alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫

জাহাঙ্গীর আলম সরকার

: বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত করা হয়েছে। এই বাকস্বাধীনতার প্রশ্নেই সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিল করে প্রণয়ন করা হচ্ছে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫। বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারা দিয়ে শুরু; এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ‘সংস্করণ’ সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩। অভিযোগ রয়েছে বিগত শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে এই আইনগুলো হয়ে উঠেছিল সাইবার স্পেসে মানুষের মতপ্রকাশের জন্য বড় বাধা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ নিয়ে আজকের প্রবন্ধ। ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ মতামতের জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি অবধি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধ্যাদেশটিতে প্রত্যাশা অনুযায়ী বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে এমন কিছু বিষয় অপরিবর্তিত রয়ে গেছে এবং নতুন যুক্ত করা হয়েছে, যা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষকে আশঙ্কামুক্ত করতে পারেনি। প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ধারা ২০― অনুসারে সাইবার স্পেসে জুয়াখেলার অপরাধ ও দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুয়াখেলার জন্য কোনো অ্যাপ, ডিভাইস তৈরি বা খেলায় অংশগ্রহণ বা সহায়তা করলে এবং উৎসাহ দিতে বিজ্ঞাপনে অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

বাতিল করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারার সঙ্গে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ২৫ ধারার ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও মর্মগতভাবে তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ২৫ ধারায় যৌন হয়রানি, ব্ল্যাকমেলিং বা অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় ‘কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয়প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার’ করাকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪- এ প্রায় একই রকম বিধান ছিল।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এ ‘সাইবার বুলিং’কে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। ফলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে যেমন কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয়প্রতিপন্ন করার অভিযোগে মানুষকে নিপীড়ন ও হয়রানি করা হতো, একইভাবে ‘সাইবার বুলিং’ এর অভিযোগে মানুষকে নিপীড়ন ও হয়রানি করার সুযোগ তৈরি হতো। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫- এটিকে বাতিল করা হয়েছে। ২৫ ধারায় ব্ল্যাকমেলিং বা অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ‘ব্ল্যাকমেলিং’-এর একটি ব্যাখ্যা দেয়া হলেও ‘অশ্লীল’ বিষয়বস্তু কোনো ব্যাখ্যা নেই। ‘অশ্লীল’ বা ‘অশ্লীলতা’ খুবই আপেক্ষিক বিষয়। দেশ-কাল-সংস্কৃতিভেদে ‘অশ্লীল’ বিষয়বস্তু একই রকম হয় না। ফলে এটা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে। তথাপিও বিষয়টি ইতিবাচক বিবেচনায় অধ্যাদেশের এই বিধানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধন্যবাদ পেতেই পারেন। তবে, কিছু বিষয় আশাহত করেছে। পুরনো আইনের বেশ কিছু ধারা খসড়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে বহাল রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা নতুন আইনে যুক্ত করায় তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বাতিল হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৮(১) ধারার মতো সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ৮(১) ধারায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে বিটিআরসিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) যে কোনো কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করার যে কারণগুলো এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও বিস্তৃত। ফলে এগুলোর অতিরিক্ত ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা দেশের সংহতির মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করায় তা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদিত সীমার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়নি।

বাতিল হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৭ ধারাটি প্রায় হুবহু সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-২৩ ধারায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু দ-ের পরিমাণ অনধিক ১৪ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। প্রায় একই রকম একটি ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারায় ছিল। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ২৬ ধারায় কিছু শব্দ সংযোজন-বিয়োজন এবং ভাষাগত পরিবর্তন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী এ ধারায় প্রয়োজনীয় স্পষ্টতার অভাবে রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়নায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছিল। খসড়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ৩৫ ধারায় পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতা একইভাবে বহাল রাখা হয়েছিল। তবে এখানে নতুন একটি উপধারা যোগ করে গ্রেপ্তারের পর গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেটির জন্য কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। অবশেষে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ৩৪ ধারায় পরোয়ানার মাধ্যমে তল্লাশি ও জব্দের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ. ২০২৫-এর ৪৬ ধারায় এ অধ্যাদেশের অধীন কোন অপরাধসমূহ জামিনযোগ্য ও অজামিনযোগ্য তা উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশের ধারা ১৭, ১৮-এর (১) (গ), ধারা ১৯, ২২ এ উল্লেখিত অপরাধসমূহ অজামিনযোগ্য। ধারা ১৮-এর (১) (ক), (খ) ধারা ২০, ২৪, ২৫ ও ২৬-এ উল্লেখিত অপরাধ জামিনযোগ্য। ধারা ১৭, ১৮-এর (১) (গ), ধারা ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫-এ উল্লেখিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য। ধারা ১৮-এর (১) (ক), (খ) ধারা ১৯, ২১, ২২, ২৪ ও ২৫-এ উল্লেখিত অপরাধ আদালতের সম্মতিসাপেক্ষে আপেসযোগ্য। এই প্রবন্ধে একদিকে যেমন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ইতিবাচক বিষয়গুলো প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু সাইবার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া ওয়েবসাইটে দিয়ে তা নিয়ে মতামত জানানোর জন্য মাত্র তিন দিন সময় দেয়া হয়েছিল― এই বিষয়টি অপ্রত্যাশিত। বর্তমানে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ আইনটি ৬ ফেব্রুয়ারি অবধি মতামতের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে গভীর পর্যালোচনা এবং আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে যথাযথভাবে ও অর্থবহ সংলাপ বা মতবিনিময় হয়নি। যদি বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে যথাযথভাবে আলোচনা হতো তবে সেটি আরো অর্থবহ হতো। কাজেই সার্বিক দিক থেকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে কিনা, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ থেকে ২০২৫ এবং কিছু সুপারিশ:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর পূর্বে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন করেছিলেন। উক্ত খসড়া আইনটিতে ধারা ২-এর ভ অনুসারে ‘সাইবার সুরক্ষা’ হিসেবে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়, পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। অবশেষে অন্তবর্তীকালীন সরকার সেটি পরিবর্তন করেন। কাজেই প্রথম উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন হলো, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত অধ্যাদেশের ধারা ২-এর ভ অনুসারে ‘সাইবার সুরক্ষা’ হিসেবে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির যে অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো, সেটি বাতিল করা হয়েছে। কারণ অধ্যাদেশের এই বিধানটি ছিল কাগুজে। একজন নাগরিকের অধিকার ক্ষুণœ হলে কোথায়, কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে কিছু বলা ছিলো না অধ্যাদেশের সেই ধারায়।

১. সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ধারা ২-এর ‘ভ’ অনুসারে ‘সাইবার সুরক্ষা’ হিসেবে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এরকম কোন বিধান না থাকায় আমরা হতাশ। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ হচ্ছে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকার ক্ষুণœ হলে একজন নাগরিক কোথায়, কীভাবে প্রতিকার পেতে পারেন, সে সম্পর্কে একটি পৃথক ধারা যুক্ত করে আইনি প্রতিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

২. সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এ ‘অনলাইন ফাইনান্সিয়াল ট্রানজেকশন’ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট বিধানসহ একটি ধারা যুক্ত করা যেতে পারে― এরকম দাবি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ২৪ ধারায় এই বিষয়টি আইনানুগ কর্তৃত্ব বহির্ভূত ই-ট্রানজেকশনের অপরাধ ও দ- শিরোনামে ভাষা পরিবর্তন করে একটি পৃথক ধারার দাবিকে সমর্থন করে বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই অপরাধটিকে জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ৪৬ ধারায় ঘোষণা করা হয়েছে।

‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ২৪ ধারায় সুনির্দিষ্ট সুপারিশ হচ্ছে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ৪৬ ধারার খ উপ-ধারা সংশোধন করে অপরাধটিকে অজামিনযোগ্য করা হোক।

৩. এআই অর্থাৎ আর্টিফেসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রসঙ্গটিকেও পৃথক ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে― এরকম সুপারিশ প্রদান করা হয়েছিলো সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪―এর ক্ষেত্রে। পরবর্তীতে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ২১ ধারার (সাইবার স্পেসে জালিয়াতির অপরাধ ও দ-) ব্যাখ্যা অংশে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ শব্দটি এসেছে কিন্তু এটিকে পৃথক ধারায় সন্নিবেশিত করে দ-যোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়নি। ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে ‘এআই অর্থাৎ আর্টিফেসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ প্রসঙ্গটিকেও পৃথক ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করার সুপারিশ রইলো। একইসঙ্গে এই অপরাধটিকে অজামিনযোগ্য করা হোক।

আমাদের প্রত্যাশা ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ একটি চমৎকার জনবান্ধব আইন। কাজেই প্রত্যাশা করছি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি চমৎকার আইন প্রণয়ন করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

[লেখক: আইনজীবী]

ছবি

নীরদ সি চৌধুরী : পেন্ডুলামের মতো দোলায়মান এক বাঙালি চরিত্র

ভোজবাজি ও ভানুমতির খেলা

সড়কে কিশোর মোটরবাইকার : নিয়ন্ত্রণ জরুরি

মব জাস্টিস আইনের শাসনের পরিপন্থি

ছবি

গভীর সংকট আর বড় সম্ভাবনা পাশাপাশি হাঁটছে

জ্ঞানদায়িনী মা সরস্বতী দেবী

‘সংখ্যাস্বল্প’ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

সব ক্ষেত্রে বাংলাকে প্রাধান্য দিন

গুজব : মানবসৃষ্ট দুর্যোগ

অন্তর্বর্তী সরকার: নাগরিকদের প্রত্যাশা কি পূরণ হবে?

পাঠ্যবই সংকটে থমকে গেছে শিক্ষার চাকা

আরজি কর : শাসক রোষে ভিকটিমের পরিবার

চাই কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়ন

একটি দেয়ালচিত্র ও কিছু কথা

শুল্ক বনাম উদ্ভাবন যুদ্ধ

রম্যগদ্য : “ডক্টর.জ্বী-ভাগো...”

বায়ুদূষণ মনিটরিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার

ছবি

যোগেন ম-লের ‘বহুজনবাদী’ রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা

একটি দেয়ালচিত্র ও কিছু কথা

আলো, অন্ধকার ও চরিত্রবান জীবন

শিক্ষকরা কেন বারবার মার খাবে?

মনোবিশ্লেষক নাট্যক্রিয়া অনুশীলনের ক্ষেত্র হোক সহজতর

প্রসঙ্গ জেনারেশন জেড

বাড়ছে বেকারত্ব : প্রতিকারে জরুরি পদক্ষেপ নিন

প্রকৃতির প্রতি সদয় হতে হবে

ছবি

আভিজাত্যের বাঁধ এবং প্রান্তিক মানুষ

বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস

অর্থনীতি কোনদিকে যাচ্ছে?

বৈষম্যবিরোধী সংস্কার দরকার

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পোস্টমর্টেম প্রসঙ্গে

রাজনীতির লালসালু ও ময়না দ্বীপ : জনগণের আস্থার সংকট

প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব কি বাস্তবসম্মত

‘ভিলেজ পলিটিক্স’ ও সাধারণ গ্রামবাসী

রম্যগদ্য : ‘ধেয়ে আসছে বুলেট’

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য পেনশন ও গ্র্যাচুইটি সময়ের দাবি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫

জাহাঙ্গীর আলম সরকার

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত করা হয়েছে। এই বাকস্বাধীনতার প্রশ্নেই সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিল করে প্রণয়ন করা হচ্ছে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫। বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ ধারা দিয়ে শুরু; এরপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ‘সংস্করণ’ সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩। অভিযোগ রয়েছে বিগত শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে এই আইনগুলো হয়ে উঠেছিল সাইবার স্পেসে মানুষের মতপ্রকাশের জন্য বড় বাধা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ নিয়ে আজকের প্রবন্ধ। ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ মতামতের জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি অবধি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে অধ্যাদেশটিতে প্রত্যাশা অনুযায়ী বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে এমন কিছু বিষয় অপরিবর্তিত রয়ে গেছে এবং নতুন যুক্ত করা হয়েছে, যা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষকে আশঙ্কামুক্ত করতে পারেনি। প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ধারা ২০― অনুসারে সাইবার স্পেসে জুয়াখেলার অপরাধ ও দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুয়াখেলার জন্য কোনো অ্যাপ, ডিভাইস তৈরি বা খেলায় অংশগ্রহণ বা সহায়তা করলে এবং উৎসাহ দিতে বিজ্ঞাপনে অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

বাতিল করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারার সঙ্গে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ২৫ ধারার ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও মর্মগতভাবে তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ২৫ ধারায় যৌন হয়রানি, ব্ল্যাকমেলিং বা অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় ‘কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয়প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার’ করাকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪- এ প্রায় একই রকম বিধান ছিল।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এ ‘সাইবার বুলিং’কে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। ফলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে যেমন কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয়প্রতিপন্ন করার অভিযোগে মানুষকে নিপীড়ন ও হয়রানি করা হতো, একইভাবে ‘সাইবার বুলিং’ এর অভিযোগে মানুষকে নিপীড়ন ও হয়রানি করার সুযোগ তৈরি হতো। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫- এটিকে বাতিল করা হয়েছে। ২৫ ধারায় ব্ল্যাকমেলিং বা অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ‘ব্ল্যাকমেলিং’-এর একটি ব্যাখ্যা দেয়া হলেও ‘অশ্লীল’ বিষয়বস্তু কোনো ব্যাখ্যা নেই। ‘অশ্লীল’ বা ‘অশ্লীলতা’ খুবই আপেক্ষিক বিষয়। দেশ-কাল-সংস্কৃতিভেদে ‘অশ্লীল’ বিষয়বস্তু একই রকম হয় না। ফলে এটা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে। তথাপিও বিষয়টি ইতিবাচক বিবেচনায় অধ্যাদেশের এই বিধানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধন্যবাদ পেতেই পারেন। তবে, কিছু বিষয় আশাহত করেছে। পুরনো আইনের বেশ কিছু ধারা খসড়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে বহাল রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা নতুন আইনে যুক্ত করায় তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বাতিল হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৮(১) ধারার মতো সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ৮(১) ধারায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে বিটিআরসিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) যে কোনো কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করার যে কারণগুলো এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও বিস্তৃত। ফলে এগুলোর অতিরিক্ত ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা দেশের সংহতির মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করায় তা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদিত সীমার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়নি।

বাতিল হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৭ ধারাটি প্রায় হুবহু সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-২৩ ধারায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু দ-ের পরিমাণ অনধিক ১৪ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। প্রায় একই রকম একটি ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারায় ছিল। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ২৬ ধারায় কিছু শব্দ সংযোজন-বিয়োজন এবং ভাষাগত পরিবর্তন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী এ ধারায় প্রয়োজনীয় স্পষ্টতার অভাবে রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়নায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছিল। খসড়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ৩৫ ধারায় পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতা একইভাবে বহাল রাখা হয়েছিল। তবে এখানে নতুন একটি উপধারা যোগ করে গ্রেপ্তারের পর গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেটির জন্য কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। অবশেষে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ৩৪ ধারায় পরোয়ানার মাধ্যমে তল্লাশি ও জব্দের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ. ২০২৫-এর ৪৬ ধারায় এ অধ্যাদেশের অধীন কোন অপরাধসমূহ জামিনযোগ্য ও অজামিনযোগ্য তা উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশের ধারা ১৭, ১৮-এর (১) (গ), ধারা ১৯, ২২ এ উল্লেখিত অপরাধসমূহ অজামিনযোগ্য। ধারা ১৮-এর (১) (ক), (খ) ধারা ২০, ২৪, ২৫ ও ২৬-এ উল্লেখিত অপরাধ জামিনযোগ্য। ধারা ১৭, ১৮-এর (১) (গ), ধারা ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫-এ উল্লেখিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য। ধারা ১৮-এর (১) (ক), (খ) ধারা ১৯, ২১, ২২, ২৪ ও ২৫-এ উল্লেখিত অপরাধ আদালতের সম্মতিসাপেক্ষে আপেসযোগ্য। এই প্রবন্ধে একদিকে যেমন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ইতিবাচক বিষয়গুলো প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু সাইবার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া ওয়েবসাইটে দিয়ে তা নিয়ে মতামত জানানোর জন্য মাত্র তিন দিন সময় দেয়া হয়েছিল― এই বিষয়টি অপ্রত্যাশিত। বর্তমানে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ আইনটি ৬ ফেব্রুয়ারি অবধি মতামতের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে গভীর পর্যালোচনা এবং আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে যথাযথভাবে ও অর্থবহ সংলাপ বা মতবিনিময় হয়নি। যদি বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে যথাযথভাবে আলোচনা হতো তবে সেটি আরো অর্থবহ হতো। কাজেই সার্বিক দিক থেকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে কিনা, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ থেকে ২০২৫ এবং কিছু সুপারিশ:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর পূর্বে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন করেছিলেন। উক্ত খসড়া আইনটিতে ধারা ২-এর ভ অনুসারে ‘সাইবার সুরক্ষা’ হিসেবে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়, পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। অবশেষে অন্তবর্তীকালীন সরকার সেটি পরিবর্তন করেন। কাজেই প্রথম উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন হলো, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত অধ্যাদেশের ধারা ২-এর ভ অনুসারে ‘সাইবার সুরক্ষা’ হিসেবে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির যে অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো, সেটি বাতিল করা হয়েছে। কারণ অধ্যাদেশের এই বিধানটি ছিল কাগুজে। একজন নাগরিকের অধিকার ক্ষুণœ হলে কোথায়, কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে কিছু বলা ছিলো না অধ্যাদেশের সেই ধারায়।

১. সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ধারা ২-এর ‘ভ’ অনুসারে ‘সাইবার সুরক্ষা’ হিসেবে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এরকম কোন বিধান না থাকায় আমরা হতাশ। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ হচ্ছে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকার ক্ষুণœ হলে একজন নাগরিক কোথায়, কীভাবে প্রতিকার পেতে পারেন, সে সম্পর্কে একটি পৃথক ধারা যুক্ত করে আইনি প্রতিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

২. সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এ ‘অনলাইন ফাইনান্সিয়াল ট্রানজেকশন’ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট বিধানসহ একটি ধারা যুক্ত করা যেতে পারে― এরকম দাবি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ২৪ ধারায় এই বিষয়টি আইনানুগ কর্তৃত্ব বহির্ভূত ই-ট্রানজেকশনের অপরাধ ও দ- শিরোনামে ভাষা পরিবর্তন করে একটি পৃথক ধারার দাবিকে সমর্থন করে বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই অপরাধটিকে জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ৪৬ ধারায় ঘোষণা করা হয়েছে।

‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ২৪ ধারায় সুনির্দিষ্ট সুপারিশ হচ্ছে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ৪৬ ধারার খ উপ-ধারা সংশোধন করে অপরাধটিকে অজামিনযোগ্য করা হোক।

৩. এআই অর্থাৎ আর্টিফেসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রসঙ্গটিকেও পৃথক ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে― এরকম সুপারিশ প্রদান করা হয়েছিলো সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪―এর ক্ষেত্রে। পরবর্তীতে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ২১ ধারার (সাইবার স্পেসে জালিয়াতির অপরাধ ও দ-) ব্যাখ্যা অংশে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ শব্দটি এসেছে কিন্তু এটিকে পৃথক ধারায় সন্নিবেশিত করে দ-যোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়নি। ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’―এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে ‘এআই অর্থাৎ আর্টিফেসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ প্রসঙ্গটিকেও পৃথক ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করার সুপারিশ রইলো। একইসঙ্গে এই অপরাধটিকে অজামিনযোগ্য করা হোক।

আমাদের প্রত্যাশা ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ একটি চমৎকার জনবান্ধব আইন। কাজেই প্রত্যাশা করছি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি চমৎকার আইন প্রণয়ন করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

[লেখক: আইনজীবী]

back to top