alt

উপ-সম্পাদকীয়

নারীর অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন

রুবাইয়াৎ ফেরদৌস

: রোববার, ০৯ মার্চ ২০২৫

বেগম রোকেয়া বলেছেনÑ ‘যে জাতি নারীকে অবজ্ঞা করে সে জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না।’ বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই বলেছেনÑ ‘আমরা সবাই সফল হতে পারব না, যদি আমাদের অর্ধেককে পিছিয়ে রাখা হয়।’

এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলোÑ ‘অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন- নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’ এ দিনটি শুধু উদযাপনের জন্য নয়, বরং নারীদের জীবনমান উন্নত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও সময়।

নারী দিবসের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট : আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা ১৯০৮ সালে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পনের হাজার নারী শ্রমিক তাদের কর্মস্থলে ন্যায্য মজুরি, কর্মঘণ্টা কমানো এবং ভোটাধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এরপর ১৯০৯ সালে আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় নারী দিবস’ পালন করে। তবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আসে ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, যেখানে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেতা ক্লারা জেটকিন নারী দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯১১ সালে প্রথমবার অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ (ইউএনও) এই দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৭৭ সালে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নারী অধিকার ও সমতার লক্ষ্যে এই দিনটি পালনের আহ্বান জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য বহুমাত্রিক। এটি শুধু নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দিন নয়, বরং নারীদের অধিকার রক্ষা, সমান সুযোগ তৈরি, লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ে ফিরে আসি। এবারের প্রতিপাদ্য হলোÑ ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন- সকল নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’ এ নিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে পুরো সমাজের কাছে ছোট ছোট কয়েকটা প্রশ্ন, কিন্তু অর্থপূর্ণ প্রশ্ন আমি ছুড়ে দিতে চাই। আমাদের গুরুজনরা, মনীষী-মহীয়সীরা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা ও সুযোগ তৈরি করে দিয়ে গেছেন যদিওÑ তবুও আমরা এখনো কেন লড়াই করেই যাচ্ছি? এখনো শত শত মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে যৌতুকের জন্য নির্যাতিত। কেন? এখনও কেন তাদের পাতে মাছের লেজটাই নিয়ম করে জোটে? এখনও কেন পাবলিক প্লেসে হেনস্তার শিকার হতে হয়? এখনও মার্জিতভাবে চললেও নোংরা দৃষ্টির ছোবলে সর্বদা কুঁচকে থাকতে হয়। কেন? নারী প্রতিষ্ঠিত হলেও শুনতে হয়Ñ ‘ও নিশ্চয়ই কুপথে রোজগার করে’। কেন? এখনো নারী কেন পরিচয় সংকটে ভোগে? এখনও নারী সমাজের বেশির ভাগই বিষণœতার রোগী। কেন? এখনো নারী ‘কোনটা তোমার আসল বাড়ি’- এই প্রশ্নে ঘুরপাক খায়? এখনো নারী মানেই রান্নাঘর। কেন? এখনো নারী- ‘কে আমার আপন’Ñ খুঁজতে খুঁজতে হয়রান?

এখনও কেন পরিবারের কোনো সিদ্ধান্তের বৈঠকে ঠাঁয় হয় না? সিদ্ধান্ত দেয়ার কণ্ঠ দিতে পারে না? অধিকার তার নেই। কেন? এখনও নারী টক্সিক ম্যারাইটাল লাইফেও আতঙ্কগ্রস্ত, আবার ডিভোর্সের পরেও আতঙ্কগ্রস্ত? বিয়ের পর আতঙ্ক, স্বামী যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয়! আবার ডিভোর্সের পরেও আতঙ্ক, সমাজ যদি আমাকেই দোষারোপ করে যে, আমিই খারাপ তাই সংসার টেকাতে পারিনি? সব ক্ষেত্রেই এখনও কেন নারীর দোষ? শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের পদে পদে বাধা। কেন? কেন বেতনবৈষম্য? কেন চাকরির সুযোগের অভাব? পারিবারিক ও সামাজিক গোঁড়ামি-কেন? মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।

কেন? এ প্রশ্নগুলোর বাইরেও হাজার হাজার প্রশ্ন নিয়ে আজও আমাদের নারীসমাজ যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধের অবসান এখন সময়ের দাবি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, নারী কোন একক পরিচয়ে সীমাবদ্ধ ননÑ তিনি একাধারে মা, মেয়ে, স্ত্রী, বোন, কর্মী, নেতা, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড়, স্বপ্নদ্রষ্টা ও সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত। শিক্ষা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, রাজনীতি, ব্যবসা, ক্রীড়া সবক্ষেত্রে নারীরা সফলতার গল্প লিখেছেন। বেগম রোকেয়া থেকে মালালা ইউসুফজাই, মেরি কুরি থেকে কাল্পনা চাওলা তারা প্রমাণ করেছেন যে, নারী এগিয়ে গেলে সমাজও এগিয়ে যায়।

বিশ্বখ্যাত লেখিকা মায়া এঞ্জেলু বলেছেনÑ ‘প্রতিবার একজন নারী যখন নিজের জন্য দাঁড়ায়, তখন তিনি সকল নারীর জন্যেও দাঁড়ায়।’

কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’

কবি সুফিয়া কামাল বলেছেন তার ‘আমি নারী’ কবিতায়- ‘আমি সেই নারী- যে জগতের আলো আঁধারে আপন শক্তিতে জ্বলে, আমি সেই নারী- যে প্রেম, সাহস, শক্তি, ভালোবাসায় অনড় ও অমলিন।’

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এখনো অনেক নারীবৈষম্যের, নির্যাতনের, বেতনবৈষম্য, সুযোগ ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার। আজকের এই দিবসে আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করিÑ নারীর কণ্ঠকে গুরুত্ব দিব, নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করব, নারী স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে সম্মান করব। আসুন আমরা কোন বাধার দেয়ালে থেমে না যাই, বরং সেই দেয়াল ভেঙে নতুন পথ তৈরি করি। কারণ নারী হলো শক্তি, নারী হলো সাহস, নারী হলো আগামী দিনের স্বপ্নদ্রষ্টা। নারী যখন নিজের শক্তি বুঝতে পারে, তখন সে পুরো বিশ্ব বদলে দিতে পারে। ওইদিন খুব তাড়াতাড়িই আসবে যেদিন সমতা, ক্ষমতা আর অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে না। ওই নতুন পথে আলোকিত হয়ে নারী-পুরুষ সবাই হাঁটব। দেশ ও জাতিকে উন্নত করব।

[লেখক : মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি বিভাগ, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল]

ছবি

উন্নত বিশ্বের নাগরিকত্ব ও দুর্নীতি

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির নিচে ছাত্র

আদালতের ভেতরে ভিডিও ধারণের আইনি দিক

আইনের শাসন না গণপিটুনি?

নারীর ভূমি ও কৃষি অধিকার : ন্যায়বিচারের পথে কতদূর?

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের হালচাল

জনতুষ্টিবাদীরা এগিয়ে আছে যেদিক থেকে

ভিক্ষাবৃত্তি : প্রয়োজন নাকি পেশা?

ছবি

বিনিময় কৌশল নাকি বাণিজ্য যুদ্ধ?

শিশু আদালতের বিচার-প্রক্রিয়ার আইনি ও বাস্তবিক দিক

জনদুর্ভোগের অপসংস্কৃতি ও জনশিক্ষা : আগামীর দিকনির্দেশনা

প্রসঙ্গ : নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি

হরিজনদের পদবি : ঐক্যের পথে বাধা

এল নিনো : দেশের কৃষির চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

আর কীভাবে আর্জি জানালে নিরাপত্তা পাওয়া যায়?

স্বপ্ন ভাঙল সাঁওতাল মুংলু বেসরার

কোনো স্কুলই খারাপ না

ঢাকার যানজটের টেকসই সমাধান কী

বই কেন পড়বেন

ডায়াবেটিসের জটিলতা বাড়ায় তামাক ও ধূমপান

জাতীয় বিমা দিবস

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থা

ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়া ভুল হয়ে থাকলে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা সঠিক ছিল!

শিক্ষার গুণগত মান পরিবর্তনে শিক্ষকের মূল্যায়ন

দেশে প্রোগ্রামিংয়ের চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা

তর্কে সময়, সামর্থ্য এবং শক্তির অপচয় রোধ করুন

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও দেশপ্রেমে জাতীয় অগ্রগতি

শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রাথমিকের লেখাপড়ায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে

ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংস্কার

বই পড়ে কী হবে

জনস্বাস্থ্যের আরেক আতঙ্কের নাম ডিমেনশিয়া

ভারতে সঙ্ঘের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

রম্যগদ্য : “বঙ্গ হবে কলিঙ্গ”

আদিবাসী ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ নিন

ছবি

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও চেতনার অন্বেষণে

প্রযুক্তি, জলবায়ু ও জনসংখ্যার মোকাবিলায় উন্নয়নশীল অর্থনীতির

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নারীর অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন

রুবাইয়াৎ ফেরদৌস

রোববার, ০৯ মার্চ ২০২৫

বেগম রোকেয়া বলেছেনÑ ‘যে জাতি নারীকে অবজ্ঞা করে সে জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না।’ বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই বলেছেনÑ ‘আমরা সবাই সফল হতে পারব না, যদি আমাদের অর্ধেককে পিছিয়ে রাখা হয়।’

এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলোÑ ‘অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন- নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’ এ দিনটি শুধু উদযাপনের জন্য নয়, বরং নারীদের জীবনমান উন্নত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও সময়।

নারী দিবসের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট : আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা ১৯০৮ সালে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পনের হাজার নারী শ্রমিক তাদের কর্মস্থলে ন্যায্য মজুরি, কর্মঘণ্টা কমানো এবং ভোটাধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এরপর ১৯০৯ সালে আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় নারী দিবস’ পালন করে। তবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আসে ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, যেখানে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেতা ক্লারা জেটকিন নারী দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯১১ সালে প্রথমবার অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ (ইউএনও) এই দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৭৭ সালে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নারী অধিকার ও সমতার লক্ষ্যে এই দিনটি পালনের আহ্বান জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য বহুমাত্রিক। এটি শুধু নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দিন নয়, বরং নারীদের অধিকার রক্ষা, সমান সুযোগ তৈরি, লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ে ফিরে আসি। এবারের প্রতিপাদ্য হলোÑ ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন- সকল নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’ এ নিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে পুরো সমাজের কাছে ছোট ছোট কয়েকটা প্রশ্ন, কিন্তু অর্থপূর্ণ প্রশ্ন আমি ছুড়ে দিতে চাই। আমাদের গুরুজনরা, মনীষী-মহীয়সীরা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা ও সুযোগ তৈরি করে দিয়ে গেছেন যদিওÑ তবুও আমরা এখনো কেন লড়াই করেই যাচ্ছি? এখনো শত শত মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে যৌতুকের জন্য নির্যাতিত। কেন? এখনও কেন তাদের পাতে মাছের লেজটাই নিয়ম করে জোটে? এখনও কেন পাবলিক প্লেসে হেনস্তার শিকার হতে হয়? এখনও মার্জিতভাবে চললেও নোংরা দৃষ্টির ছোবলে সর্বদা কুঁচকে থাকতে হয়। কেন? নারী প্রতিষ্ঠিত হলেও শুনতে হয়Ñ ‘ও নিশ্চয়ই কুপথে রোজগার করে’। কেন? এখনো নারী কেন পরিচয় সংকটে ভোগে? এখনও নারী সমাজের বেশির ভাগই বিষণœতার রোগী। কেন? এখনো নারী ‘কোনটা তোমার আসল বাড়ি’- এই প্রশ্নে ঘুরপাক খায়? এখনো নারী মানেই রান্নাঘর। কেন? এখনো নারী- ‘কে আমার আপন’Ñ খুঁজতে খুঁজতে হয়রান?

এখনও কেন পরিবারের কোনো সিদ্ধান্তের বৈঠকে ঠাঁয় হয় না? সিদ্ধান্ত দেয়ার কণ্ঠ দিতে পারে না? অধিকার তার নেই। কেন? এখনও নারী টক্সিক ম্যারাইটাল লাইফেও আতঙ্কগ্রস্ত, আবার ডিভোর্সের পরেও আতঙ্কগ্রস্ত? বিয়ের পর আতঙ্ক, স্বামী যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয়! আবার ডিভোর্সের পরেও আতঙ্ক, সমাজ যদি আমাকেই দোষারোপ করে যে, আমিই খারাপ তাই সংসার টেকাতে পারিনি? সব ক্ষেত্রেই এখনও কেন নারীর দোষ? শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের পদে পদে বাধা। কেন? কেন বেতনবৈষম্য? কেন চাকরির সুযোগের অভাব? পারিবারিক ও সামাজিক গোঁড়ামি-কেন? মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।

কেন? এ প্রশ্নগুলোর বাইরেও হাজার হাজার প্রশ্ন নিয়ে আজও আমাদের নারীসমাজ যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধের অবসান এখন সময়ের দাবি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, নারী কোন একক পরিচয়ে সীমাবদ্ধ ননÑ তিনি একাধারে মা, মেয়ে, স্ত্রী, বোন, কর্মী, নেতা, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড়, স্বপ্নদ্রষ্টা ও সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত। শিক্ষা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, রাজনীতি, ব্যবসা, ক্রীড়া সবক্ষেত্রে নারীরা সফলতার গল্প লিখেছেন। বেগম রোকেয়া থেকে মালালা ইউসুফজাই, মেরি কুরি থেকে কাল্পনা চাওলা তারা প্রমাণ করেছেন যে, নারী এগিয়ে গেলে সমাজও এগিয়ে যায়।

বিশ্বখ্যাত লেখিকা মায়া এঞ্জেলু বলেছেনÑ ‘প্রতিবার একজন নারী যখন নিজের জন্য দাঁড়ায়, তখন তিনি সকল নারীর জন্যেও দাঁড়ায়।’

কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’

কবি সুফিয়া কামাল বলেছেন তার ‘আমি নারী’ কবিতায়- ‘আমি সেই নারী- যে জগতের আলো আঁধারে আপন শক্তিতে জ্বলে, আমি সেই নারী- যে প্রেম, সাহস, শক্তি, ভালোবাসায় অনড় ও অমলিন।’

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এখনো অনেক নারীবৈষম্যের, নির্যাতনের, বেতনবৈষম্য, সুযোগ ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার। আজকের এই দিবসে আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করিÑ নারীর কণ্ঠকে গুরুত্ব দিব, নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করব, নারী স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে সম্মান করব। আসুন আমরা কোন বাধার দেয়ালে থেমে না যাই, বরং সেই দেয়াল ভেঙে নতুন পথ তৈরি করি। কারণ নারী হলো শক্তি, নারী হলো সাহস, নারী হলো আগামী দিনের স্বপ্নদ্রষ্টা। নারী যখন নিজের শক্তি বুঝতে পারে, তখন সে পুরো বিশ্ব বদলে দিতে পারে। ওইদিন খুব তাড়াতাড়িই আসবে যেদিন সমতা, ক্ষমতা আর অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে না। ওই নতুন পথে আলোকিত হয়ে নারী-পুরুষ সবাই হাঁটব। দেশ ও জাতিকে উন্নত করব।

[লেখক : মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি বিভাগ, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল]

back to top