alt

উপ-সম্পাদকীয়

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

শামীউল আলীম শাওন

: শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫

যাওয়ার সময় দিলেন ১০ টাকা ভাড়া। অথচ আসার সময় দিতে হলো ১৫ টাকা ভাড়া। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমন ঘটনা রাজশাহীতে স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অটোচালকরা ইচ্ছামতো যাত্রীদের কাছে থেকে ভাড়া আদায় করেন। কোনও প্রতিবাদ করলেই সৃষ্টি হয় কথা কাটাকাটি! অন্য কোন অটোচালক এসে ‘এইটাই তো ভাড়া’ বলে চালকের চাওয়া ‘অযৌক্তিক’ আর ‘অস্বাভাবিক’ ভাড়াকেই সমর্থন করে। ‘এইটাই তো ভাড়া’ বলে চালকরাই যখন ভাড়া ‘নির্ধারণ’ করে তখন নিরূপায় যাত্রীদের সেই অযৌক্তিক আর ‘অস্বাভাবিক’ ভাড়া দেয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। এখন প্রশ্ন হলো ভাড়া ‘নির্ধারণ’ বা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে? বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলের পদ্মাপাড়ের প্রাচীন নগরী রাজশাহী। ৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ শহর ‘শিক্ষা নগরী’ হিসেবেও পরিচিত। এ নগরীতে জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজারের মতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬ হাজার মানুষের বসবাস। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষের অস্থায়ী আবাস রয়েছে এ নগরীতে। পরিসংখ্যান বলছে প্রতি বছর সাড়ে নয় হাজার মানুষ এখানে নতুন করে বসতি গড়েন এখানে। তাই ৯৭ বর্গকিলোমিটার থেকে ১৩২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহর করতে প্রস্তাবও ইতোমধ্যে করা হয়েছে বলে রাসিক সূত্রে জানা গেছে। আটজন যাত্রীবাহন ক্ষমতার অটোরিকশা প্রায় ৩০ হাজার এবং দুজন যাত্রীবাহী ছোট অটোরিকশা প্রায় ৫০ হাজার দুই শ্রেণির মোট প্রায় ৭০-৮০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রতিনিয়ত চলাচল করে এ নগরীতে। যার মধ্যে রাসিক নিবন্ধিত অটোরিকশা মাত্র ৮ হাজার ৯০০! ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) অপসারিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮-২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে মেয়র হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালীন রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করার অনুমোদন দেয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ‘স্মার্ট অটোরিকশা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করে এবং অটোরিকশা মালিক ও চালকদের ‘স্মার্ট কার্ড’ প্রদান করে। অপসারিত রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন কর্তৃক ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শহরের বিভিন্ন রুটভেদে অটোরিকশার ভাড়া বৃদ্ধি করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। তার প্রায় এক বছর পর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশাচালকদের জন্য রাসিক নির্ধারিত রং ও ডিজাইনের পোশাক নির্ধারণ করে দেয়। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। রাজশাহী শহরে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করেন যাত্রীদের কাছে থেকে, যা নিয়ে প্রায় প্রতিনিয়তই চালক-যাত্রীদের মাঝে হয় বাগবিত-া। অনেক সময় তা হাতাহাতিতেও রূপ নেয়। রাজশাহী অটোরিকশা মালিক সমিতি, রাজশাহী মহানগর ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক সমবায় সমিতি, রাজশাহী ইজিবাইক মালিক শ্রমিক কল্যাণ সমবায়সহ নানা নামে এদের ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালক ও মালিকদের সংগঠন রয়েছে। গত ২০২২ সালে আগস্ট মাসের দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালক ও মালিকরা কোন প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে রাজশাহীর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়। এমনভাবেই প্রায়সময় তারা যাত্রী হয়রানি করে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডগুলোতে থাকা ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকগুলো সিন্ডিকেট। তারা ট্রেন ও বাসের যাত্রীদের একপ্রকার জিম্মি করে তাদের কাছে থেকে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক বাড়তি ভাড়া আদায় করে। রাজশাহীতে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময় ভাড়ানৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পরীক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের জিম্মি করে তাদের কাছে থেকে মাত্রারিক্ত অযৌক্তিক ভাড়া আদায় করে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা। অনেকটা বাধ্য হয়েছে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক বাড়তি ভাড়ায় চলাচল করতে হয় তাদের। এতে শহরের সুনাম ক্ষুণœ হয় দেশজুড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে উদ্যোগ নিয়েছে। রাবি অভ্যন্তরে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের জন্য নির্ধারিত রঙের পোশাক ও রাবি অভ্যন্তরে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত করে দিয়েছে রাবি প্রশাসন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রশাসন এ নিয়ম চালু করে। শিক্ষার্থী ও চালকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা যেন সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নিয়েছে রাবি প্রশাসন। রাজশাহী মহানগরীতে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশায় যাত্রী ও চালকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা রোধে বিআরটিএ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে কেউ কি উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তাহলে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে? যেহেতু রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের নিবন্ধন দেয়। তাদের কাছে থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করে। সেহেতু খোদ রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে কিংবা বিআরটিএ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মধ্যে যে কোন একটি সংস্থা কিংবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। লাগামহীন, অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার ভাড়ানৈরাজ্য ও যানজট বন্ধের ক্ষেত্রে নি¤œলিখিত সুপারিশসূমহ অনুসরণ করা যেতে পারেÑ

প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকের পরিচয়পত্র (ড্রাইভিং লাইসেন্স) ও নির্ধারিত পোশাক নিশ্চিত করতে হবে। রাজশাহীতে অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত (২ ও ৫ আসন উভয়) অটোরিকশার চলাচলের রুট ভাগ করে দিতে হবে। পোশাকে ও যানবাহনে রুট উল্লেখ থাকবে। দূরত্বভেদে কিলোমিটারপ্রতি ব্যাটারিচালিত (২ ও ৫ আসন উভয়) অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে হবে। যাত্রী ওঠানামা করার জন্য নির্ধারিত স্টপেজ থাকবে। স্টপেজ ব্যাতীত যাত্রী ওঠানামা করা বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষার সময় রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত (২ ও ৫ আসন উভয়) অটোরিকশার চালক কর্তৃক অযৌক্তিকভাবে অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষার সময় রাজশাহীতে যানজট নিরসণে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করা। যেকোন অপ্রতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুষ্ঠুভাবে মনিটরিং করা। বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ করা এবং অপরাধীদের বিচারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শাস্তি নিশ্চিত করা। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটসহ স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাস দ্বারা বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা-নেয়া করার ব্যবস্থা রাখা। ‘হটলাইন সার্ভিস’ চালুর ব্যবস্থা করা যেখানে অভিযোগ ও পরামর্শ প্রদানে সুযোগ থাকবে।

[লেখক : সভাপতি, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ]

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

রম্যগদ্য : ‘অন্ডুল নাস্তি...’

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ নিয়ে ভাবনা

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

শামীউল আলীম শাওন

শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫

যাওয়ার সময় দিলেন ১০ টাকা ভাড়া। অথচ আসার সময় দিতে হলো ১৫ টাকা ভাড়া। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমন ঘটনা রাজশাহীতে স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অটোচালকরা ইচ্ছামতো যাত্রীদের কাছে থেকে ভাড়া আদায় করেন। কোনও প্রতিবাদ করলেই সৃষ্টি হয় কথা কাটাকাটি! অন্য কোন অটোচালক এসে ‘এইটাই তো ভাড়া’ বলে চালকের চাওয়া ‘অযৌক্তিক’ আর ‘অস্বাভাবিক’ ভাড়াকেই সমর্থন করে। ‘এইটাই তো ভাড়া’ বলে চালকরাই যখন ভাড়া ‘নির্ধারণ’ করে তখন নিরূপায় যাত্রীদের সেই অযৌক্তিক আর ‘অস্বাভাবিক’ ভাড়া দেয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। এখন প্রশ্ন হলো ভাড়া ‘নির্ধারণ’ বা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে? বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলের পদ্মাপাড়ের প্রাচীন নগরী রাজশাহী। ৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ শহর ‘শিক্ষা নগরী’ হিসেবেও পরিচিত। এ নগরীতে জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজারের মতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬ হাজার মানুষের বসবাস। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষের অস্থায়ী আবাস রয়েছে এ নগরীতে। পরিসংখ্যান বলছে প্রতি বছর সাড়ে নয় হাজার মানুষ এখানে নতুন করে বসতি গড়েন এখানে। তাই ৯৭ বর্গকিলোমিটার থেকে ১৩২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহর করতে প্রস্তাবও ইতোমধ্যে করা হয়েছে বলে রাসিক সূত্রে জানা গেছে। আটজন যাত্রীবাহন ক্ষমতার অটোরিকশা প্রায় ৩০ হাজার এবং দুজন যাত্রীবাহী ছোট অটোরিকশা প্রায় ৫০ হাজার দুই শ্রেণির মোট প্রায় ৭০-৮০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রতিনিয়ত চলাচল করে এ নগরীতে। যার মধ্যে রাসিক নিবন্ধিত অটোরিকশা মাত্র ৮ হাজার ৯০০! ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) অপসারিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮-২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে মেয়র হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালীন রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করার অনুমোদন দেয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ‘স্মার্ট অটোরিকশা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করে এবং অটোরিকশা মালিক ও চালকদের ‘স্মার্ট কার্ড’ প্রদান করে। অপসারিত রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন কর্তৃক ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শহরের বিভিন্ন রুটভেদে অটোরিকশার ভাড়া বৃদ্ধি করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। তার প্রায় এক বছর পর ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশাচালকদের জন্য রাসিক নির্ধারিত রং ও ডিজাইনের পোশাক নির্ধারণ করে দেয়। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। রাজশাহী শহরে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করেন যাত্রীদের কাছে থেকে, যা নিয়ে প্রায় প্রতিনিয়তই চালক-যাত্রীদের মাঝে হয় বাগবিত-া। অনেক সময় তা হাতাহাতিতেও রূপ নেয়। রাজশাহী অটোরিকশা মালিক সমিতি, রাজশাহী মহানগর ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক সমবায় সমিতি, রাজশাহী ইজিবাইক মালিক শ্রমিক কল্যাণ সমবায়সহ নানা নামে এদের ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালক ও মালিকদের সংগঠন রয়েছে। গত ২০২২ সালে আগস্ট মাসের দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালক ও মালিকরা কোন প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে রাজশাহীর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়। এমনভাবেই প্রায়সময় তারা যাত্রী হয়রানি করে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডগুলোতে থাকা ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকগুলো সিন্ডিকেট। তারা ট্রেন ও বাসের যাত্রীদের একপ্রকার জিম্মি করে তাদের কাছে থেকে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক বাড়তি ভাড়া আদায় করে। রাজশাহীতে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময় ভাড়ানৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পরীক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের জিম্মি করে তাদের কাছে থেকে মাত্রারিক্ত অযৌক্তিক ভাড়া আদায় করে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা। অনেকটা বাধ্য হয়েছে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক বাড়তি ভাড়ায় চলাচল করতে হয় তাদের। এতে শহরের সুনাম ক্ষুণœ হয় দেশজুড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে উদ্যোগ নিয়েছে। রাবি অভ্যন্তরে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের জন্য নির্ধারিত রঙের পোশাক ও রাবি অভ্যন্তরে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত করে দিয়েছে রাবি প্রশাসন। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রশাসন এ নিয়ম চালু করে। শিক্ষার্থী ও চালকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা যেন সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নিয়েছে রাবি প্রশাসন। রাজশাহী মহানগরীতে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশায় যাত্রী ও চালকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা রোধে বিআরটিএ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে কেউ কি উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। তাহলে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে? যেহেতু রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের নিবন্ধন দেয়। তাদের কাছে থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করে। সেহেতু খোদ রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে কিংবা বিআরটিএ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মধ্যে যে কোন একটি সংস্থা কিংবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। লাগামহীন, অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার ভাড়ানৈরাজ্য ও যানজট বন্ধের ক্ষেত্রে নি¤œলিখিত সুপারিশসূমহ অনুসরণ করা যেতে পারেÑ

প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকের পরিচয়পত্র (ড্রাইভিং লাইসেন্স) ও নির্ধারিত পোশাক নিশ্চিত করতে হবে। রাজশাহীতে অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত (২ ও ৫ আসন উভয়) অটোরিকশার চলাচলের রুট ভাগ করে দিতে হবে। পোশাকে ও যানবাহনে রুট উল্লেখ থাকবে। দূরত্বভেদে কিলোমিটারপ্রতি ব্যাটারিচালিত (২ ও ৫ আসন উভয়) অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে হবে। যাত্রী ওঠানামা করার জন্য নির্ধারিত স্টপেজ থাকবে। স্টপেজ ব্যাতীত যাত্রী ওঠানামা করা বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষার সময় রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত (২ ও ৫ আসন উভয়) অটোরিকশার চালক কর্তৃক অযৌক্তিকভাবে অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় বন্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষার সময় রাজশাহীতে যানজট নিরসণে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করা। যেকোন অপ্রতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুষ্ঠুভাবে মনিটরিং করা। বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ করা এবং অপরাধীদের বিচারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শাস্তি নিশ্চিত করা। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটসহ স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাস দ্বারা বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা-নেয়া করার ব্যবস্থা রাখা। ‘হটলাইন সার্ভিস’ চালুর ব্যবস্থা করা যেখানে অভিযোগ ও পরামর্শ প্রদানে সুযোগ থাকবে।

[লেখক : সভাপতি, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ]

back to top