এসডি সুব্রত
জগৎজ্যোতি দাস
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবের ইতিহাস, আমাদের অস্তিত্বের ইতিহাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সাহসের ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল এদেশের মুক্তিকামী জনতা। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাদের মধ্যে অন্যতম জগৎজ্যোতি দাস। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যারা হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওর পারের অকুতোভয় সন্তান মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের কাছে জগৎজ্যোতি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। নিজস্ব পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনাকারী এই দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধার কাছে অসম্ভব বলে কিছুই ছিল না। অবলীলায় হাসিমুখে বন্দুকের পথে পড়তে পারতেন তিনি। দাস পার্টির আক্রমণের তীব্রতায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার। দাস পার্টি নৌপথে এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে, তারা কখনো কখনো দিনে আট-নয়টি কার্গো-কনভয়ও ডুবিয়েছে বা ধ্বংস করেছে।
একের পর এক ভাটির জনপদকে হানাদারমুক্ত করে জগৎজ্যোতি দাস যুদ্ধের ময়দানে হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি। যেদিন তিনি শহীদ হন, সেদিনও তার নির্ভুল নিশানায় প্রাণ হারায় ১২ জন পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযুদ্ধে জগৎজ্যোতির অসামান্য অবদান সর্বজনবিদিত। কিন্তু তিনি নীরবে ঝরে পড়া নক্ষত্রের মতো বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছেন ইতিহাসের পাতা থেকে।
১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জগৎজ্যোতি দাস। তার পিতার নাম জিতেন্দ্র চন্দ্র দাস এবং মাতার নাম হরিমতি দাস। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। সংসারে ছিল অভাব-অনটন। পাঁচ বছর বয়সে তাকে ভর্তি করা হয় জলসুখা গ্রামের তৎকালীন এম.ই. স্কুলে, যা পরবর্তীতে জলসুখা প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। নম্র স্বভাবের জন্য স্কুলে সবার কাছে প্রিয় ছিলেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে স্থানীয় বিরাট গ্রামের বীরচরণ হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পড়াশোনার সময় শরীফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে স্থানীয় ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বামধারার রাজনীতিবিদদের নজরে আসেন।
ম্যাট্রিক পাসের পর অভাবের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তার কাকা ননী গোপাল দাস, যিনি আসামে চাকরি করতেন, তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। কাকার কাছে আসামে গিয়ে নওগাঁ কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। কাকার মৃত্যুর পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজে ভর্তির চেষ্টা করেও টাকার অভাবে ব্যর্থ হন। পরে মাসিক পঁচাত্তর টাকা বেতনে জলসুখা কৃষ্ণগোবিন্দ পাবলিক হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতার টাকা জমিয়ে সুনামগঞ্জ কলেজে বি.এতে ভর্তি হন।
রণাঙ্গনে জগৎজ্যোতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে ছিলেন সাক্ষাৎ যমদূত। হাওর অঞ্চলে তার প্রতিষ্ঠিত দাস পার্টি মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদারদের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। তার বাহিনীর অপারেশন পাক সেনাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ভারতের মেঘালয়ের প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। এর আগে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে নওগাঁ কলেজে পড়ার সময় নকশালপন্থিদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, তাই অস্ত্র ও গোলাবারুদ সম্পর্কে তার মোটামুটি ধারণা ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে গণযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘দাস পার্টি’ নামের এক দুর্ধর্ষ বাহিনী।
জগৎজ্যোতি ইংরেজি, হিন্দি ও গৌহাটির আঞ্চলিক ভাষা জানতেন, ফলে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারতীয় বাহিনী থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। অমিত বীরত্বে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলে একের পর এক অপারেশন চালান। সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে বিস্তীর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রুমুক্ত রাখার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ হানাদারমুক্ত রাখতে তিনি অসংখ্য অপারেশন পরিচালনা করেন।
১৯৭১-এর ২৯ জুলাই জামালগঞ্জ রেইড মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই যুদ্ধে জগৎজ্যোতি অসামান্য ভূমিকা রাখেন। জামালগঞ্জের অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেখানে শক্ত ঘাঁটি গড়েছিল। ৫ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মীর শওকত আলীর নির্দেশে ১৪০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তিন দলে ভাগ করে ছয়টি নৌকায় অপারেশন শুরু করেন জগৎজ্যোতি। রাত ১২টায় সমন্বিত আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। তার রণকৌশলের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানে পাক বাহিনী।
১৬ অক্টোবর দাস পার্টি পাক বার্জে আক্রমণ চালালে বেশ কয়েকজন হানাদার নিহত হয়। বানিয়াচংয়ে কার্গো ধ্বংসের মতো অপারেশনও সফল হয়। কিন্তু ১৬ নভেম্বর ভোরে বাহুবলের উদ্দেশে ৪২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে রওনা হওয়ার পথে বদলপুরে হানাদারদের ফাঁদে পড়েন। রাজাকারদের চিনতে পেরে তিনি তাড়া করেন, কিন্তু হানাদাররা তাকে ঘিরে ফেলে। শেষ পর্যন্ত একাই যুদ্ধ চালিয়ে ১২ জন হানাদারকে হত্যা করেন। গুলি ফুরিয়ে আসলে একটি গুলি তার চোখে লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে এবং লাশ কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
স্বাধীনতার পর তিনি ‘বীরবিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন। কেন তাকে সর্বোচ্চ খেতাব দেয়া হলো না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন, নিয়মিত বাহিনীর বাইরের মুক্তিযোদ্ধাদের ইচ্ছাকৃতভাবে এই সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। জগৎজ্যোতি দাস জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তার অসামান্য অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি।
[ লেখক : কবি ]
এসডি সুব্রত
জগৎজ্যোতি দাস
বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবের ইতিহাস, আমাদের অস্তিত্বের ইতিহাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সাহসের ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল এদেশের মুক্তিকামী জনতা। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাদের মধ্যে অন্যতম জগৎজ্যোতি দাস। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যারা হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওর পারের অকুতোভয় সন্তান মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের কাছে জগৎজ্যোতি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। নিজস্ব পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনাকারী এই দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধার কাছে অসম্ভব বলে কিছুই ছিল না। অবলীলায় হাসিমুখে বন্দুকের পথে পড়তে পারতেন তিনি। দাস পার্টির আক্রমণের তীব্রতায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার। দাস পার্টি নৌপথে এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে, তারা কখনো কখনো দিনে আট-নয়টি কার্গো-কনভয়ও ডুবিয়েছে বা ধ্বংস করেছে।
একের পর এক ভাটির জনপদকে হানাদারমুক্ত করে জগৎজ্যোতি দাস যুদ্ধের ময়দানে হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি। যেদিন তিনি শহীদ হন, সেদিনও তার নির্ভুল নিশানায় প্রাণ হারায় ১২ জন পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযুদ্ধে জগৎজ্যোতির অসামান্য অবদান সর্বজনবিদিত। কিন্তু তিনি নীরবে ঝরে পড়া নক্ষত্রের মতো বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছেন ইতিহাসের পাতা থেকে।
১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জগৎজ্যোতি দাস। তার পিতার নাম জিতেন্দ্র চন্দ্র দাস এবং মাতার নাম হরিমতি দাস। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। সংসারে ছিল অভাব-অনটন। পাঁচ বছর বয়সে তাকে ভর্তি করা হয় জলসুখা গ্রামের তৎকালীন এম.ই. স্কুলে, যা পরবর্তীতে জলসুখা প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। নম্র স্বভাবের জন্য স্কুলে সবার কাছে প্রিয় ছিলেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে স্থানীয় বিরাট গ্রামের বীরচরণ হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পড়াশোনার সময় শরীফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে স্থানীয় ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বামধারার রাজনীতিবিদদের নজরে আসেন।
ম্যাট্রিক পাসের পর অভাবের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তার কাকা ননী গোপাল দাস, যিনি আসামে চাকরি করতেন, তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। কাকার কাছে আসামে গিয়ে নওগাঁ কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। কাকার মৃত্যুর পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজে ভর্তির চেষ্টা করেও টাকার অভাবে ব্যর্থ হন। পরে মাসিক পঁচাত্তর টাকা বেতনে জলসুখা কৃষ্ণগোবিন্দ পাবলিক হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতার টাকা জমিয়ে সুনামগঞ্জ কলেজে বি.এতে ভর্তি হন।
রণাঙ্গনে জগৎজ্যোতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে ছিলেন সাক্ষাৎ যমদূত। হাওর অঞ্চলে তার প্রতিষ্ঠিত দাস পার্টি মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদারদের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। তার বাহিনীর অপারেশন পাক সেনাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ভারতের মেঘালয়ের প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। এর আগে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে নওগাঁ কলেজে পড়ার সময় নকশালপন্থিদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, তাই অস্ত্র ও গোলাবারুদ সম্পর্কে তার মোটামুটি ধারণা ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে গণযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘দাস পার্টি’ নামের এক দুর্ধর্ষ বাহিনী।
জগৎজ্যোতি ইংরেজি, হিন্দি ও গৌহাটির আঞ্চলিক ভাষা জানতেন, ফলে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারতীয় বাহিনী থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। অমিত বীরত্বে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলে একের পর এক অপারেশন চালান। সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে বিস্তীর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রুমুক্ত রাখার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ হানাদারমুক্ত রাখতে তিনি অসংখ্য অপারেশন পরিচালনা করেন।
১৯৭১-এর ২৯ জুলাই জামালগঞ্জ রেইড মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই যুদ্ধে জগৎজ্যোতি অসামান্য ভূমিকা রাখেন। জামালগঞ্জের অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেখানে শক্ত ঘাঁটি গড়েছিল। ৫ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মীর শওকত আলীর নির্দেশে ১৪০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তিন দলে ভাগ করে ছয়টি নৌকায় অপারেশন শুরু করেন জগৎজ্যোতি। রাত ১২টায় সমন্বিত আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। তার রণকৌশলের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানে পাক বাহিনী।
১৬ অক্টোবর দাস পার্টি পাক বার্জে আক্রমণ চালালে বেশ কয়েকজন হানাদার নিহত হয়। বানিয়াচংয়ে কার্গো ধ্বংসের মতো অপারেশনও সফল হয়। কিন্তু ১৬ নভেম্বর ভোরে বাহুবলের উদ্দেশে ৪২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে রওনা হওয়ার পথে বদলপুরে হানাদারদের ফাঁদে পড়েন। রাজাকারদের চিনতে পেরে তিনি তাড়া করেন, কিন্তু হানাদাররা তাকে ঘিরে ফেলে। শেষ পর্যন্ত একাই যুদ্ধ চালিয়ে ১২ জন হানাদারকে হত্যা করেন। গুলি ফুরিয়ে আসলে একটি গুলি তার চোখে লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে এবং লাশ কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
স্বাধীনতার পর তিনি ‘বীরবিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন। কেন তাকে সর্বোচ্চ খেতাব দেয়া হলো না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন, নিয়মিত বাহিনীর বাইরের মুক্তিযোদ্ধাদের ইচ্ছাকৃতভাবে এই সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। জগৎজ্যোতি দাস জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তার অসামান্য অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি।
[ লেখক : কবি ]