alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্ব বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস

বাবুল রবিদাস

: শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

২১ মার্চ আন্তর্জাতিক “বর্ণবৈষম্য বিলোপ” দিবস। বিশ্বজুড়ে এ দিবস পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য হলো জন্ম বা পেশার কারণে কাউকে বড়-ছোট না ভাবা এবং ত্বকের রঙের জন্য কাউকে অস্পৃশ্য বা নীচু না মনে করা।

বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায় বাস করে। এর মধ্যে অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীÑ যেমন মুচি, ঋষি, ডোম, হেলা, লালবেগী, বাল্মিকী, শব্দকর, বেহারা, বেদে, কাওরা, জলদাস, নিকারি, শিকারি, চৌদালি, দাই, হাজাম, শাহজি, তেলি, ধোপা, মানতা, নাগারচি, নমঃশূদ্র, সাঁওতাল, উড়াও, মালো প্রভৃতিÑ বঞ্চনার শিকার। পত্রিকায় প্রায়ই তাদের অস্পৃশ্যতা ও বৈষম্যের কথা প্রকাশ পায়।

অনেকে তথাকথিত ‘সভ্য’ সমাজে তাদের বসতে দেয় না। ফলে তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা এলাকায় বাস করে। “পাবলিক স্পেস” ব্যবহারের সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত। হোটেলে সবার খাওয়ার অধিকার থাকলেও দলিতদের জন্য আলাদা বা নিম্নমানের গ্লাস-প্লেট ব্যবহার করা হয়। স্কুলে তাদের সন্তানরা সহপাঠীদের তাচ্ছিল্যের শিকার হয়। সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাদের দূরে রাখা হয়।

কবির ভাষায় বলতে চাই:

“কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশি বিষে দংশেনী যারে?”

অর্থাৎ, বৈষম্যের ব্যথা যে অনুভব করেছে, সেই বোঝে এর তীব্রতা।

দলিত ‘রবিদাস’ সম্প্রদায় কাঁচা চামড়াকে পাকা চামড়ায় রূপান্তরের কৌশল আবিষ্কার করলেও তাদের “চামার”, “মুচি” বলে অসম্মান করা হয়। মুচিপাড়া, ঋষিপাড়া, মেথরপট্টি, ডোমপাড়াÑ এসব নামে ডাকা হয় ঘৃণার সঙ্গে। অথচ হরিজনরা পরিচ্ছন্নতার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন, কিন্তু তাদের মজুরি কম। ফলে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, এবং তাদের সন্তানরা বংশানুক্রমে এ পেশায় আটকে থাকে।

শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে বর্ণবৈষম্য চলছে। পেশা ও জাতের কারণে এই বৈষম্য যুগ যুগ ধরে প্রবাহিত। ফলে দলিত-বঞ্চিতরা সমাজের মূলধারায় আসতে পারছে না। এই অবকাঠামো তাদের দারিদ্র্য ও অজ্ঞতায় রেখেছে। তাই বলা হয়, ‘কাউকে পেছনে ফেলে উন্নয়ন নয়।’

দলিতদের মূলধারায় আনতে হবে। সমাজে সমতার পরিবেশ গড়তে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে জাত-পাত, ধর্ম বা পেশা দিয়ে মানুষের মূল্যায়ন অচল। মানবতাই এখন মূল মাপকাঠি। বৈষম্য দূর করতে নিম্নলিখিত দাবি তুলে ধরছি:

দলিতদের প্রতি সব বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতা বন্ধ করতে হবে।

অস্পৃশ্যতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করতে হবে।

মানবাধিকার কমিশনে দলিতদের অধিকার নিয়ে বিশেষ সেল গঠন করতে হবে।

নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকারে দলিতদের জন্য বিশেষ শাখা গঠন করতে হবে।

শিক্ষিত দলিত তরুণ-তরুণীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় বাজেটে দলিতদের উন্নয়নে বরাদ্দ দিতে হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দলিতদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

দলিত পল্লীতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় দলিতদের বসবাসের জায়গা আধুনিক ও স্থায়ী করতে হবে।

ভূমিহীন দলিতদের জন্য খাস জমি বরাদ্দ দিতে হবে।

দলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলিতদের জন্য কোটা চালু রাখতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোতে দলিতদের নির্দিষ্ট হারে অন্তর্ভুক্তির আইন করতে হবে।

[লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্ব বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস

বাবুল রবিদাস

শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

২১ মার্চ আন্তর্জাতিক “বর্ণবৈষম্য বিলোপ” দিবস। বিশ্বজুড়ে এ দিবস পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য হলো জন্ম বা পেশার কারণে কাউকে বড়-ছোট না ভাবা এবং ত্বকের রঙের জন্য কাউকে অস্পৃশ্য বা নীচু না মনে করা।

বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায় বাস করে। এর মধ্যে অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীÑ যেমন মুচি, ঋষি, ডোম, হেলা, লালবেগী, বাল্মিকী, শব্দকর, বেহারা, বেদে, কাওরা, জলদাস, নিকারি, শিকারি, চৌদালি, দাই, হাজাম, শাহজি, তেলি, ধোপা, মানতা, নাগারচি, নমঃশূদ্র, সাঁওতাল, উড়াও, মালো প্রভৃতিÑ বঞ্চনার শিকার। পত্রিকায় প্রায়ই তাদের অস্পৃশ্যতা ও বৈষম্যের কথা প্রকাশ পায়।

অনেকে তথাকথিত ‘সভ্য’ সমাজে তাদের বসতে দেয় না। ফলে তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা এলাকায় বাস করে। “পাবলিক স্পেস” ব্যবহারের সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত। হোটেলে সবার খাওয়ার অধিকার থাকলেও দলিতদের জন্য আলাদা বা নিম্নমানের গ্লাস-প্লেট ব্যবহার করা হয়। স্কুলে তাদের সন্তানরা সহপাঠীদের তাচ্ছিল্যের শিকার হয়। সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাদের দূরে রাখা হয়।

কবির ভাষায় বলতে চাই:

“কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশি বিষে দংশেনী যারে?”

অর্থাৎ, বৈষম্যের ব্যথা যে অনুভব করেছে, সেই বোঝে এর তীব্রতা।

দলিত ‘রবিদাস’ সম্প্রদায় কাঁচা চামড়াকে পাকা চামড়ায় রূপান্তরের কৌশল আবিষ্কার করলেও তাদের “চামার”, “মুচি” বলে অসম্মান করা হয়। মুচিপাড়া, ঋষিপাড়া, মেথরপট্টি, ডোমপাড়াÑ এসব নামে ডাকা হয় ঘৃণার সঙ্গে। অথচ হরিজনরা পরিচ্ছন্নতার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন, কিন্তু তাদের মজুরি কম। ফলে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, এবং তাদের সন্তানরা বংশানুক্রমে এ পেশায় আটকে থাকে।

শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে বর্ণবৈষম্য চলছে। পেশা ও জাতের কারণে এই বৈষম্য যুগ যুগ ধরে প্রবাহিত। ফলে দলিত-বঞ্চিতরা সমাজের মূলধারায় আসতে পারছে না। এই অবকাঠামো তাদের দারিদ্র্য ও অজ্ঞতায় রেখেছে। তাই বলা হয়, ‘কাউকে পেছনে ফেলে উন্নয়ন নয়।’

দলিতদের মূলধারায় আনতে হবে। সমাজে সমতার পরিবেশ গড়তে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে জাত-পাত, ধর্ম বা পেশা দিয়ে মানুষের মূল্যায়ন অচল। মানবতাই এখন মূল মাপকাঠি। বৈষম্য দূর করতে নিম্নলিখিত দাবি তুলে ধরছি:

দলিতদের প্রতি সব বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতা বন্ধ করতে হবে।

অস্পৃশ্যতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করতে হবে।

মানবাধিকার কমিশনে দলিতদের অধিকার নিয়ে বিশেষ সেল গঠন করতে হবে।

নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকারে দলিতদের জন্য বিশেষ শাখা গঠন করতে হবে।

শিক্ষিত দলিত তরুণ-তরুণীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় বাজেটে দলিতদের উন্নয়নে বরাদ্দ দিতে হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দলিতদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

দলিত পল্লীতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় দলিতদের বসবাসের জায়গা আধুনিক ও স্থায়ী করতে হবে।

ভূমিহীন দলিতদের জন্য খাস জমি বরাদ্দ দিতে হবে।

দলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলিতদের জন্য কোটা চালু রাখতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোতে দলিতদের নির্দিষ্ট হারে অন্তর্ভুক্তির আইন করতে হবে।

[লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]

back to top