alt

উপ-সম্পাদকীয়

অনিয়মে কে বড়?

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

: বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২

বাংলা জনপদের মানুষের বিদেশি সংস্কৃতি, প্রথা ও নিয়মকানুনগুলোকে রাখে তাদের শ্রদ্ধার স্থানে, প্রকৃত বিশ্লেষণটি কি তারা কখনও করেছে। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ভদ্রলোক দেশে আসেন। দেশে অবস্থানকালে তিনি তার এক আত্মীয়কে স্ট্রেশন থেকে বাসায় নিয়ে আসতে যান। বাংলাদেশ রেলওয়েরে নিয়ম আছে, কেউ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করলে তাকে প্ল্যাটফর্মে টিকিট কাটতে হবে। তাছাড়া কোন ট্রেন যাত্রীকে রিসিভ করতে হলে প্ল্যাটফর্ম টিকিট বাধ্যতামূলক। তাই প্রবাসী ভদ্রলোকটি প্ল্যাটফর্ম টিকিট কেনার জন্য টিকিট কাউন্টার খুঁজতে থাকেন। রেল একজন কর্মচারীর কাছে তিনি জানতে চান প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি করে কোন কাউন্টারে। রেল কর্মচারী বত্রিশ পাটি বের করে হেসে বলেন ওসব লাগবে না, আপনি চলে যান প্ল্যাটফর্মে। প্রবাসী ভদ্রলোক এ ধরনের অনিয়ম দেখে একটু অবাক হলেন। কারণ তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের এ ধরনের নিয়মগুলো কঠোরভাবে মানতে হয়। তাই তিনি এই অনিয়মটা বড় আকারে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এবং দুই দেশের নিয়ম মানার সংস্কৃতি নিয়ে শৈল্পিক শব্দ বুননে চমৎকার একটি লেখা লিখে ফেলেন। বাংলাদেশের এই নিয়মগুলো দেখার দায়িত্ব শান্তিশৃঙ্খলা বাহিনীর। এসব নিয়মগুলো যখন ভাঙছে তখন এদেশের পুলিশ নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায়। তাই পুলিশকে নানাভাবে অনৈতিক বিশ্লেষণে বিশেষায়িত করা হয়। একটি প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম পাঁচ টাকা। পাঁচ টাকাটা বড় কথা নয়, এখানে নিয়ম লঙ্ঘিত হচ্ছে এভাবে প্রতিদিন। এটাই মুখ্য বিষয়। একটা অনিয়মই আরেকটি অনিয়মের জন্ম দেয়।

কানাডা প্রবাসী জনৈক বাঙালি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কানাডায় আশ্রয় না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে যা লিখেছিলেন তার মর্মাথ হলো, কানাডায় অনৈতিকদের স্থান নেই। আরেক কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশে এসে তার কেনা জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে পড়েছিলেন নানা হয়রানিতে, তার নাকি পিওনকেও ৫০০ টাকা বখশিশ দিতে হয়েছে। তিনি বললেন এটা বড় ধরনের অনিয়ম। অবশ্যই এটা অপরাধ। ওই কানাডা প্রবাসীর নৈতিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এক বিশাল দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। তিনি কানাডার নির্মল নিয়ম কানুন মানার সঙ্গে সুনিপুণ দক্ষতায় বাংলাদেশের দুর্নীতির অসাধারণ শব্দের বুননে একটি চিত্রায়ন প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক এদেশের বন্ধুর কাছে।

সুইজারল্যান্ড প্রবাসী এক ভদ্রলোক, সুইজারল্যান্ডের বাসে ট্রেনে উঠার সারিবদ্ধ লাইনের সঙ্গে ঢাকা শহরের যাত্রীদের বাসে উঠার এক বেমাননকর শব্দ ছবি আকেন। দেশের ছিনতাই, চাঁদাবাজি ধর্ষণসহ নানা ধরনের অনৈতিক অপরাধ প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে । বাংলাদেশে এই অনিয়মগুলো হয় কেন? তার মূল শক্তি জোগানদার কারা, এ ধরনের দুর্নীবাজদের শক্তির উৎসটি কোথায়? তা খোঁজে বের করা দরকার। একজন সাধারণ মানুষ দুর্নীতি করলে কতটা করতে পারে? বড় জোর প্ল্যাটফর্মের পাঁচ টাকার টিকিট। একজন পুলিশ কনেস্টবল সারাদিন ডিউটি করে কত টাকা ঘুষ পায় ? একজন অফিস পিওন ৫০০ টাকা বকশিস নিয়ে মাসে কত টাকার দুর্নীতি করে, এর যথাযথ হিসাবের পরিসংখ্যন আছে কি? এর কোন সঠিক পরিসংখ্যন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে ছোট বড় সব অন্যায় কিন্তু অপরাধ। এই অনিয়মগুলো রাষ্ট্রের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা করা সুযোগ পায় কেন? তারা কি কোন আশ্রয় না পেলে অনিয়ম করতে পারত। স্থাস্থ্য অধিপ্তরের একজন ড্রাইভার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান কীভাবে? তার স্বাক্ষরে কি কোন ফাইল অনুমোদন পায়? কোন মানুষ যদি স্থাস্থ্য দপ্তরে অবৈধ ফাইল তার কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ফাইল উদ্ধার করতে না পারত, তাহলে কি তাকে ঘুষ দিত?

তার কাছে নিয়মবহির্ভূত উপায়ে সুযোগ পেত বলেই মানুষ ওই ড্রাইভারের স্মরণাপন্ন হতো। এই ড্রাইভারের শেল্টার ছিল তার কর্তারা। তাই ড্রাইভার তার বড় কর্তাদের দিয়েই এই অবৈধ কাজগুলোকে বৈধ করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এই দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা রাঘববোয়ালরা দুর্নীতি করছে বলেই দেশের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা সুযোগ পাচ্ছে অনিয়ম করার। দেশের রাঘববোয়ালরা দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা আয় করে। তাদের এই কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয় কিন্তু দেশে থাকে না। আজকে যে সুইজারল্যান্ডকে সুশৃঙ্খল দেশ ও নিয়মের দেশ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এই সুইজারল্যান্ড হচ্ছে বিশ্বের দুর্নীবাজদের টাকা জমা রাখার স্থান। কানাডা সুশৃঙ্খল নিয়মকানুন সম্পর্কে যারা আহ্লাদিত হচ্ছেন তারা কি ভেবে দেখেছেন বাংলাদেশের দুর্নীতির টাকায় গড়ে উঠছে কানাডায় বেগমপাড়া।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক মানিক, এই সভ্য দেশগুলোতেই আশ্রয় পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এখনও বহাল তবিয়তে কানাডা আমেরিকায় অবস্থান করছে। দেশে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে দুর্নীনীতিবাজরা পাড়ি জমাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়। মূলত বিশ্বের কথিত সভ্য দেশগুলোর চক্রজালে পড়ে দেশের বড় বড় দুর্নীতি হচ্ছে। আর এই দুর্নীতিবাজদের সাঙ্গপাঙ্গ হয়ে পড়ছে ছোট ছোট কর্মচারীরা আর এভাবেই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলে। বাংলাদেশের পুলিশকে নিয়ে দেশে ইতিবাচক কোন কথাই শোনা যায় না দেশের অভ্যন্তরে। সবাই বলে থাকেন পুলিশ মানেই দুর্নীতিগ্রস্ত একটি বিভাগ। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষী বাহিনীতে কাজ করছে। আফ্রিকা মহাদেশের বহু দেশে বাংলাদেশের পুলিশ দায়িত্ব পালন করে আসছে। ওই সব দেশে বাংলাদেশের পুলিশের কর্তব্য নিষ্ঠা, দায়িত্ব পালনে সততার বিষয় সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায়। আফ্রিকার মতো দাঙ্গা, হাঙ্গামা, লুটতরাজের দেশে বাংলাদেশের পুলিশ যদি সৎ, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে তাহলে নিজের দেশে পারে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরটাও খোঁজা দরকার।

বাংলাদেশের মানুষ ট্রাফিক আইন মানে না, মুখে মাস্ক পড়ে না নানা ধরনের অনিয়ম করে। তার কারণ হলো এদেশে নিয়ম শৃঙ্খলার বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। নিয়মশৃঙ্খলা, আইন মানার বিষয়গুলো যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা কতটা শুদ্ধ তা দেখা দরকার। তারাই দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। বাংলাদেশের দুর্নীবাজদের সেকেন্ড হোম হচ্ছে কথিত সভ্য দেশ। কথিত সভ্য দেশগুলোর প্ররোচনায় বড় বড় রাঘববোয়ালরা দুর্নীতি করে পাড়ি জমাচ্ছেন তাদের সেকেন্ড হোমে। তাই যারা প্রবাসী (বিশ্বের কথিত সভ্য দেশে বসবাসকারী) তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা আপনাদের বসবাসকারী দেশের সরকারগুলোকে অনুরোধ করেন তারা যেন বাংলাদেশের দুর্নীবাজদের কোটি কোটি টাকা জমা না রাখে, এবং খুনি-ধর্ষক, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় না দেয়। তাহলে দেখা যাবে যে এদেশে দুর্নীতি, অনিয়ম, আইন অমান্য করার বিষয়গুলো দ্রুত হ্রাস পাবে।

[লেখক : উন্নয়নকর্মী]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

অনিয়মে কে বড়?

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২

বাংলা জনপদের মানুষের বিদেশি সংস্কৃতি, প্রথা ও নিয়মকানুনগুলোকে রাখে তাদের শ্রদ্ধার স্থানে, প্রকৃত বিশ্লেষণটি কি তারা কখনও করেছে। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ভদ্রলোক দেশে আসেন। দেশে অবস্থানকালে তিনি তার এক আত্মীয়কে স্ট্রেশন থেকে বাসায় নিয়ে আসতে যান। বাংলাদেশ রেলওয়েরে নিয়ম আছে, কেউ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করলে তাকে প্ল্যাটফর্মে টিকিট কাটতে হবে। তাছাড়া কোন ট্রেন যাত্রীকে রিসিভ করতে হলে প্ল্যাটফর্ম টিকিট বাধ্যতামূলক। তাই প্রবাসী ভদ্রলোকটি প্ল্যাটফর্ম টিকিট কেনার জন্য টিকিট কাউন্টার খুঁজতে থাকেন। রেল একজন কর্মচারীর কাছে তিনি জানতে চান প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি করে কোন কাউন্টারে। রেল কর্মচারী বত্রিশ পাটি বের করে হেসে বলেন ওসব লাগবে না, আপনি চলে যান প্ল্যাটফর্মে। প্রবাসী ভদ্রলোক এ ধরনের অনিয়ম দেখে একটু অবাক হলেন। কারণ তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের এ ধরনের নিয়মগুলো কঠোরভাবে মানতে হয়। তাই তিনি এই অনিয়মটা বড় আকারে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এবং দুই দেশের নিয়ম মানার সংস্কৃতি নিয়ে শৈল্পিক শব্দ বুননে চমৎকার একটি লেখা লিখে ফেলেন। বাংলাদেশের এই নিয়মগুলো দেখার দায়িত্ব শান্তিশৃঙ্খলা বাহিনীর। এসব নিয়মগুলো যখন ভাঙছে তখন এদেশের পুলিশ নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায়। তাই পুলিশকে নানাভাবে অনৈতিক বিশ্লেষণে বিশেষায়িত করা হয়। একটি প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম পাঁচ টাকা। পাঁচ টাকাটা বড় কথা নয়, এখানে নিয়ম লঙ্ঘিত হচ্ছে এভাবে প্রতিদিন। এটাই মুখ্য বিষয়। একটা অনিয়মই আরেকটি অনিয়মের জন্ম দেয়।

কানাডা প্রবাসী জনৈক বাঙালি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কানাডায় আশ্রয় না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে যা লিখেছিলেন তার মর্মাথ হলো, কানাডায় অনৈতিকদের স্থান নেই। আরেক কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশে এসে তার কেনা জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে পড়েছিলেন নানা হয়রানিতে, তার নাকি পিওনকেও ৫০০ টাকা বখশিশ দিতে হয়েছে। তিনি বললেন এটা বড় ধরনের অনিয়ম। অবশ্যই এটা অপরাধ। ওই কানাডা প্রবাসীর নৈতিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এক বিশাল দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। তিনি কানাডার নির্মল নিয়ম কানুন মানার সঙ্গে সুনিপুণ দক্ষতায় বাংলাদেশের দুর্নীতির অসাধারণ শব্দের বুননে একটি চিত্রায়ন প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক এদেশের বন্ধুর কাছে।

সুইজারল্যান্ড প্রবাসী এক ভদ্রলোক, সুইজারল্যান্ডের বাসে ট্রেনে উঠার সারিবদ্ধ লাইনের সঙ্গে ঢাকা শহরের যাত্রীদের বাসে উঠার এক বেমাননকর শব্দ ছবি আকেন। দেশের ছিনতাই, চাঁদাবাজি ধর্ষণসহ নানা ধরনের অনৈতিক অপরাধ প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে । বাংলাদেশে এই অনিয়মগুলো হয় কেন? তার মূল শক্তি জোগানদার কারা, এ ধরনের দুর্নীবাজদের শক্তির উৎসটি কোথায়? তা খোঁজে বের করা দরকার। একজন সাধারণ মানুষ দুর্নীতি করলে কতটা করতে পারে? বড় জোর প্ল্যাটফর্মের পাঁচ টাকার টিকিট। একজন পুলিশ কনেস্টবল সারাদিন ডিউটি করে কত টাকা ঘুষ পায় ? একজন অফিস পিওন ৫০০ টাকা বকশিস নিয়ে মাসে কত টাকার দুর্নীতি করে, এর যথাযথ হিসাবের পরিসংখ্যন আছে কি? এর কোন সঠিক পরিসংখ্যন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে ছোট বড় সব অন্যায় কিন্তু অপরাধ। এই অনিয়মগুলো রাষ্ট্রের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা করা সুযোগ পায় কেন? তারা কি কোন আশ্রয় না পেলে অনিয়ম করতে পারত। স্থাস্থ্য অধিপ্তরের একজন ড্রাইভার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান কীভাবে? তার স্বাক্ষরে কি কোন ফাইল অনুমোদন পায়? কোন মানুষ যদি স্থাস্থ্য দপ্তরে অবৈধ ফাইল তার কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ফাইল উদ্ধার করতে না পারত, তাহলে কি তাকে ঘুষ দিত?

তার কাছে নিয়মবহির্ভূত উপায়ে সুযোগ পেত বলেই মানুষ ওই ড্রাইভারের স্মরণাপন্ন হতো। এই ড্রাইভারের শেল্টার ছিল তার কর্তারা। তাই ড্রাইভার তার বড় কর্তাদের দিয়েই এই অবৈধ কাজগুলোকে বৈধ করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এই দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা রাঘববোয়ালরা দুর্নীতি করছে বলেই দেশের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা সুযোগ পাচ্ছে অনিয়ম করার। দেশের রাঘববোয়ালরা দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা আয় করে। তাদের এই কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয় কিন্তু দেশে থাকে না। আজকে যে সুইজারল্যান্ডকে সুশৃঙ্খল দেশ ও নিয়মের দেশ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এই সুইজারল্যান্ড হচ্ছে বিশ্বের দুর্নীবাজদের টাকা জমা রাখার স্থান। কানাডা সুশৃঙ্খল নিয়মকানুন সম্পর্কে যারা আহ্লাদিত হচ্ছেন তারা কি ভেবে দেখেছেন বাংলাদেশের দুর্নীতির টাকায় গড়ে উঠছে কানাডায় বেগমপাড়া।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক মানিক, এই সভ্য দেশগুলোতেই আশ্রয় পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এখনও বহাল তবিয়তে কানাডা আমেরিকায় অবস্থান করছে। দেশে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে দুর্নীনীতিবাজরা পাড়ি জমাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়। মূলত বিশ্বের কথিত সভ্য দেশগুলোর চক্রজালে পড়ে দেশের বড় বড় দুর্নীতি হচ্ছে। আর এই দুর্নীতিবাজদের সাঙ্গপাঙ্গ হয়ে পড়ছে ছোট ছোট কর্মচারীরা আর এভাবেই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলে। বাংলাদেশের পুলিশকে নিয়ে দেশে ইতিবাচক কোন কথাই শোনা যায় না দেশের অভ্যন্তরে। সবাই বলে থাকেন পুলিশ মানেই দুর্নীতিগ্রস্ত একটি বিভাগ। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষী বাহিনীতে কাজ করছে। আফ্রিকা মহাদেশের বহু দেশে বাংলাদেশের পুলিশ দায়িত্ব পালন করে আসছে। ওই সব দেশে বাংলাদেশের পুলিশের কর্তব্য নিষ্ঠা, দায়িত্ব পালনে সততার বিষয় সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায়। আফ্রিকার মতো দাঙ্গা, হাঙ্গামা, লুটতরাজের দেশে বাংলাদেশের পুলিশ যদি সৎ, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে তাহলে নিজের দেশে পারে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরটাও খোঁজা দরকার।

বাংলাদেশের মানুষ ট্রাফিক আইন মানে না, মুখে মাস্ক পড়ে না নানা ধরনের অনিয়ম করে। তার কারণ হলো এদেশে নিয়ম শৃঙ্খলার বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। নিয়মশৃঙ্খলা, আইন মানার বিষয়গুলো যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা কতটা শুদ্ধ তা দেখা দরকার। তারাই দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ। বাংলাদেশের দুর্নীবাজদের সেকেন্ড হোম হচ্ছে কথিত সভ্য দেশ। কথিত সভ্য দেশগুলোর প্ররোচনায় বড় বড় রাঘববোয়ালরা দুর্নীতি করে পাড়ি জমাচ্ছেন তাদের সেকেন্ড হোমে। তাই যারা প্রবাসী (বিশ্বের কথিত সভ্য দেশে বসবাসকারী) তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা আপনাদের বসবাসকারী দেশের সরকারগুলোকে অনুরোধ করেন তারা যেন বাংলাদেশের দুর্নীবাজদের কোটি কোটি টাকা জমা না রাখে, এবং খুনি-ধর্ষক, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় না দেয়। তাহলে দেখা যাবে যে এদেশে দুর্নীতি, অনিয়ম, আইন অমান্য করার বিষয়গুলো দ্রুত হ্রাস পাবে।

[লেখক : উন্নয়নকর্মী]

back to top