alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে আলু চাষে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি

মাহফুজ আলম

: শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
image

দেশে সবজির চাহিদার ৪৮.১৩% আলুর মাধ্যমে মিটানো হয়

বাংলাদেশে আলু ফসলের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে আলুর ভূমিকা অপরিসীম। আলু একটি পুষ্টিকর খাদ্যশস্য যা ধান ও গমের পরেই দেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার শর্করা, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং আঁশ, যা দৈনন্দিন পুষ্টি সরবরাহে সহায়ক। বাংলাদেশে ৪.৫৮ লাখ হেক্টের জমিতে মোট ১০৯.৬৫ লাখ টন আলু উৎপাদতি হয়, যার একক ফলন ২৩.৯১ টন (বিবিএস ও ডিএই সমন্বয়কৃত, ২০২৩-২০২৪)।

দেশের অভ্যন্তরে আলুর চাহিদা ৭০-৮০ লাখ টন এবং বিদেশে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৩২৩৯৯.৬৬ টন (ডিএই, ২০২২-২০২৩)। বর্তমানে বাংলাদেশে চাষের জমির পরিমাণ ও ফলনের হিসেবে ধানের পরই আলুর স্থান। বহুমুখী খাদ্য, শিল্পায়িত খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত এবং পুষ্টিমানের জন্য সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আলু জনপ্রিয় এবং দেশে সবজির চাহিদার ৪৮.১৩% আলুর মাধ্যমে মিটানো হয়। বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটির গুণাগুণ আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। শীতকালীন সময়ে দেশের আবহাওয়া আলুর বৃদ্ধি ও উৎপাদনের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা প্রদান করে। বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল যেমন দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর এবং যশোর আলু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। আলুর ফলন অন্য অনেক ফসলের তুলনায় বেশি এবং এটি তুলনামূলকভাবে কম সময়ের মধ্যে চাষ করা যায়। আলুর বাজারজাতকরণ সহজ এবং দেশে এটি সারা বছর চাহিদা থাকা একটি পণ্য। খাদ্য শিল্পে আলুর ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে, এটি একটি উচ্চবাজারযোগ্য ফসল। আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেশে হিমাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আলু সংরক্ষণের সুযোগও বেড়েছে, যা কৃষকদের মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।অন্যদিকে, সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রণোদনা আলু চাষকে আরও উৎসাহিত করছে। আলু চাষে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা মোকাবিলার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। সার, সেচ, রোগ ব্যবস্থাপনা এবং মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করার মাধ্যমে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। ভবিষ্যতে, আরও গবেষণা ও উদ্ভাবন আলু চাষের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আলু চাষের উপযুক্ত সময় বাংলাদেশে সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আলুর বীজ রোপণ করা হয়। আলুর ফসল সংগ্রহ করা হয় জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। উপযুক্ত মাটির ধরন ও আবহাওয়া আলু চাষে সঠিক মাটি ও আবহাওয়া নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো ফসলের গুণমান এবং উৎপাদনশীলতায় বড় ভূমিকা রাখে। আলু চাষের জন্য বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। এই মাটি দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে পারে, যা আলুর কন্দ পচন রোধে সাহায্য করে। মাটির পিএইচ স্তর ৫.২-৬.৫ হলে সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আলু চাষের জন্য ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো। বেশি গরম তাপমাত্রায় আলুর কন্দের বৃদ্ধি কমে যায় এবং বেশি ঠান্ডায় কন্দ জমাট বেঁধে যেতে পারে।

বাংলাদেশে আলু চাষের উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল, যা সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী। এই সময়টি আলু চাষের জন্য আদর্শ কারণ শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া আলুর কন্দের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। আলু মূলত একটি রবি শস্য, যা হালকা ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভালোভাবে ফলন দেয়। তাপমাত্রা ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে আলুর কন্দ সঠিকভাবে বিকাশ লাভ করে। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরুতে আলুর বীজ রোপণ করলে তা সময়মতো শীতকালীন আবহাওয়ার সুবিধা পায় এবং ফলন ভালো হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলু চাষের সময় ভিন্ন হতে পারে, কারণ মাটির ধরন এবং জলবায়ুর ওপর সময় নির্ভর করে। উত্তরবঙ্গ সাধারণত নভেম্বর মাসে আলু বীজ রোপণ শুরু হয়, যেখানে শীত একটু আগেই শুরু হয়। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলে, যেখানে শীত অপেক্ষাকৃত দেরিতে আসে, ডিসেম্বরের প্রথম দিকেও চাষ করা যায়। খেয়াল রাখতে হবে যে, বীজ রোপণের সময় জমি শুষ্ক কিন্তু আর্দ্র থাকবে, যাতে বীজ সহজে অঙ্কুরিত হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা জলাবদ্ধতা বীজের অঙ্কুরোদগমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মাটির প্রস্তুতি আলু চাষের জন্য সঠিক মাটির প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর উপরই ফসলের গুণগত মান ও উৎপাদন নির্ভর করে।

আলু একটি কন্দজাতীয় ফসল, যা মূলত ভালোভাবে নিষ্কাশনযোগ্য, উর্বর ও দোঁআশ মাটিতে সবচেয়ে ভালো ফলন দেয়। মাটির প্র্রস্তুতির জন্য প্রথমে জমি ৪-৫ বার চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হবে এবং আগাছা আগের ও ফসলের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করতে হবে। এরপর জমিতে গভীর চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নেওয়া উচিত, যাতে কন্দ সহজে মাটির নিচে বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া মাটির পিএইচ মান ৫.৫ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে থাকলে আলু ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। যদি মাটি অতিরিক্ত অম্লীয় হয়, তবে ডোলোমাইট বা চুন প্রয়োগ করে পিএইচ সমতা আনতে হবে। পাশাপাশি মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস, পটাশ ও নাইট্রোজেন থাকলে কন্দের বৃদ্ধি ও ফলনের গুণমান উন্নত হয়। জমি চাষ করার সময় সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

সার প্রয়োগের পরে জমি মই দিয়ে সমান করে নেওয়া হয়, যাতে আলুর বীজ লাগানোর জন্য জমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকে। এভাবে সঠিক পদ্ধতিতে মাটির প্রস্তুতি নিশ্চিত করলে আলুর ফলন বৃদ্ধি পায় এবং রোগবালাই প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

উন্নতমানের বীজ নির্বাচন আলু চাষের সাফল্যের জন্য উন্নতমানের বীজ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ ফলনশীল জাত যেমন- বারি আলু-৯৬, বারি আলু-৯৮, বারি আলু-৯২, বারি আলু-৯৩, বারি আলু-৯৫, বারি আলু-১০০, বারি আলু-১০১, বারি আলু-১০৩, বিএডিসি আলু-১, বিএডিসি আলু-২, বিএডিসি আলু-৩, বিএডিসি আলু-৬, বিএডিসি আলু-৭, বিএডিসি আলু-১১, বিএডিসি আলু-১২, বিএডিসি আলু-১৩, লিভেন্তে, এসআিই ফ্রাই আলু-২, এসআিই আলু-৭, এসআিই আলু-৯, এসআিই ফ্রাই আলু-২, আদাতো, টুইনার, র্আসনোল, মারকিস জাতের বীজ ব্যাবহার করলে ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। উন্নতমানের বীজ কন্দের আকার, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পরিবেশগত প্রতিকূলতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বাড়ায়।

উন্নতমানের বীজের বৈশিষ্ট্য

উন্নতমানের বীজ বেছে নেওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবেÑ

ক্স বীজ অবশ্যই ভাইরাস বা ছত্রাকজনিত রোগমুক্ত হতে হবে। রোগাক্রান্ত বীজ ব্যবহারে ফসলের মান ও ফলন দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্স কন্দের আকার মাঝারি হওয়া উচিত (প্রতি কন্দ ৩০-৫০ গ্রাম)। খুব ছোট বা বড় বীজ কন্দ চাষে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ক্স বীজে থাকা অঙ্কুর সবুজ, মজবুত এবং সুষম হওয়া উচিত। ক্ষতিগ্রস্ত বা অনিয়মিত অঙ্কুরযুক্ত বীজ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।

ক্স পুরনো বীজের পরিবর্তে সদ্য উৎপাদিত এবং মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করতে হবে।

ক্স চাষের জন্য নির্বাচিত এলাকার জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাত বেছে নিতে হবে।

বীজ নির্বাচন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বিএআরআই এবং নির্ভরযোগ্য বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করা উচিত।

সংরক্ষণ : বীজ সংরক্ষণের জন্য শীতল এবং শুষ্ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বীজে রোগবালাই দেখা দিলে তা চাষের আগে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বীজের পরিমাণ

প্রতি হেক্টরে ১৫০০-২০০০ কেজি বীজ প্রয়োজন। বীজের আকার মাঝারি হলে ভালো হয় এবং প্রতিটি বীজের ওজন ৩০-৫০ গ্রাম হওয়া উচিত।

বীজ শোধন

বীজকে ছত্রাকনাশক (যেমন- প্রভাক্স/ম্যানকোজেব) দ্বারা শোধন করতে হবে, যাতে রোগবালাই থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

বীজ রোপণ পদ্ধতি

সারি এবং গাছের দূরত্ব

ক্স সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার।

ক্স গাছ থেকে গাছের দূরত্ব: ২০-২৫ সেন্টিমিটার।

ক্স বীজ রোপণের গভীরতা: ৫-৭ সেন্টিমিটার।

রোপণ পদ্ধতি

ক্স জমি ভালোভাবে চাষ করার পর সারি অনুযায়ী বীজ বসাতে হবে।

ক্স মাটি সামান্য ভেজা হলে বীজ সহজে অঙ্কুরিত হয়।

ক্স রোপণের পর জমি ঢেকে দিতে হবে।

জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ

আলু চাষে সঠিক মাত্রায় জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো আলুর কন্দের সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য অপরিহার্য। উর্বর মাটি নিশ্চিত করার জন্য জৈব সার এবং রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহার করা হলে ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায় এবং মাটির স্বাস্থ্যও রক্ষিত হয়।

জৈব সার প্রয়োগ

জৈব সার মাটির গুণাগুণ উন্নত করে এবং আলুর জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক পুষ্টি সরবরাহ করে।

গোবর সার : প্রতি হেক্টরে ৮-১০ টন পচা গোবর সার প্রয়োগ করলে মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ে এবং মাটির ধরন হালকা হয়, যা কন্দের বৃদ্ধি সহজ করে।

কম্পোস্ট : জমিতে ৫-৭ টন কম্পোস্ট প্রয়োগ করলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

ভার্মিকম্পোস্ট : এটি উন্নতমানের জৈব সার, যা মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান সরবরাহ করে।

জৈব সার প্রয়োগের ফলে মাটির উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকে এবং রাসায়নিক সারের নির্ভরশীলতা কমে।

রাসায়নিক সার প্রয়োগ

রাসায়নিক সার আলুর দ্রুত বৃদ্ধি এবং উচ্চ ফলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এটি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, যাতে মাটির ভারসাম্য নষ্ট না হয়।

ইউরিয়া : প্রতি হেক্টরে ৩২৫-৩৫০ কেজি ইউরিয়া ব্যবহার করলে গাছের পাতা ও শাখার বৃদ্ধি ভালো হয়। তবে এটি প্রয়োগ করার সময় দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথম ভাগ চারা গজানোর পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৩০-৪০ দিন পর।

টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) : প্রতি হেক্টরে ২০০-২২০ কেজি টিএসপি ব্যবহার করলে কন্দের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। এটি জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়।

এমওপি (মিউরিয়েট অব পটাশ) : প্রতি হেক্টরে ২৫০-৩০০ কেজি এমওপি প্রয়োগ করলে কন্দ মজবুত ও রোগ প্রতিরোধী হয়।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট: প্রতি হেক্টরে ১০০-১২০ কেজি জিপসাম, ৮-১০ কেজি জিংক সালফেট, যে মাটিতে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি আছ্ সেখানে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ১৪০-১৬০ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ব্যবহার করলে মাটিতে সালফারের ঘাটতি পূরণ হয় এবং প্রয়োজনবোধে ৬- ৮ কেজি বোরন ব্যবহার করলে ফলন বৃদ্ধি পায়।

সার প্রয়োগের পদ্ধতি

জমি চাষের সময় জৈব সার ও রাসায়নিক সার সমানভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়ার মতো নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার দুই ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করা উচিত। মাটির ধরন ও পিএইচ অনুযায়ী সারের পরিমাণ সামঞ্জস্য করতে হবে।প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিয়ে সার জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। জৈব ও রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহারে আলুর ভালো ফলন নিশ্চিত করা যায়, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে।

সেচ ব্যবস্থাপনা

আলু চাষে সঠিক সময়ে এবং উপযুক্ত পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেচের নিয়ন্ত্রণ ফসলের ফলন ও গুণগত মান নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। নিচে আলু চাষে সেচ ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হলোÑ

১. প্রাথমিক সেচ

বীজ রোপণের পর জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তাৎক্ষণিক সেচ দিতে হবে। তবে সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জমিতে কোনোভাবেই পানি জমে না থাকে। সেচ দেওয়ার সময় ভেলির ২/৩ অংশ পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে রাখা উত্তম। এই পদ্ধতিতে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং বীজ সহজে অঙ্কুরিত হয়।

২. সেচের সময়সূচি

সেচ প্রয়োগের সময়কাল আলুর বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন হতে পারেÑ

স্টোলন বের হওয়ার সময় (২০-২৫ দিন) : বীজ রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে স্টোলন (কন্দ গঠনের প্রাথমিক ধাপ) বের হয়। এ সময়ে জমিতে পর্যাপ্ত রস নিশ্চিত করতে সেচ দেওয়া জরুরি।

গুটি বের হওয়ার সময় (৪০-৪৫ দিন) : গুটি গঠনের সময়ে সেচ প্রয়োগ করতে হবে, কারণ এই পর্যায়ে মাটির আর্দ্রতার অভাব ফসলের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আলু বৃদ্ধির সময় : আলুর বৃদ্ধির সময় (৫০-৬০ দিন) সেচ দেওয়া প্রয়োজন, তবে সঠিক পরিমাণে। এই সময়ে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখলে কন্দের আকার বড় হয় এবং গুণগত মান উন্নত হয়।

৩. সেচ বন্ধ করার সময়

জমি থেকে আলু উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হবে। এ সময় সেচ বন্ধ রাখলে আলুর খোসা শক্ত হয়, যা সংরক্ষণে সহায়ক।

৪. দাঁদ রোগ নিয়ন্ত্রণ

দাঁদ রোগ প্রতিরোধের জন্য সেচ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজনÑ

রসের ঘাটতি রোধ (৩০-৫০ দিন) : আলু রোপণের ৩০-৫০ দিনের মধ্যে মাটিতে আর্দ্রতার ঘাটতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

রসের আধিক্য রোধ (৬০-৬৫ দিন) : আলু রোপণের ৬০-৬৫ দিনের পর জমিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা যেন না থাকে, সেদিকে লাখ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা দাঁদ রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আলুর মড়ক রোগ দমন

চযুঃড়ঢ়ঃযড়ৎধ রহভবংঃধহং নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রতি বছর আমাদের দেশে এ রোগের কারণে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

প্রতিরোধের উপায়

ক্স রোগমুক্ত জমি হতে শুকনা আলু বীজের জন্য সংগ্রহ করতে হবে।

ক্স ফসল উঠার পর জমির আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশসমূহ পুড়ে ফেলতে হবে।

ক্স গাছের গোড়ার মাটি উচু করে দিলে মাটির নীচে আলুকে রোগজীবানু আক্রমণ করতে পারে না।

ক্স আলু ও টমেটো ছাড়া জমিতে অন্য ফসল যেমন ধান দিয়ে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।

ক্স বৃষ্টির পর বা মাটি ভিজা অবস্থায় কখনও আলু উঠানো উচিৎ নয়।

ক্স হিমাগারে আলু রাখার আগে রোগমুক্ত আলু বাছাই করে রাখতে হবে।

ক্স আক্রান্ত জমিতে রোগ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে।

রোগ হওয়ার পর করণীয়

জমিতে রোগ দেখা দিলে ৪-৫ দিন পরপর নিম্নবর্ণিত গ্রুপের যে কোন ছত্রাকনাশক বা পর্যায়ক্রমে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবেÑ

সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি (ম্যানকোজেব ৫০%+ফেনামিডন ১০%) অথবা এক্রোবেট এম জেড (ম্যানকোজেব ৬০%+ডাইমেথোমর্ফ ৯%) অথবা কমপ্যানিয়ন ৭৫ ডাব্লিউপি (ম্যানকোজেব ৬৩%+কার্বেন্ডাজিম ১২%) অথবা মেলোডি ডব্লিও ৬৬.৮ ডব্লিউপি (প্রোপিনেব ৭০%+ইপ্রোভেলিকার্ব) ৪ গ্রাম+সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি ১ গ্রাম।

আলু উত্তোলন পদ্ধতি

আলু উত্তোলনের সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফসলের গুণগত মান অক্ষুণ্ণ থাকে এবং সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হয়। আলু উত্তোলনের জন্য শুষ্ক, উজ্জ্বল এবং ভালো আবহাওয়া নির্বাচন করতে হবে। উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে জমিতে সেচ বন্ধ করতে হবে, যাতে আলুর খোসা শক্ত হয়। এক সারির পর এক সারি কোদাল বা লাঙ্গল দিয়ে আলু উঠাতে হবে। উত্তোলনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আলু আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। উত্তোলনের পর আলু প্রখর রৌদ্রে ফেলে রাখা যাবে না, কারণ তাতে আলুর মান নষ্ট হতে পারে। মাঠে প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে কাটা, ফাটা, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আংশিক পচা আলু পৃথক করতে হবে। ভালো আলু থেকে এসব আলু আলাদা করে রাখতে হবে, যাতে গুণগত মান বজায় থাকে।

পরিবহন ও সংরক্ষণ

আলু উত্তোলনের পর সতর্কতার সঙ্গে বস্তা বা চট দ্বারা আবৃত ঝুড়িতে করে অস্থায়ী শেডে আনতে হবে। আলুর বস্তা বা ঝুড়ি আছড়ানো যাবে না, কারণ এতে আলুর চামড়া উঠে যেতে পারে বা আলু থেঁতলে যেতে পারে।

উপসংহার

বাংলাদেশের জন্য আলু একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আর্থিক উন্নতি ঘটে। উচ্চ ফলনশীল জাত, উন্নত বীজ, সঠিক মাটি প্র্রস্তুতি, সার, সেচ, রোগ দমন প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে বাংলাদেশে আলু চাষ আরও লাভজনক হবে। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে আলু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

[লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (শস্য), বিএআরসি, ঢাকা]

জ্ঞানই শক্তি

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস : জোর দিতে হবে প্রতিরোধে

ঋণ ব্যবস্থা : তেলা মাথায় ঢালো তেল, ন্যাড়া মাথায় ভাঙো বেল

বিচারকের ওপর হামলা কেন

বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার কবলে রোহিঙ্গা ইস্যু

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

বৈষম্য ঘোচাতে চাই একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনকল্যাণ

সমস্যার সূতিকাগার

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের পথ কী?

ব্যাংক সংস্কার : কাটবে কি অন্ধকার?

ছবি

নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

রম্যগদ্য: ম্যাড় ম্যাড়ে সোনা-কাহিনী

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার

কেন এত ধ্বংস, কেন এত মৃত্যু

জলবায়ু সম্মেলন থেকে আমরা কী পেলাম

উচ্চশিক্ষায় মান বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ

ছবি

যানজট আর্থ-সামাজিক বিড়ম্বনাকে প্রকট করে তুলছে

যাচ্ছে দিন, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

ছবি

স্বপ্ন দেখতে তো ভুল নেই

ছবি

আহমদুল কবির : সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে

ইতিহাসের কাছে মানুষ কী চায়?

আর্থিক সংকট কতটা গভীর

আদিবাসী নেতাদের দেখে নেয়ার হুমকি

সম্পত্তিতে এতিম নাতি-নাতনির অংশ ও বাস্তবতা

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন তত্ত্বের শতবর্ষ

প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো বাঁচানো জরুরি

রঙ্গব্যঙ্গ : শাব্বাশ বিটিভি, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

ছবি

কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি খুব একটা পরিবর্তন হবে কি

অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা

মুজিব কি কেবলই ছবি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে আলু চাষে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি

মাহফুজ আলম

image

দেশে সবজির চাহিদার ৪৮.১৩% আলুর মাধ্যমে মিটানো হয়

শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে আলু ফসলের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে আলুর ভূমিকা অপরিসীম। আলু একটি পুষ্টিকর খাদ্যশস্য যা ধান ও গমের পরেই দেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার শর্করা, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং আঁশ, যা দৈনন্দিন পুষ্টি সরবরাহে সহায়ক। বাংলাদেশে ৪.৫৮ লাখ হেক্টের জমিতে মোট ১০৯.৬৫ লাখ টন আলু উৎপাদতি হয়, যার একক ফলন ২৩.৯১ টন (বিবিএস ও ডিএই সমন্বয়কৃত, ২০২৩-২০২৪)।

দেশের অভ্যন্তরে আলুর চাহিদা ৭০-৮০ লাখ টন এবং বিদেশে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৩২৩৯৯.৬৬ টন (ডিএই, ২০২২-২০২৩)। বর্তমানে বাংলাদেশে চাষের জমির পরিমাণ ও ফলনের হিসেবে ধানের পরই আলুর স্থান। বহুমুখী খাদ্য, শিল্পায়িত খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত এবং পুষ্টিমানের জন্য সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আলু জনপ্রিয় এবং দেশে সবজির চাহিদার ৪৮.১৩% আলুর মাধ্যমে মিটানো হয়। বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটির গুণাগুণ আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। শীতকালীন সময়ে দেশের আবহাওয়া আলুর বৃদ্ধি ও উৎপাদনের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা প্রদান করে। বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল যেমন দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর এবং যশোর আলু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। আলুর ফলন অন্য অনেক ফসলের তুলনায় বেশি এবং এটি তুলনামূলকভাবে কম সময়ের মধ্যে চাষ করা যায়। আলুর বাজারজাতকরণ সহজ এবং দেশে এটি সারা বছর চাহিদা থাকা একটি পণ্য। খাদ্য শিল্পে আলুর ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে, এটি একটি উচ্চবাজারযোগ্য ফসল। আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেশে হিমাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আলু সংরক্ষণের সুযোগও বেড়েছে, যা কৃষকদের মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।অন্যদিকে, সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রণোদনা আলু চাষকে আরও উৎসাহিত করছে। আলু চাষে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা মোকাবিলার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। সার, সেচ, রোগ ব্যবস্থাপনা এবং মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করার মাধ্যমে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। ভবিষ্যতে, আরও গবেষণা ও উদ্ভাবন আলু চাষের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আলু চাষের উপযুক্ত সময় বাংলাদেশে সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আলুর বীজ রোপণ করা হয়। আলুর ফসল সংগ্রহ করা হয় জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। উপযুক্ত মাটির ধরন ও আবহাওয়া আলু চাষে সঠিক মাটি ও আবহাওয়া নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো ফসলের গুণমান এবং উৎপাদনশীলতায় বড় ভূমিকা রাখে। আলু চাষের জন্য বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। এই মাটি দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে পারে, যা আলুর কন্দ পচন রোধে সাহায্য করে। মাটির পিএইচ স্তর ৫.২-৬.৫ হলে সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আলু চাষের জন্য ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো। বেশি গরম তাপমাত্রায় আলুর কন্দের বৃদ্ধি কমে যায় এবং বেশি ঠান্ডায় কন্দ জমাট বেঁধে যেতে পারে।

বাংলাদেশে আলু চাষের উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল, যা সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী। এই সময়টি আলু চাষের জন্য আদর্শ কারণ শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া আলুর কন্দের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। আলু মূলত একটি রবি শস্য, যা হালকা ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভালোভাবে ফলন দেয়। তাপমাত্রা ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে আলুর কন্দ সঠিকভাবে বিকাশ লাভ করে। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরুতে আলুর বীজ রোপণ করলে তা সময়মতো শীতকালীন আবহাওয়ার সুবিধা পায় এবং ফলন ভালো হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলু চাষের সময় ভিন্ন হতে পারে, কারণ মাটির ধরন এবং জলবায়ুর ওপর সময় নির্ভর করে। উত্তরবঙ্গ সাধারণত নভেম্বর মাসে আলু বীজ রোপণ শুরু হয়, যেখানে শীত একটু আগেই শুরু হয়। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলে, যেখানে শীত অপেক্ষাকৃত দেরিতে আসে, ডিসেম্বরের প্রথম দিকেও চাষ করা যায়। খেয়াল রাখতে হবে যে, বীজ রোপণের সময় জমি শুষ্ক কিন্তু আর্দ্র থাকবে, যাতে বীজ সহজে অঙ্কুরিত হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা জলাবদ্ধতা বীজের অঙ্কুরোদগমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মাটির প্রস্তুতি আলু চাষের জন্য সঠিক মাটির প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর উপরই ফসলের গুণগত মান ও উৎপাদন নির্ভর করে।

আলু একটি কন্দজাতীয় ফসল, যা মূলত ভালোভাবে নিষ্কাশনযোগ্য, উর্বর ও দোঁআশ মাটিতে সবচেয়ে ভালো ফলন দেয়। মাটির প্র্রস্তুতির জন্য প্রথমে জমি ৪-৫ বার চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হবে এবং আগাছা আগের ও ফসলের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করতে হবে। এরপর জমিতে গভীর চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নেওয়া উচিত, যাতে কন্দ সহজে মাটির নিচে বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া মাটির পিএইচ মান ৫.৫ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে থাকলে আলু ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। যদি মাটি অতিরিক্ত অম্লীয় হয়, তবে ডোলোমাইট বা চুন প্রয়োগ করে পিএইচ সমতা আনতে হবে। পাশাপাশি মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস, পটাশ ও নাইট্রোজেন থাকলে কন্দের বৃদ্ধি ও ফলনের গুণমান উন্নত হয়। জমি চাষ করার সময় সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

সার প্রয়োগের পরে জমি মই দিয়ে সমান করে নেওয়া হয়, যাতে আলুর বীজ লাগানোর জন্য জমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকে। এভাবে সঠিক পদ্ধতিতে মাটির প্রস্তুতি নিশ্চিত করলে আলুর ফলন বৃদ্ধি পায় এবং রোগবালাই প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

উন্নতমানের বীজ নির্বাচন আলু চাষের সাফল্যের জন্য উন্নতমানের বীজ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ ফলনশীল জাত যেমন- বারি আলু-৯৬, বারি আলু-৯৮, বারি আলু-৯২, বারি আলু-৯৩, বারি আলু-৯৫, বারি আলু-১০০, বারি আলু-১০১, বারি আলু-১০৩, বিএডিসি আলু-১, বিএডিসি আলু-২, বিএডিসি আলু-৩, বিএডিসি আলু-৬, বিএডিসি আলু-৭, বিএডিসি আলু-১১, বিএডিসি আলু-১২, বিএডিসি আলু-১৩, লিভেন্তে, এসআিই ফ্রাই আলু-২, এসআিই আলু-৭, এসআিই আলু-৯, এসআিই ফ্রাই আলু-২, আদাতো, টুইনার, র্আসনোল, মারকিস জাতের বীজ ব্যাবহার করলে ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। উন্নতমানের বীজ কন্দের আকার, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পরিবেশগত প্রতিকূলতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা বাড়ায়।

উন্নতমানের বীজের বৈশিষ্ট্য

উন্নতমানের বীজ বেছে নেওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবেÑ

ক্স বীজ অবশ্যই ভাইরাস বা ছত্রাকজনিত রোগমুক্ত হতে হবে। রোগাক্রান্ত বীজ ব্যবহারে ফসলের মান ও ফলন দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্স কন্দের আকার মাঝারি হওয়া উচিত (প্রতি কন্দ ৩০-৫০ গ্রাম)। খুব ছোট বা বড় বীজ কন্দ চাষে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ক্স বীজে থাকা অঙ্কুর সবুজ, মজবুত এবং সুষম হওয়া উচিত। ক্ষতিগ্রস্ত বা অনিয়মিত অঙ্কুরযুক্ত বীজ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।

ক্স পুরনো বীজের পরিবর্তে সদ্য উৎপাদিত এবং মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করতে হবে।

ক্স চাষের জন্য নির্বাচিত এলাকার জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাত বেছে নিতে হবে।

বীজ নির্বাচন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বিএআরআই এবং নির্ভরযোগ্য বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করা উচিত।

সংরক্ষণ : বীজ সংরক্ষণের জন্য শীতল এবং শুষ্ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বীজে রোগবালাই দেখা দিলে তা চাষের আগে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বীজের পরিমাণ

প্রতি হেক্টরে ১৫০০-২০০০ কেজি বীজ প্রয়োজন। বীজের আকার মাঝারি হলে ভালো হয় এবং প্রতিটি বীজের ওজন ৩০-৫০ গ্রাম হওয়া উচিত।

বীজ শোধন

বীজকে ছত্রাকনাশক (যেমন- প্রভাক্স/ম্যানকোজেব) দ্বারা শোধন করতে হবে, যাতে রোগবালাই থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

বীজ রোপণ পদ্ধতি

সারি এবং গাছের দূরত্ব

ক্স সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার।

ক্স গাছ থেকে গাছের দূরত্ব: ২০-২৫ সেন্টিমিটার।

ক্স বীজ রোপণের গভীরতা: ৫-৭ সেন্টিমিটার।

রোপণ পদ্ধতি

ক্স জমি ভালোভাবে চাষ করার পর সারি অনুযায়ী বীজ বসাতে হবে।

ক্স মাটি সামান্য ভেজা হলে বীজ সহজে অঙ্কুরিত হয়।

ক্স রোপণের পর জমি ঢেকে দিতে হবে।

জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ

আলু চাষে সঠিক মাত্রায় জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো আলুর কন্দের সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য অপরিহার্য। উর্বর মাটি নিশ্চিত করার জন্য জৈব সার এবং রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহার করা হলে ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি পায় এবং মাটির স্বাস্থ্যও রক্ষিত হয়।

জৈব সার প্রয়োগ

জৈব সার মাটির গুণাগুণ উন্নত করে এবং আলুর জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক পুষ্টি সরবরাহ করে।

গোবর সার : প্রতি হেক্টরে ৮-১০ টন পচা গোবর সার প্রয়োগ করলে মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ে এবং মাটির ধরন হালকা হয়, যা কন্দের বৃদ্ধি সহজ করে।

কম্পোস্ট : জমিতে ৫-৭ টন কম্পোস্ট প্রয়োগ করলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

ভার্মিকম্পোস্ট : এটি উন্নতমানের জৈব সার, যা মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান সরবরাহ করে।

জৈব সার প্রয়োগের ফলে মাটির উর্বরতা দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকে এবং রাসায়নিক সারের নির্ভরশীলতা কমে।

রাসায়নিক সার প্রয়োগ

রাসায়নিক সার আলুর দ্রুত বৃদ্ধি এবং উচ্চ ফলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এটি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, যাতে মাটির ভারসাম্য নষ্ট না হয়।

ইউরিয়া : প্রতি হেক্টরে ৩২৫-৩৫০ কেজি ইউরিয়া ব্যবহার করলে গাছের পাতা ও শাখার বৃদ্ধি ভালো হয়। তবে এটি প্রয়োগ করার সময় দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথম ভাগ চারা গজানোর পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৩০-৪০ দিন পর।

টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) : প্রতি হেক্টরে ২০০-২২০ কেজি টিএসপি ব্যবহার করলে কন্দের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। এটি জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়।

এমওপি (মিউরিয়েট অব পটাশ) : প্রতি হেক্টরে ২৫০-৩০০ কেজি এমওপি প্রয়োগ করলে কন্দ মজবুত ও রোগ প্রতিরোধী হয়।

জিপসাম, জিংক সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট: প্রতি হেক্টরে ১০০-১২০ কেজি জিপসাম, ৮-১০ কেজি জিংক সালফেট, যে মাটিতে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি আছ্ সেখানে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ১৪০-১৬০ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ব্যবহার করলে মাটিতে সালফারের ঘাটতি পূরণ হয় এবং প্রয়োজনবোধে ৬- ৮ কেজি বোরন ব্যবহার করলে ফলন বৃদ্ধি পায়।

সার প্রয়োগের পদ্ধতি

জমি চাষের সময় জৈব সার ও রাসায়নিক সার সমানভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়ার মতো নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার দুই ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করা উচিত। মাটির ধরন ও পিএইচ অনুযায়ী সারের পরিমাণ সামঞ্জস্য করতে হবে।প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিয়ে সার জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। জৈব ও রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহারে আলুর ভালো ফলন নিশ্চিত করা যায়, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে।

সেচ ব্যবস্থাপনা

আলু চাষে সঠিক সময়ে এবং উপযুক্ত পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেচের নিয়ন্ত্রণ ফসলের ফলন ও গুণগত মান নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। নিচে আলু চাষে সেচ ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হলোÑ

১. প্রাথমিক সেচ

বীজ রোপণের পর জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তাৎক্ষণিক সেচ দিতে হবে। তবে সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জমিতে কোনোভাবেই পানি জমে না থাকে। সেচ দেওয়ার সময় ভেলির ২/৩ অংশ পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে রাখা উত্তম। এই পদ্ধতিতে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং বীজ সহজে অঙ্কুরিত হয়।

২. সেচের সময়সূচি

সেচ প্রয়োগের সময়কাল আলুর বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন হতে পারেÑ

স্টোলন বের হওয়ার সময় (২০-২৫ দিন) : বীজ রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে স্টোলন (কন্দ গঠনের প্রাথমিক ধাপ) বের হয়। এ সময়ে জমিতে পর্যাপ্ত রস নিশ্চিত করতে সেচ দেওয়া জরুরি।

গুটি বের হওয়ার সময় (৪০-৪৫ দিন) : গুটি গঠনের সময়ে সেচ প্রয়োগ করতে হবে, কারণ এই পর্যায়ে মাটির আর্দ্রতার অভাব ফসলের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আলু বৃদ্ধির সময় : আলুর বৃদ্ধির সময় (৫০-৬০ দিন) সেচ দেওয়া প্রয়োজন, তবে সঠিক পরিমাণে। এই সময়ে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখলে কন্দের আকার বড় হয় এবং গুণগত মান উন্নত হয়।

৩. সেচ বন্ধ করার সময়

জমি থেকে আলু উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হবে। এ সময় সেচ বন্ধ রাখলে আলুর খোসা শক্ত হয়, যা সংরক্ষণে সহায়ক।

৪. দাঁদ রোগ নিয়ন্ত্রণ

দাঁদ রোগ প্রতিরোধের জন্য সেচ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজনÑ

রসের ঘাটতি রোধ (৩০-৫০ দিন) : আলু রোপণের ৩০-৫০ দিনের মধ্যে মাটিতে আর্দ্রতার ঘাটতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

রসের আধিক্য রোধ (৬০-৬৫ দিন) : আলু রোপণের ৬০-৬৫ দিনের পর জমিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা যেন না থাকে, সেদিকে লাখ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা দাঁদ রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আলুর মড়ক রোগ দমন

চযুঃড়ঢ়ঃযড়ৎধ রহভবংঃধহং নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রতি বছর আমাদের দেশে এ রোগের কারণে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

প্রতিরোধের উপায়

ক্স রোগমুক্ত জমি হতে শুকনা আলু বীজের জন্য সংগ্রহ করতে হবে।

ক্স ফসল উঠার পর জমির আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশসমূহ পুড়ে ফেলতে হবে।

ক্স গাছের গোড়ার মাটি উচু করে দিলে মাটির নীচে আলুকে রোগজীবানু আক্রমণ করতে পারে না।

ক্স আলু ও টমেটো ছাড়া জমিতে অন্য ফসল যেমন ধান দিয়ে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।

ক্স বৃষ্টির পর বা মাটি ভিজা অবস্থায় কখনও আলু উঠানো উচিৎ নয়।

ক্স হিমাগারে আলু রাখার আগে রোগমুক্ত আলু বাছাই করে রাখতে হবে।

ক্স আক্রান্ত জমিতে রোগ নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে।

রোগ হওয়ার পর করণীয়

জমিতে রোগ দেখা দিলে ৪-৫ দিন পরপর নিম্নবর্ণিত গ্রুপের যে কোন ছত্রাকনাশক বা পর্যায়ক্রমে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবেÑ

সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি (ম্যানকোজেব ৫০%+ফেনামিডন ১০%) অথবা এক্রোবেট এম জেড (ম্যানকোজেব ৬০%+ডাইমেথোমর্ফ ৯%) অথবা কমপ্যানিয়ন ৭৫ ডাব্লিউপি (ম্যানকোজেব ৬৩%+কার্বেন্ডাজিম ১২%) অথবা মেলোডি ডব্লিও ৬৬.৮ ডব্লিউপি (প্রোপিনেব ৭০%+ইপ্রোভেলিকার্ব) ৪ গ্রাম+সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি ১ গ্রাম।

আলু উত্তোলন পদ্ধতি

আলু উত্তোলনের সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফসলের গুণগত মান অক্ষুণ্ণ থাকে এবং সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হয়। আলু উত্তোলনের জন্য শুষ্ক, উজ্জ্বল এবং ভালো আবহাওয়া নির্বাচন করতে হবে। উত্তোলনের ৭-১০ দিন আগে জমিতে সেচ বন্ধ করতে হবে, যাতে আলুর খোসা শক্ত হয়। এক সারির পর এক সারি কোদাল বা লাঙ্গল দিয়ে আলু উঠাতে হবে। উত্তোলনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আলু আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। উত্তোলনের পর আলু প্রখর রৌদ্রে ফেলে রাখা যাবে না, কারণ তাতে আলুর মান নষ্ট হতে পারে। মাঠে প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে কাটা, ফাটা, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আংশিক পচা আলু পৃথক করতে হবে। ভালো আলু থেকে এসব আলু আলাদা করে রাখতে হবে, যাতে গুণগত মান বজায় থাকে।

পরিবহন ও সংরক্ষণ

আলু উত্তোলনের পর সতর্কতার সঙ্গে বস্তা বা চট দ্বারা আবৃত ঝুড়িতে করে অস্থায়ী শেডে আনতে হবে। আলুর বস্তা বা ঝুড়ি আছড়ানো যাবে না, কারণ এতে আলুর চামড়া উঠে যেতে পারে বা আলু থেঁতলে যেতে পারে।

উপসংহার

বাংলাদেশের জন্য আলু একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের আর্থিক উন্নতি ঘটে। উচ্চ ফলনশীল জাত, উন্নত বীজ, সঠিক মাটি প্র্রস্তুতি, সার, সেচ, রোগ দমন প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে বাংলাদেশে আলু চাষ আরও লাভজনক হবে। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে আলু দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

[লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (শস্য), বিএআরসি, ঢাকা]

back to top