alt

উপ-সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা সমস্যা : বাহবা, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যতের ভয়

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: রোববার, ১৮ মে ২০২৫

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে ‘বাহবা’ নেয়ার রাজনীতি বন্ধ হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. ইউনূসের খ্যাতি আকাশচুম্বী, তার আহ্বানে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে ছুটে এলেন, রোজার মাসে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারও করলেন। ড. ইউনূস ঘোষণা দিলেন, রোহিঙ্গারা যাতে আগামী বছর মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাথে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান বললেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মায়ানমার সরকার কর্তৃক বাছাইকৃত ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে ফিরিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করতে পারবেন। কিন্তু এই ঘোষণার পর শোনা গেল গত এক বছরে নতুন করে আরও ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অথচ জাতিসংঘের মহাসচিব ও অন্তর্বর্তী সরকারের দৌড়ঝাপ দেখে আমাদের মনে এই প্রতীতি জন্মেছিল যে, এবার কিছু একটা হবে। হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সমাবেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য রেখে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীর আত্মিক সম্পর্কের কথা বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের দরদের কারণ তারা মুসলমান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রোহিঙ্গা নির্যাতনকে ধর্মভিত্তিক বলে অভিহিত করার অবকাশ নেই। রোহিঙ্গারা মুসলমান বলেই তাদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে এমন সিদ্ধান্ত টানাও যথার্থ নয়। কারণ মায়ানমারে ২০১৪ সনে করা সরকারের জনশুমারিতে আরও চারটি মুসলমান সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি আছে যাদের নাগরিকত্ব এবং ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু মায়ানমার সরকার কখনোই রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনি, মায়ানমার মনে করে রোহিঙ্গিরা অভিবাসী। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও কোন দিন নিজেদের মায়ানমারের অধিবাসী মনে করেনি। তারা সব সময় স্বাধীন রোহিঙ্গাল্যান্ডের জন্য আন্দোলন করে আসছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সদস্যদের মায়ানমার সরকার ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে থাকে। বিস্মিত হই তখন, যখন জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে প্রতারণা ও জবরদস্তিমূলক বলে আখ্যায়িত করে, যখন জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করে। জাতিসংঘের সাফ কথা, মায়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য যতদিন উপযোগী হবে না ততদিন তাদের প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়। এতেই প্রতীয়মান হয়, জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আন্তরিক নয়, বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী বসতির ব্যবস্থা করে তারা উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে চায়, অথবা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দিয়ে আরাকানে রাজনৈতিক খেলা খেলতে চায়।

বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করেও কোন শরণার্থীকে মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি। কারণ মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকারই করে না। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও মায়ানমারে যেতে চায় না। তাদের মধ্যে আবার অনেকে মনে করেছে কক্সবাজার এলাকাটি তাদের আদি নিবাস। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সশস্ত্র গ্রুপও শরণার্থীদের বাংলাদেশে রাখার পক্ষে, কারণ ওখানে তাদের কখনোই জায়গা হবে না, মায়ানমার সরকার তাদের শনাক্ত করে রেখেছে। এজন্য কেউ মায়ানমারে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। মায়ানমারে ফেরত যাওয়ার পক্ষে জনপ্রিয় নেতা মহিবুল্লাহকে ইতোমধ্যে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক নীতিমালা মোতাবেক শরণার্থী হয়ে একবার আশ্রয় পেলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে পাঠানো যায় না। সামরিক শাসন বলবৎ হওয়ার পর থেকেই মায়ানমার ভূখ-ের সর্বত্র আন্দোলন, সংগ্রাম ও চোরাগোপ্তা হামলা চলছে, সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নেমে আরাকানের আদিবাসী বৌদ্ধদের সশস্ত্র সংগঠন ‘আরাকান আর্মি’ আরাকান রাজ্যের প্রায় সবটাই দখল করে নিয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে মায়ানমারের ২৭০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। এমন একটি অস্থির পরিবেশে আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল ও গ্রহণযোগ্য অবস্থা ফিরিয়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিশ্চিত করে এক্ষুণি বলা কঠিন।

ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কূটনৈতিক যুদ্ধে একাত্তরে শরণার্থী সমস্যা যেভাবে সারা পৃথিবীর মানুষকে আন্দোলিত করেছিল, তেমন আড়োলন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশকে নাড়া দিতে সমর্থ হয়নি। রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোন দেশের জোরালো ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তুরস্কসহ কয়েকটি মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ প্রথম প্রথম দরদ দেখালেও রোহিঙ্গার প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে এখন তারা নীরব, কিন্তু মায়ানমার সরকারের পক্ষে চীন একনিষ্ঠ। আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের যে কোন সিদ্ধান্তে চীন ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে এক পায়ে দাঁড়া। ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের বাংলাদেশ সরকার স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে আনলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে মায়ানমার সরকারের সামান্যতম আগ্রহও নেই। শরণার্থীদের ফেরত নিতে মায়ানমারকে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও কোন দেশ বা সংস্থার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

আরাকান রাজ্যটির আদি বাসিন্দা কারা, রোহিঙ্গাদের কেন মায়ানমার সরকার তাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না ইত্যাদি নিয়ে নানা পর্যালোচনা, বিশ্লেষণে সর্বজন গ্রাহ্য মতামত গঠন বা স্বচ্ছ ধারণা নেয়া সম্ভব নয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে আরাকানের উর্বর উপত্যকায় কৃষিকাজে আশপাশের বাঙালিদের এনে ব্রিটিশরা নিয়োজিত করে। আরাকানে মুসলমানদের উদ্বাস্তু হিসেবে গণ্য করে অশান্তির বীজ রোপণ করে গেছে বৃটিশেরাই। ব্রিটিশদের শাসনামলে তারা মায়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করলেও রোহিঙ্গাদের নাম তাতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এই অন্তর্ভুক্ত না করার জেরে মায়ানমার সরকার আরাকানের মুসলমানদের ‘বাঙালি’ গণ্য করে নাগরিকত্ব প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। মায়ানমারের নাগরিকত্ব না থাকায় কোন রোহিঙ্গার পাসপোর্টও নেই, বহু রোহিঙ্গা বিদেশে গেছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে। এরা বিদেশে অপরাধ করলে দোষ বাঙালির।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আরাকানের বৌদ্ধ রাখাইনরা সমর্থন করেছিল জাপানকে। অন্যদিকে আরাকানের মুসলমানেরা সমর্থন করে ব্রিটিশদের। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় রাজাকার, বিহারিরা যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইংরেজদের কাছ থেকেও তেমনি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানরা। রোহিঙ্গাদের এই সহায়তার বিনিময়ে উত্তর রাখাইনে মুসলমানদের জন্য আলাদা একটি রাজ্য গঠন করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ব্রিটিশরা তা পালন করেনি। ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজয়ে বিহারি আর রাজাকারের যে অবস্থা হয়েছিল, বার্মায় জাপানিদের কাছে ব্রিটিশদের পরাজয়ের পর রাখাইনদের কাছে রোহিঙ্গাদের অবস্থাও তদ্রƒপ হয়েছিল, হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান জাপানি ও রাখাইনদের হাতে নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার শিকার হয়। জাপানিদের এই অত্যাচার, নির্যাতনে তখনও অসংখ্য রোহিঙ্গা চট্রগ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সনে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বে মায়ানমারের সামরিক জান্তা এই অদৃশ্য বৈরতাকে কাজে লাগিয়ে দুই সম্প্রদায় মুসলমান ও রাখাইন বৌদ্ধদের পারস্পরিক শত্রু করে তুলতে সমর্থ হয়।

১৯৪৭ সনে ভারতবর্ষ ভাগের সময়ও রোহিঙ্গা মুসলমানরা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং এজন্য বার্মিজ মুসলিম নেতারা জিন্নাহর সঙ্গে দেখাও করেছিল। বার্মা সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অনাস্থার সম্পর্কের সূত্রপাত তখনই। রোহিঙ্গারাও তখন থেকেই স্বাধীন আরাকান প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ শুরু করে এবং তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে তারা সহযোগিতাও পেয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সনে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ হওয়ার পর রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপকে সহায়তা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। রোহিঙ্গারা বরাবরই চেয়েছে বাংলাদেশে তাদের জনপদ গড়ে তুলতে। বাঁশখালীর অনেক পাহাড় এখন রোহিঙ্গাদের দখলে, কক্সবাজারের কিছু এলাকায় তাদের এত প্রভাব প্রতিপত্তি যে, সেখানে বাংলাদেশিরা নিজ দেশে পরবাসী। অস্ত্র, ইয়াবা, নারী ব্যবসা, ডাকাতি এবং নৌকা করে মালয়েশিয়ার জঙ্গলে আধুনিক আমলের দাস সাপ্লাই ব্যবসা হলো তাদের উপার্জনের মূল উৎস। কক্সবাজারের স্থানীয় কিছু লোকও এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারাও চায় না রোহিঙ্গারা মায়ানমারে চলে যাক।

শুধু মায়ানমার সরকার নয়, আরাকানের বৌদ্ধদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অহিনকুল সম্পর্ক প্রথম থেকেই। আরাকান মায়ানমার থাকে আলাদা হয়ে গেলে বা স্বায়ত্তশাসনের বিনিময়ে কোন সমঝোতায় আরাকানে বসবাসের অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠলেও কোন রোহিঙ্গা হয়তো আর যাওয়ার ইচ্ছেই পোষণ করবে না। মহিবুল্লার মতো যারা মায়ানমারে যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রত্যাবর্তনের প্রধান পূর্ব শর্ত হচ্ছে, সকল রোহিঙ্গাকে মায়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে। কিন্তু মায়ানমার বা আরাকান বৌদ্ধরা তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকারই করে না। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোন চাপও নেই, চাপ থাকলেও মায়ানমার নতি স্বীকার করবে বলে মনে হয় না। কারণ পাশ্চাত্যের বাধা-নিষেধের মধ্যে মায়ানমার অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে মায়ানমার পাশ্চাত্যের বাধা-নিষেধের তোয়াক্কা করেনি, ভবিষ্যতেও করবে বলে মনে হয় না। তাই শরণার্থী সমস্যার সমাধান দুরূহ, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন আদৌ হবে কিনা সন্দেহ। তার ওপর অপরাধের অভয়ারণ্য সৃষ্টির হোতারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ত্যাগে বাধা দিচ্ছে।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]

বিয়েতে মিতব্যয়িতা

এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বঞ্চনার কথা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

প্রযুক্তির ফাঁদে শৈশব : স্ক্রিন টাইম গিলে খাচ্ছে খেলার মাঠ

রমগদ্য : সিরাজগঞ্জে ‘ব্রিটিশ প্রেতাত্মা’

বামপন্থা : নীতির সঙ্গে নেতৃত্বের ভূমিকা

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : জনশিক্ষা ও সুশাসনের পথ

ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড : সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব

কারাগার, সংশোধনাগার ও ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর সংস্কার কি হবে

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা সমস্যা : বাহবা, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যতের ভয়

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

রোববার, ১৮ মে ২০২৫

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে ‘বাহবা’ নেয়ার রাজনীতি বন্ধ হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. ইউনূসের খ্যাতি আকাশচুম্বী, তার আহ্বানে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে ছুটে এলেন, রোজার মাসে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারও করলেন। ড. ইউনূস ঘোষণা দিলেন, রোহিঙ্গারা যাতে আগামী বছর মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাথে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান বললেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মায়ানমার সরকার কর্তৃক বাছাইকৃত ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে ফিরিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করতে পারবেন। কিন্তু এই ঘোষণার পর শোনা গেল গত এক বছরে নতুন করে আরও ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অথচ জাতিসংঘের মহাসচিব ও অন্তর্বর্তী সরকারের দৌড়ঝাপ দেখে আমাদের মনে এই প্রতীতি জন্মেছিল যে, এবার কিছু একটা হবে। হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সমাবেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য রেখে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীর আত্মিক সম্পর্কের কথা বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের দরদের কারণ তারা মুসলমান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রোহিঙ্গা নির্যাতনকে ধর্মভিত্তিক বলে অভিহিত করার অবকাশ নেই। রোহিঙ্গারা মুসলমান বলেই তাদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে এমন সিদ্ধান্ত টানাও যথার্থ নয়। কারণ মায়ানমারে ২০১৪ সনে করা সরকারের জনশুমারিতে আরও চারটি মুসলমান সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি আছে যাদের নাগরিকত্ব এবং ভোটাধিকার রয়েছে। কিন্তু মায়ানমার সরকার কখনোই রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনি, মায়ানমার মনে করে রোহিঙ্গিরা অভিবাসী। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও কোন দিন নিজেদের মায়ানমারের অধিবাসী মনে করেনি। তারা সব সময় স্বাধীন রোহিঙ্গাল্যান্ডের জন্য আন্দোলন করে আসছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সদস্যদের মায়ানমার সরকার ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করে থাকে। বিস্মিত হই তখন, যখন জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে প্রতারণা ও জবরদস্তিমূলক বলে আখ্যায়িত করে, যখন জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করে। জাতিসংঘের সাফ কথা, মায়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য যতদিন উপযোগী হবে না ততদিন তাদের প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়। এতেই প্রতীয়মান হয়, জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আন্তরিক নয়, বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী বসতির ব্যবস্থা করে তারা উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে চায়, অথবা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দিয়ে আরাকানে রাজনৈতিক খেলা খেলতে চায়।

বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করেও কোন শরণার্থীকে মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি। কারণ মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকারই করে না। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও মায়ানমারে যেতে চায় না। তাদের মধ্যে আবার অনেকে মনে করেছে কক্সবাজার এলাকাটি তাদের আদি নিবাস। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সশস্ত্র গ্রুপও শরণার্থীদের বাংলাদেশে রাখার পক্ষে, কারণ ওখানে তাদের কখনোই জায়গা হবে না, মায়ানমার সরকার তাদের শনাক্ত করে রেখেছে। এজন্য কেউ মায়ানমারে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। মায়ানমারে ফেরত যাওয়ার পক্ষে জনপ্রিয় নেতা মহিবুল্লাহকে ইতোমধ্যে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক নীতিমালা মোতাবেক শরণার্থী হয়ে একবার আশ্রয় পেলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে পাঠানো যায় না। সামরিক শাসন বলবৎ হওয়ার পর থেকেই মায়ানমার ভূখ-ের সর্বত্র আন্দোলন, সংগ্রাম ও চোরাগোপ্তা হামলা চলছে, সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নেমে আরাকানের আদিবাসী বৌদ্ধদের সশস্ত্র সংগঠন ‘আরাকান আর্মি’ আরাকান রাজ্যের প্রায় সবটাই দখল করে নিয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে মায়ানমারের ২৭০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। এমন একটি অস্থির পরিবেশে আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল ও গ্রহণযোগ্য অবস্থা ফিরিয়ে আনা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিশ্চিত করে এক্ষুণি বলা কঠিন।

ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কূটনৈতিক যুদ্ধে একাত্তরে শরণার্থী সমস্যা যেভাবে সারা পৃথিবীর মানুষকে আন্দোলিত করেছিল, তেমন আড়োলন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশকে নাড়া দিতে সমর্থ হয়নি। রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোন দেশের জোরালো ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তুরস্কসহ কয়েকটি মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ প্রথম প্রথম দরদ দেখালেও রোহিঙ্গার প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে এখন তারা নীরব, কিন্তু মায়ানমার সরকারের পক্ষে চীন একনিষ্ঠ। আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের যে কোন সিদ্ধান্তে চীন ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে এক পায়ে দাঁড়া। ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের বাংলাদেশ সরকার স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে আনলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে মায়ানমার সরকারের সামান্যতম আগ্রহও নেই। শরণার্থীদের ফেরত নিতে মায়ানমারকে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও কোন দেশ বা সংস্থার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

আরাকান রাজ্যটির আদি বাসিন্দা কারা, রোহিঙ্গাদের কেন মায়ানমার সরকার তাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না ইত্যাদি নিয়ে নানা পর্যালোচনা, বিশ্লেষণে সর্বজন গ্রাহ্য মতামত গঠন বা স্বচ্ছ ধারণা নেয়া সম্ভব নয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে আরাকানের উর্বর উপত্যকায় কৃষিকাজে আশপাশের বাঙালিদের এনে ব্রিটিশরা নিয়োজিত করে। আরাকানে মুসলমানদের উদ্বাস্তু হিসেবে গণ্য করে অশান্তির বীজ রোপণ করে গেছে বৃটিশেরাই। ব্রিটিশদের শাসনামলে তারা মায়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করলেও রোহিঙ্গাদের নাম তাতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এই অন্তর্ভুক্ত না করার জেরে মায়ানমার সরকার আরাকানের মুসলমানদের ‘বাঙালি’ গণ্য করে নাগরিকত্ব প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। মায়ানমারের নাগরিকত্ব না থাকায় কোন রোহিঙ্গার পাসপোর্টও নেই, বহু রোহিঙ্গা বিদেশে গেছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে। এরা বিদেশে অপরাধ করলে দোষ বাঙালির।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আরাকানের বৌদ্ধ রাখাইনরা সমর্থন করেছিল জাপানকে। অন্যদিকে আরাকানের মুসলমানেরা সমর্থন করে ব্রিটিশদের। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় রাজাকার, বিহারিরা যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইংরেজদের কাছ থেকেও তেমনি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানরা। রোহিঙ্গাদের এই সহায়তার বিনিময়ে উত্তর রাখাইনে মুসলমানদের জন্য আলাদা একটি রাজ্য গঠন করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ব্রিটিশরা তা পালন করেনি। ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজয়ে বিহারি আর রাজাকারের যে অবস্থা হয়েছিল, বার্মায় জাপানিদের কাছে ব্রিটিশদের পরাজয়ের পর রাখাইনদের কাছে রোহিঙ্গাদের অবস্থাও তদ্রƒপ হয়েছিল, হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান জাপানি ও রাখাইনদের হাতে নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার শিকার হয়। জাপানিদের এই অত্যাচার, নির্যাতনে তখনও অসংখ্য রোহিঙ্গা চট্রগ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সনে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বে মায়ানমারের সামরিক জান্তা এই অদৃশ্য বৈরতাকে কাজে লাগিয়ে দুই সম্প্রদায় মুসলমান ও রাখাইন বৌদ্ধদের পারস্পরিক শত্রু করে তুলতে সমর্থ হয়।

১৯৪৭ সনে ভারতবর্ষ ভাগের সময়ও রোহিঙ্গা মুসলমানরা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং এজন্য বার্মিজ মুসলিম নেতারা জিন্নাহর সঙ্গে দেখাও করেছিল। বার্মা সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অনাস্থার সম্পর্কের সূত্রপাত তখনই। রোহিঙ্গারাও তখন থেকেই স্বাধীন আরাকান প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ শুরু করে এবং তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে তারা সহযোগিতাও পেয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সনে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ হওয়ার পর রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপকে সহায়তা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। রোহিঙ্গারা বরাবরই চেয়েছে বাংলাদেশে তাদের জনপদ গড়ে তুলতে। বাঁশখালীর অনেক পাহাড় এখন রোহিঙ্গাদের দখলে, কক্সবাজারের কিছু এলাকায় তাদের এত প্রভাব প্রতিপত্তি যে, সেখানে বাংলাদেশিরা নিজ দেশে পরবাসী। অস্ত্র, ইয়াবা, নারী ব্যবসা, ডাকাতি এবং নৌকা করে মালয়েশিয়ার জঙ্গলে আধুনিক আমলের দাস সাপ্লাই ব্যবসা হলো তাদের উপার্জনের মূল উৎস। কক্সবাজারের স্থানীয় কিছু লোকও এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারাও চায় না রোহিঙ্গারা মায়ানমারে চলে যাক।

শুধু মায়ানমার সরকার নয়, আরাকানের বৌদ্ধদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অহিনকুল সম্পর্ক প্রথম থেকেই। আরাকান মায়ানমার থাকে আলাদা হয়ে গেলে বা স্বায়ত্তশাসনের বিনিময়ে কোন সমঝোতায় আরাকানে বসবাসের অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠলেও কোন রোহিঙ্গা হয়তো আর যাওয়ার ইচ্ছেই পোষণ করবে না। মহিবুল্লার মতো যারা মায়ানমারে যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রত্যাবর্তনের প্রধান পূর্ব শর্ত হচ্ছে, সকল রোহিঙ্গাকে মায়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে। কিন্তু মায়ানমার বা আরাকান বৌদ্ধরা তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকারই করে না। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোন চাপও নেই, চাপ থাকলেও মায়ানমার নতি স্বীকার করবে বলে মনে হয় না। কারণ পাশ্চাত্যের বাধা-নিষেধের মধ্যে মায়ানমার অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে মায়ানমার পাশ্চাত্যের বাধা-নিষেধের তোয়াক্কা করেনি, ভবিষ্যতেও করবে বলে মনে হয় না। তাই শরণার্থী সমস্যার সমাধান দুরূহ, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন আদৌ হবে কিনা সন্দেহ। তার ওপর অপরাধের অভয়ারণ্য সৃষ্টির হোতারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ত্যাগে বাধা দিচ্ছে।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]

back to top