জাঁ-নেসার ওসমান
‘ব্রিটিশ মইরা ভূত পিরাই দুইশ বছর, আর আপনে মিয়া বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে ব্রিটিশ প্রেতাত্মা খুঁইজ্জা পাইছেন, চাপা মারার জায়গা পান না! অহন জেন-জি’র যুগ, সব ডিজিটাল, ওই সব ভূতপ্রেতের কুনো বেইল নাই। বুঝছেন।’
‘কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি নিজে সাক্ষী, তোর এই ডিজিটাল অত্যাধুনিক জেন-জি’র যুগেও সিরাজগঞ্জে শোষক ব্রিটিশ প্রেতাত্মার দ্যেখা পেয়েছি।’
‘ধুর মিয়া রাখেন, যে দেশে মোড়ে মোড়ে মাইকে আজান দেয় সেই দেশে ভূত-প্রেত, দত্যি-দানো, পেতœী-শাঁকচুন্নি, স্কন্ধকাটা ভূত কোনো হালার জায়গা নাই। সেই দেশে আপনে কন সিরাজগঞ্জে শোষক ব্রিটিশ প্রেতাত্মা দেখছেন। আগুনের তৈরি জিন থাকতে পারে কিন্তু ভূত-প্রেত, দত্যি-দানো, না ভাই বিশ্বাস করতে পারলাম না।’
‘তোর কি মনে হয় না ব্রিটিশরা যখন ১৭শ শতাব্দীতে ভারতের শাসনভার দখল করলো তারপর ওরা সিরাজগঞ্জেও কুঠিবাড়ী বানিয়ে শাসন করেছে?’
‘আরে ভাই ইতিহাসের সাথে আমার মনে হওয়া না হওয়া নিয়া কি আছে, লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা ইংরেজগো থ্যেইক্কা মাত্র সাড়ে বারো রুপিতে (১২.৫০) কুঠিবাড়ী কিনছে হেইডা তো সবাই জানে।’
‘তাই বলছিলাম সিরাজগঞ্জে শোষক ব্রিটিশ প্রেতাত্মা থাকতেও পারে? এটাতো ফেলে দেয়া যায় না যে, ব্রিটিশ নীলকরদের অত্যাচারে তখন পুরো বাংলা জর্জরিত। এসব অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব করে কিছু ব্রিটিশ খতম করেছে।’
‘সশস্ত্র বিপ্লবে ব্রিটিশ হালায় মরবো এইডা তো সিম্পেল ব্যাপার। এই বিপ্লবে দুই একটা ব্রিটিশ লাল বান্দরতো মইরা ভূত হোইবোই।’
‘আমিতো তখন থেকে তোকে সেই কথাই বলছিলাম যে অসময়ে পাবলিকের হাতে মার খেয়ে মৃত ব্রিটিশদের প্রেতাত্মা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে ওদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে?’
‘আরে ভাই, এইডা তো কথার কথা ‘মইরা ভূত’। আমিতো সত্যিকারের ভূতেই বিশ্বাস করি না, সেই ভূত ব্রিটিশ হোক কি জাপানি হোক। পেতœী-শাঁকচুন্নি, স্কন্ধকাটা ভূতে আমার বিশ্বাস নাই।’
‘তাহলে তুই আমার কথাটা শোন তারপরে বিচার করিস যে, সিরাজগঞ্জে শোষক ব্রিটিশ প্রেতাত্মা আছে কি নাই।’
‘কন দেখি কোন ভূতুড়ে গল্প ফাঁদবেন। পূর্ণিমার রাত আধো আলোছায়ায় এক ইংরেজ বেডি, ইয়া বড় বড় ফিগার আমারে হাতছানি দিয়া ডাকতাছে, পায়ের গোড়ালি সামনে আঙ্গুল পিছনে...’। ‘আরে ব্যাটা মহিলা না, পুরুষ আবদুল্লাহ্ আল মামুন...’। ‘ও মোর আল্লা গুরু, এইডা আপনে কি কন। আমাগো সিরাজগঞ্জের দাবার চিফ আরবিটার মামুন ভায়ের কথা বলচেন নাকি যে?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি সিরাজগঞ্জের শতরঞ্জ কী খিলাড়ী জনাব আবদুল্লা আল মামুনের কথা বলছিলাম।’ ‘ওই তাগড়া জুয়ান সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আবদুল্লাহ্ আল মামুনরে ভূতে ধরবো? না ভাই হ্যেরে ভূত-পেতœী, র্যাব কেউ ধরবো না। হালায় মানুষ হিসেবে একটা ফ্রেশমাল।’ ‘কিন্তু তুই যাই বলিস না ক্যেন, আমি নিশ্চিত যে ওর উপর ব্রিটিশ শাসকের প্রেতাত্মা ভর করেছে।’
‘না না ভাই এইডা মানা যায় না। কারণ মুঘলগো হাত থ্যেইক্কা যখন ব্রিটিশ ভারত ছিনায়া লইলো, তখন মুসলমানরা ব্রিটিশগো বয়কট করলো। এই সুযোগে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা ইংলিশ ভাষা শিইক্ষা প্রশাসনের সব বড় বড় পদ দখল করলো। এমন কি কবি সাহিত্যিক ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি বাগায়া লোইলো। অথচ আমাদের সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত সাহিত্যিক ইসমাইল হোসেন সিরাজি, মুসলমান বোইলা কোনো চাকরিই পায় নাই। তাই কোই আবদুল্লা আল মামুনরে যেই ধরুক কুনো ব্রিটিশ ভূত হ্যেরে ধরবো না।’
‘কিন্তু তুমি বললে তো হবে না ভাই। আমি নিজে দেখেছি আবদুল্লা আল মামুন ঠিক
ব্রিটিশদের মতো সময়ের জ্ঞানে সিদ্ধহস্ত। ওর মুখের কথায় যেন ঘড়ি মিলানো যায়। সিরাজগঞ্জে সেদিন স্ট্যান্ডার্ড দাবা প্রতিযোগিতায় ১০টায় খেলা শুরু মানে ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় ঠিক ১০টায় খেলা শুরু হলো। একি! গভীর বাণী এলো আমার দ্বারে- আমিতো অবাক যে দেশের বিমান সময়মতো চলে না, ট্রেন-লঞ্চ কবে যে শেষ, সময়মতো রওয়ানা হয়েছিলো তার কোনো হদিসই নেই- সেই দেশের সিরাজগঞ্জে ঠিক সময়মতো কাজ হচ্ছে ভাবা যায়!’
‘না না ভাই বিশ্বাস হয় না। যহন বাংলাদেশের কুনো জায়গায় এমনকি অনেক টিভি চ্যানেলে দেখছি হ্যারা নিউজ পর্যন্ত টাইমলি প্রচার করতে পারে না, সেই দেশের সিরাজগঞ্জে টাইমলি কাম হোইতাছে! বড়ই তাজ্জব কী বাত! না না এইডাতো স্বাভাবিক কুনো ঘটনা না। এইডা তো আধিভৌতিক কা-কারখানা।’
‘তাইতো বোলছিলাম আমদের আবদুল্লাহ্ আল মামুনের ওপর নিশ্চয়ই ব্রিটিশ কোনো প্রতাত্মা ভর কোরেছে, না হোলে ও কি করে রাজধানীর বাইরের এক মফস্বল শহরে ঘড়ি ধরে কাঁটায় কাঁটায় অনুষ্ঠান শুরু করে!’
‘যাউ¹া আগে জানতাম গত ছাব্বিশ বছর ধইরা কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ প্রধান অতিথি আসুক না আসুক তারা ঠিকই সময়মতো অনুষ্ঠান শুরু করে; অহন দেহী আমাদের সিরাজগঞ্জের আবদুল্লাহ্ আল মামুনও সময়ের মূল্য দিতে জানে।’
‘ব্যাপারটা আসলেই চিন্তার বিষয়।’ ‘কিন্তু আমি কোই কি, বাংলাদেশের সকল প্রশাসকের ওপর যদি সিরাজগঞ্জের ব্রিটিশ প্রেতাত্মারা ভর করতো তাইলে সোনার বাংলা হীরার বাংলায় রূপান্তর হোইতো।’ ‘সেই ভালো দেশতো আর মানুষ চালাতে পারছে না, তাই ওই সব ভূত-পেতœী, দত্যি-দানো দিয়েই দেশ পরিচালনা কর!’
‘ঠিকই কোইছেন, ভূতেই দেশ চালাইবো মানুষে না!’
[ লেখক : চলচ্চিত্রকার ]
জাঁ-নেসার ওসমান
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
‘ব্রিটিশ মইরা ভূত পিরাই দুইশ বছর, আর আপনে মিয়া বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে ব্রিটিশ প্রেতাত্মা খুঁইজ্জা পাইছেন, চাপা মারার জায়গা পান না! অহন জেন-জি’র যুগ, সব ডিজিটাল, ওই সব ভূতপ্রেতের কুনো বেইল নাই। বুঝছেন।’
‘কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি নিজে সাক্ষী, তোর এই ডিজিটাল অত্যাধুনিক জেন-জি’র যুগেও সিরাজগঞ্জে শোষক ব্রিটিশ প্রেতাত্মার দ্যেখা পেয়েছি।’
‘ধুর মিয়া রাখেন, যে দেশে মোড়ে মোড়ে মাইকে আজান দেয় সেই দেশে ভূত-প্রেত, দত্যি-দানো, পেতœী-শাঁকচুন্নি, স্কন্ধকাটা ভূত কোনো হালার জায়গা নাই। সেই দেশে আপনে কন সিরাজগঞ্জে শোষক ব্রিটিশ প্রেতাত্মা দেখছেন। আগুনের তৈরি জিন থাকতে পারে কিন্তু ভূত-প্রেত, দত্যি-দানো, না ভাই বিশ্বাস করতে পারলাম না।’
‘তোর কি মনে হয় না ব্রিটিশরা যখন ১৭শ শতাব্দীতে ভারতের শাসনভার দখল করলো তারপর ওরা সিরাজগঞ্জেও কুঠিবাড়ী বানিয়ে শাসন করেছে?’
‘আরে ভাই ইতিহাসের সাথে আমার মনে হওয়া না হওয়া নিয়া কি আছে, লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা ইংরেজগো থ্যেইক্কা মাত্র সাড়ে বারো রুপিতে (১২.৫০) কুঠিবাড়ী কিনছে হেইডা তো সবাই জানে।’
‘তাই বলছিলাম সিরাজগঞ্জে শোষক ব্রিটিশ প্রেতাত্মা থাকতেও পারে? এটাতো ফেলে দেয়া যায় না যে, ব্রিটিশ নীলকরদের অত্যাচারে তখন পুরো বাংলা জর্জরিত। এসব অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব করে কিছু ব্রিটিশ খতম করেছে।’
‘সশস্ত্র বিপ্লবে ব্রিটিশ হালায় মরবো এইডা তো সিম্পেল ব্যাপার। এই বিপ্লবে দুই একটা ব্রিটিশ লাল বান্দরতো মইরা ভূত হোইবোই।’
‘আমিতো তখন থেকে তোকে সেই কথাই বলছিলাম যে অসময়ে পাবলিকের হাতে মার খেয়ে মৃত ব্রিটিশদের প্রেতাত্মা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে ওদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে?’
‘আরে ভাই, এইডা তো কথার কথা ‘মইরা ভূত’। আমিতো সত্যিকারের ভূতেই বিশ্বাস করি না, সেই ভূত ব্রিটিশ হোক কি জাপানি হোক। পেতœী-শাঁকচুন্নি, স্কন্ধকাটা ভূতে আমার বিশ্বাস নাই।’
‘তাহলে তুই আমার কথাটা শোন তারপরে বিচার করিস যে, সিরাজগঞ্জে শোষক ব্রিটিশ প্রেতাত্মা আছে কি নাই।’
‘কন দেখি কোন ভূতুড়ে গল্প ফাঁদবেন। পূর্ণিমার রাত আধো আলোছায়ায় এক ইংরেজ বেডি, ইয়া বড় বড় ফিগার আমারে হাতছানি দিয়া ডাকতাছে, পায়ের গোড়ালি সামনে আঙ্গুল পিছনে...’। ‘আরে ব্যাটা মহিলা না, পুরুষ আবদুল্লাহ্ আল মামুন...’। ‘ও মোর আল্লা গুরু, এইডা আপনে কি কন। আমাগো সিরাজগঞ্জের দাবার চিফ আরবিটার মামুন ভায়ের কথা বলচেন নাকি যে?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি সিরাজগঞ্জের শতরঞ্জ কী খিলাড়ী জনাব আবদুল্লা আল মামুনের কথা বলছিলাম।’ ‘ওই তাগড়া জুয়ান সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আবদুল্লাহ্ আল মামুনরে ভূতে ধরবো? না ভাই হ্যেরে ভূত-পেতœী, র্যাব কেউ ধরবো না। হালায় মানুষ হিসেবে একটা ফ্রেশমাল।’ ‘কিন্তু তুই যাই বলিস না ক্যেন, আমি নিশ্চিত যে ওর উপর ব্রিটিশ শাসকের প্রেতাত্মা ভর করেছে।’
‘না না ভাই এইডা মানা যায় না। কারণ মুঘলগো হাত থ্যেইক্কা যখন ব্রিটিশ ভারত ছিনায়া লইলো, তখন মুসলমানরা ব্রিটিশগো বয়কট করলো। এই সুযোগে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা ইংলিশ ভাষা শিইক্ষা প্রশাসনের সব বড় বড় পদ দখল করলো। এমন কি কবি সাহিত্যিক ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি বাগায়া লোইলো। অথচ আমাদের সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত সাহিত্যিক ইসমাইল হোসেন সিরাজি, মুসলমান বোইলা কোনো চাকরিই পায় নাই। তাই কোই আবদুল্লা আল মামুনরে যেই ধরুক কুনো ব্রিটিশ ভূত হ্যেরে ধরবো না।’
‘কিন্তু তুমি বললে তো হবে না ভাই। আমি নিজে দেখেছি আবদুল্লা আল মামুন ঠিক
ব্রিটিশদের মতো সময়ের জ্ঞানে সিদ্ধহস্ত। ওর মুখের কথায় যেন ঘড়ি মিলানো যায়। সিরাজগঞ্জে সেদিন স্ট্যান্ডার্ড দাবা প্রতিযোগিতায় ১০টায় খেলা শুরু মানে ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় ঠিক ১০টায় খেলা শুরু হলো। একি! গভীর বাণী এলো আমার দ্বারে- আমিতো অবাক যে দেশের বিমান সময়মতো চলে না, ট্রেন-লঞ্চ কবে যে শেষ, সময়মতো রওয়ানা হয়েছিলো তার কোনো হদিসই নেই- সেই দেশের সিরাজগঞ্জে ঠিক সময়মতো কাজ হচ্ছে ভাবা যায়!’
‘না না ভাই বিশ্বাস হয় না। যহন বাংলাদেশের কুনো জায়গায় এমনকি অনেক টিভি চ্যানেলে দেখছি হ্যারা নিউজ পর্যন্ত টাইমলি প্রচার করতে পারে না, সেই দেশের সিরাজগঞ্জে টাইমলি কাম হোইতাছে! বড়ই তাজ্জব কী বাত! না না এইডাতো স্বাভাবিক কুনো ঘটনা না। এইডা তো আধিভৌতিক কা-কারখানা।’
‘তাইতো বোলছিলাম আমদের আবদুল্লাহ্ আল মামুনের ওপর নিশ্চয়ই ব্রিটিশ কোনো প্রতাত্মা ভর কোরেছে, না হোলে ও কি করে রাজধানীর বাইরের এক মফস্বল শহরে ঘড়ি ধরে কাঁটায় কাঁটায় অনুষ্ঠান শুরু করে!’
‘যাউ¹া আগে জানতাম গত ছাব্বিশ বছর ধইরা কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ প্রধান অতিথি আসুক না আসুক তারা ঠিকই সময়মতো অনুষ্ঠান শুরু করে; অহন দেহী আমাদের সিরাজগঞ্জের আবদুল্লাহ্ আল মামুনও সময়ের মূল্য দিতে জানে।’
‘ব্যাপারটা আসলেই চিন্তার বিষয়।’ ‘কিন্তু আমি কোই কি, বাংলাদেশের সকল প্রশাসকের ওপর যদি সিরাজগঞ্জের ব্রিটিশ প্রেতাত্মারা ভর করতো তাইলে সোনার বাংলা হীরার বাংলায় রূপান্তর হোইতো।’ ‘সেই ভালো দেশতো আর মানুষ চালাতে পারছে না, তাই ওই সব ভূত-পেতœী, দত্যি-দানো দিয়েই দেশ পরিচালনা কর!’
‘ঠিকই কোইছেন, ভূতেই দেশ চালাইবো মানুষে না!’
[ লেখক : চলচ্চিত্রকার ]