জাহিদুল ইসলাম
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো একধরনের ইন্টারনেট সংযোগ যা ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদান করতে স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। এটি একটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে কক্ষপথের একটি উপগ্রহে ডেটা পাঠানোর মাধ্যমে কাজ করে থাকে। এই প্রযুক্তি দ্বারা ব্যবহারকারীর অবস্থানে ইনস্টল করা একটি স্যাটেলাইট ডিশে ডেটা প্রেরণ করা হয়। এভাবে একজন ব্যবহারকারী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকেন। তথ্য-প্রযুক্তির কারণে পুরো বিশ্ব এখন গ্লে¬াবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, গবেষণা সর্বক্ষেত্রে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের কোম্পানির সঙ্গে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া তথ্য ও গবেষণা, শিক্ষা, আর্থিক লেনদেন, প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন নানা কাজে আমরা ইন্টারনেটের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকি।
বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলেই মানুষ ক্যাবল ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে থাকেন। ক্যাবল ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় সাধারণত সাবমেরিন ক্যাবল বা অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করা হয়। তবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় কোনো তার ছাড়াই সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট সেবা দেয়া হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল বা গ্রামে যেখানে ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করা কঠিন সেখানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব। স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের শুরু হয়েছে অনেক আগেই। ১৯৮০-এর মাঝামাঝি প্রায় ১০০টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। এরপর অনেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার প্রযুক্তি শুরু করা হয়। এরপর যতই সময় অতিবাহিত হয়েছে অন্যান্য প্রযুক্তির মতো এই প্রযুক্তিও উন্নত হয়েছে। এদিকে মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ইলন মাস্কের একটি মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার নাম স্পেসএক্স। স্পেসএক্সের ইন্টারনেট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্টারলিঙ্ক।
স্টারলিংক মূলত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের (ভূস্থির উপগ্রহ) মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার একটি প্রকল্প। স্পেসএক্সের অধীনে পরিচালিত স্টারলিঙ্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর সব জায়গায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা। বর্তমানে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হলেও ইলন মাস্কের মতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটই হলো ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ। স্টারলিংক ইন্টারনেট কানেকশন নিতে হলে টিভির ডিশ অ্যানটেনার মতো ব্যবহারকারী অর্থাৎ গ্রাহকের বাড়িতে একটি অ্যানটেনা লাগাতে হবে। এই অ্যানটেনা স্যাটেলাইটের সঙ্গে ব্যবহারকারীর যোগাযোগ রক্ষা করবে। ওই অ্যানটেনা থেকে একটি ক্যাবল গ্রাহকের ঘরে রাখা স্টারলিংকের ওয়াইফাই রাউটারে লাগিয়ে গ্রাহকরা অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা ক্যাবল বা অপটিক্যাল ফাইবারবিহীন ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করতে পারবে।
স্টারলিংকের অনেকটা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতো কাজ করে। এক্ষেত্রে পৃথিবীর লো অরবিটে স্থাপিত অনেক ভূস্থির স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীর কক্ষপথে এসব স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। স্যাটেলাইটগুলো মূলত টেলিভিশন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ফোন ইত্যাদিতে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেকগুলো ছোট ছোট স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে নির্দিষ্ট স্থানে থেকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সমান গতিতে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে অন্য কোনো কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ করতে হলে প্রথমে গ্রাহকের কম্পিউটার অথবা মোবাইলের মাধ্যমে প্রেরক এনটেনার দ্বারা কাছাকাছি স্যাটেলাইটে রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে। এরপর সেই রিকোয়েস্ট সেলুলার নেটওয়ার্কের মতো একটা থেকে আরেকটা স্যাটেলাইট হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে (সার্ভার) পৌঁছবে। এরপর কাক্সিক্ষত তথ্য নিয়ে একই পদ্ধতিতে রিসিভার এনটেনা দ্বারা গ্রাহকের কম্পিউটারে অথবা মোবাইলে ফিরে আসবে। এভাবে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে। এমনকি দুর্গম পাহাড় বা জঙ্গলেও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া যাবে। ফলে পুরো পৃথিবীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উচ্চগতির ইন্টারনেটের আওতায় চলে আসবে।
ইন্টারনেটের গতি নিয়ে আমাদের অনেকেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে যারা গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে থাকেন। আমাদের দেশে শহরাঞ্চলেও ইন্টারনেটের গতি বেশ হলেও গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কম। তাই আমাদের বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে। এর ফলে প্রত্যন্ত, অনুন্নত এলাকায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সংযোগ দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা উপকার পাবে, ব্যবসা বাড়বে ও মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও গতিশীল হবে। বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু হলে ব্যাকহোলিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহকের ডেটা ব্যবহারের পাশাপাশি ডিজিটাল বিভাজন দূর করে সেতুবন্ধনের নতুন দ্বার উন্মোচনে সহায়ক হবে।
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এমন অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা যায় যেখানে শুধু বা ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড সিস্টেম দ্বারা পরিষেবা দেয়া সম্ভব নয়। যেমন- গ্রামীণ এবং নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের জন্য স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যাটেলাইট ডিশগুলো সহজেই বহন করা সম্ভব। ডিশগুলো যানবাহনে এমনভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে যা চলন্ত এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং সে সময় সহযোগিতার জন্য ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। সেই সময়ে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।
এছাড়া এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি যে কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত সেটআপ করা যায়। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যেন দ্রুততম ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে লেটেন্সিও যেন কম হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি আকস্মিক আবহাওয়ার মুহূর্তগুলোতে যেমনÑ ভারি বর্ষণ, তুষারঝড় এবং সৌরঝড়ের কারণে স্যাটেলাইট থেকে প্রেরণ করা এবং গ্রহণ করা সংকেতগুলো যেন ব্যাহত না হয় সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
[লেখক : নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]
জাহিদুল ইসলাম
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হলো একধরনের ইন্টারনেট সংযোগ যা ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট অ্যাক্সেস প্রদান করতে স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। এটি একটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে কক্ষপথের একটি উপগ্রহে ডেটা পাঠানোর মাধ্যমে কাজ করে থাকে। এই প্রযুক্তি দ্বারা ব্যবহারকারীর অবস্থানে ইনস্টল করা একটি স্যাটেলাইট ডিশে ডেটা প্রেরণ করা হয়। এভাবে একজন ব্যবহারকারী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকেন। তথ্য-প্রযুক্তির কারণে পুরো বিশ্ব এখন গ্লে¬াবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, গবেষণা সর্বক্ষেত্রে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের কোম্পানির সঙ্গে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া তথ্য ও গবেষণা, শিক্ষা, আর্থিক লেনদেন, প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন নানা কাজে আমরা ইন্টারনেটের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকি।
বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলেই মানুষ ক্যাবল ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে থাকেন। ক্যাবল ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় সাধারণত সাবমেরিন ক্যাবল বা অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করা হয়। তবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় কোনো তার ছাড়াই সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট সেবা দেয়া হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল বা গ্রামে যেখানে ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করা কঠিন সেখানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব। স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের শুরু হয়েছে অনেক আগেই। ১৯৮০-এর মাঝামাঝি প্রায় ১০০টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। এরপর অনেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার প্রযুক্তি শুরু করা হয়। এরপর যতই সময় অতিবাহিত হয়েছে অন্যান্য প্রযুক্তির মতো এই প্রযুক্তিও উন্নত হয়েছে। এদিকে মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ইলন মাস্কের একটি মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার নাম স্পেসএক্স। স্পেসএক্সের ইন্টারনেট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্টারলিঙ্ক।
স্টারলিংক মূলত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের (ভূস্থির উপগ্রহ) মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার একটি প্রকল্প। স্পেসএক্সের অধীনে পরিচালিত স্টারলিঙ্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীর সব জায়গায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা। বর্তমানে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হলেও ইলন মাস্কের মতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটই হলো ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ। স্টারলিংক ইন্টারনেট কানেকশন নিতে হলে টিভির ডিশ অ্যানটেনার মতো ব্যবহারকারী অর্থাৎ গ্রাহকের বাড়িতে একটি অ্যানটেনা লাগাতে হবে। এই অ্যানটেনা স্যাটেলাইটের সঙ্গে ব্যবহারকারীর যোগাযোগ রক্ষা করবে। ওই অ্যানটেনা থেকে একটি ক্যাবল গ্রাহকের ঘরে রাখা স্টারলিংকের ওয়াইফাই রাউটারে লাগিয়ে গ্রাহকরা অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা ক্যাবল বা অপটিক্যাল ফাইবারবিহীন ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করতে পারবে।
স্টারলিংকের অনেকটা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতো কাজ করে। এক্ষেত্রে পৃথিবীর লো অরবিটে স্থাপিত অনেক ভূস্থির স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীর কক্ষপথে এসব স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। স্যাটেলাইটগুলো মূলত টেলিভিশন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ফোন ইত্যাদিতে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেকগুলো ছোট ছোট স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে নির্দিষ্ট স্থানে থেকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সমান গতিতে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে অন্য কোনো কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ করতে হলে প্রথমে গ্রাহকের কম্পিউটার অথবা মোবাইলের মাধ্যমে প্রেরক এনটেনার দ্বারা কাছাকাছি স্যাটেলাইটে রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে। এরপর সেই রিকোয়েস্ট সেলুলার নেটওয়ার্কের মতো একটা থেকে আরেকটা স্যাটেলাইট হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে (সার্ভার) পৌঁছবে। এরপর কাক্সিক্ষত তথ্য নিয়ে একই পদ্ধতিতে রিসিভার এনটেনা দ্বারা গ্রাহকের কম্পিউটারে অথবা মোবাইলে ফিরে আসবে। এভাবে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে। এমনকি দুর্গম পাহাড় বা জঙ্গলেও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া যাবে। ফলে পুরো পৃথিবীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উচ্চগতির ইন্টারনেটের আওতায় চলে আসবে।
ইন্টারনেটের গতি নিয়ে আমাদের অনেকেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে যারা গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে থাকেন। আমাদের দেশে শহরাঞ্চলেও ইন্টারনেটের গতি বেশ হলেও গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কম। তাই আমাদের বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে। এর ফলে প্রত্যন্ত, অনুন্নত এলাকায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সংযোগ দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা উপকার পাবে, ব্যবসা বাড়বে ও মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও গতিশীল হবে। বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু হলে ব্যাকহোলিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহকের ডেটা ব্যবহারের পাশাপাশি ডিজিটাল বিভাজন দূর করে সেতুবন্ধনের নতুন দ্বার উন্মোচনে সহায়ক হবে।
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এমন অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা যায় যেখানে শুধু বা ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড সিস্টেম দ্বারা পরিষেবা দেয়া সম্ভব নয়। যেমন- গ্রামীণ এবং নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের জন্য স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যাটেলাইট ডিশগুলো সহজেই বহন করা সম্ভব। ডিশগুলো যানবাহনে এমনভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে যা চলন্ত এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং সে সময় সহযোগিতার জন্য ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। সেই সময়ে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।
এছাড়া এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি যে কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত সেটআপ করা যায়। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যেন দ্রুততম ইন্টারনেট সেবা দিতে পারে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে লেটেন্সিও যেন কম হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি আকস্মিক আবহাওয়ার মুহূর্তগুলোতে যেমনÑ ভারি বর্ষণ, তুষারঝড় এবং সৌরঝড়ের কারণে স্যাটেলাইট থেকে প্রেরণ করা এবং গ্রহণ করা সংকেতগুলো যেন ব্যাহত না হয় সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
[লেখক : নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]