alt

উপ-সম্পাদকীয়

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

মাহরুফ চৌধুরী

: বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫

সামষ্টিক কল্যাণে ন্যায়-নীতির অনুসরণ থেকে নৈতিকতার জন্ম। নৈতিকতা মানবজীবনের এক অমূল্য সম্পদ, যা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য একটি সুস্থ ও সুশৃঙ্খল ভিত্তি প্রদান করে। মানুষের জৈববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির সমন্বিত এবং উন্নীত রূপই হলো নৈতিকতা। এটি মানব চরিত্রের কোনো সুনির্দিষ্ট উপাদান নয় বরং এমন এক বিশেষ গুণ, যা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে, এমনকি বিশ্বে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। ব্যক্তিক ও সামষ্টিক কল্যাণে নৈতিকতা এবং উন্নয়ন পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিকতাকে উপেক্ষা করে বস্তুগত উন্নয়ন যদি অর্জিত হয়, তবে তা ক্ষণস্থায়ী হয় এবং অচিরেই ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য একটি ‘বৈষম্যমুক্ত ও স্বৈরাচারহীন’ রাষ্ট্র গঠনে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নৈতিকতা। দেশের নাগরিক তথা শাসক ও শাসিতের মাঝে এই নৈতিকতার বীজ রোপণ করতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে মূল্যবোধভিত্তিক। শিক্ষা শুধু জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনের মাধ্যম নয়; এটি মানবিক গুণাবলি বিকাশের এক শক্তিশালী হাতিয়ার। আমরা যদি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি, যা নিয়ম ও নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মানবিকতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, শুধু তখনই আমাদের উন্নয়নকে টেকসই ও সমাজকে সুষম করে তুলতে সক্ষম হব। বর্তমান বিশ্বে নৈতিক অবক্ষয়ের প্রভাবে মানবসভ্যতা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের উচ্চতম স্তর পর্যন্ত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নৈতিক অধঃপতন আজ সুস্পষ্ট। তাদেও মধ্যে নীতির অভাব শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয় বরং রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোকেও গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। এই অবক্ষয়ের প্রভাব তৃণমূল পর্যায়েও বিদ্যমান, যেখানে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার

সংকট তৈরি হয়েছে। যখন কোনো জাতির শাসকশ্রেণী তথা রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মচারী এবং জনসাধারণের মধ্যে নৈতিক বিচ্যুতি দেখা দেয়, তখন সেই জাতির মধ্যে অন্যায়, অবিচার এবং নৈরাজ্য

সৃষ্টি হয়, যা পরিণামে দুঃশাসনে রূপ নেয়। এই দুঃশাসন জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। মানব ইতিহাসের এই করুণ সত্য আমাদের সামনে পরিষ্কার করে যে নৈতিক অবক্ষয় কখনোই একটি জাতির উন্নতির পথে সহায়ক হতে পারে না। তবে এই অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাব্যবস্থায় যদি নৈতিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধের চর্চা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মী সবার মধ্যে ন্যায় বা শ্রেয়বোধ ও মানবিকতা জাগ্রত হবে। এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা নৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে, সেটি একদিকে জাতিকে দুঃশাসন থেকে মুক্তি দেবে এবং অন্যদিকে একটি ‘বৈষম্যমুক্ত ও স্বৈরাচারহীন’ সমাজ গড়ে তুলবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিচারে নৈতিকতার ভিত্তি নিয়ে আমাদের বিশদ আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রশ্ন আসে, নৈতিকতার ভিত্তি কীভাবে তৈরি হবে? মানুষের প্রথম দায়িত্ব নিজেকে চেনা। মানুষ কি কেবল প্রাণী, নাকি তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে? প্রকৃতপক্ষে, মানুষ কোনো সাধারণ প্রাণী নয়। ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আমরা মানুষ হিসেবে পশুপ্রবৃত্তি (হাইওয়ানিয়াত বা অ্যানিমেলিটি) এবং ফেরেস্তাপ্রবৃত্তি (মালাকিয়াত বা অ্যাঞ্জেলিটি)-এর সমন্বয়ে গঠিত এক অনন্য সত্তা। তাই বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হিসেবে মানুষের আসল পরিচয় মানবিক উৎকর্ষের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এই উৎকর্ষেও লক্ষ্য হওয়া উচিত সামষ্টিক কল্যাণের জন্য কাজ করা। তবে মানবতা ও মানবিক উৎকর্ষে বিশ্বাসের অভাবে আজকের বিশ্বে নৈতিকতার ভয়াবহ অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। একদিকে ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ ও ভোগবাদ মানুষকে স্বার্থপর, নিষ্ঠুর ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। অন্যদিকে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার সংঘাত বা সংঘর্ষ থেকে আত্মরক্ষার নির্বিবাদী মনোবৃত্তি তাকে জীবনের

ন্যায়নিষ্ঠ সংগ্রামবিক্ষুব্ধ প্রাসঙ্গিকতা থেকে দূরে সরিয়ে জীবন থেকে পালাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু এই উভয় পথই মানুষকে প্রকৃত সুখ ও শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই সংকট থেকে উত্তরণের একটি কার্যকর উপায় হলো নৈতিক শিক্ষার প্রচলন যা সমাজে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তিমানুষকে অনুপ্রাণিত ও কার্যকর পন্থা অবলম্বনে সাহস এবং শক্তি জোগাবে। শিক্ষাব্যবস্থা যদি কেবল পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোনিবেশ না করে, বরং মানুষকে তার মানবিক দায়-দায়িত্ব ও নীতি-নৈতিকতার প্রতি সচেতন করে তোলে, তবে মানবিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিও পথে জাতির সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্মোপলব্ধি ও পরার্থপরতা জাগিয়ে তোলা সম্ভব যা তাকে তার পশুপ্রবৃত্তিকে অবদমিত করে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে মানবিক গুণাবলির চর্চায় অনুপ্রাণিত করবে। একমাত্র এই পথেই ‘দায় ও দরদের সমাজ’

প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে একটি ভারসাম্যময়, শান্তিপূর্ণ এবং কল্যাণমুখী আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নৈতিক শিক্ষার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শিক্ষাই পারে ব্যক্তিমানুষের মধ্যে সত্যিকার ন্যায়বোধ, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিকতার বিকাশ ঘটাতে। অন্যথায় মানবিক বা ধর্মীয় নৈতিকতাহীন শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণীর মাধ্যমেই সহজে সমাজে অপরাধ, দুর্নীতি, এবং অরাজকতা বৃদ্ধি পায়, যা আমরা বর্তমান সমাজে স্পষ্টভাবে দেখতে পাই।

কল্যাণমুখী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র তথা জাতি গঠনে শিক্ষা ও নৈতিকতার মাঝে এক সুনিবিড় এবং অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। তাই বলা হয়ে থাকে, শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। তবে নৈতিকতাহীন শিক্ষা জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আজকের বিশ্বে শিক্ষিত সমাজের একটি অংশ মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশ্চাত্যের বহু শিক্ষিত বিজ্ঞানী যুদ্ধের নামে হত্যাযজ্ঞের জন্য বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির পেছনে তাদের মেধা ও প্রচেষ্টা ব্যয় করছে। নিউট্রন বোমার মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবন এই বাস্তবতারই প্রমাণ বহন করে। একইভাবে আজকের বাংলাদেশে শিক্ষিত শ্রেণীই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত বলে প্রতীয়মান হয়। তারা তাদের জ্ঞান ও মেধা ব্যয় করছে সব ধরনের অপকর্মে।

বড় বড় কেলেঙ্কারির সঙ্গে এ শ্রেণীর জড়িত থাকার ঘটনা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও নতুন করে রাষ্ট্রবিনির্মাণের কথা ভাবতে বাধ্য করছে। শিক্ষা যদি মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার চর্চার মাধ্যমে গড়ে তোলা হতো, তাহলে শিক্ষিতরা পুকুরচুরি বা বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার পরিবর্তে সমাজের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করত। সুতরাং, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতার সমন্বয় এখন একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়নিষ্ঠ এবং সুশাসিত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

ব্যক্তিক ও সামষ্টিক কল্যাণে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষের মূল্যবোধ তৈরি করা। জ্ঞান বা দক্ষতা শেখানোর পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মানবিকতার এমন মিশেল থাকা উচিত, যা একজন মানুষকে প্রকৃত অর্থে মানবিক উৎকর্ষে উন্নত এবং সমাজের জন্য কল্যাণকর করে গড়ে তুলবে। সামষ্টিক কল্যাণে নৈতিকতা ও জাতীয় উন্নয়ন একে অপরের ওপর গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নৈতিকতাহীন উন্নয়ন যেমন কখনোই টেকসই হতে পারে না, তেমনি উন্নয়নের অভাবে নৈতিকতার বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়ন এবং নৈতিকতা, এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মীয় বা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ অত্যন্ত কার্যকর একটি পন্থা। ধর্মীয় কিংবা মানবিক

দৃষ্টিকোণ থেকে গড়ে ওঠা নৈতিকতাই মানবজাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারে। ইতিহাসে যুগে যুগে যেসব মহামানব জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের কর্মপ্রচেষ্টার মূলমন্ত্র ছিল মানবসেবা ও মনুষ্যত্বের উদ্বোধন। ন্যায়ভিত্তিক আইনের শাসন, নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং পারস্পরিক সহমর্মিতার চর্চার

মাধ্যমেই তারা সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।

ধর্মীয় অনুশাসন বা মানবিকতায় দৃঢ় বিশ্বাস মানুষের মনোজাগতিক ও বহির্জাগতিক মূল্যবোধকে উন্নত করে। এটি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে দায়িত্বশীলতা, ন্যায়বোধ, এবং সংহতির বিকাশ ঘটায়। উন্নত নৈতিকতা মানুষের চরিত্রকে সুশোভিত করে এবং জাতীয় উন্নয়নের মেরুদ- হিসেবে কাজ করে। এ কারণেই রাষ্ট্রীয় পরিম-লে নৈতিকতা ও উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা একান্ত অপরিহার্য। এই ভারসাম্য অর্জনে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম, যা সমাজে ন্যায়নিষ্ঠতা, শান্তি এবং সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। এটি মানুষকে ন্যায়বিচার, সততা এবং দায়িত্ববোধের চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে। নৈতিক শিক্ষার ফলে ব্যক্তিগত চরিত্র যেমন সুশোভিত হয়, তেমনি সেটা সামষ্টিক উন্নয়নের মেরুদ- হিসেবে কাজ করে। এই

কারণে নৈতিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। একদিকে এটি মানুষের মধ্যে ধর্মীয় এবং মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়, অন্যদিকে এটি একটি সুশাসিত, ন্যায়ভিত্তিক এবং কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে। শিক্ষাই পারে নৈতিকতা ও উন্নয়নের এই ভারসাম্য নিশ্চিত করতে, যা আমাদের একটি ‘বৈষম্যমুক্ত ও স্বৈরাচারহীন’ রাষ্ট্র গঠনে সাহায্য করবে। নৈতিকতা, শিক্ষা এবং উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়া শিক্ষা যেমন অর্থহীন, তেমনি শিক্ষাহীন উন্নয়ন কখনো টেকসই হতে পারে না। প্রকৃত নৈতিকতা অর্জনের জন্য মানুষের মানবিক মূল্যবোধগুলোর অনুসরণ ও অনুশীলন করা অধিক কার্যকর। এই নৈতিকতা ব্যক্তির চিন্তা ও কর্মকে

সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিম-লে তথা জাতীয় জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং কল্যাণ বয়ে আনে। ফলে উন্নত নৈতিকতাই জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির দৃঢ় ভিত্তি প্রস্তুত করে। নৈতিকতা ব্যক্তিমানুষকে শুধু সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিক বা শাসক করে তোলে না, এটি একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বনির্ভর করে তুলতেও সহায়তা করে। শিক্ষা যখন নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, তখন সেটি জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের গতিপথকে আরও মসৃণ করে। অতএব পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ, শান্তি, শৃঙ্খলা এবং সমৃদ্ধি আনয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। নৈতিকতা, শিক্ষা এবং উন্নয়নের এই গভীর আন্তঃসম্পর্কই আমাদের একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়নিষ্ঠ, এবং স্বৈরাচারহীন বাংলাদেশ গঠনের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এজন্য আমাদের সবাইকে নিজেদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ তৈরির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় জীবনে নৈতিক শিক্ষার বিস্তারে সচেষ্ট হতে হবে।

[লেখক: ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহাম্পটন, যুক্তরাজ্য]

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

রম্যগদ্য : ‘অন্ডুল নাস্তি...’

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

মাহরুফ চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫

সামষ্টিক কল্যাণে ন্যায়-নীতির অনুসরণ থেকে নৈতিকতার জন্ম। নৈতিকতা মানবজীবনের এক অমূল্য সম্পদ, যা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য একটি সুস্থ ও সুশৃঙ্খল ভিত্তি প্রদান করে। মানুষের জৈববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির সমন্বিত এবং উন্নীত রূপই হলো নৈতিকতা। এটি মানব চরিত্রের কোনো সুনির্দিষ্ট উপাদান নয় বরং এমন এক বিশেষ গুণ, যা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে, এমনকি বিশ্বে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। ব্যক্তিক ও সামষ্টিক কল্যাণে নৈতিকতা এবং উন্নয়ন পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিকতাকে উপেক্ষা করে বস্তুগত উন্নয়ন যদি অর্জিত হয়, তবে তা ক্ষণস্থায়ী হয় এবং অচিরেই ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য একটি ‘বৈষম্যমুক্ত ও স্বৈরাচারহীন’ রাষ্ট্র গঠনে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নৈতিকতা। দেশের নাগরিক তথা শাসক ও শাসিতের মাঝে এই নৈতিকতার বীজ রোপণ করতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে মূল্যবোধভিত্তিক। শিক্ষা শুধু জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনের মাধ্যম নয়; এটি মানবিক গুণাবলি বিকাশের এক শক্তিশালী হাতিয়ার। আমরা যদি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি, যা নিয়ম ও নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মানবিকতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, শুধু তখনই আমাদের উন্নয়নকে টেকসই ও সমাজকে সুষম করে তুলতে সক্ষম হব। বর্তমান বিশ্বে নৈতিক অবক্ষয়ের প্রভাবে মানবসভ্যতা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের উচ্চতম স্তর পর্যন্ত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নৈতিক অধঃপতন আজ সুস্পষ্ট। তাদেও মধ্যে নীতির অভাব শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয় বরং রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোকেও গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। এই অবক্ষয়ের প্রভাব তৃণমূল পর্যায়েও বিদ্যমান, যেখানে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার

সংকট তৈরি হয়েছে। যখন কোনো জাতির শাসকশ্রেণী তথা রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মচারী এবং জনসাধারণের মধ্যে নৈতিক বিচ্যুতি দেখা দেয়, তখন সেই জাতির মধ্যে অন্যায়, অবিচার এবং নৈরাজ্য

সৃষ্টি হয়, যা পরিণামে দুঃশাসনে রূপ নেয়। এই দুঃশাসন জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। মানব ইতিহাসের এই করুণ সত্য আমাদের সামনে পরিষ্কার করে যে নৈতিক অবক্ষয় কখনোই একটি জাতির উন্নতির পথে সহায়ক হতে পারে না। তবে এই অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাব্যবস্থায় যদি নৈতিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধের চর্চা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মী সবার মধ্যে ন্যায় বা শ্রেয়বোধ ও মানবিকতা জাগ্রত হবে। এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা নৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে, সেটি একদিকে জাতিকে দুঃশাসন থেকে মুক্তি দেবে এবং অন্যদিকে একটি ‘বৈষম্যমুক্ত ও স্বৈরাচারহীন’ সমাজ গড়ে তুলবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিচারে নৈতিকতার ভিত্তি নিয়ে আমাদের বিশদ আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রশ্ন আসে, নৈতিকতার ভিত্তি কীভাবে তৈরি হবে? মানুষের প্রথম দায়িত্ব নিজেকে চেনা। মানুষ কি কেবল প্রাণী, নাকি তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে? প্রকৃতপক্ষে, মানুষ কোনো সাধারণ প্রাণী নয়। ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আমরা মানুষ হিসেবে পশুপ্রবৃত্তি (হাইওয়ানিয়াত বা অ্যানিমেলিটি) এবং ফেরেস্তাপ্রবৃত্তি (মালাকিয়াত বা অ্যাঞ্জেলিটি)-এর সমন্বয়ে গঠিত এক অনন্য সত্তা। তাই বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হিসেবে মানুষের আসল পরিচয় মানবিক উৎকর্ষের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এই উৎকর্ষেও লক্ষ্য হওয়া উচিত সামষ্টিক কল্যাণের জন্য কাজ করা। তবে মানবতা ও মানবিক উৎকর্ষে বিশ্বাসের অভাবে আজকের বিশ্বে নৈতিকতার ভয়াবহ অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। একদিকে ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ ও ভোগবাদ মানুষকে স্বার্থপর, নিষ্ঠুর ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। অন্যদিকে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার সংঘাত বা সংঘর্ষ থেকে আত্মরক্ষার নির্বিবাদী মনোবৃত্তি তাকে জীবনের

ন্যায়নিষ্ঠ সংগ্রামবিক্ষুব্ধ প্রাসঙ্গিকতা থেকে দূরে সরিয়ে জীবন থেকে পালাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু এই উভয় পথই মানুষকে প্রকৃত সুখ ও শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই সংকট থেকে উত্তরণের একটি কার্যকর উপায় হলো নৈতিক শিক্ষার প্রচলন যা সমাজে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তিমানুষকে অনুপ্রাণিত ও কার্যকর পন্থা অবলম্বনে সাহস এবং শক্তি জোগাবে। শিক্ষাব্যবস্থা যদি কেবল পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোনিবেশ না করে, বরং মানুষকে তার মানবিক দায়-দায়িত্ব ও নীতি-নৈতিকতার প্রতি সচেতন করে তোলে, তবে মানবিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিও পথে জাতির সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্মোপলব্ধি ও পরার্থপরতা জাগিয়ে তোলা সম্ভব যা তাকে তার পশুপ্রবৃত্তিকে অবদমিত করে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে মানবিক গুণাবলির চর্চায় অনুপ্রাণিত করবে। একমাত্র এই পথেই ‘দায় ও দরদের সমাজ’

প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে একটি ভারসাম্যময়, শান্তিপূর্ণ এবং কল্যাণমুখী আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নৈতিক শিক্ষার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শিক্ষাই পারে ব্যক্তিমানুষের মধ্যে সত্যিকার ন্যায়বোধ, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিকতার বিকাশ ঘটাতে। অন্যথায় মানবিক বা ধর্মীয় নৈতিকতাহীন শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণীর মাধ্যমেই সহজে সমাজে অপরাধ, দুর্নীতি, এবং অরাজকতা বৃদ্ধি পায়, যা আমরা বর্তমান সমাজে স্পষ্টভাবে দেখতে পাই।

কল্যাণমুখী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র তথা জাতি গঠনে শিক্ষা ও নৈতিকতার মাঝে এক সুনিবিড় এবং অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। তাই বলা হয়ে থাকে, শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। তবে নৈতিকতাহীন শিক্ষা জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আজকের বিশ্বে শিক্ষিত সমাজের একটি অংশ মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশ্চাত্যের বহু শিক্ষিত বিজ্ঞানী যুদ্ধের নামে হত্যাযজ্ঞের জন্য বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির পেছনে তাদের মেধা ও প্রচেষ্টা ব্যয় করছে। নিউট্রন বোমার মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবন এই বাস্তবতারই প্রমাণ বহন করে। একইভাবে আজকের বাংলাদেশে শিক্ষিত শ্রেণীই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত বলে প্রতীয়মান হয়। তারা তাদের জ্ঞান ও মেধা ব্যয় করছে সব ধরনের অপকর্মে।

বড় বড় কেলেঙ্কারির সঙ্গে এ শ্রেণীর জড়িত থাকার ঘটনা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও নতুন করে রাষ্ট্রবিনির্মাণের কথা ভাবতে বাধ্য করছে। শিক্ষা যদি মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার চর্চার মাধ্যমে গড়ে তোলা হতো, তাহলে শিক্ষিতরা পুকুরচুরি বা বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার পরিবর্তে সমাজের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করত। সুতরাং, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতার সমন্বয় এখন একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়নিষ্ঠ এবং সুশাসিত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

ব্যক্তিক ও সামষ্টিক কল্যাণে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষের মূল্যবোধ তৈরি করা। জ্ঞান বা দক্ষতা শেখানোর পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মানবিকতার এমন মিশেল থাকা উচিত, যা একজন মানুষকে প্রকৃত অর্থে মানবিক উৎকর্ষে উন্নত এবং সমাজের জন্য কল্যাণকর করে গড়ে তুলবে। সামষ্টিক কল্যাণে নৈতিকতা ও জাতীয় উন্নয়ন একে অপরের ওপর গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নৈতিকতাহীন উন্নয়ন যেমন কখনোই টেকসই হতে পারে না, তেমনি উন্নয়নের অভাবে নৈতিকতার বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়ন এবং নৈতিকতা, এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মীয় বা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ অত্যন্ত কার্যকর একটি পন্থা। ধর্মীয় কিংবা মানবিক

দৃষ্টিকোণ থেকে গড়ে ওঠা নৈতিকতাই মানবজাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারে। ইতিহাসে যুগে যুগে যেসব মহামানব জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের কর্মপ্রচেষ্টার মূলমন্ত্র ছিল মানবসেবা ও মনুষ্যত্বের উদ্বোধন। ন্যায়ভিত্তিক আইনের শাসন, নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং পারস্পরিক সহমর্মিতার চর্চার

মাধ্যমেই তারা সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।

ধর্মীয় অনুশাসন বা মানবিকতায় দৃঢ় বিশ্বাস মানুষের মনোজাগতিক ও বহির্জাগতিক মূল্যবোধকে উন্নত করে। এটি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে দায়িত্বশীলতা, ন্যায়বোধ, এবং সংহতির বিকাশ ঘটায়। উন্নত নৈতিকতা মানুষের চরিত্রকে সুশোভিত করে এবং জাতীয় উন্নয়নের মেরুদ- হিসেবে কাজ করে। এ কারণেই রাষ্ট্রীয় পরিম-লে নৈতিকতা ও উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা একান্ত অপরিহার্য। এই ভারসাম্য অর্জনে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম, যা সমাজে ন্যায়নিষ্ঠতা, শান্তি এবং সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। এটি মানুষকে ন্যায়বিচার, সততা এবং দায়িত্ববোধের চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে। নৈতিক শিক্ষার ফলে ব্যক্তিগত চরিত্র যেমন সুশোভিত হয়, তেমনি সেটা সামষ্টিক উন্নয়নের মেরুদ- হিসেবে কাজ করে। এই

কারণে নৈতিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। একদিকে এটি মানুষের মধ্যে ধর্মীয় এবং মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়, অন্যদিকে এটি একটি সুশাসিত, ন্যায়ভিত্তিক এবং কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে। শিক্ষাই পারে নৈতিকতা ও উন্নয়নের এই ভারসাম্য নিশ্চিত করতে, যা আমাদের একটি ‘বৈষম্যমুক্ত ও স্বৈরাচারহীন’ রাষ্ট্র গঠনে সাহায্য করবে। নৈতিকতা, শিক্ষা এবং উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়া শিক্ষা যেমন অর্থহীন, তেমনি শিক্ষাহীন উন্নয়ন কখনো টেকসই হতে পারে না। প্রকৃত নৈতিকতা অর্জনের জন্য মানুষের মানবিক মূল্যবোধগুলোর অনুসরণ ও অনুশীলন করা অধিক কার্যকর। এই নৈতিকতা ব্যক্তির চিন্তা ও কর্মকে

সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিম-লে তথা জাতীয় জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং কল্যাণ বয়ে আনে। ফলে উন্নত নৈতিকতাই জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির দৃঢ় ভিত্তি প্রস্তুত করে। নৈতিকতা ব্যক্তিমানুষকে শুধু সৎ ও দায়িত্বশীল নাগরিক বা শাসক করে তোলে না, এটি একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বনির্ভর করে তুলতেও সহায়তা করে। শিক্ষা যখন নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, তখন সেটি জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের গতিপথকে আরও মসৃণ করে। অতএব পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ, শান্তি, শৃঙ্খলা এবং সমৃদ্ধি আনয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। নৈতিকতা, শিক্ষা এবং উন্নয়নের এই গভীর আন্তঃসম্পর্কই আমাদের একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়নিষ্ঠ, এবং স্বৈরাচারহীন বাংলাদেশ গঠনের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এজন্য আমাদের সবাইকে নিজেদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ তৈরির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় জীবনে নৈতিক শিক্ষার বিস্তারে সচেষ্ট হতে হবে।

[লেখক: ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহাম্পটন, যুক্তরাজ্য]

back to top