মৃদুল কান্তি ধর
বর্তমানে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে আসছে এবং জীবনযাত্রার মানও হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, পণ্য আমদানি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা, কৃষি এবং শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ যেমন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি, মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লাভের জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ কীভাবে তাদের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মোকাবিলা করছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে তাদের বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে।
শ্রীলঙ্কা : দেউলিয়া থেকে স্থিতিশীল অর্থনীতি শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পর দ্রুত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশটি নানাবিধ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে দ্রব্যমূল্যের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতিগত পদক্ষেপের কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রবাসী আয় ও পর্যটনের মতো কিছু খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে উন্নতি ঘটেছে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির। চলুন দেখি কীভাবে দেশটি এই সাফল্য অর্জন করেছেÑ
মুদ্রাস্ফীতি কমানো : ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৭০% পর্যন্ত পৌঁছেছিল। খাদ্য-জ্বালানি-ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে আক্ষরিক অর্থেই গিয়েছিল আগুন, বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল পুরো দেশ। সেখান থেকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে অসাধারণ সাফল্যের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে দেশটির সরকার। বর্তমানে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার দেয়া এক প্রেস রিলিজে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির সূচক ঋণাত্মক শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশে নেমে দাঁড়িয়েছে। এই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পেছনে দেশের কঠোর মুদ্রানীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার ছিল মূল চালিকাশক্তি। সুদের হার বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি কমানোর প্রচেষ্টা দেশটির অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ও মূল্য নির্ধারণ : জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে শ্রীলঙ্কা জ্বালানি রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে। সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুতের খরচ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেছে, যার মাধ্যমে সরাসরি মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সালে বিদ্যুতের মূল্য পুনর্গঠন করে এর ওপর থেকে সরাসরি চাপ হ্রাস করা হয়, যা সার্বিক দ্রব্যমূল্য কমাতে সহায়তা করেছে। আইএমএফের সহায়তা : আইএমএফের সঙ্গে ২৯০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা চুক্তি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় সাহায্য করেছে। এই আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়, যা আমদানি ও পণ্য সরবরাহে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ উন্নত হয় এবং বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মূল্য স্থিতিশীল হয়।
কর ও রাজস্ব নীতি সংস্কার : শ্রীলঙ্কা সরকার কর ব্যবস্থা সংস্কার করেছে এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করেছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।
পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধার : শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাত ২০২৩ সাল থেকেই পুনরুদ্ধার হয়েছে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পর্যটন থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় সাহায্য করেছে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে। শ্রমশক্তি রপ্তানি : শ্রমশক্তি রপ্তানি খাতে শ্রীলঙ্কা গত এক বছরে অনেক ভালো করেছে। বস্তুত গত বছর বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে দেশটি। দক্ষ প্রবাসীরা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর কারণে গত এক বছরে দেশটির প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার এই পদক্ষেপগুলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এবং দেশটির অর্থনীতিকে করেছে পুনরুজ্জীবিত। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার জনগণের অনেক আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। স্বাভাবিকভাবেই, এ সরকারের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাদের প্রত্যাশাগুলোর মধ্যে একটি হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। ইতোমধ্যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পর্যায়ে বাজার পরিস্থিতি তদারকি ও বিশ্লেষণের জন্য একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। যদিও দ্রব্যমূল্য এখনো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আসেনি, যা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কৌশলগত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বাজার পর্যবেক্ষণ ও রাজস্ব নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকে এবং ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখা যায়। বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে সরাসরি কৃষকদের জন্য বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। সরাসরি কৃষকদের জন্য বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন ভারতে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশেও কার্যকর হতে পারে। এর ফলে কমবে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব এবং ভেঙে যেতে পারে অবৈধ সিন্ডিকেট। অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে দ্রুত বিচার আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরবরাহ শৃঙ্খলা উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে বাজারে পণ্যের স্থিতিশীল সরবরাহ। এতে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দেবে না, নিয়ন্ত্রণে থাকবে দাম। এজন্য সড়ক ও পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নৌ ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ জরুরি। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকারী পদক্ষেপ এবং কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যেতে পারে। এর ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে বেশি লাভ করতে পারবে, এবং বাজারেও পণ্য সহজলভ্য হবে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর কর হ্রাস বা সরাসরি ভর্তুকি প্রদান করা হলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বাজারের ওপর চাপ কমবে বলে আশা করা যায়।
[লেখক : কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ (একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত)]
মৃদুল কান্তি ধর
শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
বর্তমানে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে আসছে এবং জীবনযাত্রার মানও হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, পণ্য আমদানি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা, কৃষি এবং শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ যেমন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি, মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লাভের জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ কীভাবে তাদের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মোকাবিলা করছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে তাদের বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে।
শ্রীলঙ্কা : দেউলিয়া থেকে স্থিতিশীল অর্থনীতি শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পর দ্রুত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশটি নানাবিধ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে দ্রব্যমূল্যের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতিগত পদক্ষেপের কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রবাসী আয় ও পর্যটনের মতো কিছু খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে উন্নতি ঘটেছে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির। চলুন দেখি কীভাবে দেশটি এই সাফল্য অর্জন করেছেÑ
মুদ্রাস্ফীতি কমানো : ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৭০% পর্যন্ত পৌঁছেছিল। খাদ্য-জ্বালানি-ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে আক্ষরিক অর্থেই গিয়েছিল আগুন, বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল পুরো দেশ। সেখান থেকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে অসাধারণ সাফল্যের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে দেশটির সরকার। বর্তমানে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার দেয়া এক প্রেস রিলিজে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির সূচক ঋণাত্মক শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশে নেমে দাঁড়িয়েছে। এই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পেছনে দেশের কঠোর মুদ্রানীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার ছিল মূল চালিকাশক্তি। সুদের হার বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি কমানোর প্রচেষ্টা দেশটির অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ও মূল্য নির্ধারণ : জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে শ্রীলঙ্কা জ্বালানি রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে। সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুতের খরচ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেছে, যার মাধ্যমে সরাসরি মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সালে বিদ্যুতের মূল্য পুনর্গঠন করে এর ওপর থেকে সরাসরি চাপ হ্রাস করা হয়, যা সার্বিক দ্রব্যমূল্য কমাতে সহায়তা করেছে। আইএমএফের সহায়তা : আইএমএফের সঙ্গে ২৯০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা চুক্তি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় সাহায্য করেছে। এই আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন করতে সক্ষম হয়, যা আমদানি ও পণ্য সরবরাহে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ উন্নত হয় এবং বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মূল্য স্থিতিশীল হয়।
কর ও রাজস্ব নীতি সংস্কার : শ্রীলঙ্কা সরকার কর ব্যবস্থা সংস্কার করেছে এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করেছে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।
পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধার : শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাত ২০২৩ সাল থেকেই পুনরুদ্ধার হয়েছে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পর্যটন থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় সাহায্য করেছে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে। শ্রমশক্তি রপ্তানি : শ্রমশক্তি রপ্তানি খাতে শ্রীলঙ্কা গত এক বছরে অনেক ভালো করেছে। বস্তুত গত বছর বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে দেশটি। দক্ষ প্রবাসীরা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর কারণে গত এক বছরে দেশটির প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার এই পদক্ষেপগুলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এবং দেশটির অর্থনীতিকে করেছে পুনরুজ্জীবিত। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার জনগণের অনেক আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। স্বাভাবিকভাবেই, এ সরকারের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাদের প্রত্যাশাগুলোর মধ্যে একটি হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। ইতোমধ্যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পর্যায়ে বাজার পরিস্থিতি তদারকি ও বিশ্লেষণের জন্য একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। যদিও দ্রব্যমূল্য এখনো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আসেনি, যা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কৌশলগত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বাজার পর্যবেক্ষণ ও রাজস্ব নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকে এবং ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখা যায়। বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে সরাসরি কৃষকদের জন্য বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। সরাসরি কৃষকদের জন্য বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন ভারতে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশেও কার্যকর হতে পারে। এর ফলে কমবে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব এবং ভেঙে যেতে পারে অবৈধ সিন্ডিকেট। অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে দ্রুত বিচার আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরবরাহ শৃঙ্খলা উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে বাজারে পণ্যের স্থিতিশীল সরবরাহ। এতে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দেবে না, নিয়ন্ত্রণে থাকবে দাম। এজন্য সড়ক ও পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নৌ ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ জরুরি। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকারী পদক্ষেপ এবং কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যেতে পারে। এর ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে বেশি লাভ করতে পারবে, এবং বাজারেও পণ্য সহজলভ্য হবে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর কর হ্রাস বা সরাসরি ভর্তুকি প্রদান করা হলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বাজারের ওপর চাপ কমবে বলে আশা করা যায়।
[লেখক : কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ (একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত)]