এমএ কবীর
আসাদুর রহমান শাহীন। তিনি দুঃখী মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ। সকালে হাঁটতে গিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো টের পেলেন, তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং ইন্দ্রিয়গুলোর সক্ষমতা আগের মতো নেই। হাঁটছেন বটে কিন্তু আগে যেভাবে ছন্দময় গতিতে হাঁটতে পারতেন ওমনটি পারছেন না। নিজের অজান্তে পদক্ষেপগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তার একদম পাশ দিয়ে রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলে যাচ্ছে; কিন্তু তিনি শুধু তখনই টের পাচ্ছেন যখন দেখছেন সেগুলো গা ঘেঁষে অতিক্রম করছে।
নিজের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের এহেন দুর্বলতা দেখার পর ভয়ে তার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে। তিনি রাস্তা ছেড়ে ফুটপাথ ধরে অতি সতর্কতার সঙ্গে বাজারের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করেন। বাজারে পৌঁছে দেখেন, ভালো ভালো পণ্যে পুরো বাজার ভরপুর; কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। যারা এসেছেন তারা প্রায় সবাই দরকষাকষি করছেন। বিক্রেতা মরিয়া হয়ে অনুনয়-বিনয় করে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছেন। রহমান সাহেব সামর্থ্য অনুযায়ী কয়েক পদের মাছ কিনলেন এবং বাসায় ফেরার জন্য রিকশা খুঁজতে গিয়ে দেখলেন, কয়েকটি রিকশা দাঁড়িয়ে আছে এবং রিকশাওয়ালাদের সবাই উদাস হয়ে কী যেন ভাবছে। তিনি সবচেয়ে উদাসী এবং হতাশাগ্রস্ত বলে যে রিকশাওয়ালাকে চিহ্নিত করলেন তার রিকশার সামনে গিয়ে বললেন, ‘নিউ মার্কেট ঢাকা কলেজের পেছনে নায়েম রোড যাবেন কি না। তিনি নির্লিপ্তভাবে বললেন-ওঠেন।’ তবে ক্ষণেকের জন্য তার মুখের দিকে তাকালেন কি না সন্দেহ।
রিকশায় ওঠার পর টের পেলেন, রিকশাওয়ালা তার গন্তব্যের কথা শোনেননি। তিনি উল্টো পথে চালাতে লাগলেন। তাকে পুনরায় গন্তব্যের কথা বলার পর তিনি ধীরেসুস্থে চালাতে চালাতে বাড়ির সামনে রিকশা থামালেন। তাকে ১০০ টাকার একটি নোট দিলেন। তিনি তার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলেন, তার কাছে ভাঙতি নেই। বললেন, ভাঙতি লাগবে না। পুরোটাই রাখেন। তিনি কোন কথা বললেন না এবং তার দিকে একবারও তাকালেন না। তিনি একটু অবাক হলেন। কারণ কোন রিকশাওলাকে দ্বিগুণ ভাড়া দেয়া হলে তারা খুশি হন। কেউ কেউ কৃতজ্ঞতায় হেসে দেন-আবার কেউবা ধন্যবাদ জানান। কিন্তু সে দিনের রিকশাওয়ালা ওসব কিছুই করলেন না-বরং টাকাটি তিনি যখন পকেটে রাখতে যাবেন ঠিক তখন তার মোবাইলে রিং বেজে উঠে। আসাদ সাহেব মালসামানা নামাতে নামাতে শুনলেন-রিকশাওয়ালা মহাবিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করছেন-এই সময়ে ফোন করছ কেন? কে মরছে? আমি কী করব? আমি আসতে পারব না-আমার ভাড়া নাই। তিনি বাড়ির মধ্যে ঢুকতে গিয়ে তার কথাগুলো শুনলেন এবং তার অদ্ভুত চরিত্র-কর্কশ কথাবার্তা এবং দুর্বল জীর্ণশীর্ণ দেহের তেজ নিয়ে পরে চিন্তাভাবনা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি যখন লিফটে উঠতে যাবেন তখন কৌতুহলবশত পেছনে ফিরে রিকশাওলাকে দেখার চেষ্টা করলেন। দেখলেন, তিনি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অঝোরে কাঁদছেন এবং ক্ষণে ক্ষণে চোখের পানি মুছছেন। দৃশ্যটি দেখার পর তার অন্তর হু হু করে উঠল। দারোয়ানকে বললেন, রিকশাওয়ালাকে ডেকে আনার জন্য। তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় মাথা নিচু করে এলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে মারা গেছে? তিনি বললেন, আমার মা। তিনি পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে দিলেন। রিকসা ওয়ালা মাথা নিচু করে গ্রহণ করলেন এবং কোনো কথা না বলে কাঁদতে কাঁদতে রিকশার কাছে ফিরে গেলেন।
বাসায় ফেরার পর পুরো ঘটনা অর্থাৎ বাসা থেকে বাজারে গমন এবং ফিরে আসার সময় যা হলো তা তাকে রীতিমতো উতলা করে তুলল। প্রথমে রিকশাওয়ালার কথা ভাবলেন। বাজারে তিনি যখন উদাসীনভাবে বসেছিলেন তখন পর্যন্ত মায়ের মৃত্যুসংবাদ পাননি। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে প্রিয়জন হারানোর বেদনা তার অন্তরে পৌঁছে যায়। দ্বিতীয়ত, চলমান সময়ের নিষ্ঠুরতা এবং অর্থনৈতিক দৈন্য তার আবেগ-অনুভূতি এতটা ভোঁতা করে দেয় যার কারণে অত সকালে তার স্ত্রীর ফোন পেয়ে প্রথমেই কর্কশভাবে বলেন, ফোন দিছ কেন? আমি কি শুইয়্যা-বইস্যা থাকি? তারপর তিনি যখন মায়ের মৃত্যুসংবাদ পান তখন দারিদ্র্যের নির্মম নিষ্ঠুরতায় পিষ্ট হওয়া মানুষটি মানবিক গুণ পরিহার করে কর্কশভাবে বলেন-মরছে তো কী হয়েছে, আমি কী করুম? আমি কীভাবে আসুম? ভাড়া নাই। এহন ভাড়া পামু কই! এ বক্তব্য দেয়ার খানিক পরে রিকশাওয়ালার হৃদয়ের মধ্যে যে মানবিকতার বীজ ছিল-তা হঠাৎ করেই গজিয়ে উঠতে থাকে। মায়ের মৃত্যু এবং মায়ের সঙ্গে তার সুখময় স্মৃতির পাশাপাশি বাড়ির টান যুগপৎভাবে বিদ্যুতের গতিতে বিক্রিয়া শুরু করে। ফলে নিজের অজান্তে শুরু করেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অঝোরে কান্না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা নিঃসন্দেহে মেধাবী। তারা দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যায়তন থেকে সেরা পৃষ্ঠপোষকতাটাই পাবে এটিই স্বাভাবিক। শুধু লেখাপড়া করার জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য আর যা যাবতীয় সাহায্য প্রয়োজন, সেটার আশা একজন শিক্ষার্থী তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে করতেই পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক সময়ে তাকে সঠিক সাহায্যটা না করতে পারে, সেটা ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্যায় করা হয় বটে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করেছেন, যা সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ পেয়েছে। রেজিস্ট্রার ভবনে কোনো কাজে যাওয়া তাদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের। নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে কর্মচারীদের খোশগল্প করতে দেখে শিক্ষার্থীরাভাবে, কর্মচারীদের হয়তো কাজের চাপ কম, চটজলদি তাদের কাজ হয়ে যাবে। আদতে হয় তার উল্টোটা। ‘লাঞ্চের পরে আসেন’-এ কথা শুনে তারা লাঞ্চ বিরতির পর ক্লাসের কারণে খানিকটা দেরি করে গেলে শোনেন পরের দিন আসার কথা। শিক্ষার্থীরা যখনই কোন কাজের জন্য যায়, ওই ভবনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী খারাপ আচরণ করেন। দুপুর ১২টার পর কোনো কাজের জন্য গেলে খাবারের বাহানা দিয়ে বিকেলের আগে কাজে হাত দেন না। এমনকি সামান্য কাজেও তিন-চার দিন পর্যন্ত দেরি করান।
ভর্তির প্রাথমিক কার্যক্রম অনলাইনে হলেও অফলাইনে দুই হাত লম্বা এক বিশাল ফরম পূরণের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হয়। সেমিস্টার ফাইনাল ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ, সেমিস্টার ফি জমা, বৃত্তির কাজসহ যাবতীয় কাজ করতে হয় এমন লম্বা ফরম পূরণ করে। বিভাগ থেকে প্রথমে ফরম নিয়ে তা পূরণ করে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরপর সেই কাগজে আবাসিক হলের প্রভোস্টের স্বাক্ষর নিতে হয়। হল থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আবার ছুটতে হয় ব্যাংকে। অনলাইনে যেটুকু কাজ, তা করতে গেলে প্রায়ই সার্ভারে সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন বিভাগ, রেজিস্ট্রার ভবন, হল অফিস, ব্যাংক ইত্যাদি জায়গায় ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের নানা একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের যে লম্বা পদ্ধতি, সেটা একরকমের ম্যারাথন বলা চলে। পুরো দেশ যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলছে, সেখানে কেন দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতটা পিছিয়ে আছে, তা বোধগম্য নয়। সব সমস্যার সমাধান প্রযুক্তির মাধ্যমে হোক বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ এটা তাদের দাবি করতে হবে কেন, না চাইতেই তো পাওয়ার কথা। উপাচার্য অধ্যাপকড. মো. আখতারুজ্জামান যা বলেছেন তা অনেকটাই এ রকম, আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া চলমান, ধীরে ধীরে এসবের সমাধান হবে।
এই প্রক্রিয়া দ্রুত হোক, ধীরে নয়-এটাই কাম্য। নইলে আজকের শিক্ষার্থীরা যা দেখছেন, তা শিখেই নিজেদের ক্যারিয়ারে প্রয়োগ করবেন। সেটা নিশ্চয়ই জাতির ভবিষ্যতের জন্য শোভন হবে না।
আলো দেখা যায়, নাকি আলো মানুষকে পথ দেখায়? যে আলো মানুষকে পথ দেখায়-সে আলোকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, বন্দি করা যায় না। তার পরও মানুষ আলোর অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়। খুব অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু মেনে নিতে হয়। অন্ধকার আছে বলেই আলো এত মূল্যবান। অন্ধকার বাড়তে বাড়তে যতটা পথ অতিক্রম করে, অন্ধকারকে আলো অনুসরণ করে সে পথকে আলোকিত করতে করতে ততটা পথ অতিক্রম করে। এক সময় এমন করেই অন্ধকারের ভেতরে আলো ডুবে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। কেউ কেউ বিপরীত যুক্তি নিয়ে বলতে পারে-অন্ধকারে আলো ডুবে যায় না, বরং আলোয় অন্ধকার ডুবে যায়। সবকিছুই অনুভূতির ব্যাপার, অনুভূতির বৈচিত্র্যের ব্যাপার। কোনো একটা বিষয়কে সব মানুষ যখন একইভাবে না ভেবে ভিন্ন ভিন্নভাবে ভাবার শক্তি অর্জন করে, তখন অনুভূতির শক্তিটা আরও অনুভূতিপ্রবণ ও সৃষ্টিশীল হয়ে উঠে-যদিও ভাবনা ও অনুভূতি নিজেরাও দৃশ্যমান নয়। মানুষ সূর্যের আলো দেখে আলো আবিষ্কারের কথা ভেবেছে। এ দেখাটা অনুভূতির বিষয় হয়তোবা। কারণ অনুভূতি থাকলে মানুষ অদৃশ্যকেও দেখতে পায়। অনুভূতিও তো অদৃশ্যমান। তবে সেটিকে দেখতে হলে আরও সংবেদনশীল অনুভূতি নিয়ে দেখতে হয়। এভাবে অনুভূতির পর অনুভূতিকে দেখার বিষয়টা অনেকটা অধরাকে ধরব ধরব করে না ধরতে পারার আজীবনের অতৃপ্তির মতো।
এটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া। এর দায় প্রশাসন এড়াতে পারে কী? পেশীশক্তির কাছে যদি প্রশাসন জিম্মি হয়, তাহলে যাত্রীদের নিরাপত্তার কি হবে! অনিয়মকে স্থায়ী করার জন্য কি চমৎকার মিছিল! কত মানুষ জ্বলে-পুড়ে-ডুবে, মারা গেল এ নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয়। তারা এখন অনিয়মের ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখতে চায়, যেখানে থাকবে না কোনো জবাবদিহিতা!
রাজধানীর সদরঘাটে গত ৩০ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করতে গেলে বিক্ষোভ মিছিল করে লঞ্চের শ্রমিক, মাস্টার ও ইঞ্জিনচালকদের সংগঠন। গোয়ার্তুমি ও চাপের মুখে একপর্যায়ে অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল করলে সদরঘাটের পল্টুনের ওপর বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক শ্রমিক। গণমাধ্যমে এসেছে, এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ভূঁইয়া। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে থাকা সার্ভেয়ারের কাছে উত্তেজিত অবস্থায় নানা বিষয়ে জানতে চান। পরে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। কিন্তু নানা হুমকি-ধমকি শুনতে হয়। এখন তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন। কিন্তু আমরা একা সদরঘাটে দায়িত্ব পালনের সময় নিরাপত্তা নিয়ে হুমকিতে থাকি।’
তাহলে আবারও প্রমাণ হলো, সরকারের চেয়ে অপরাধীরা শক্তিশালী! এত চাপ যে আইনও অসহায়! তাহলে আইন সবার জন্যে সমান এমন ডায়ালগ কেন? অপশক্তির কাছে সত্য পরাজিত হওয়া খুবই দুঃখজনক। এ কারণেই বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। চাপ দিলেই আইন নাকচ! আইনের পাওয়ার লেস!
তিনি ডাক্তার কিছু বলা যাবে না, তিনি নার্স কিছু বলা যাবে না, তিনি অস্ত্রধারী সরকারি বাহিনীর লোক কিছু বলা যাবে না, তারা মালিক সমিতির লোক, কেউ নৌ শ্রমিক, কেউ মোটরযান শ্রমিক কিছু বলা যাবে না। যখন অব্যবস্থাপনার জন্য শতাধিক মানুষ জীবন বিসর্জন দিল, কেউই বিক্ষোভ প্রতিবাদ জানালো না। যখন ওইসব অব্যবস্থাপনার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছে, তখন নৌ-শ্রমিক, মালিক পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করল। আর সেই চাপে প্রশাসনও দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাবে? আধুনিক বাংলা গানের জীবনমুখী ধারার শিল্পী ‘নচিকেতা’। তার একটি গানে রয়েছে, ‘চোরেরাও দু’দিন পর সংগঠন করবে।’ এখানে প্রশ্ন হলো, এই ত্রুটিযুক্ত নৌযান নির্মাণের জন্য দায়ী কে? ঘটনা ঘটার পরই ভ্রাম্যমাণ আদালত তৎপর কেন! তারা এতদিন [দুর্ঘটনার পূর্বে] কোথায় ছিলেন? ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজ শুধু বিস্কুট, চকোলেট আর শাবান-শ্যাম্পুর গায়ে মেয়াদের তারিখ ঠিক আছে কিনা তদারকি করে বেড়ানো?
[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; সভাপতি,
ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]
এমএ কবীর
বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
আসাদুর রহমান শাহীন। তিনি দুঃখী মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ। সকালে হাঁটতে গিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো টের পেলেন, তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং ইন্দ্রিয়গুলোর সক্ষমতা আগের মতো নেই। হাঁটছেন বটে কিন্তু আগে যেভাবে ছন্দময় গতিতে হাঁটতে পারতেন ওমনটি পারছেন না। নিজের অজান্তে পদক্ষেপগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তার একদম পাশ দিয়ে রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলে যাচ্ছে; কিন্তু তিনি শুধু তখনই টের পাচ্ছেন যখন দেখছেন সেগুলো গা ঘেঁষে অতিক্রম করছে।
নিজের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের এহেন দুর্বলতা দেখার পর ভয়ে তার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে। তিনি রাস্তা ছেড়ে ফুটপাথ ধরে অতি সতর্কতার সঙ্গে বাজারের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করেন। বাজারে পৌঁছে দেখেন, ভালো ভালো পণ্যে পুরো বাজার ভরপুর; কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। যারা এসেছেন তারা প্রায় সবাই দরকষাকষি করছেন। বিক্রেতা মরিয়া হয়ে অনুনয়-বিনয় করে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছেন। রহমান সাহেব সামর্থ্য অনুযায়ী কয়েক পদের মাছ কিনলেন এবং বাসায় ফেরার জন্য রিকশা খুঁজতে গিয়ে দেখলেন, কয়েকটি রিকশা দাঁড়িয়ে আছে এবং রিকশাওয়ালাদের সবাই উদাস হয়ে কী যেন ভাবছে। তিনি সবচেয়ে উদাসী এবং হতাশাগ্রস্ত বলে যে রিকশাওয়ালাকে চিহ্নিত করলেন তার রিকশার সামনে গিয়ে বললেন, ‘নিউ মার্কেট ঢাকা কলেজের পেছনে নায়েম রোড যাবেন কি না। তিনি নির্লিপ্তভাবে বললেন-ওঠেন।’ তবে ক্ষণেকের জন্য তার মুখের দিকে তাকালেন কি না সন্দেহ।
রিকশায় ওঠার পর টের পেলেন, রিকশাওয়ালা তার গন্তব্যের কথা শোনেননি। তিনি উল্টো পথে চালাতে লাগলেন। তাকে পুনরায় গন্তব্যের কথা বলার পর তিনি ধীরেসুস্থে চালাতে চালাতে বাড়ির সামনে রিকশা থামালেন। তাকে ১০০ টাকার একটি নোট দিলেন। তিনি তার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলেন, তার কাছে ভাঙতি নেই। বললেন, ভাঙতি লাগবে না। পুরোটাই রাখেন। তিনি কোন কথা বললেন না এবং তার দিকে একবারও তাকালেন না। তিনি একটু অবাক হলেন। কারণ কোন রিকশাওলাকে দ্বিগুণ ভাড়া দেয়া হলে তারা খুশি হন। কেউ কেউ কৃতজ্ঞতায় হেসে দেন-আবার কেউবা ধন্যবাদ জানান। কিন্তু সে দিনের রিকশাওয়ালা ওসব কিছুই করলেন না-বরং টাকাটি তিনি যখন পকেটে রাখতে যাবেন ঠিক তখন তার মোবাইলে রিং বেজে উঠে। আসাদ সাহেব মালসামানা নামাতে নামাতে শুনলেন-রিকশাওয়ালা মহাবিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করছেন-এই সময়ে ফোন করছ কেন? কে মরছে? আমি কী করব? আমি আসতে পারব না-আমার ভাড়া নাই। তিনি বাড়ির মধ্যে ঢুকতে গিয়ে তার কথাগুলো শুনলেন এবং তার অদ্ভুত চরিত্র-কর্কশ কথাবার্তা এবং দুর্বল জীর্ণশীর্ণ দেহের তেজ নিয়ে পরে চিন্তাভাবনা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি যখন লিফটে উঠতে যাবেন তখন কৌতুহলবশত পেছনে ফিরে রিকশাওলাকে দেখার চেষ্টা করলেন। দেখলেন, তিনি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অঝোরে কাঁদছেন এবং ক্ষণে ক্ষণে চোখের পানি মুছছেন। দৃশ্যটি দেখার পর তার অন্তর হু হু করে উঠল। দারোয়ানকে বললেন, রিকশাওয়ালাকে ডেকে আনার জন্য। তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় মাথা নিচু করে এলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে মারা গেছে? তিনি বললেন, আমার মা। তিনি পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে দিলেন। রিকসা ওয়ালা মাথা নিচু করে গ্রহণ করলেন এবং কোনো কথা না বলে কাঁদতে কাঁদতে রিকশার কাছে ফিরে গেলেন।
বাসায় ফেরার পর পুরো ঘটনা অর্থাৎ বাসা থেকে বাজারে গমন এবং ফিরে আসার সময় যা হলো তা তাকে রীতিমতো উতলা করে তুলল। প্রথমে রিকশাওয়ালার কথা ভাবলেন। বাজারে তিনি যখন উদাসীনভাবে বসেছিলেন তখন পর্যন্ত মায়ের মৃত্যুসংবাদ পাননি। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে প্রিয়জন হারানোর বেদনা তার অন্তরে পৌঁছে যায়। দ্বিতীয়ত, চলমান সময়ের নিষ্ঠুরতা এবং অর্থনৈতিক দৈন্য তার আবেগ-অনুভূতি এতটা ভোঁতা করে দেয় যার কারণে অত সকালে তার স্ত্রীর ফোন পেয়ে প্রথমেই কর্কশভাবে বলেন, ফোন দিছ কেন? আমি কি শুইয়্যা-বইস্যা থাকি? তারপর তিনি যখন মায়ের মৃত্যুসংবাদ পান তখন দারিদ্র্যের নির্মম নিষ্ঠুরতায় পিষ্ট হওয়া মানুষটি মানবিক গুণ পরিহার করে কর্কশভাবে বলেন-মরছে তো কী হয়েছে, আমি কী করুম? আমি কীভাবে আসুম? ভাড়া নাই। এহন ভাড়া পামু কই! এ বক্তব্য দেয়ার খানিক পরে রিকশাওয়ালার হৃদয়ের মধ্যে যে মানবিকতার বীজ ছিল-তা হঠাৎ করেই গজিয়ে উঠতে থাকে। মায়ের মৃত্যু এবং মায়ের সঙ্গে তার সুখময় স্মৃতির পাশাপাশি বাড়ির টান যুগপৎভাবে বিদ্যুতের গতিতে বিক্রিয়া শুরু করে। ফলে নিজের অজান্তে শুরু করেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অঝোরে কান্না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা নিঃসন্দেহে মেধাবী। তারা দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যায়তন থেকে সেরা পৃষ্ঠপোষকতাটাই পাবে এটিই স্বাভাবিক। শুধু লেখাপড়া করার জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য আর যা যাবতীয় সাহায্য প্রয়োজন, সেটার আশা একজন শিক্ষার্থী তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে করতেই পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক সময়ে তাকে সঠিক সাহায্যটা না করতে পারে, সেটা ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্যায় করা হয় বটে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করেছেন, যা সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ পেয়েছে। রেজিস্ট্রার ভবনে কোনো কাজে যাওয়া তাদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের। নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে কর্মচারীদের খোশগল্প করতে দেখে শিক্ষার্থীরাভাবে, কর্মচারীদের হয়তো কাজের চাপ কম, চটজলদি তাদের কাজ হয়ে যাবে। আদতে হয় তার উল্টোটা। ‘লাঞ্চের পরে আসেন’-এ কথা শুনে তারা লাঞ্চ বিরতির পর ক্লাসের কারণে খানিকটা দেরি করে গেলে শোনেন পরের দিন আসার কথা। শিক্ষার্থীরা যখনই কোন কাজের জন্য যায়, ওই ভবনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী খারাপ আচরণ করেন। দুপুর ১২টার পর কোনো কাজের জন্য গেলে খাবারের বাহানা দিয়ে বিকেলের আগে কাজে হাত দেন না। এমনকি সামান্য কাজেও তিন-চার দিন পর্যন্ত দেরি করান।
ভর্তির প্রাথমিক কার্যক্রম অনলাইনে হলেও অফলাইনে দুই হাত লম্বা এক বিশাল ফরম পূরণের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হয়। সেমিস্টার ফাইনাল ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ, সেমিস্টার ফি জমা, বৃত্তির কাজসহ যাবতীয় কাজ করতে হয় এমন লম্বা ফরম পূরণ করে। বিভাগ থেকে প্রথমে ফরম নিয়ে তা পূরণ করে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরপর সেই কাগজে আবাসিক হলের প্রভোস্টের স্বাক্ষর নিতে হয়। হল থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আবার ছুটতে হয় ব্যাংকে। অনলাইনে যেটুকু কাজ, তা করতে গেলে প্রায়ই সার্ভারে সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন বিভাগ, রেজিস্ট্রার ভবন, হল অফিস, ব্যাংক ইত্যাদি জায়গায় ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের নানা একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের যে লম্বা পদ্ধতি, সেটা একরকমের ম্যারাথন বলা চলে। পুরো দেশ যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলছে, সেখানে কেন দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এতটা পিছিয়ে আছে, তা বোধগম্য নয়। সব সমস্যার সমাধান প্রযুক্তির মাধ্যমে হোক বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ এটা তাদের দাবি করতে হবে কেন, না চাইতেই তো পাওয়ার কথা। উপাচার্য অধ্যাপকড. মো. আখতারুজ্জামান যা বলেছেন তা অনেকটাই এ রকম, আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া চলমান, ধীরে ধীরে এসবের সমাধান হবে।
এই প্রক্রিয়া দ্রুত হোক, ধীরে নয়-এটাই কাম্য। নইলে আজকের শিক্ষার্থীরা যা দেখছেন, তা শিখেই নিজেদের ক্যারিয়ারে প্রয়োগ করবেন। সেটা নিশ্চয়ই জাতির ভবিষ্যতের জন্য শোভন হবে না।
আলো দেখা যায়, নাকি আলো মানুষকে পথ দেখায়? যে আলো মানুষকে পথ দেখায়-সে আলোকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, বন্দি করা যায় না। তার পরও মানুষ আলোর অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়। খুব অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু মেনে নিতে হয়। অন্ধকার আছে বলেই আলো এত মূল্যবান। অন্ধকার বাড়তে বাড়তে যতটা পথ অতিক্রম করে, অন্ধকারকে আলো অনুসরণ করে সে পথকে আলোকিত করতে করতে ততটা পথ অতিক্রম করে। এক সময় এমন করেই অন্ধকারের ভেতরে আলো ডুবে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। কেউ কেউ বিপরীত যুক্তি নিয়ে বলতে পারে-অন্ধকারে আলো ডুবে যায় না, বরং আলোয় অন্ধকার ডুবে যায়। সবকিছুই অনুভূতির ব্যাপার, অনুভূতির বৈচিত্র্যের ব্যাপার। কোনো একটা বিষয়কে সব মানুষ যখন একইভাবে না ভেবে ভিন্ন ভিন্নভাবে ভাবার শক্তি অর্জন করে, তখন অনুভূতির শক্তিটা আরও অনুভূতিপ্রবণ ও সৃষ্টিশীল হয়ে উঠে-যদিও ভাবনা ও অনুভূতি নিজেরাও দৃশ্যমান নয়। মানুষ সূর্যের আলো দেখে আলো আবিষ্কারের কথা ভেবেছে। এ দেখাটা অনুভূতির বিষয় হয়তোবা। কারণ অনুভূতি থাকলে মানুষ অদৃশ্যকেও দেখতে পায়। অনুভূতিও তো অদৃশ্যমান। তবে সেটিকে দেখতে হলে আরও সংবেদনশীল অনুভূতি নিয়ে দেখতে হয়। এভাবে অনুভূতির পর অনুভূতিকে দেখার বিষয়টা অনেকটা অধরাকে ধরব ধরব করে না ধরতে পারার আজীবনের অতৃপ্তির মতো।
এটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া। এর দায় প্রশাসন এড়াতে পারে কী? পেশীশক্তির কাছে যদি প্রশাসন জিম্মি হয়, তাহলে যাত্রীদের নিরাপত্তার কি হবে! অনিয়মকে স্থায়ী করার জন্য কি চমৎকার মিছিল! কত মানুষ জ্বলে-পুড়ে-ডুবে, মারা গেল এ নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয়। তারা এখন অনিয়মের ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখতে চায়, যেখানে থাকবে না কোনো জবাবদিহিতা!
রাজধানীর সদরঘাটে গত ৩০ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করতে গেলে বিক্ষোভ মিছিল করে লঞ্চের শ্রমিক, মাস্টার ও ইঞ্জিনচালকদের সংগঠন। গোয়ার্তুমি ও চাপের মুখে একপর্যায়ে অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল করলে সদরঘাটের পল্টুনের ওপর বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক শ্রমিক। গণমাধ্যমে এসেছে, এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ভূঁইয়া। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে থাকা সার্ভেয়ারের কাছে উত্তেজিত অবস্থায় নানা বিষয়ে জানতে চান। পরে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মাহবুবুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। কিন্তু নানা হুমকি-ধমকি শুনতে হয়। এখন তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন। কিন্তু আমরা একা সদরঘাটে দায়িত্ব পালনের সময় নিরাপত্তা নিয়ে হুমকিতে থাকি।’
তাহলে আবারও প্রমাণ হলো, সরকারের চেয়ে অপরাধীরা শক্তিশালী! এত চাপ যে আইনও অসহায়! তাহলে আইন সবার জন্যে সমান এমন ডায়ালগ কেন? অপশক্তির কাছে সত্য পরাজিত হওয়া খুবই দুঃখজনক। এ কারণেই বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। চাপ দিলেই আইন নাকচ! আইনের পাওয়ার লেস!
তিনি ডাক্তার কিছু বলা যাবে না, তিনি নার্স কিছু বলা যাবে না, তিনি অস্ত্রধারী সরকারি বাহিনীর লোক কিছু বলা যাবে না, তারা মালিক সমিতির লোক, কেউ নৌ শ্রমিক, কেউ মোটরযান শ্রমিক কিছু বলা যাবে না। যখন অব্যবস্থাপনার জন্য শতাধিক মানুষ জীবন বিসর্জন দিল, কেউই বিক্ষোভ প্রতিবাদ জানালো না। যখন ওইসব অব্যবস্থাপনার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছে, তখন নৌ-শ্রমিক, মালিক পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করল। আর সেই চাপে প্রশাসনও দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাবে? আধুনিক বাংলা গানের জীবনমুখী ধারার শিল্পী ‘নচিকেতা’। তার একটি গানে রয়েছে, ‘চোরেরাও দু’দিন পর সংগঠন করবে।’ এখানে প্রশ্ন হলো, এই ত্রুটিযুক্ত নৌযান নির্মাণের জন্য দায়ী কে? ঘটনা ঘটার পরই ভ্রাম্যমাণ আদালত তৎপর কেন! তারা এতদিন [দুর্ঘটনার পূর্বে] কোথায় ছিলেন? ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজ শুধু বিস্কুট, চকোলেট আর শাবান-শ্যাম্পুর গায়ে মেয়াদের তারিখ ঠিক আছে কিনা তদারকি করে বেড়ানো?
[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; সভাপতি,
ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]