alt

উপ-সম্পাদকীয়

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

আনোয়ার হোসেন

: বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি ও দক্ষতা যাচাই করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভর্তিতে লটারি সিস্টেম কোমলমতি শিশুদের মাঝে এক ধরনের নেতিবাচক মানসিকতার জন্ম দেয়। তারা চিন্তা করে চান্স পাওয়াটা যেহেতু ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল সেহেতু অযথা পড়াশোনা করার তো কোনো প্রয়োজন পড়ে না। যদিও করোনা মহামারীর প্রতিকূল পরিবেশে লটারি সিস্টেম চালু হয়েছিল; কিন্তু সেই মহামারীর আভাস সরকারি স্কুলগুলোতে দীর্ঘ চার বছরেও দূর হয়নি।

যে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট বা সেকেন্ড হতো লটারি সিস্টেমে তার ভাগ্য সহায় নাও হতে পারে। ভাগ্যচক্রের নিয়তির এই জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। তখন তাদের বাবা-মায়ের চোখে-মুখে ফুটে উঠে দুশ্চিন্তা আর বিষণœতার ছাপ। তাদের হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি একটাই, আমার ছেলেটা বা মেয়েটা পড়াশোনায় অনেক ভালো; কিন্তু লটারিতে তার ভাগ্য সহায় হলো না!

লটারিতে ভর্তি সিস্টেমে তদবির এবং স্বজনপ্রীতি এখন মামুলি বিষয় হয়ে উঠেছে। এ অনৈতিক সুবিধাটুকু কিন্তু পর্দার আড়ালে খুবই সূক্ষ্মভাবে ঘটে থাকে। এভাবেই ওপর মহলের একটা ফোন বা সুপারিশপত্রের কাছে হাজারও মেধাবীর স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। আর টাকা দিয়ে মেধা কেনার এই প্রতিযোগিতা জুয়া খেলার মতোই রটে যায়।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এই পদ্ধতির অধীনে, শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। অভিভাবকদের অনলাইনে আবেদন করতে হয় এবং পরে লটারি কার্যক্রম সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

সম্প্রতি প্রথম থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চিঠিতে বলা হয়েছেÑ ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের মহানগরী ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের শূন্য আসনসহ অন্য তথ্য দাখিলের সময়সীমা ১০ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। তাহলে কি ২০২০ থেকে ২৪ দীর্ঘ চার বছর সরকারি স্কুলগুলোতে করোনা মহামারী রয়েই গেছে! কবে দূর হবে এই মহামারী?

লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক যোগ্য এবং মেধাবী শিক্ষার্থী যাদের ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা ছিল, তারাও এই পদ্ধতিতে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হচ্ছে। লটারি ভিত্তিক ভর্তির মাধ্যমে প্রাপ্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ হারাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে স্কুলের আসনসংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে; কিন্তু ভর্তিতে লটারি সিস্টেম কোন অবস্থাতেই যৌক্তিক নয়। তাই মেধার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে সচল রাখা প্রয়োজন। সরকারি স্কুলগুলোতে মেধার সঠিক মূল্যায়নে লটারির মাধ্যমে ভর্তির বর্তমান ব্যবস্থা বাতিল করা এখন সময়ের দাবি।

[লেখক : শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর]

জ্ঞানই শক্তি

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস : জোর দিতে হবে প্রতিরোধে

ঋণ ব্যবস্থা : তেলা মাথায় ঢালো তেল, ন্যাড়া মাথায় ভাঙো বেল

বিচারকের ওপর হামলা কেন

বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার কবলে রোহিঙ্গা ইস্যু

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

বৈষম্য ঘোচাতে চাই একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনকল্যাণ

সমস্যার সূতিকাগার

ছবি

বাংলাদেশে আলু চাষে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের পথ কী?

ব্যাংক সংস্কার : কাটবে কি অন্ধকার?

ছবি

নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

রম্যগদ্য: ম্যাড় ম্যাড়ে সোনা-কাহিনী

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার

কেন এত ধ্বংস, কেন এত মৃত্যু

জলবায়ু সম্মেলন থেকে আমরা কী পেলাম

উচ্চশিক্ষায় মান বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ

ছবি

যানজট আর্থ-সামাজিক বিড়ম্বনাকে প্রকট করে তুলছে

যাচ্ছে দিন, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

ছবি

স্বপ্ন দেখতে তো ভুল নেই

ছবি

আহমদুল কবির : সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে

ইতিহাসের কাছে মানুষ কী চায়?

আর্থিক সংকট কতটা গভীর

আদিবাসী নেতাদের দেখে নেয়ার হুমকি

সম্পত্তিতে এতিম নাতি-নাতনির অংশ ও বাস্তবতা

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন তত্ত্বের শতবর্ষ

প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো বাঁচানো জরুরি

রঙ্গব্যঙ্গ : শাব্বাশ বিটিভি, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

ছবি

কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি খুব একটা পরিবর্তন হবে কি

অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা

মুজিব কি কেবলই ছবি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

আনোয়ার হোসেন

বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি ও দক্ষতা যাচাই করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভর্তিতে লটারি সিস্টেম কোমলমতি শিশুদের মাঝে এক ধরনের নেতিবাচক মানসিকতার জন্ম দেয়। তারা চিন্তা করে চান্স পাওয়াটা যেহেতু ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল সেহেতু অযথা পড়াশোনা করার তো কোনো প্রয়োজন পড়ে না। যদিও করোনা মহামারীর প্রতিকূল পরিবেশে লটারি সিস্টেম চালু হয়েছিল; কিন্তু সেই মহামারীর আভাস সরকারি স্কুলগুলোতে দীর্ঘ চার বছরেও দূর হয়নি।

যে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট বা সেকেন্ড হতো লটারি সিস্টেমে তার ভাগ্য সহায় নাও হতে পারে। ভাগ্যচক্রের নিয়তির এই জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। তখন তাদের বাবা-মায়ের চোখে-মুখে ফুটে উঠে দুশ্চিন্তা আর বিষণœতার ছাপ। তাদের হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি একটাই, আমার ছেলেটা বা মেয়েটা পড়াশোনায় অনেক ভালো; কিন্তু লটারিতে তার ভাগ্য সহায় হলো না!

লটারিতে ভর্তি সিস্টেমে তদবির এবং স্বজনপ্রীতি এখন মামুলি বিষয় হয়ে উঠেছে। এ অনৈতিক সুবিধাটুকু কিন্তু পর্দার আড়ালে খুবই সূক্ষ্মভাবে ঘটে থাকে। এভাবেই ওপর মহলের একটা ফোন বা সুপারিশপত্রের কাছে হাজারও মেধাবীর স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। আর টাকা দিয়ে মেধা কেনার এই প্রতিযোগিতা জুয়া খেলার মতোই রটে যায়।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এই পদ্ধতির অধীনে, শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। অভিভাবকদের অনলাইনে আবেদন করতে হয় এবং পরে লটারি কার্যক্রম সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

সম্প্রতি প্রথম থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চিঠিতে বলা হয়েছেÑ ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের মহানগরী ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের শূন্য আসনসহ অন্য তথ্য দাখিলের সময়সীমা ১০ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। তাহলে কি ২০২০ থেকে ২৪ দীর্ঘ চার বছর সরকারি স্কুলগুলোতে করোনা মহামারী রয়েই গেছে! কবে দূর হবে এই মহামারী?

লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক যোগ্য এবং মেধাবী শিক্ষার্থী যাদের ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা ছিল, তারাও এই পদ্ধতিতে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হচ্ছে। লটারি ভিত্তিক ভর্তির মাধ্যমে প্রাপ্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ হারাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে স্কুলের আসনসংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে; কিন্তু ভর্তিতে লটারি সিস্টেম কোন অবস্থাতেই যৌক্তিক নয়। তাই মেধার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে সচল রাখা প্রয়োজন। সরকারি স্কুলগুলোতে মেধার সঠিক মূল্যায়নে লটারির মাধ্যমে ভর্তির বর্তমান ব্যবস্থা বাতিল করা এখন সময়ের দাবি।

[লেখক : শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর]

back to top