দীপা দত্ত
মনে পড়ছে ১৯৬৯ সালের ১৮ জানুয়ারির দুপুরের কথা। সেদিন ছিল লাঠি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি। সেদিনও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়েছি, যথারীতি পুলিশের সাথে বেশ কিছু সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ইত্যাদির পর সবাই কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। সমবেত হয়ে আবার শহরের বিভিন্ন দিকে একেকটি মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি একেক দিকে। নাজমা শিখা, নেলি (বদরুন নাহার), ফিজু (তরুণ চক্রবর্তী), জসীম, আলতাফ, গোফরান, শফিক, হারুন, মাহফুজউল্লাহ, মুকুল (ফিরোজ কবির), সেলিমসহ (অনেক সংগ্রামী সহকর্মীর মুখ মনের দেওয়ালে ভেসে আসে; কিন্তু তাদের নাম সঠিকভাবে মনে আসছে না বলে অত্যন্ত অসহায় বোধ করছি) বিভিন্ন সংগঠনের অগণিত সংগ্রামী বন্ধুদের অনেকে চলে গেলেন কাজী আলাউদ্দিন রোড দিয়ে পুরান ঢাকার দিকে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে।
জামাল ভাইয়ের (মোস্তফা জামাল হায়দার) নেতৃত্বে আমরা প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী, ছাত্রী অবশ্য আমি একা- দৌড়াতে দৌড়াতে গুলিস্তান অভিমুখে রওনা হই। আমি, জুনো ভাই, কাদের ভাই (কাদের ভূঁইয়া), চঞ্চল, শফিক, জামাল ভাইসহ কয়েকজন গুলিস্তানে পৌঁছে যাই। সঙ্গে সঙ্গে জামাল ভাই কামানের উপর দাঁড়িয়ে আইয়ুবের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অনলবর্ষী বক্তৃতা শুরু করেছেন।
কারফিউয়ের মতোই নির্জনতা বিরাজ করছিল চারদিকে। বক্তৃতার শব্দে আশপাশের বন্ধ দোকানের ঝাঁপ তুলে দোকানিরা বের হয়ে আসতে শুরু করেছেন, গলি থেকেও কিছু কিছু লোক সাহস নিয়ে এগিয়ে আসছিলেন। ৭-৮ মিনিট পর জামাল ভাইয়ের চিৎকার- ‘জুনো, পুলিশ’। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই ছুটতে শুরু করেছি প্রাণপণে। ইতোমধ্যে রায়টকারের রঙিন পানি আমাদের বেশ কিছুটা রাঙিয়ে দিয়েছে। বঙ্গভবনের গেটের বাইরের পার্ক পার হয়ে ওপারে কাপ্তান বাজারের দিকে যেতে পারলে মোটামুটি নিরাপদ; কিন্তু আমি আর পারছিলাম না। আমার ক্লান্ত দেহ এবং একসাথে জুনো ভাইসহ ৭-৮ জন সঙ্গী দাঁড়িয়ে পড়েছেন। এবার পার্কের উঁচু দেয়াল পার হতে হবে। সবাই প্রস্তুত আর আমি কিছুটা কাতর অবস্থায়। শেষপর্যন্ত জুনো ভাই, চঞ্চল এবং কাদের ভাইয়ের সাহায্যে আমিও পার্ক পার হলাম।
জুনো ভাই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর। তার জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখটি তার ৮০তম জন্মদিন। সুদীর্ঘ দিনের ব্যবধানে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে বসে আমার ক্ষয়ে যাওয়া স্মৃতিতে আজ ’৬৯-এর উত্তাল দিনগুলোই প্রথমে মনের জানালায় ধরা দিচ্ছে।
বাস্তবে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি তারিখেই স্বৈরাচারী আইয়ুবের কবর রচিত হয়ে যায়। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সেদিনের কর্মসূচি ছিল স্বৈরাচারী আইয়ুবের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এবং ১৭, ১৮ ও ১৯ তারিখে নিরস্ত্র ছাত্রদের মিছিলে লাঠিচার্জ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা শহরে হরতালসহ আরও বৃহৎ পরিসরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। আমতলার জমায়েত ছিল ১৭ ও ১৮ তারিখের তুলনায় অনেক বড়, বিশাল। আমাদের মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন ছেড়ে এনেক্স ভবন, মেডিকেল কলেজ ছেড়ে যখন চানখাঁরপুল পার হচ্ছে তখন পুলিশের এক বিরাট বহর মিছিলের মাঝ বরাবর আক্রমণ চালায়। মিছিলের সামনের অংশ পুরান ঢাকার দিকে চলে যায়, মিছিলের বাকি অংশ মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থান করে। মিছিলের এই অংশে জুনো ভাই, চঞ্চল, খালেদ ভাই (ছাত্রলীগ), মেডিকেল কলেজের জিন্না, রিন্টু, আমিন ভাইসহ আমরা অনেকে ছিলাম। আমাদের মেডিকেলের বন্ধু স্নিগ্ধাসহ অনেকে মেডিকেল কলেজের ছাদে অবস্থান করছিল এবং সেখান থেকে পুলিশকে ইট-পাথর দিয়ে আক্রমণ করছিল।
আমাদের সাথে এখানে পুলিশের বেশ কিছুক্ষণ ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার খ- যুদ্ধ চলতে থাকে। ছাত্রদের তীব্র আক্রমণের মুখে অধিকাংশ পুলিশ তাদের গাড়িসহ বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে পালিয়ে যায়; কিন্তু পুলিশের একটি জিপ তখনও ছাত্রদের দিকে বন্দুকের নল তাক করে আক্রমণের চেষ্টা চালাতে থাকে। আর এদিক থেকে জুনো ভাই, আসাদ ভাই, চঞ্চলসহ ২-৩ জন জিপটিকে ধাওয়া দিয়ে চলেছেন। তখন আমিসহ সবাই হাসপাতালের ইমারজেন্সি ওয়ার্ডের গেটের একটু ভেতরদিকে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ গুলির তীব্র শব্দে রাস্তায় চলে এসে দেখি আমাদের সহকর্মী এবং বিশেষ বন্ধু আসাদ ভাই (আসাদুজ্জামান আসাদ) রাস্তায় পড়ে আছেন; আর চঞ্চল ও জুনো ভাইসহ ২-৩ জনের ধাওয়া খেয়ে জিপটি পালিয়ে যাচ্ছে। তখন পেছনে ফিরে চঞ্চল, জুনো ভাই এবং অপর একজন আসাদ ভাইয়ের দেহ তুলে ধরে ইমারজেন্সিতে ঢুকালেন। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে গায়ে হাত দিয়ে দেখি তখনও গা গরম, আসাদ ভাই বেঁচে যাবেন এমনটি আশা হচ্ছিল; কিন্তু ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন তিনি আর বেঁচে নেই।
এই সেই আসাদ যিনি নরসিংদীর গ্রামে হরতাল করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে এসেও আবার ২০ জানুয়ারির মিছিলে যোগদান করেছিলেন। আসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২৪ তারিখে নবকুমার হাইস্কুলের ছাত্র মতিউরসহ ৭-৮ জন তরুণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে আইয়ুবশাহীর কবরে শেষ পেরেকটি পোঁতা হয়ে যায়। জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তার পরপরই শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব রাজবন্দি মুক্তি লাভ করেন। তখন থেকেই ২০ জানুয়ারি তারিখকে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ‘শহিদ আসাদ দিবস’ ঘোষণা করা হয় এবং আমাদের আন্দোলনে নতুন একটি সেøাগান যুক্ত হয়Ñ ‘আসাদের মন্ত্র, জনগণ তন্ত্র’।
জুনো ভাই ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি তার ছাত্রজীবন, আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সক্রিয় কম্যুনিস্ট আন্দোলন এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন ইত্যাদির মাধ্যমে সর্বদা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং ন্যায় ও শোষিত নিপীড়িতের পক্ষে আজীবন অবিচল ছিলেন।
[লেখক : ১১ দফা কর্মসূচির একজন স্বাক্ষরকারী]
দীপা দত্ত
শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫
মনে পড়ছে ১৯৬৯ সালের ১৮ জানুয়ারির দুপুরের কথা। সেদিন ছিল লাঠি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি। সেদিনও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়েছি, যথারীতি পুলিশের সাথে বেশ কিছু সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ইত্যাদির পর সবাই কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। সমবেত হয়ে আবার শহরের বিভিন্ন দিকে একেকটি মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি একেক দিকে। নাজমা শিখা, নেলি (বদরুন নাহার), ফিজু (তরুণ চক্রবর্তী), জসীম, আলতাফ, গোফরান, শফিক, হারুন, মাহফুজউল্লাহ, মুকুল (ফিরোজ কবির), সেলিমসহ (অনেক সংগ্রামী সহকর্মীর মুখ মনের দেওয়ালে ভেসে আসে; কিন্তু তাদের নাম সঠিকভাবে মনে আসছে না বলে অত্যন্ত অসহায় বোধ করছি) বিভিন্ন সংগঠনের অগণিত সংগ্রামী বন্ধুদের অনেকে চলে গেলেন কাজী আলাউদ্দিন রোড দিয়ে পুরান ঢাকার দিকে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে।
জামাল ভাইয়ের (মোস্তফা জামাল হায়দার) নেতৃত্বে আমরা প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী, ছাত্রী অবশ্য আমি একা- দৌড়াতে দৌড়াতে গুলিস্তান অভিমুখে রওনা হই। আমি, জুনো ভাই, কাদের ভাই (কাদের ভূঁইয়া), চঞ্চল, শফিক, জামাল ভাইসহ কয়েকজন গুলিস্তানে পৌঁছে যাই। সঙ্গে সঙ্গে জামাল ভাই কামানের উপর দাঁড়িয়ে আইয়ুবের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অনলবর্ষী বক্তৃতা শুরু করেছেন।
কারফিউয়ের মতোই নির্জনতা বিরাজ করছিল চারদিকে। বক্তৃতার শব্দে আশপাশের বন্ধ দোকানের ঝাঁপ তুলে দোকানিরা বের হয়ে আসতে শুরু করেছেন, গলি থেকেও কিছু কিছু লোক সাহস নিয়ে এগিয়ে আসছিলেন। ৭-৮ মিনিট পর জামাল ভাইয়ের চিৎকার- ‘জুনো, পুলিশ’। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই ছুটতে শুরু করেছি প্রাণপণে। ইতোমধ্যে রায়টকারের রঙিন পানি আমাদের বেশ কিছুটা রাঙিয়ে দিয়েছে। বঙ্গভবনের গেটের বাইরের পার্ক পার হয়ে ওপারে কাপ্তান বাজারের দিকে যেতে পারলে মোটামুটি নিরাপদ; কিন্তু আমি আর পারছিলাম না। আমার ক্লান্ত দেহ এবং একসাথে জুনো ভাইসহ ৭-৮ জন সঙ্গী দাঁড়িয়ে পড়েছেন। এবার পার্কের উঁচু দেয়াল পার হতে হবে। সবাই প্রস্তুত আর আমি কিছুটা কাতর অবস্থায়। শেষপর্যন্ত জুনো ভাই, চঞ্চল এবং কাদের ভাইয়ের সাহায্যে আমিও পার্ক পার হলাম।
জুনো ভাই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর। তার জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখটি তার ৮০তম জন্মদিন। সুদীর্ঘ দিনের ব্যবধানে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে বসে আমার ক্ষয়ে যাওয়া স্মৃতিতে আজ ’৬৯-এর উত্তাল দিনগুলোই প্রথমে মনের জানালায় ধরা দিচ্ছে।
বাস্তবে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি তারিখেই স্বৈরাচারী আইয়ুবের কবর রচিত হয়ে যায়। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সেদিনের কর্মসূচি ছিল স্বৈরাচারী আইয়ুবের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এবং ১৭, ১৮ ও ১৯ তারিখে নিরস্ত্র ছাত্রদের মিছিলে লাঠিচার্জ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা শহরে হরতালসহ আরও বৃহৎ পরিসরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। আমতলার জমায়েত ছিল ১৭ ও ১৮ তারিখের তুলনায় অনেক বড়, বিশাল। আমাদের মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন ছেড়ে এনেক্স ভবন, মেডিকেল কলেজ ছেড়ে যখন চানখাঁরপুল পার হচ্ছে তখন পুলিশের এক বিরাট বহর মিছিলের মাঝ বরাবর আক্রমণ চালায়। মিছিলের সামনের অংশ পুরান ঢাকার দিকে চলে যায়, মিছিলের বাকি অংশ মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থান করে। মিছিলের এই অংশে জুনো ভাই, চঞ্চল, খালেদ ভাই (ছাত্রলীগ), মেডিকেল কলেজের জিন্না, রিন্টু, আমিন ভাইসহ আমরা অনেকে ছিলাম। আমাদের মেডিকেলের বন্ধু স্নিগ্ধাসহ অনেকে মেডিকেল কলেজের ছাদে অবস্থান করছিল এবং সেখান থেকে পুলিশকে ইট-পাথর দিয়ে আক্রমণ করছিল।
আমাদের সাথে এখানে পুলিশের বেশ কিছুক্ষণ ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার খ- যুদ্ধ চলতে থাকে। ছাত্রদের তীব্র আক্রমণের মুখে অধিকাংশ পুলিশ তাদের গাড়িসহ বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে পালিয়ে যায়; কিন্তু পুলিশের একটি জিপ তখনও ছাত্রদের দিকে বন্দুকের নল তাক করে আক্রমণের চেষ্টা চালাতে থাকে। আর এদিক থেকে জুনো ভাই, আসাদ ভাই, চঞ্চলসহ ২-৩ জন জিপটিকে ধাওয়া দিয়ে চলেছেন। তখন আমিসহ সবাই হাসপাতালের ইমারজেন্সি ওয়ার্ডের গেটের একটু ভেতরদিকে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ গুলির তীব্র শব্দে রাস্তায় চলে এসে দেখি আমাদের সহকর্মী এবং বিশেষ বন্ধু আসাদ ভাই (আসাদুজ্জামান আসাদ) রাস্তায় পড়ে আছেন; আর চঞ্চল ও জুনো ভাইসহ ২-৩ জনের ধাওয়া খেয়ে জিপটি পালিয়ে যাচ্ছে। তখন পেছনে ফিরে চঞ্চল, জুনো ভাই এবং অপর একজন আসাদ ভাইয়ের দেহ তুলে ধরে ইমারজেন্সিতে ঢুকালেন। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে গায়ে হাত দিয়ে দেখি তখনও গা গরম, আসাদ ভাই বেঁচে যাবেন এমনটি আশা হচ্ছিল; কিন্তু ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন তিনি আর বেঁচে নেই।
এই সেই আসাদ যিনি নরসিংদীর গ্রামে হরতাল করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে এসেও আবার ২০ জানুয়ারির মিছিলে যোগদান করেছিলেন। আসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২৪ তারিখে নবকুমার হাইস্কুলের ছাত্র মতিউরসহ ৭-৮ জন তরুণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে আইয়ুবশাহীর কবরে শেষ পেরেকটি পোঁতা হয়ে যায়। জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তার পরপরই শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব রাজবন্দি মুক্তি লাভ করেন। তখন থেকেই ২০ জানুয়ারি তারিখকে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ‘শহিদ আসাদ দিবস’ ঘোষণা করা হয় এবং আমাদের আন্দোলনে নতুন একটি সেøাগান যুক্ত হয়Ñ ‘আসাদের মন্ত্র, জনগণ তন্ত্র’।
জুনো ভাই ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি তার ছাত্রজীবন, আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সক্রিয় কম্যুনিস্ট আন্দোলন এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন ইত্যাদির মাধ্যমে সর্বদা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং ন্যায় ও শোষিত নিপীড়িতের পক্ষে আজীবন অবিচল ছিলেন।
[লেখক : ১১ দফা কর্মসূচির একজন স্বাক্ষরকারী]