই চিহ্নিত লোকেরাই অপরিচিত হয়ে ওঠেছে।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাশাপাশি জীবন ধারণ করলেও মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি। বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী আদিবাসী, খ্রিস্টান ও অন্ত্যজরা কখনোই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে না, এজন্য এখন তারা হচ্ছে সহজসাধ্য টার্গেট এবং হামলার শীর্ষে। পাঁচ আগস্টের পরবর্তীতে নওগাঁ শহরে অবস্থিত চার্চ অব বাংলাদেশের গির্জাঘরে অগ্নিসংযোগ, দিনাজপুরে ইভানজেলিক্যাল হলিনেস চার্চ হামলা এবং একটি খ্রিস্টান বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট, বরিশালের গৌরনদীতে তিনটি, খুলনা শহরে একটি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে একটি খ্রিস্টান বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।
নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে দ্য খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের কালেকশন বুথে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে নিজপাড়া মিশনে মা মারিয়ার মূর্তি চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়; পূর্বে খ্রিস্টানদের ওপর হামলার এরূপ ঊর্ধ্বমুখী ছিল না।
সবচেয়ে অরক্ষিত জায়গা হচ্ছে দিনাজপুর
জেলা। খ্রিস্টান ধর্মের নেতাদের রাজনৈতিক লেবাসধারীরা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা প্রকাশ্যে কাজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ দাবি করে আসছে। সময়ে-অসময়ে রাস্তাঘাটে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে জিম্মি করার কৌশলে ধর্মীয় কর্মকা- যেমন বিঘিœত করে তুলেছে; অনুরূপভাবে সেবামূলক কার্যক্রম যেমনÑ শিক্ষা, মা-শিশু পরিচর্যা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ইত্যাদিও স্থবির হয়ে পড়েছে। ধর্মীয় নেতারা সাধারণ খ্রিস্ট বিশ^াসীদের
দিকে তাকিয়ে নিজেদের চলাচল ও কাজগুলোকে সীমিত করলেও বুঝতে দেননি; এটি যদি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল খ্রিস্ট বিশ^াসী ও আদিবাসীদের নিরাপত্তার
ঝুঁকি যেমন বাড়বে, স্থানান্তরের সংখ্যাও বাড়বে বৈ কমবে না। ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজ বলেছেন, ‘আমরা এ দেশে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কিন্তু নানা সময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়। কিন্তু হামলাকারীদের শাস্তি হয় না। শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে হামলা বন্ধ হবে না।’
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজাতে মাদ্রাসা, প্রতিবেশী মসজিদ কমিটিগুলো নিরাপত্তার স্বার্থে প্রহরা বসানোর পক্ষে নিজেদের আত্মনিয়োগ করছেন। অতীতেও দেখেছি, পুলিশের সরব উপস্থিতি পূজা-অর্চনা করতে; কিন্তু কখনো কী ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা নিশ্চিন্তে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে স্বস্তিবোধ করেছেন! মোটকথা, নিজেদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নিজেদের মতো করার ক্ষেত্রে কোথায় যেন বাধা অনুভব করেন। মন-প্রাণ খুলে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, হাসি-আনন্দ কিংবা ধর্মীয় বিধানানুযায়ী নিজেদের সমর্পণ করতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। আর এটি যখন কোনো বিশ^াস-অবিশ^াসের জায়গা থেকে হয়ে থাকে। জানা গেছে, চলতি বছরে দুর্গাপূজার সংখ্যা কমে যাচ্ছে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে সারাদেশে ৩৩ হাজার ৪৩১টি ছিল; এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬৬৬টি। রাজধানী ঢাকায়ও পুজোম-পের সংখ্যা কম হচ্ছে; তবে পুজো প্যান্ডেলের সংখ্যা বেশি হতে পারে। বিভিন্ন সময় সরকারগুলো দেশবাসীকে আত্মবিশ^াসে উজ্জীবিত করতে সেøাগান দিয়েছেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’; ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’; ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার’। অতঃপরও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রের কর্ণধারদের প্রতিশ্রুতি আস্থা রাখতে পারেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যেকটি শহরের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতেও সম্প্রীতি ও দেশত্মবোধের বহিঃপ্রকাশ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। দেয়ালের গ্রাফিতিতেÑ ‘বিভক্তি নয় সম্প্রীতি চাই’; ‘হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ পাহাড়ি খ্রিষ্টান এ
বাংলায় সবাই সমান’; সংস্কৃতি আমার পরিচয়, আমার সম্পদ’; ‘এই স্বাধীন যেন হিন্দু বৌদ্ধ সবারই হয়’; ‘সমতল থেকে পাহাড়, এবারের মুক্তি সবার’; ‘ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়, বর্ণের চেয়ে কর্ম বড়’; ‘ধর্ম যার যার, দেশ সবার’; ‘আমার সোনার বাংলায়, সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি সেøাগান আমাদের ভারমুক্ত করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম, আদিবাসী, অন্ত্যজরা কিন্তু সেটিতেও ধীরে ধীরে বিষবাষ্প প্রবেশ করেছে। বাংলার আকাশ-বাতাসে কালো মেঘের ঘনঘটাতে আবারো ধর্মীয় ও
জাতিগত সংখ্যালঘুরা আঁতকে উঠেছেন। নিরাপত্তা বিঘিœত হলে সংখ্যালঘুরা নিঃসন্দেহে নিজেরাই নিজেদের পথ বেছে নেবেন; প্রয়োজন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়া।
[লেখক : কলামিস্ট]