কামরুজ্জামান
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভূত সমস্যা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনীতির বলয় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোনো কালেই বের হতে পারেনি। এখানে নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি, পদায়ন ও প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগÑ সবই হয় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বভাবতই যারা রাজনৈতিকভাবে পদপদবী গ্রহণ করেন তাদের যতটা না প্রতিষ্ঠান ও পড়ালেখা নিয়ে ভাবেন তার চেয়ে বেশি ভাবেন রাজনৈতিক নেতাদের তুষ্ট করতে।
আবার শিক্ষকদের মাঝেও প্রবণতা রয়েছে বিশেষ কোনো দলের রাজনীতি করে পদপদবী ভাগিয়ে নেয়ার। রাজনীতি করার অধিকার প্রতিটি মানুষের রয়েছে। কোনো মতাদর্শে বিশ্বাস কারো থাকতেই পারে। তবে শিক্ষকতা যেহেতু মহান পেশা সেহেতু এ পেশায় থেকে শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা বজায় থাকা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে যারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত তাদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে আসবে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন ও বেতনকাঠামো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রয়োজন আর্থিক প্রণোদনা দেয়া। পদপদবী ও পদোন্নতি মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী হওয়া প্রয়োজন। অথচ আমাদের দেশে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সব সুবিধা নেই বললেই চলে। এ কারণে যারা এডভান্স স্টাডি করে, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে এবং জার্নালে একাধিক প্রকাশনা থাকে তারা আলাদা কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় উৎসাহের জায়গায় ভাটা পড়ে যায়। আমাদের চৌকস মেধাবী যারা তারা দেশেই থাকে না। বিশ্বের বড় বড় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে চলে যায়। অন্য পেশা বেছে নেয়। বাইরের উন্নত দেশগুলোতে তাদের শিক্ষক নিয়োগ দেয় প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী।
উন্নত দেশের নামকরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও শুধু নিজ দেশে নয় বাইরের দেশের মেধাবী ও উচ্চ ডিগ্রি প্রাপ্ত গবেষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাদের এখানে নেই রাজনৈতিক পরিচয়, নেই দলীয় নিয়োগ।
আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার থাকায় শিক্ষকরা গবেষণা ও প্রকাশনার চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কে কোন পদ পেতে পারে , কার কী পোস্ট পজিশন হতে পারে এসব ভাবনা নিয়েই কাজ করে সারাক্ষণ। গবেষণা ও প্রকাশনা করে যেহেতু আলাদা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না সেহেতু আগ্রহও কম থাকে।
শিক্ষার মান ও যুগোপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, গবেষণা ও প্রকাশনা যেমন প্রয়োজন তেমনি যথাযথ মূল্যায়ন হওয়াও খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ হচ্ছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই পারে নতুন নতুন আবিষ্কার নিয়ে আসতে। নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্যের সন্নিবেশ ঘটাতে এবং গবেষণার মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে। গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও প্রকাশনা সমাজ ও রাষ্ট্রের যেমন উপকার হয় তেমনি ছাত্ররাও জ্ঞান ও মেধায় সমৃদ্ধ হয়।
শিক্ষার গুণগত মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে মেধাবী ও নতুনদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য আলাদা বেতনকাঠামো দিতে হবে। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গবেষণা হলো জ্ঞান বৃদ্ধির সৃজনশীল এবং পদ্ধতিগত কাজ। গবেষণায় একটি বিষয়কে বোঝার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ, সংগঠন এবং বিশ্লেষণ করা হয়। এতে পক্ষপাত এবং ত্রুটির উৎস নিয়ন্ত্রণ করার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো, বাস্তবিক কোনো সমস্যার সমাধান করা।
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিসহ প্রতিটা ক্ষেত্রে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা ও তত্ত্ব ছাড়া একটা জাতি সামনে যেতে পারে না। আর এসব নতুন তত্ত্ব ও ধারণা লাভ করা সম্ভব হয় গবেষণার মাধ্যমে। যে কোনো ব্যক্তি তার নিজের দক্ষতা অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা করে সেসব পত্রিকা, বই বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। শিক্ষকতা পেশায় গবেষণা ও প্রকাশনার সুযোগ অনেক বেশি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সারা পৃথিবীতে গবেষণা কর্মকা- পরিচালিত হয় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমেই। অনেকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই গবেষণা। আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পড়ালেখা ও গবেষণার জায়গায় হবে এটা দেশ ও জাতীর প্রত্যাশা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ধরে রাখতে হলে প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে হবে। স্বচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীদের খুঁজে বের করে নিয়োগ দেয়া উচিত। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের জন্য গবেষণা ও প্রকাশনায় এগিয়ে থাকা শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। প্রয়োজন আলাদা শিক্ষা কমিশন ও পে-স্কেল। মনে রাখতে হবে শিক্ষার মৌলিক পরিবর্তন না হলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও নৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]
কামরুজ্জামান
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভূত সমস্যা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনীতির বলয় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোনো কালেই বের হতে পারেনি। এখানে নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি, পদায়ন ও প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগÑ সবই হয় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বভাবতই যারা রাজনৈতিকভাবে পদপদবী গ্রহণ করেন তাদের যতটা না প্রতিষ্ঠান ও পড়ালেখা নিয়ে ভাবেন তার চেয়ে বেশি ভাবেন রাজনৈতিক নেতাদের তুষ্ট করতে।
আবার শিক্ষকদের মাঝেও প্রবণতা রয়েছে বিশেষ কোনো দলের রাজনীতি করে পদপদবী ভাগিয়ে নেয়ার। রাজনীতি করার অধিকার প্রতিটি মানুষের রয়েছে। কোনো মতাদর্শে বিশ্বাস কারো থাকতেই পারে। তবে শিক্ষকতা যেহেতু মহান পেশা সেহেতু এ পেশায় থেকে শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা বজায় থাকা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে যারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত তাদের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে আসবে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন ও বেতনকাঠামো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রয়োজন আর্থিক প্রণোদনা দেয়া। পদপদবী ও পদোন্নতি মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী হওয়া প্রয়োজন। অথচ আমাদের দেশে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সব সুবিধা নেই বললেই চলে। এ কারণে যারা এডভান্স স্টাডি করে, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে এবং জার্নালে একাধিক প্রকাশনা থাকে তারা আলাদা কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় উৎসাহের জায়গায় ভাটা পড়ে যায়। আমাদের চৌকস মেধাবী যারা তারা দেশেই থাকে না। বিশ্বের বড় বড় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে চলে যায়। অন্য পেশা বেছে নেয়। বাইরের উন্নত দেশগুলোতে তাদের শিক্ষক নিয়োগ দেয় প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী।
উন্নত দেশের নামকরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও শুধু নিজ দেশে নয় বাইরের দেশের মেধাবী ও উচ্চ ডিগ্রি প্রাপ্ত গবেষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাদের এখানে নেই রাজনৈতিক পরিচয়, নেই দলীয় নিয়োগ।
আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার থাকায় শিক্ষকরা গবেষণা ও প্রকাশনার চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কে কোন পদ পেতে পারে , কার কী পোস্ট পজিশন হতে পারে এসব ভাবনা নিয়েই কাজ করে সারাক্ষণ। গবেষণা ও প্রকাশনা করে যেহেতু আলাদা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না সেহেতু আগ্রহও কম থাকে।
শিক্ষার মান ও যুগোপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, গবেষণা ও প্রকাশনা যেমন প্রয়োজন তেমনি যথাযথ মূল্যায়ন হওয়াও খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ হচ্ছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই পারে নতুন নতুন আবিষ্কার নিয়ে আসতে। নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্যের সন্নিবেশ ঘটাতে এবং গবেষণার মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে। গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও প্রকাশনা সমাজ ও রাষ্ট্রের যেমন উপকার হয় তেমনি ছাত্ররাও জ্ঞান ও মেধায় সমৃদ্ধ হয়।
শিক্ষার গুণগত মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে মেধাবী ও নতুনদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য আলাদা বেতনকাঠামো দিতে হবে। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গবেষণা হলো জ্ঞান বৃদ্ধির সৃজনশীল এবং পদ্ধতিগত কাজ। গবেষণায় একটি বিষয়কে বোঝার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ, সংগঠন এবং বিশ্লেষণ করা হয়। এতে পক্ষপাত এবং ত্রুটির উৎস নিয়ন্ত্রণ করার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো, বাস্তবিক কোনো সমস্যার সমাধান করা।
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিসহ প্রতিটা ক্ষেত্রে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা ও তত্ত্ব ছাড়া একটা জাতি সামনে যেতে পারে না। আর এসব নতুন তত্ত্ব ও ধারণা লাভ করা সম্ভব হয় গবেষণার মাধ্যমে। যে কোনো ব্যক্তি তার নিজের দক্ষতা অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা করে সেসব পত্রিকা, বই বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। শিক্ষকতা পেশায় গবেষণা ও প্রকাশনার সুযোগ অনেক বেশি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সারা পৃথিবীতে গবেষণা কর্মকা- পরিচালিত হয় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমেই। অনেকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই গবেষণা। আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পড়ালেখা ও গবেষণার জায়গায় হবে এটা দেশ ও জাতীর প্রত্যাশা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ধরে রাখতে হলে প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে হবে। স্বচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীদের খুঁজে বের করে নিয়োগ দেয়া উচিত। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের জন্য গবেষণা ও প্রকাশনায় এগিয়ে থাকা শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। প্রয়োজন আলাদা শিক্ষা কমিশন ও পে-স্কেল। মনে রাখতে হবে শিক্ষার মৌলিক পরিবর্তন না হলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও নৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]