রাজিব শর্মা
অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষা আর রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক, যাপন করতে পারছি সম্মানিত জীবন। আমাদের এ দেশের উত্থানের পেছনে রয়েছে অনেক অশ্রুঝরা দিন আর রক্ত ঝরা অধ্যায়। সেই অধ্যায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী হলো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। আর এ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যে ক’জন জড়িত তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মাস্টারদা সূর্যসেন এবং তার যোগ্য শিষ্য প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম আত্মহুতি দেয়া নারী। তিনি ১৯১১ সালের ৫ মে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম প্রতিভাদেবী এবং বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার।
কেমন ছিলেন তিনি
ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পান প্রীতিলতা। ওই স্কুল থেকে তিনি ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। থাকতেন কলেজের ছাত্রীনিবাসে। ওই সময় প্রীতিলতা বিপ্লবী লীলা নাগের সংস্পর্শে আসেন। লীলা নাগ ওই সময় দীপালী সংঘের নেতৃত্বে ছিলেন। দীপালী সংঘ ছিল ঢাকার বিপ্লবী দল শ্রীসংঘের নারী শাখা। ১৯৩০ সালে তিনি আইএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে পঞ্চম হন। এরপর কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩২ সালের ডিসটিংশনসহ তিনি বিএ পাস করেন।
সূর্যসেনের সান্নিধ্যে যেভাবে এলেন তিনি
লীলা নাগ বুঝে নিলেন প্রীতিলতাকে দিয়ে দেশের কাজ হবে। তাই লীলা নাগ তাকে ‘দীপালী সংঘের’ সদস্য হওয়ার জন্য একটি ফর্ম দিয়ে বললেন, ‘তুমি এর উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে একমত পোষণ করলে বাড়ি থেকে এসে ফর্মটি পূরণ করে দিও।’
বাড়ি আসার পরের দিন তিনি ওই ফর্মটি পূর্ণেন্দু দস্তিদারকে দেখিয়ে বললেন, ‘দাদা, আমি এই সংঘের সঙ্গে কাজ করবো। তোমরা তো আর আমাকে তোমাদের দলে নিবে না, তাই এখানে যুক্ত হয়ে আমি দেশের জন্য কাজ করব।’ পূর্ণেন্দু দস্তিদার ওই ফর্মটি প্রীতিলতার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ‘দলনেতাকে দেখিয়ে তোমাকে এটি ফেরত দিব।’
১৯২৯ সাল। তখন সূর্যসেন চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক। পূর্ণেন্দু দস্তিদার প্রীতিলতার কাছ থেকে ফর্মটি নেয়ার পরের দিন বিকেল বেলা বিপ্লবীদের গোপন বৈঠকে উপস্থিত হলেন। বৈঠক শেষে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে তিনি মাষ্টারদা সূর্যসেনকে ওই ফর্মটি দেখালেন এবং প্রীতিলতার মনের কথাগুলো বললেন। মাষ্টারদা সূর্যসেন সবকিছু শুনে পূর্ণেন্দু দস্তিদারকে বললেন, আজ থেকে আমরা প্রীতিলতাকে আমাদের দলের সদস্য করে নিলাম। কিন্তু এই কথা আপাতত আমরা তিনজন ছাড়া অন্য কাউকে জানানো যাবে না। প্রীতিলতাকে একদিন আমার কাছে নিয়ে এসো।
অবশেষে ১৯৩২ সালের ১৩ জুন চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের প্রধান কেন্দ্র ধলঘাটের ঘাঁটিতে মাস্টারদা সূর্যসেনের সঙ্গে দেখা করতে যান প্রীতিলতা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় প্রীতিলতা তার মাকে সীতাকুন্ডে যাওয়ার কথা বলেন। যে বাডড়তে প্রীতিলতার সঙ্গে মাস্টারদার সাক্ষাৎ হয় সে বাড়িতে নির্মল সেনও ছিলেন। সেই বাড়িতে সূর্যসেনের অবস্থানের কথা পটিয়া পুলিশ ক্যাম্প গোপন সূত্রে জানতে পারে। এর আগে একই বছর মে মাসে ব্রিটিশ সরকার সূর্যসেন ও নির্মল সেনকে জীবিত কিংবা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। পটিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন খবরটি জানার পর পুরস্কার এবং পদোন্নতির আশায় ওই বাড়িতে অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং রাত প্রায় ৯টায় ধলঘাটের ওই বাড়িতে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যাপারটি নির্মল সেনকে জানিয়ে সূর্যসেন ও প্রীতিলতা বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পুলিশের গুলিতে নির্মল সেন নিহত হন।
চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামে পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত হলে সূর্যসেন এ অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন প্রীতিলতাকে। তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড়ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে ছিল প্রহরীবেষ্টিত। একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এ দেশীয় কেউ ওই ক্লাবের ধারে কাছে যেতে পারতো না। সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাস করতো। এই ক্লাবের ফটকে লেখা ছিল ‘উড়মং ধহফ ওহফরধহং হড়ঃ ধষষড়বিফ।’
সেই দিনের আক্রমণে প্রীতিলতার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা হলেন- কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী, মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে এবং পান্না সেন। বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার প্রথমে ক্লাবের ভিতর থেকে রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ মিটিটের দিকে আক্রমণের নিশানা দেখিয়ে দেন এবং এর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন ছিল শনিবার, প্রায় ৪০জন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করেন। কিন্তু আক্রমণ শেষে সবাই ফিরে আসতে সক্ষম হলেও গুলিবিদ্ধ হন দলনেতা প্রীতিলতা।
তবে তিনি যে অগ্নিকন্যা, জীবন দেবেন কিন্তু ইংরেজদের হাতে ধরা দেবেন না কিছুতেই। তাই গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই ‘পটাশিয়াম সায়ানাইড’ খেয়ে আত্মদান করলেন।
পরের দিন পুলিশ ক্লাবের পাশে পড়ে থাকা লাশটিকে প্রথমে পুরুষ ভেবেছিল। কিন্তু মাথার পাগড়ি খুলে লম্বা চু্েলর মেয়েটিকে দেখে শুধু ব্রিটিশ পুলিশ নয়, গোটা ব্রিটিশ সরকারই নড়েচড়ে উঠল। আলোড়িত হলো গোটা ভারতবাসী।
যেখানে তিনি শহীদ হন : যুদ্ধে যাবার আগে মাকে উদ্দেশ করে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন তিনি-
‘মাগো, অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভারে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?
[লেখক : সংবাদকর্মী]
রাজিব শর্মা
বৃহস্পতিবার, ০৫ মে ২০২২
অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষা আর রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক, যাপন করতে পারছি সম্মানিত জীবন। আমাদের এ দেশের উত্থানের পেছনে রয়েছে অনেক অশ্রুঝরা দিন আর রক্ত ঝরা অধ্যায়। সেই অধ্যায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী হলো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। আর এ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যে ক’জন জড়িত তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মাস্টারদা সূর্যসেন এবং তার যোগ্য শিষ্য প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম আত্মহুতি দেয়া নারী। তিনি ১৯১১ সালের ৫ মে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম প্রতিভাদেবী এবং বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার।
কেমন ছিলেন তিনি
ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পান প্রীতিলতা। ওই স্কুল থেকে তিনি ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। থাকতেন কলেজের ছাত্রীনিবাসে। ওই সময় প্রীতিলতা বিপ্লবী লীলা নাগের সংস্পর্শে আসেন। লীলা নাগ ওই সময় দীপালী সংঘের নেতৃত্বে ছিলেন। দীপালী সংঘ ছিল ঢাকার বিপ্লবী দল শ্রীসংঘের নারী শাখা। ১৯৩০ সালে তিনি আইএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে পঞ্চম হন। এরপর কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩২ সালের ডিসটিংশনসহ তিনি বিএ পাস করেন।
সূর্যসেনের সান্নিধ্যে যেভাবে এলেন তিনি
লীলা নাগ বুঝে নিলেন প্রীতিলতাকে দিয়ে দেশের কাজ হবে। তাই লীলা নাগ তাকে ‘দীপালী সংঘের’ সদস্য হওয়ার জন্য একটি ফর্ম দিয়ে বললেন, ‘তুমি এর উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে একমত পোষণ করলে বাড়ি থেকে এসে ফর্মটি পূরণ করে দিও।’
বাড়ি আসার পরের দিন তিনি ওই ফর্মটি পূর্ণেন্দু দস্তিদারকে দেখিয়ে বললেন, ‘দাদা, আমি এই সংঘের সঙ্গে কাজ করবো। তোমরা তো আর আমাকে তোমাদের দলে নিবে না, তাই এখানে যুক্ত হয়ে আমি দেশের জন্য কাজ করব।’ পূর্ণেন্দু দস্তিদার ওই ফর্মটি প্রীতিলতার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ‘দলনেতাকে দেখিয়ে তোমাকে এটি ফেরত দিব।’
১৯২৯ সাল। তখন সূর্যসেন চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক। পূর্ণেন্দু দস্তিদার প্রীতিলতার কাছ থেকে ফর্মটি নেয়ার পরের দিন বিকেল বেলা বিপ্লবীদের গোপন বৈঠকে উপস্থিত হলেন। বৈঠক শেষে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে তিনি মাষ্টারদা সূর্যসেনকে ওই ফর্মটি দেখালেন এবং প্রীতিলতার মনের কথাগুলো বললেন। মাষ্টারদা সূর্যসেন সবকিছু শুনে পূর্ণেন্দু দস্তিদারকে বললেন, আজ থেকে আমরা প্রীতিলতাকে আমাদের দলের সদস্য করে নিলাম। কিন্তু এই কথা আপাতত আমরা তিনজন ছাড়া অন্য কাউকে জানানো যাবে না। প্রীতিলতাকে একদিন আমার কাছে নিয়ে এসো।
অবশেষে ১৯৩২ সালের ১৩ জুন চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের প্রধান কেন্দ্র ধলঘাটের ঘাঁটিতে মাস্টারদা সূর্যসেনের সঙ্গে দেখা করতে যান প্রীতিলতা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় প্রীতিলতা তার মাকে সীতাকুন্ডে যাওয়ার কথা বলেন। যে বাডড়তে প্রীতিলতার সঙ্গে মাস্টারদার সাক্ষাৎ হয় সে বাড়িতে নির্মল সেনও ছিলেন। সেই বাড়িতে সূর্যসেনের অবস্থানের কথা পটিয়া পুলিশ ক্যাম্প গোপন সূত্রে জানতে পারে। এর আগে একই বছর মে মাসে ব্রিটিশ সরকার সূর্যসেন ও নির্মল সেনকে জীবিত কিংবা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। পটিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন খবরটি জানার পর পুরস্কার এবং পদোন্নতির আশায় ওই বাড়িতে অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং রাত প্রায় ৯টায় ধলঘাটের ওই বাড়িতে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যাপারটি নির্মল সেনকে জানিয়ে সূর্যসেন ও প্রীতিলতা বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পুলিশের গুলিতে নির্মল সেন নিহত হন।
চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামে পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত হলে সূর্যসেন এ অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন প্রীতিলতাকে। তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড়ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে ছিল প্রহরীবেষ্টিত। একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এ দেশীয় কেউ ওই ক্লাবের ধারে কাছে যেতে পারতো না। সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাস করতো। এই ক্লাবের ফটকে লেখা ছিল ‘উড়মং ধহফ ওহফরধহং হড়ঃ ধষষড়বিফ।’
সেই দিনের আক্রমণে প্রীতিলতার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা হলেন- কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী, মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে এবং পান্না সেন। বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার প্রথমে ক্লাবের ভিতর থেকে রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ মিটিটের দিকে আক্রমণের নিশানা দেখিয়ে দেন এবং এর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন ছিল শনিবার, প্রায় ৪০জন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করেন। কিন্তু আক্রমণ শেষে সবাই ফিরে আসতে সক্ষম হলেও গুলিবিদ্ধ হন দলনেতা প্রীতিলতা।
তবে তিনি যে অগ্নিকন্যা, জীবন দেবেন কিন্তু ইংরেজদের হাতে ধরা দেবেন না কিছুতেই। তাই গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই ‘পটাশিয়াম সায়ানাইড’ খেয়ে আত্মদান করলেন।
পরের দিন পুলিশ ক্লাবের পাশে পড়ে থাকা লাশটিকে প্রথমে পুরুষ ভেবেছিল। কিন্তু মাথার পাগড়ি খুলে লম্বা চু্েলর মেয়েটিকে দেখে শুধু ব্রিটিশ পুলিশ নয়, গোটা ব্রিটিশ সরকারই নড়েচড়ে উঠল। আলোড়িত হলো গোটা ভারতবাসী।
যেখানে তিনি শহীদ হন : যুদ্ধে যাবার আগে মাকে উদ্দেশ করে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন তিনি-
‘মাগো, অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভারে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?
[লেখক : সংবাদকর্মী]