alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : গুরু রবিদাস জী

বাবুল রবিদাস

: বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ভাগ করো আর শাসন করো, এমন নীতির কারণে ভারত উপমহাদেশে বিভক্ত করার মধ্য দিয়ে অনগ্রসর জাতিদের যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক ভাবে শোষণ করা হয়েছে। ভারতের সাড়ে ছয় হাজার জাতি যাতে একত্র না হতে পারে তার জন্য বিভিন্ন পদবি প্রথার প্রচলন শুরু করে দেয়। ফলে দলিত-বঞ্চিত জাতিরা ‘একতাই বল’ কথাটির অথই বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই ৬% উচ্চ শ্রেণীর লোকজন ৯৪% দলিত-বঞ্চিত মানুষদের শাসন ও শোষণ করে আসছিলো।

দলিত জাতিদের কখনো অস্পৃশ্য, অসুর, দানব, নাগ ইত্যাদি আখ্যা দেয়া হয়েছে। তারা যেন লেখাপড়া শিখে বড় না হতে পারে তার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিলো; কিন্তু গুরু রবিদাস অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, অস্পৃশ্য ভেদাভেদকে অস্বীকার করেন ও সমতা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়ত্ব, মনুষ্যত্ব, সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ‘বেগমপুরা’ গান রচনা করেছেন। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে গুরু রবিদাস জীর জন্মজয়ন্তী।

বেগমপুরা হল বিনা দুঃখের শহর (বে-না, গম-দুঃখ, পুরা-শহর)। গুরু রবিদাস জী এক শহরের পরিকল্পনা করেন যেখানে গম (দুঃখ) থাকবে না। রবিদাস জী যে শহরের পরিকল্পনা করেছেন সেইখানে কোনো দুঃখ চিন্তা (তসবিস) থাকবে না। কোনো জিনিসে ট্যাক্স দিতে হবে না। সেখানে রাগ, বেইমান থাকবে না। সেই শহরে প্রত্যেকেই ভালোভাবে শান্তিতে বসবাস করবে। সেখানে সঠিক বিচার ধারা থাকবে। সেখানে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক থাকবে না সবাই সমান অধিকার পাবে। সবসময় জীবিকা শ্রমপ্রধান হবে। সেখানে বসবাসকারী ব্যক্তি আইন অনুযায়ী আচরণ করবে। সেখানে একজনব্যক্তি যেখানে খুশি সেখানে ভ্রমণ জনব্যক্তি করতে পারবে। সেখানে রাজার কর্মচারী অথবা রাজা স্বয়ং দুজনরই স্বাধীনতা পারবে। সমান থাকবে।

গুরু রবিদাস জী বলেছেন যে, যারা সেই নগরের (বেগমপুরা) বিচার ধারার সমর্থন করবে, তারাই আমার সাথী বা মিত্র হবে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে কেন তিনি বেগমপুরা শহরের পরিকল্পনা করেছেন। কারণ হলোÑ ভারতে আর্য আক্রমণের পূর্বে এক বিশ্ববিখ্যাত মানের অসুর সভ্যতা গোড়ে ওঠে ছিল যাকে সবাই সিন্ধুসভ্যতা বলে জানেন। সেই সভ্যতা ছিলো নগর সভ্যতা যেখানে মানুষ শান্তিতে বাসকরত। সামাজিক, রাজনৈতিক ধার্মিক এবং আরও অন্যন্য প্রকারের দুঃখ থেকে মুক্ত ছিলেন। গুরু রবিদাস জী তার বানীর মধ্যদিয়ে পূর্বপুরুষদের তৈরি করা সিন্ধু সভ্যতার কথা মনে করাতে চেয়েছেন। বেগমপুরা শহর কোনো ভগবান বা বিশেষ ধর্মকেন্দ্রিক নয়। এই শহর পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক, তার্কিক মানবহিতৈষী সমতামূলোক বিচারধারার ওপর স্থাপিত এক শহর। বর্তমানে আমরা দেখছি ইউএনও এবং সংবিধান বিভিন্ন ধরনের আইন তৈরি করেছে যাতে মানুষ সুখে শান্তিতে পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে। গুরু রবিদাস তার চিন্তাভাবনা বেগমপুরার মাধ্যমে সারা পৃথিবীর কাছে রেখেছেন। গুরু রবিদাস জী বলছেন, অনেক যুগ থেকে মানুষের দিক ভ্রম হয়ে গিয়েছিলো। নিজেদের মূল পরিচয় থেকে সরে গেছিলো কিন্তু এখন নিজেদের মূল খুঁজে পাওয়া গেছে, পূর্বপুরুষদের পরিচয় পাওয়া গেছে, ইতিহাস খুঁজে পাওয়া গেছে। এজন্য নিজেদের সমাজের মান সম্মান, প্রভৃতি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে। গুরু রবিদাস জীর পূর্ব পুরুষ মানে সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের কথা বলেছেন। সেই সিন্ধু সভ্যতা আবার নতুন করে বেগমপুরা রূপে স্থাপন করতে হবে।

পৃথিবীর সয মানুষের রক্ত লাল। প্রত্যেক মানুষের হাত-পা, চোখ, কান, নাক রয়েছে। প্রকৃতির কারণে মানুষ সাদা কালো হয়ে থাকে। এজন্য কেও আদরণীয় আর কেউ ঘৃণ্য হতে পারে না। বর্তমান বিশ্বে মানুষ মানবতা ও মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এমন রীতি-নীতি কথা শত শত বৎসর পূর্বে গুরু রবিদাস জী দিয়েছিলেন।

[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : গুরু রবিদাস জী

বাবুল রবিদাস

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ভাগ করো আর শাসন করো, এমন নীতির কারণে ভারত উপমহাদেশে বিভক্ত করার মধ্য দিয়ে অনগ্রসর জাতিদের যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক ভাবে শোষণ করা হয়েছে। ভারতের সাড়ে ছয় হাজার জাতি যাতে একত্র না হতে পারে তার জন্য বিভিন্ন পদবি প্রথার প্রচলন শুরু করে দেয়। ফলে দলিত-বঞ্চিত জাতিরা ‘একতাই বল’ কথাটির অথই বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই ৬% উচ্চ শ্রেণীর লোকজন ৯৪% দলিত-বঞ্চিত মানুষদের শাসন ও শোষণ করে আসছিলো।

দলিত জাতিদের কখনো অস্পৃশ্য, অসুর, দানব, নাগ ইত্যাদি আখ্যা দেয়া হয়েছে। তারা যেন লেখাপড়া শিখে বড় না হতে পারে তার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিলো; কিন্তু গুরু রবিদাস অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, অস্পৃশ্য ভেদাভেদকে অস্বীকার করেন ও সমতা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়ত্ব, মনুষ্যত্ব, সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ‘বেগমপুরা’ গান রচনা করেছেন। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে গুরু রবিদাস জীর জন্মজয়ন্তী।

বেগমপুরা হল বিনা দুঃখের শহর (বে-না, গম-দুঃখ, পুরা-শহর)। গুরু রবিদাস জী এক শহরের পরিকল্পনা করেন যেখানে গম (দুঃখ) থাকবে না। রবিদাস জী যে শহরের পরিকল্পনা করেছেন সেইখানে কোনো দুঃখ চিন্তা (তসবিস) থাকবে না। কোনো জিনিসে ট্যাক্স দিতে হবে না। সেখানে রাগ, বেইমান থাকবে না। সেই শহরে প্রত্যেকেই ভালোভাবে শান্তিতে বসবাস করবে। সেখানে সঠিক বিচার ধারা থাকবে। সেখানে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক থাকবে না সবাই সমান অধিকার পাবে। সবসময় জীবিকা শ্রমপ্রধান হবে। সেখানে বসবাসকারী ব্যক্তি আইন অনুযায়ী আচরণ করবে। সেখানে একজনব্যক্তি যেখানে খুশি সেখানে ভ্রমণ জনব্যক্তি করতে পারবে। সেখানে রাজার কর্মচারী অথবা রাজা স্বয়ং দুজনরই স্বাধীনতা পারবে। সমান থাকবে।

গুরু রবিদাস জী বলেছেন যে, যারা সেই নগরের (বেগমপুরা) বিচার ধারার সমর্থন করবে, তারাই আমার সাথী বা মিত্র হবে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে কেন তিনি বেগমপুরা শহরের পরিকল্পনা করেছেন। কারণ হলোÑ ভারতে আর্য আক্রমণের পূর্বে এক বিশ্ববিখ্যাত মানের অসুর সভ্যতা গোড়ে ওঠে ছিল যাকে সবাই সিন্ধুসভ্যতা বলে জানেন। সেই সভ্যতা ছিলো নগর সভ্যতা যেখানে মানুষ শান্তিতে বাসকরত। সামাজিক, রাজনৈতিক ধার্মিক এবং আরও অন্যন্য প্রকারের দুঃখ থেকে মুক্ত ছিলেন। গুরু রবিদাস জী তার বানীর মধ্যদিয়ে পূর্বপুরুষদের তৈরি করা সিন্ধু সভ্যতার কথা মনে করাতে চেয়েছেন। বেগমপুরা শহর কোনো ভগবান বা বিশেষ ধর্মকেন্দ্রিক নয়। এই শহর পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক, তার্কিক মানবহিতৈষী সমতামূলোক বিচারধারার ওপর স্থাপিত এক শহর। বর্তমানে আমরা দেখছি ইউএনও এবং সংবিধান বিভিন্ন ধরনের আইন তৈরি করেছে যাতে মানুষ সুখে শান্তিতে পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে। গুরু রবিদাস তার চিন্তাভাবনা বেগমপুরার মাধ্যমে সারা পৃথিবীর কাছে রেখেছেন। গুরু রবিদাস জী বলছেন, অনেক যুগ থেকে মানুষের দিক ভ্রম হয়ে গিয়েছিলো। নিজেদের মূল পরিচয় থেকে সরে গেছিলো কিন্তু এখন নিজেদের মূল খুঁজে পাওয়া গেছে, পূর্বপুরুষদের পরিচয় পাওয়া গেছে, ইতিহাস খুঁজে পাওয়া গেছে। এজন্য নিজেদের সমাজের মান সম্মান, প্রভৃতি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে। গুরু রবিদাস জীর পূর্ব পুরুষ মানে সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের কথা বলেছেন। সেই সিন্ধু সভ্যতা আবার নতুন করে বেগমপুরা রূপে স্থাপন করতে হবে।

পৃথিবীর সয মানুষের রক্ত লাল। প্রত্যেক মানুষের হাত-পা, চোখ, কান, নাক রয়েছে। প্রকৃতির কারণে মানুষ সাদা কালো হয়ে থাকে। এজন্য কেও আদরণীয় আর কেউ ঘৃণ্য হতে পারে না। বর্তমান বিশ্বে মানুষ মানবতা ও মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এমন রীতি-নীতি কথা শত শত বৎসর পূর্বে গুরু রবিদাস জী দিয়েছিলেন।

[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

back to top