প্রীতি রাহা
যত পড়বেন ততই জানবেন। জানার কোন শেষ নেই। বইয়ের চেয়ে বড় কোন বন্ধু নেই। তাই তো অনেকেই নিজেদের মানসিক কষ্টের সময় বইকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকেন।
বই পড়ার জন্য সঠিক সময় বের করে নিতে হবে। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার মাঝে ভালো সময় বের করতে না পারলে, সেই সময়টি বই পড়ার জন্য উপযুক্ত সময় নয়। বই পড়ার জন্য একটু আলাদা সময় বের করতে হবে যাতে করে পূর্ণ মনোযোগ বই পড়ার দিকে দেয়া যায়। বই শুধু পরার জন্য পড়া নয়; পড়তে হবে মনে রাখার মতো করে। পড়তে যেয়ে নতুন কোন শব্দ পেলে , তা অভিধান ঘেঁটে বের কওে জেনে রাখতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ছোট থেকেই বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে শিশুদের দূরে রাখতে বই-ই হতে পারে তার একমাত্র সঙ্গী। শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাকে তার বয়স উপযোগী বই এনে দিতে হবে।
বই পড়া কোন সৌখিনতা নয় বরং এর রয়েছে অনেক উপকারিতাও। এক নজরে জেনে নেয়া যাক বই পড়ার উপকারিতাসমূহ-
১) মানুষের জীবনে জানার শেষ নেই। একটি ভালো বই থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন। সাথে সাথে অনেক কিছু শিখতেও পারবেন।
২) বই পড়লে মানুষের শব্দভান্ডারের বিস্তৃতি ঘটে। বিভিন্ন বই পড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষাও রপ্ত করা যায়।
৩) দেহের অন্যান্য অঙ্গ-পতঙ্গের মতো মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম আছে। জানেন কি? উত্তর হবে বইপড়া। প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে এবং আরোও সক্রিয় হবে।
৪) একটি গবেষণায় দেখা গেছে- বই পড়লে দুটি মানসিক রোগ ‘আলঝাইমার’ ও ‘ডিমেনশিয়া’-এর মতো রোগের প্রক্রিয়া ধীর হয়।
৫) নিয়মিত বই পড়লে মনোযোগ বাড়ে। বই পড়া মেডিটেশনের মতো কাজ করে। মানসিক চাপ কমাতে বই পড়ার অনেক গুরুত্ব আছে। এই অভ্যাসের ফলে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তিও মেলে।
৬) বই পড়া স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করে। এটি পাঠককে চিন্তাশীল করে তোলে। এই বই পড়া নামক দক্ষতাটি লেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একজন ভালো পাঠকই একদিন হয়ে ওঠে একজন ভালো লেখক।
৭) বই মানুষকে উদার করে। মনকে খোলা আকাশের মতো বিশাল করে তোলে। ‘রিডার্স ব্লক’ এই নাম শুনেছেন? এটি পাঠকদের হয়। এই সমস্যা হলে একজন পাঠক যতই বইপ্রেমী হন না কেন তিনি বই পড়তে পারেন না আগের মতো। জীবনের কোন না কোন সময় পাঠককে এই দুরূহ সময়টি পাড় করতে হয়। ‘রিডার্স ব্লক’-এর মতো সমস্যার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কারণে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- যদি আপনি ব্যক্তিগত সমস্যায় ভোগেন কিংবা একই ধাঁচের বই টানা পড়তে থাকলে। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বই একটানা কয়েকটা পড়লে একই রকল গল্পের ধাঁচে মন পড়ে যায় এবং একঘেয়ে ভাব এসে যায়।
‘রিডার্স ব্লক’ থেকে মুক্তি পেতে হলে সমস্যাটি আগে চিহ্নিত করা জরুরি। তারপর তড়িঘড়ি না কওে নিজেকে সময় দিতে হবে। মনের ওপর জোর করা চলবে না। কমপক্ষে এক থেকে দুইদিন বিরতি নিন। বই পড়াকে উপভোগ না করে কাজ মনে করা যাবে না। ‘রিডার্স ব্লক’ থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে প্রথমেই উপন্যাস নিয়ে পড়তে বসবেন না। ছোট কোন লেখার মাধ্যমে পড়ার অভ্যস্ততা আবার ফিরিয়ে আনুন। এজন্য পুরোনো কোন বই আবার নতুন করে পড়তে পারেন। নিজেকে সময় দিন।
বই এখন শুধু পড়ার মাধ্যম নয় বরং শোনার মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে। অডিও বুক এই নতুনত্ব এনেছে। এই মাধ্যমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে একটু সময় কওে শ্রোতা একটি মুঠোফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপের সাহায্যে শুনে নেন প্রিয় কোন লেখকের লেখনী। কিন্তু অডিও বুক-এর মাধ্যমে বইয়ের পাঠ শোনাকে অনেকেই পছন্দ করেন না। তাদের মতে, এতে পাঠকদের বই পড়ার অভ্যাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, কাগজের বইয়ের যে আবেদন তা বই শোনাতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের দেশে এখন বেশ জনপ্রিয় ‘ই-বুক রিডার’। মুঠোফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপের মাধ্যমে পাঠকেরা ছাপা কাগজের মতো বই পড়তে পারেন। অনেকে অবশ্য মনে করেন এতে চোখের ক্ষতি হয়। অনেকে আবার ভাবেন বই ছুঁয়ে না পড়লে বয় পড়া হয় না। একেক জনের একেক রকম মতামত। তবুও এই ভেবে শান্তি যে, কাগজের বই হোক কিংবা ই-বুক রিডারের মাধ্যমে বই তো পড়া হয়।
একজন মানুষ ভালো পাঠক হতে পারলে, হতে পারবেন একজন ভালো লেখকও। শুধু সময় দিয়ে একাগ্র চিত্তে কাজগুলো করতে হবে। এখন যারা শিশু তারা যদি বইয়ের ওপর টান অনুভব করে জ্ঞান আহরণ করে তবে তাদের মধ্যে থেকেই সৃষ্টি হবে একজন ভালো লেখকের।
[লেখক : প্রাবন্ধিক]
প্রীতি রাহা
শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫
যত পড়বেন ততই জানবেন। জানার কোন শেষ নেই। বইয়ের চেয়ে বড় কোন বন্ধু নেই। তাই তো অনেকেই নিজেদের মানসিক কষ্টের সময় বইকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকেন।
বই পড়ার জন্য সঠিক সময় বের করে নিতে হবে। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার মাঝে ভালো সময় বের করতে না পারলে, সেই সময়টি বই পড়ার জন্য উপযুক্ত সময় নয়। বই পড়ার জন্য একটু আলাদা সময় বের করতে হবে যাতে করে পূর্ণ মনোযোগ বই পড়ার দিকে দেয়া যায়। বই শুধু পরার জন্য পড়া নয়; পড়তে হবে মনে রাখার মতো করে। পড়তে যেয়ে নতুন কোন শব্দ পেলে , তা অভিধান ঘেঁটে বের কওে জেনে রাখতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ছোট থেকেই বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে শিশুদের দূরে রাখতে বই-ই হতে পারে তার একমাত্র সঙ্গী। শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাকে তার বয়স উপযোগী বই এনে দিতে হবে।
বই পড়া কোন সৌখিনতা নয় বরং এর রয়েছে অনেক উপকারিতাও। এক নজরে জেনে নেয়া যাক বই পড়ার উপকারিতাসমূহ-
১) মানুষের জীবনে জানার শেষ নেই। একটি ভালো বই থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন। সাথে সাথে অনেক কিছু শিখতেও পারবেন।
২) বই পড়লে মানুষের শব্দভান্ডারের বিস্তৃতি ঘটে। বিভিন্ন বই পড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষাও রপ্ত করা যায়।
৩) দেহের অন্যান্য অঙ্গ-পতঙ্গের মতো মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম আছে। জানেন কি? উত্তর হবে বইপড়া। প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে এবং আরোও সক্রিয় হবে।
৪) একটি গবেষণায় দেখা গেছে- বই পড়লে দুটি মানসিক রোগ ‘আলঝাইমার’ ও ‘ডিমেনশিয়া’-এর মতো রোগের প্রক্রিয়া ধীর হয়।
৫) নিয়মিত বই পড়লে মনোযোগ বাড়ে। বই পড়া মেডিটেশনের মতো কাজ করে। মানসিক চাপ কমাতে বই পড়ার অনেক গুরুত্ব আছে। এই অভ্যাসের ফলে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তিও মেলে।
৬) বই পড়া স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করে। এটি পাঠককে চিন্তাশীল করে তোলে। এই বই পড়া নামক দক্ষতাটি লেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একজন ভালো পাঠকই একদিন হয়ে ওঠে একজন ভালো লেখক।
৭) বই মানুষকে উদার করে। মনকে খোলা আকাশের মতো বিশাল করে তোলে। ‘রিডার্স ব্লক’ এই নাম শুনেছেন? এটি পাঠকদের হয়। এই সমস্যা হলে একজন পাঠক যতই বইপ্রেমী হন না কেন তিনি বই পড়তে পারেন না আগের মতো। জীবনের কোন না কোন সময় পাঠককে এই দুরূহ সময়টি পাড় করতে হয়। ‘রিডার্স ব্লক’-এর মতো সমস্যার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কারণে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- যদি আপনি ব্যক্তিগত সমস্যায় ভোগেন কিংবা একই ধাঁচের বই টানা পড়তে থাকলে। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বই একটানা কয়েকটা পড়লে একই রকল গল্পের ধাঁচে মন পড়ে যায় এবং একঘেয়ে ভাব এসে যায়।
‘রিডার্স ব্লক’ থেকে মুক্তি পেতে হলে সমস্যাটি আগে চিহ্নিত করা জরুরি। তারপর তড়িঘড়ি না কওে নিজেকে সময় দিতে হবে। মনের ওপর জোর করা চলবে না। কমপক্ষে এক থেকে দুইদিন বিরতি নিন। বই পড়াকে উপভোগ না করে কাজ মনে করা যাবে না। ‘রিডার্স ব্লক’ থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে প্রথমেই উপন্যাস নিয়ে পড়তে বসবেন না। ছোট কোন লেখার মাধ্যমে পড়ার অভ্যস্ততা আবার ফিরিয়ে আনুন। এজন্য পুরোনো কোন বই আবার নতুন করে পড়তে পারেন। নিজেকে সময় দিন।
বই এখন শুধু পড়ার মাধ্যম নয় বরং শোনার মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে। অডিও বুক এই নতুনত্ব এনেছে। এই মাধ্যমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে একটু সময় কওে শ্রোতা একটি মুঠোফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপের সাহায্যে শুনে নেন প্রিয় কোন লেখকের লেখনী। কিন্তু অডিও বুক-এর মাধ্যমে বইয়ের পাঠ শোনাকে অনেকেই পছন্দ করেন না। তাদের মতে, এতে পাঠকদের বই পড়ার অভ্যাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, কাগজের বইয়ের যে আবেদন তা বই শোনাতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের দেশে এখন বেশ জনপ্রিয় ‘ই-বুক রিডার’। মুঠোফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপের মাধ্যমে পাঠকেরা ছাপা কাগজের মতো বই পড়তে পারেন। অনেকে অবশ্য মনে করেন এতে চোখের ক্ষতি হয়। অনেকে আবার ভাবেন বই ছুঁয়ে না পড়লে বয় পড়া হয় না। একেক জনের একেক রকম মতামত। তবুও এই ভেবে শান্তি যে, কাগজের বই হোক কিংবা ই-বুক রিডারের মাধ্যমে বই তো পড়া হয়।
একজন মানুষ ভালো পাঠক হতে পারলে, হতে পারবেন একজন ভালো লেখকও। শুধু সময় দিয়ে একাগ্র চিত্তে কাজগুলো করতে হবে। এখন যারা শিশু তারা যদি বইয়ের ওপর টান অনুভব করে জ্ঞান আহরণ করে তবে তাদের মধ্যে থেকেই সৃষ্টি হবে একজন ভালো লেখকের।
[লেখক : প্রাবন্ধিক]