alt

উপ-সম্পাদকীয়

কৌশল নয়, এবার প্রযুক্তিতে সৌদি-মার্কিন জোট

এম এ হোসাইন

: মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

গত ৯ মে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রিয়াদের রানওয়েতে পা রাখেন, তখন সেটি শুধুমাত্র কোন কূটনৈতিক সফর নয়Ñ বরং একটি নতুন ধরনের অংশীদারিত্বের প্রতিচ্ছবি। তেল ও অস্ত্রনির্ভর পুরোনো কাঠামো থেকে সরে এসে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটছে, যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল পরিকাঠামো। একটি ক্রমবর্ধমান বহুমেরুর বিশ্বে, আমেরিকার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং সৌদি আরবের মূলধন ও উচ্চাকাক্সক্ষার সম্মিলন একটি উদাহরণ হয়ে উঠছেÑ যেখানে দেশগুলো কিভাবে নতুন বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাস্তবতায় নিজেদের পুনর্গঠন করছে, তা বোঝা যাচ্ছে।

১৯৪৫ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট ও সৌদি রাজা আবদুল আজিজের মধ্যে ইউএসএস কুইন্সির ডেকে যেভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক শুরু হয়, তা মূলত এক পারস্পরিক লেনদেনের চুক্তি ছিলÑ তেলের বিনিময়ে নিরাপত্তা; কিন্তু কালের পরিবর্তনে কৌশলগত মূল্যবোধের সংজ্ঞাও বদলে গেছে। আজ ক্ষমতার পরিমাপ হয় ব্যারেল নয়, টেরাফ্লপস দিয়ে। আজকের বৈশ্বিক প্রভাবের প্রধান হাতিয়ার হলো ডেটা সেন্টার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চিপ উৎপাদন এবং ডিজিটাল মানদ-। রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গঠিত হওয়া নতুন অংশীদারিত্ব এই পরিবর্তিত বাস্তবতাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত করে।

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি আরব ভিশন ২০৩০ কর্মসূচির মাধ্যমে বৈশ্বিক ব্যবস্থায় নিজেদের নতুনভাবে স্থাপন করতে চাচ্ছে। দেশটি কেবল প্রযুক্তি আমদানিকারক হিসেবে নয়, বরং উদ্ভাবনের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে চায়। ‘নেয়োম’ নামক স্মার্ট শহরের মতো প্রকল্প, সৌদি ডেটা ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথরিটি এর প্রতিষ্ঠা এবং আমাজন ওয়েব সার্ভিসেসের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের ‘এ আই জোন’ নির্মাণে বিনিয়োগ এ উচ্চাকাক্সক্ষারই বহিঃপ্রকাশ।

২০২৫ সালের লিপ সম্মেলনে সৌদি আরব ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রযুক্তি বিনিয়োগ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে তারা উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ প্রযুক্তি সংগ্রহ, নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষমতা অর্জন ও নীতিনির্ধারণমূলক অবস্থান গ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছে। রাষ্ট্র-সমর্থিত ‘হিউমাইন’ কোম্পানির মাধ্যমে সৌদি আরব জাতীয় পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা গড়ে তুলছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনও মৌলিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণা ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআই ব্যবস্থার নকশা ও প্রয়োগের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বজায় রেখেছে, পাশাপাশি বৈশ্বিক মান-নির্ধারণকারী সংস্থাগুলোর ওপরও। বর্তমান প্রশাসনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র উদীয়মান প্রযুক্তিতে তার কৌশলগত সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের নিয়োগÑ যেমন একটি আলাদা এআই ও ক্রিপ্টো উপদেষ্টার মনোনয়নÑপ্রযুক্তিগত নেতৃত্বকে বৈদেশিক নীতিতে আরও স্পষ্টভাবে একীভূত করার ইঙ্গিত দেয়।

উদীয়মান যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি ডিজিটাল সহযোগিতাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে শুধু এর ব্যাপকতা নয়, বরং এর সময়কালও। এটি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ডিজিটাল যুগকে সংজ্ঞায়িত করার ঐসকল নীতিমালা ও অগ্রাধিকার নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। দেশগুলো ডেটা-সার্বভৌমত্ব, নৈতিকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার, সাইবার নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোর স্থিতিশীলতা নিয়ে সংগ্রাম করছে। এই মুহূর্তে যেসব অংশীদারিত্ব গড়ে উঠছে, তারাই আগামী দশকগুলোতে এসব প্রশ্নের উত্তর নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে এই অংশীদারিত্ব একটি বিচ্ছিন্ন প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠছে না। সৌদি আরবের অন্য শক্তিগুলোর সঙ্গেÑ বিশেষত চীনের সঙ্গেÑসমান্তরাল সম্পৃক্ততা এ প্রসঙ্গে একটি সূক্ষ্ম মাত্রা যোগ করেছে। ২০২৪ সালে সৌদি-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জৈবপ্রযুক্তি এবং স্মার্ট অবকাঠামোর মতো খাতগুলো অন্তর্ভুক্ত। বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং তার ডিজিটাল সিল্ক রোড মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সংযোগ স্থাপন করেছে। কোনো একটি পক্ষ বেছে না নিয়ে, সৌদি আরব বরং এক ধরনের ‘ঝুঁকি প্রতিরোধ’ কৌশল অনুসরণ করছেÑবিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সুবিধা সর্বাধিক করার চেষ্টা করছে।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গেলে, উপসাগরীয় অঞ্চলের অংশীদারদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবায়িত আগ্রহকে একচেটিয়া ভাবে চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক বিকল্প দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যায়। সম্প্রতি এমিরাতভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান জি৪২-এর সঙ্গে সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগের খবর যা ইতোমধ্যে তাদের বাহ্যিক অংশীদারিত্ব পুনর্গঠন করেছে। এটা হলো নমনীয় কৌশলের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সহযোগিতাকে শূন্য-ফলাফলের প্রতিযোগিতা হিসেবে চিত্রায়িত না করে, এখন মনোযোগ স্থানান্তরিত হচ্ছে পারস্পরিক সুবিধাজনক সহ-উন্নয়নের দিকে, যেখানে আস্থা, নির্ভরযোগ্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা গঠনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

রিয়াদ-ভিত্তিক ডিজিটাল কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (ডিসিও) মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রেক্ষাপটে বাড়তি প্রাসঙ্গিকতা প্রদান করে। চারটি মহাদেশজুড়ে ১৬টি সদস্য রাষ্ট্র এবং সম্মিলিত ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি জিডিপি নিয়ে, ডিসিও একটি অনন্য আন্তঃসরকারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া। সংস্থাটি ডিজিটাল সাক্ষরতা, সংঘাত-পরবর্তী অঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক প্রযুক্তি, এবং সমন্বিত নীতিমালার মতো নানা উদ্যোগ পরিচালনা করছে। একজন সৌদি নারী এর নেতৃত্বে রয়েছেন এবং তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর বিশেষ জোর দিয়ে, ডিসিও একধরনের ঐতিহ্যবাহী কূটনীতি ও ভবিষ্যতগামী ডিজিটাল শাসনব্যবস্থার সংমিশ্রণ তুলে ধরছে।

প্রযুক্তি বিষয়ক আলোচনায় প্রায়শই উপেক্ষিত এই ‘সফট পাওয়ার’ উপাদানটি আন্তর্জাতিক মানদ- গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো যখন তাদের অর্থনীতি ডিজিটাল রূপান্তরে এগিয়ে নিচ্ছে, তখন অংশীদার ও শাসনব্যবস্থার মডেল নির্বাচনের বিষয়টি গুরুতর হয়ে উঠছে। যে উদ্যোগগুলো স্বচ্ছতা, আন্তঃসংযোগ যোগ্যতা এবং নৈতিক মানদ-কে প্রাধান্য দেয়, সেগুলোরই দীর্ঘমেয়াদে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কেবল দক্ষতা বা নিয়ন্ত্রণনির্ভর উদ্যোগগুলোর চেয়ে।

তবুও চ্যালেঞ্জের অভাব নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আধিপত্য অর্জনের জন্যÑ হোক তা সরকার কিংবা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকেÑ যে তাড়াহুড়া দেখা যাচ্ছে, তাতে নীতিনির্ধারণের শূন্যতা, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং অসম সক্ষমতার ঝুঁকি রয়েছে। কার্যকর ডিজিটাল অংশীদারিত্ব গড়তে হলে তা শুধু অবকাঠামো বিনিয়োগেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; বরং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর গভীরতর চাহিদাগুলোও মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, ডিজিটাল শিক্ষায় সহায়তা প্রদান এবং জবাবদিহিতার জন্য বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়া তৈরি করা।

এখানে মূল্যবোধের প্রশ্নটিও সামনে আসে। প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে পারে বটে, তবে শাসনব্যবস্থা, নাগরিক স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পার্থক্য এসব জোটকে জটিল করে তুলতে পারে। সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিÑ যেমন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং আঞ্চলিক সামরিক হস্তক্ষেপের মতো ইস্যুÑনিয়মিতভাবে নজর কাড়ে ও সমালোচনার মুখে পড়ে। একইভাবে, মুক্ত ও সুরক্ষিত ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, যদি এর নীতিতে দ্বৈততা বা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দেয়।

তদুপরি বৃহত্তর প্রাতিষ্ঠানিক প্রবণতাগুলোকেও হিসেবের মধ্যে আনতে হবে। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাটি এখন আর একমেরু নয় এবং কোনো একটি দেশ বা জোটের একক আধিপত্যে ডিজিটাল বিশ্ব গঠিত হবে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। উদীয়মান শক্তিগুলো নিজেদের মডেল তৈরি করছে এবং আঞ্চলিক জোটগুলো প্রযুক্তিগত সহযোগিতার নতুন রূপ অন্বেষণ করছে। এই প্রেক্ষাপটে, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থাÑযা যৌথ নীতিমালার ভিত্তিতে গঠিত হলেও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত হতে সক্ষমÑএকচেটিয়া জোটগুলোর তুলনায় অধিক টেকসই প্রমাণিত হতে পারে।

সুতরাং, মার্কিন-সৌদি ডিজিটাল অংশীদারিত্বকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের মডেল হিসেবে না দেখে, বরং একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারেÑ কিভাবে প্রযুক্তিগত রূপান্তরের পথে একাধিক দেশ পরস্পরের সাথে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে পারে। এটি সফল হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহার, আন্তঃসীমান্ত ডিজিটাল বাণিজ্য এবং দায়িত্বশীল উদ্ভাবনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। ব্যর্থ হলে, তা অতিরিক্ত আশাবাদের বিপদও নির্দেশ করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, এখানে প্রশ্ন শুধু বাজার বা প্রতিযোগিতার নয়। এটি ভবিষ্যতের এক এমন পরিকাঠামো গঠনের প্রক্রিয়া, যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ অধিকার প্রয়োগ করবে, পরিষেবায় অংশগ্রহণ করবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হবে। এই ভবিষ্যৎ কেমন হবেÑ সেটি নির্ধারণ করবে সহযোগিতা, নীতিমালা এবং বাস্তবায়নের রূপ।

সৌদি আরব এ যাত্রায় আনছে মূলধন, কৌশলগত অবস্থান এবং উচ্চাকাক্সক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত করছে উদ্ভাবনী দক্ষতা, নীতিগত অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা। যদি এই সহযোগিতা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্থায়ী কৌশলের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, তবে তা একটি কার্যকর ডিজিটাল আদর্শ নির্মাণে সহায়ক হতে পারে। শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল নেতৃত্বের সফলতা নির্ভর করবে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ওপরÑ কিভাবে দেশগুলো ভিন্নতা অতিক্রম করে এমন একটি প্রযুক্তি কাঠামো তৈরি করতে পারে; যা শুধু শক্তি বা মুনাফার জন্য নয়, বরং মানুষের জন্য কাজ করে।

[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক]

স্ক্যাবিস সংক্রমণের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয়

বাস্তবমুখী বাজেটের প্রত্যাশা : বৈষম্যহীন অর্থনীতির পথে কতটা অগ্রগতি?

সিউল : স্বর্গ নেমেছে ধরায়

নাচোল বিদ্রোহ ও ইলা মিত্র সংগ্রহশালা : সাঁওতাল স্মৃতি কেন উপেক্ষিত?

ছবি

অন্ধকার সত্য, শেষ সত্য নয়!

বিয়েতে মিতব্যয়িতা

এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বঞ্চনার কথা

রোহিঙ্গা সমস্যা : বাহবা, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যতের ভয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

প্রযুক্তির ফাঁদে শৈশব : স্ক্রিন টাইম গিলে খাচ্ছে খেলার মাঠ

রমগদ্য : সিরাজগঞ্জে ‘ব্রিটিশ প্রেতাত্মা’

বামপন্থা : নীতির সঙ্গে নেতৃত্বের ভূমিকা

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : জনশিক্ষা ও সুশাসনের পথ

ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড : সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব

কারাগার, সংশোধনাগার ও ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর সংস্কার কি হবে

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

কৌশল নয়, এবার প্রযুক্তিতে সৌদি-মার্কিন জোট

এম এ হোসাইন

মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

গত ৯ মে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রিয়াদের রানওয়েতে পা রাখেন, তখন সেটি শুধুমাত্র কোন কূটনৈতিক সফর নয়Ñ বরং একটি নতুন ধরনের অংশীদারিত্বের প্রতিচ্ছবি। তেল ও অস্ত্রনির্ভর পুরোনো কাঠামো থেকে সরে এসে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটছে, যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল পরিকাঠামো। একটি ক্রমবর্ধমান বহুমেরুর বিশ্বে, আমেরিকার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং সৌদি আরবের মূলধন ও উচ্চাকাক্সক্ষার সম্মিলন একটি উদাহরণ হয়ে উঠছেÑ যেখানে দেশগুলো কিভাবে নতুন বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাস্তবতায় নিজেদের পুনর্গঠন করছে, তা বোঝা যাচ্ছে।

১৯৪৫ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট ও সৌদি রাজা আবদুল আজিজের মধ্যে ইউএসএস কুইন্সির ডেকে যেভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্ক শুরু হয়, তা মূলত এক পারস্পরিক লেনদেনের চুক্তি ছিলÑ তেলের বিনিময়ে নিরাপত্তা; কিন্তু কালের পরিবর্তনে কৌশলগত মূল্যবোধের সংজ্ঞাও বদলে গেছে। আজ ক্ষমতার পরিমাপ হয় ব্যারেল নয়, টেরাফ্লপস দিয়ে। আজকের বৈশ্বিক প্রভাবের প্রধান হাতিয়ার হলো ডেটা সেন্টার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চিপ উৎপাদন এবং ডিজিটাল মানদ-। রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে গঠিত হওয়া নতুন অংশীদারিত্ব এই পরিবর্তিত বাস্তবতাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত করে।

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি আরব ভিশন ২০৩০ কর্মসূচির মাধ্যমে বৈশ্বিক ব্যবস্থায় নিজেদের নতুনভাবে স্থাপন করতে চাচ্ছে। দেশটি কেবল প্রযুক্তি আমদানিকারক হিসেবে নয়, বরং উদ্ভাবনের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে চায়। ‘নেয়োম’ নামক স্মার্ট শহরের মতো প্রকল্প, সৌদি ডেটা ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথরিটি এর প্রতিষ্ঠা এবং আমাজন ওয়েব সার্ভিসেসের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের ‘এ আই জোন’ নির্মাণে বিনিয়োগ এ উচ্চাকাক্সক্ষারই বহিঃপ্রকাশ।

২০২৫ সালের লিপ সম্মেলনে সৌদি আরব ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রযুক্তি বিনিয়োগ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে তারা উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ প্রযুক্তি সংগ্রহ, নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষমতা অর্জন ও নীতিনির্ধারণমূলক অবস্থান গ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছে। রাষ্ট্র-সমর্থিত ‘হিউমাইন’ কোম্পানির মাধ্যমে সৌদি আরব জাতীয় পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা গড়ে তুলছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনও মৌলিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণা ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআই ব্যবস্থার নকশা ও প্রয়োগের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বজায় রেখেছে, পাশাপাশি বৈশ্বিক মান-নির্ধারণকারী সংস্থাগুলোর ওপরও। বর্তমান প্রশাসনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র উদীয়মান প্রযুক্তিতে তার কৌশলগত সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের নিয়োগÑ যেমন একটি আলাদা এআই ও ক্রিপ্টো উপদেষ্টার মনোনয়নÑপ্রযুক্তিগত নেতৃত্বকে বৈদেশিক নীতিতে আরও স্পষ্টভাবে একীভূত করার ইঙ্গিত দেয়।

উদীয়মান যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি ডিজিটাল সহযোগিতাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে শুধু এর ব্যাপকতা নয়, বরং এর সময়কালও। এটি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ডিজিটাল যুগকে সংজ্ঞায়িত করার ঐসকল নীতিমালা ও অগ্রাধিকার নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। দেশগুলো ডেটা-সার্বভৌমত্ব, নৈতিকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার, সাইবার নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোর স্থিতিশীলতা নিয়ে সংগ্রাম করছে। এই মুহূর্তে যেসব অংশীদারিত্ব গড়ে উঠছে, তারাই আগামী দশকগুলোতে এসব প্রশ্নের উত্তর নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে এই অংশীদারিত্ব একটি বিচ্ছিন্ন প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠছে না। সৌদি আরবের অন্য শক্তিগুলোর সঙ্গেÑ বিশেষত চীনের সঙ্গেÑসমান্তরাল সম্পৃক্ততা এ প্রসঙ্গে একটি সূক্ষ্ম মাত্রা যোগ করেছে। ২০২৪ সালে সৌদি-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জৈবপ্রযুক্তি এবং স্মার্ট অবকাঠামোর মতো খাতগুলো অন্তর্ভুক্ত। বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং তার ডিজিটাল সিল্ক রোড মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সংযোগ স্থাপন করেছে। কোনো একটি পক্ষ বেছে না নিয়ে, সৌদি আরব বরং এক ধরনের ‘ঝুঁকি প্রতিরোধ’ কৌশল অনুসরণ করছেÑবিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সুবিধা সর্বাধিক করার চেষ্টা করছে।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গেলে, উপসাগরীয় অঞ্চলের অংশীদারদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবায়িত আগ্রহকে একচেটিয়া ভাবে চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক বিকল্প দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যায়। সম্প্রতি এমিরাতভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান জি৪২-এর সঙ্গে সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগের খবর যা ইতোমধ্যে তাদের বাহ্যিক অংশীদারিত্ব পুনর্গঠন করেছে। এটা হলো নমনীয় কৌশলের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সহযোগিতাকে শূন্য-ফলাফলের প্রতিযোগিতা হিসেবে চিত্রায়িত না করে, এখন মনোযোগ স্থানান্তরিত হচ্ছে পারস্পরিক সুবিধাজনক সহ-উন্নয়নের দিকে, যেখানে আস্থা, নির্ভরযোগ্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা গঠনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

রিয়াদ-ভিত্তিক ডিজিটাল কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (ডিসিও) মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রেক্ষাপটে বাড়তি প্রাসঙ্গিকতা প্রদান করে। চারটি মহাদেশজুড়ে ১৬টি সদস্য রাষ্ট্র এবং সম্মিলিত ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি জিডিপি নিয়ে, ডিসিও একটি অনন্য আন্তঃসরকারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া। সংস্থাটি ডিজিটাল সাক্ষরতা, সংঘাত-পরবর্তী অঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক প্রযুক্তি, এবং সমন্বিত নীতিমালার মতো নানা উদ্যোগ পরিচালনা করছে। একজন সৌদি নারী এর নেতৃত্বে রয়েছেন এবং তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর বিশেষ জোর দিয়ে, ডিসিও একধরনের ঐতিহ্যবাহী কূটনীতি ও ভবিষ্যতগামী ডিজিটাল শাসনব্যবস্থার সংমিশ্রণ তুলে ধরছে।

প্রযুক্তি বিষয়ক আলোচনায় প্রায়শই উপেক্ষিত এই ‘সফট পাওয়ার’ উপাদানটি আন্তর্জাতিক মানদ- গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো যখন তাদের অর্থনীতি ডিজিটাল রূপান্তরে এগিয়ে নিচ্ছে, তখন অংশীদার ও শাসনব্যবস্থার মডেল নির্বাচনের বিষয়টি গুরুতর হয়ে উঠছে। যে উদ্যোগগুলো স্বচ্ছতা, আন্তঃসংযোগ যোগ্যতা এবং নৈতিক মানদ-কে প্রাধান্য দেয়, সেগুলোরই দীর্ঘমেয়াদে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কেবল দক্ষতা বা নিয়ন্ত্রণনির্ভর উদ্যোগগুলোর চেয়ে।

তবুও চ্যালেঞ্জের অভাব নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আধিপত্য অর্জনের জন্যÑ হোক তা সরকার কিংবা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকেÑ যে তাড়াহুড়া দেখা যাচ্ছে, তাতে নীতিনির্ধারণের শূন্যতা, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং অসম সক্ষমতার ঝুঁকি রয়েছে। কার্যকর ডিজিটাল অংশীদারিত্ব গড়তে হলে তা শুধু অবকাঠামো বিনিয়োগেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; বরং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর গভীরতর চাহিদাগুলোও মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, ডিজিটাল শিক্ষায় সহায়তা প্রদান এবং জবাবদিহিতার জন্য বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়া তৈরি করা।

এখানে মূল্যবোধের প্রশ্নটিও সামনে আসে। প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে পারে বটে, তবে শাসনব্যবস্থা, নাগরিক স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পার্থক্য এসব জোটকে জটিল করে তুলতে পারে। সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিÑ যেমন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং আঞ্চলিক সামরিক হস্তক্ষেপের মতো ইস্যুÑনিয়মিতভাবে নজর কাড়ে ও সমালোচনার মুখে পড়ে। একইভাবে, মুক্ত ও সুরক্ষিত ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, যদি এর নীতিতে দ্বৈততা বা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দেয়।

তদুপরি বৃহত্তর প্রাতিষ্ঠানিক প্রবণতাগুলোকেও হিসেবের মধ্যে আনতে হবে। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাটি এখন আর একমেরু নয় এবং কোনো একটি দেশ বা জোটের একক আধিপত্যে ডিজিটাল বিশ্ব গঠিত হবে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। উদীয়মান শক্তিগুলো নিজেদের মডেল তৈরি করছে এবং আঞ্চলিক জোটগুলো প্রযুক্তিগত সহযোগিতার নতুন রূপ অন্বেষণ করছে। এই প্রেক্ষাপটে, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থাÑযা যৌথ নীতিমালার ভিত্তিতে গঠিত হলেও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত হতে সক্ষমÑএকচেটিয়া জোটগুলোর তুলনায় অধিক টেকসই প্রমাণিত হতে পারে।

সুতরাং, মার্কিন-সৌদি ডিজিটাল অংশীদারিত্বকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের মডেল হিসেবে না দেখে, বরং একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারেÑ কিভাবে প্রযুক্তিগত রূপান্তরের পথে একাধিক দেশ পরস্পরের সাথে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে পারে। এটি সফল হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহার, আন্তঃসীমান্ত ডিজিটাল বাণিজ্য এবং দায়িত্বশীল উদ্ভাবনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। ব্যর্থ হলে, তা অতিরিক্ত আশাবাদের বিপদও নির্দেশ করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, এখানে প্রশ্ন শুধু বাজার বা প্রতিযোগিতার নয়। এটি ভবিষ্যতের এক এমন পরিকাঠামো গঠনের প্রক্রিয়া, যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ অধিকার প্রয়োগ করবে, পরিষেবায় অংশগ্রহণ করবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হবে। এই ভবিষ্যৎ কেমন হবেÑ সেটি নির্ধারণ করবে সহযোগিতা, নীতিমালা এবং বাস্তবায়নের রূপ।

সৌদি আরব এ যাত্রায় আনছে মূলধন, কৌশলগত অবস্থান এবং উচ্চাকাক্সক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত করছে উদ্ভাবনী দক্ষতা, নীতিগত অভিজ্ঞতা এবং বৈশ্বিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা। যদি এই সহযোগিতা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্থায়ী কৌশলের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, তবে তা একটি কার্যকর ডিজিটাল আদর্শ নির্মাণে সহায়ক হতে পারে। শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল নেতৃত্বের সফলতা নির্ভর করবে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ওপরÑ কিভাবে দেশগুলো ভিন্নতা অতিক্রম করে এমন একটি প্রযুক্তি কাঠামো তৈরি করতে পারে; যা শুধু শক্তি বা মুনাফার জন্য নয়, বরং মানুষের জন্য কাজ করে।

[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক]

back to top