alt

উপ-সম্পাদকীয়

ছোট মাছের পুষ্টি

আবদুর রহমান

: রোববার, ০৯ মে ২০২১

দেশে যেসব মাছ আছে, আকার অনুসারে সেগুলোকে মোটামুটি বড়, মাঝারি ও ছোট- এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়। রুই, কাতলা, আইড়, মৃগেল, বোয়াল, কালিবাউস, পাংগাস, চিতল, ইলিশ এগুলো বড় মাছের মধ্যে অন্যতম। কৈ, ফলি, রূপচান্দা, মাগুর, সরপুঁটি, বেলে, শিং- এসব মাছকে মাঝারি আকারের মাছ হিসেবে ধরা হয়। আবার মলা, ঢেলা, কেচকি, কাজলি, পুঁটি, টেংরা, চাঁদা, বাতাসী, খলসে এগুলোকে ছোট মাছ বলা হয়। এ হলো বড়, ছোট বা মাঝারি আকারের মাছ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা মাত্র। এছাড়া আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরে আরো অনেক রকমের মাছ পাওয়া যায়।

ছোট মাছ আকারে ছোট হলেও পুষ্টিতে ছোট নয়। পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে বড়, মাঝারি বা ছোট মাছে কোন তফাৎ নেই। বড় মাছের পুষ্টিগুণ যা, ছোট বা মাঝারি আকারের মাছের পুষ্টিগুণও তা। অথচ দামের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে বড় মাছের দাম এতই চড়া যে তা ক্রয় করা আমাদের অনেকেরই ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে ছোট মাছ দামে অনেক সস্তা। বড় মাছের মতো ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকে বলে ছোট মাছও আমিষ জাতীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ হলো ১৪-১৯ ভাগ এবং মাছের আমিষ হলো একটা উন্নত মানের আমিষ। এ আমিষ আমাদের দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণের কাজে লাগে বেশি।

গর্ভবতী মহিলার গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও গঠন ঠিকমতো হওয়ার জন্য এবং প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ তৈরির জন্য তাদের নিত্যদিনের খাবারে আমিষের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। জন্মের পর পরই শিশুদের শরীর খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। এ সময়ে শিশুদের শরীরের এ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আমিষ জাতীয় খাবারের প্রয়োজন অত্যধিক। আমিষের অভাবে শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ওজন কমে যায়। এ অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে শিশুদের কোয়াশিয়রকর এবং ম্যারাসমাস নামক মারাত্মক রোগ হয়। ম্যারাসমাস রোগে শিশুরা একেবারে শীর্ণ ও হাড্ডিসার হয়ে যায়, আর কোয়াশিয়রকর রোগে শরীর ফুলে যায়।

তাই ছয় মাস বয়স থেকে শিশুকে মায়ের দুধের সঙ্গে সঙ্গে পরিপূরক খাবার দিতে হবে। শিশুর পরিপূরক খাবারে যেন একটু আমিষ থাকে সেদিকেও নজর দেয়া দরকার। এ আমিষটা কিন্তু ছোট মাছের আমিষও হতে পারে। ডালে-ভাতে রান্না করা নরম খিচুড়ি শিশুর জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ভালো পরিপূরক খাবার। খিচুড়িতে একটু আলু, খানিকটা সবুজ শাক এবং একটু ছোট মাছ পিষে দেয়া যেতে পারে। এ খাবার শিশুকে বারে বারে অল্প অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। নিয়ামিতভাবে এসব পরিপূরক খাবার খাওয়ালে শিশুরা কোয়াশিয়রকর, ম্যারাসমাস ও অন্যান্য মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাবে এবং শিশু সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।

আমিষ ছাড়াও ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’। ছোট মাছ খাওয়ার আর একটা বিশেষ দিক হল- যেসব ছোট মাছ কাঁটাসহ খাওয়া যায়, তা থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম পেতে পারি। শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে শিশু ও ছোট ছেলে-মেয়েদের ‘রিকেট’ নামক এক প্রকার রোগ হয়। খাবারে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে গর্ভবতী মহিলাদের ‘অস্টিওম্যালেসিয়া’ নামক এক প্রকার রোগ হয়। সামুদ্রিক ছোট মাছগুলো আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন ছাড়াও অত্যন্ত দরকারী আরেকটি পুষ্টি উপাদান আয়োডিনের চাহিদা পূরণ করে। এজন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসহ আয়োডিনের চাহিদা পূরণের জন্য সামুদ্রিক ছোট মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দামি বড় মাছ না খেতে পারলে আফসোস করার কোন কারণ নেই। দেহের পুষ্টি সাধন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বড় মাছের মতো ছোট মাছের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ছোট মাছ বলে তার প্রতি অবহেলা বা অনীহা প্রদর্শন না করে এগুলোকে সামর্থ্য অনুযায়ী নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।

[লেখক : উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা,

উপজেলা কৃষি অফিস, রূপসা, খুলনা]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ছোট মাছের পুষ্টি

আবদুর রহমান

রোববার, ০৯ মে ২০২১

দেশে যেসব মাছ আছে, আকার অনুসারে সেগুলোকে মোটামুটি বড়, মাঝারি ও ছোট- এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়। রুই, কাতলা, আইড়, মৃগেল, বোয়াল, কালিবাউস, পাংগাস, চিতল, ইলিশ এগুলো বড় মাছের মধ্যে অন্যতম। কৈ, ফলি, রূপচান্দা, মাগুর, সরপুঁটি, বেলে, শিং- এসব মাছকে মাঝারি আকারের মাছ হিসেবে ধরা হয়। আবার মলা, ঢেলা, কেচকি, কাজলি, পুঁটি, টেংরা, চাঁদা, বাতাসী, খলসে এগুলোকে ছোট মাছ বলা হয়। এ হলো বড়, ছোট বা মাঝারি আকারের মাছ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা মাত্র। এছাড়া আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরে আরো অনেক রকমের মাছ পাওয়া যায়।

ছোট মাছ আকারে ছোট হলেও পুষ্টিতে ছোট নয়। পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে বড়, মাঝারি বা ছোট মাছে কোন তফাৎ নেই। বড় মাছের পুষ্টিগুণ যা, ছোট বা মাঝারি আকারের মাছের পুষ্টিগুণও তা। অথচ দামের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে বড় মাছের দাম এতই চড়া যে তা ক্রয় করা আমাদের অনেকেরই ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে ছোট মাছ দামে অনেক সস্তা। বড় মাছের মতো ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকে বলে ছোট মাছও আমিষ জাতীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ হলো ১৪-১৯ ভাগ এবং মাছের আমিষ হলো একটা উন্নত মানের আমিষ। এ আমিষ আমাদের দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণের কাজে লাগে বেশি।

গর্ভবতী মহিলার গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও গঠন ঠিকমতো হওয়ার জন্য এবং প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ তৈরির জন্য তাদের নিত্যদিনের খাবারে আমিষের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। জন্মের পর পরই শিশুদের শরীর খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। এ সময়ে শিশুদের শরীরের এ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আমিষ জাতীয় খাবারের প্রয়োজন অত্যধিক। আমিষের অভাবে শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ওজন কমে যায়। এ অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে শিশুদের কোয়াশিয়রকর এবং ম্যারাসমাস নামক মারাত্মক রোগ হয়। ম্যারাসমাস রোগে শিশুরা একেবারে শীর্ণ ও হাড্ডিসার হয়ে যায়, আর কোয়াশিয়রকর রোগে শরীর ফুলে যায়।

তাই ছয় মাস বয়স থেকে শিশুকে মায়ের দুধের সঙ্গে সঙ্গে পরিপূরক খাবার দিতে হবে। শিশুর পরিপূরক খাবারে যেন একটু আমিষ থাকে সেদিকেও নজর দেয়া দরকার। এ আমিষটা কিন্তু ছোট মাছের আমিষও হতে পারে। ডালে-ভাতে রান্না করা নরম খিচুড়ি শিশুর জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ভালো পরিপূরক খাবার। খিচুড়িতে একটু আলু, খানিকটা সবুজ শাক এবং একটু ছোট মাছ পিষে দেয়া যেতে পারে। এ খাবার শিশুকে বারে বারে অল্প অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। নিয়ামিতভাবে এসব পরিপূরক খাবার খাওয়ালে শিশুরা কোয়াশিয়রকর, ম্যারাসমাস ও অন্যান্য মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পাবে এবং শিশু সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।

আমিষ ছাড়াও ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’। ছোট মাছ খাওয়ার আর একটা বিশেষ দিক হল- যেসব ছোট মাছ কাঁটাসহ খাওয়া যায়, তা থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম পেতে পারি। শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে শিশু ও ছোট ছেলে-মেয়েদের ‘রিকেট’ নামক এক প্রকার রোগ হয়। খাবারে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে গর্ভবতী মহিলাদের ‘অস্টিওম্যালেসিয়া’ নামক এক প্রকার রোগ হয়। সামুদ্রিক ছোট মাছগুলো আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন ছাড়াও অত্যন্ত দরকারী আরেকটি পুষ্টি উপাদান আয়োডিনের চাহিদা পূরণ করে। এজন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসহ আয়োডিনের চাহিদা পূরণের জন্য সামুদ্রিক ছোট মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দামি বড় মাছ না খেতে পারলে আফসোস করার কোন কারণ নেই। দেহের পুষ্টি সাধন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বড় মাছের মতো ছোট মাছের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ছোট মাছ বলে তার প্রতি অবহেলা বা অনীহা প্রদর্শন না করে এগুলোকে সামর্থ্য অনুযায়ী নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।

[লেখক : উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা,

উপজেলা কৃষি অফিস, রূপসা, খুলনা]

back to top