alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্বাধীনতার ৫৪ বছর

নাদিরা হক অর্পা

: বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি স্বপ্ন দেখেছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙারÑস্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, মুক্তির স্বপ্ন। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে বা খর্ব করতে পারে না। বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রুশো বলেছেন, “মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়, কিন্তু জীবনের সর্বত্র থাকে শৃঙ্খলবদ্ধ।” দেখতে দেখতে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামÑশুধু ভূখ-গত স্বাধীনতার জন্য নয়, বরং শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় ব্রিটিশ ভারত ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন অধিরাজ্যে বিভক্ত হয়। পাকিস্তান যখন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিভক্ত হয়, তখনই শুরু হয় পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর অত্যাচার, অবহেলা, নির্যাতন এবং অধিকার থেকে বঞ্চনা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করলে তা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।

ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ভিত রচিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাঙালি তাদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়। তারা একতাবদ্ধ হয়ে দেশ ও পতাকার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবখানে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ গড়ে ওঠে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রিয় মাতৃভূমির অনেক প্রাপ্তি। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন উন্নয়ন আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে। উদ্যোক্তা হিসেবে নারীরা বিভিন্ন খাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। মুঠোফোনের সাহায্যে তারা অর্থনৈতিক কর্মকা- বিস্তৃত করেছেন। পোশাক শিল্পে তাদের অবদান থেকেই বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে। প্রশাসন ও সামাজিক অঙ্গনে তাদের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। ক্রীড়াক্ষেত্রে তাদের অর্জন এর বড় প্রমাণ।

বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কর্মকুশলতা, সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী করে। প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে তাদের নতুন পদ্ধতি ও জ্ঞান সম্প্রসারণের কাজ দৃষ্টান্তমূলক। নব্য জ্ঞান ও উদাহরণমূলক কাজের মাধ্যমে তরুণরা দেশ ও সমাজের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। এই অর্জন উদযাপনের যোগ্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছরে সফলতা যেমন রয়েছে. ব্যর্থতাও তেমন রয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি ও অনিয়ম ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসালয়Ñসব জায়গায় দুর্নীতি জড়িয়ে গেছে। চাকরিক্ষেত্রে দুর্নীতি ব্যাপক। সঠিক বিচারের অভাবে মাতৃভূমির এই অবস্থা। মৌলিক সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছে, যার সমাধান না হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে কোণঠাসা করতে ব্যস্ত। ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদের হামলা, মামলা ও জুলুম দিয়ে দমিয়ে রাখে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মানুষ অধিকারের জন্য মুখ খুলতে পারে না। অধিকারের প্রশ্ন উঠলেই আসে হামলা, মামলা, গুম ও খুন। দুর্নীতিবাজরা নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ায়। প্রতিদিন দুই থেকে পাঁচজন ধর্ষণের শিকার হয়, কিন্তু ধর্ষকরা উপযুক্ত শাস্তি পায় না।

প্রিয় মাতৃভূমির এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়। অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি, যাতে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে এবং দুর্দিনে একত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। কোনো সরকারই এতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যখন প্রতিটি সেক্টর জবাবদিহির আওতায় আসবে, তখনই মাতৃভূমির সুদিন আসবে। এটাই আমাদের বিশ্বাস, এটাই আমাদের কামনা।

[লেখক : শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড : সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব

কারাগার, সংশোধনাগার ও ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর সংস্কার কি হবে

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্বাধীনতার ৫৪ বছর

নাদিরা হক অর্পা

বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি স্বপ্ন দেখেছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙারÑস্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, মুক্তির স্বপ্ন। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে বা খর্ব করতে পারে না। বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক রুশো বলেছেন, “মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়, কিন্তু জীবনের সর্বত্র থাকে শৃঙ্খলবদ্ধ।” দেখতে দেখতে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামÑশুধু ভূখ-গত স্বাধীনতার জন্য নয়, বরং শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় ব্রিটিশ ভারত ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন অধিরাজ্যে বিভক্ত হয়। পাকিস্তান যখন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিভক্ত হয়, তখনই শুরু হয় পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর অত্যাচার, অবহেলা, নির্যাতন এবং অধিকার থেকে বঞ্চনা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করলে তা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।

ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ভিত রচিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাঙালি তাদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়। তারা একতাবদ্ধ হয়ে দেশ ও পতাকার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবখানে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ গড়ে ওঠে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রিয় মাতৃভূমির অনেক প্রাপ্তি। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন উন্নয়ন আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে। উদ্যোক্তা হিসেবে নারীরা বিভিন্ন খাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। মুঠোফোনের সাহায্যে তারা অর্থনৈতিক কর্মকা- বিস্তৃত করেছেন। পোশাক শিল্পে তাদের অবদান থেকেই বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে। প্রশাসন ও সামাজিক অঙ্গনে তাদের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। ক্রীড়াক্ষেত্রে তাদের অর্জন এর বড় প্রমাণ।

বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কর্মকুশলতা, সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিশীলতা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী করে। প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে তাদের নতুন পদ্ধতি ও জ্ঞান সম্প্রসারণের কাজ দৃষ্টান্তমূলক। নব্য জ্ঞান ও উদাহরণমূলক কাজের মাধ্যমে তরুণরা দেশ ও সমাজের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। এই অর্জন উদযাপনের যোগ্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছরে সফলতা যেমন রয়েছে. ব্যর্থতাও তেমন রয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি ও অনিয়ম ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসালয়Ñসব জায়গায় দুর্নীতি জড়িয়ে গেছে। চাকরিক্ষেত্রে দুর্নীতি ব্যাপক। সঠিক বিচারের অভাবে মাতৃভূমির এই অবস্থা। মৌলিক সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছে, যার সমাধান না হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে কোণঠাসা করতে ব্যস্ত। ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদের হামলা, মামলা ও জুলুম দিয়ে দমিয়ে রাখে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মানুষ অধিকারের জন্য মুখ খুলতে পারে না। অধিকারের প্রশ্ন উঠলেই আসে হামলা, মামলা, গুম ও খুন। দুর্নীতিবাজরা নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ায়। প্রতিদিন দুই থেকে পাঁচজন ধর্ষণের শিকার হয়, কিন্তু ধর্ষকরা উপযুক্ত শাস্তি পায় না।

প্রিয় মাতৃভূমির এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়। অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি, যাতে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে এবং দুর্দিনে একত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। কোনো সরকারই এতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যখন প্রতিটি সেক্টর জবাবদিহির আওতায় আসবে, তখনই মাতৃভূমির সুদিন আসবে। এটাই আমাদের বিশ্বাস, এটাই আমাদের কামনা।

[লেখক : শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top