alt

উপ-সম্পাদকীয়

দায়িত্ব থেকে সরে গেলেই সুশীল হয়ে যান

মোহাম্মদ আবু নোমান

: বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

পদে যখন ছিলেন বিবেককে কোমায় রেখে, ক্ষমতার লোভে অন্ধ ছিলেন! এখন ক্ষমতা নেই, পদও নেই, অথচ বিবেক জাগ্রত! নুনের মেয়াদ শেষ, গুণ গাওয়াও বাদ! দুধ-ননী, মাখন-ঘোল, কমিশন, সবটা খাওয়ার পর ৩৬০ ডিগ্রি পল্টি দিয়ে নগ্ন সত্য বলতে পারলেন। ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, ভোটারবিহীন গণবিচ্ছিন্ন নির্বাচন, শতভাগ ভোট, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় শত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট, নির্বাচন ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত, বিপন্ন ও মানুষ খুনের দায়ভার কার? এ দেশে দায়িত্ব থেকে সরে গেলে সবাই সুশীল হয়ে যান। আপনার জীবন কাহিনী ছিলো রোমান্টিকে ভরপুর! যা করে গেলেন দেশ-তথা বিশ্ববাসীর কাছে চিরস্মরণীয় ও অম্লান হয়ে থাকবেন। নির্বাচন ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে, শ্মশানে পাঠিয়ে আজ কৌতুককর সদুপদেশ ডেলিভারি করে বলছেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং;’ আরো বলেছেন, ‘বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’

তাহলে অতীতে বিএনপিকে বাদ দিয়ে আপনি যে এক তরফা নির্বাচন করেছেন সেগুলো গ্রহণযোগ্য হয়েছে কী? লোকলজ্জা বা চক্ষুলজ্জা বলেও একটা কথা আছে। এছাড়া বিএনপিকে ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের হাজার হাজার নির্বাচন করলেন কেন? সাবেক সিইসি যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলতে হয়, আপনি দায়িত্বে থাকতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য কিছু করলেন না কেন? কী কারণে রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলো, তা তলিয়ে দেখেছিলেন কী? দেখার মতো চোখ আপনাদের ছিলো কী? যাই হোক আপনি দেশবাসীর নজর ও আগ্রহে আছেন, আরো অনেক চটকদার বাক্য শোনার অপেক্ষায়।

সিইসি পদে থাকা অবস্থায় তিনি এই সাধু ও অতি আবশ্যকীয় সদুপদেশ মনে রাখলে নির্বাচনী ব্যবস্থাটি ধ্বংস হতো না। তিনি এখন সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর বসে নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু হবে তার পথ বাতলাচ্ছেন। ক্ষমতায় থাকতে তিনি আমেরিকানদেরও ‘সুষ্ঠু ভোট’ শিক্ষা দেওয়ার কথা বলতেন।

গত ৪ জুন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির বিতর্ক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা স্বীকারও করেছেন, ‘বেশ কিছু কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়াটা ছিল অস্বস্তিকর।’ তাহলে বলতে হয়, এভাবে ভোটপড়া নির্বাচনগুলো আপনি বাতিল করেছেন কী-না? জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি বা কমিশন কর্মচারীদের পক্ষপাত বা দায়িত্ব অবহেলার জন্য জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলার বিধানও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের হতে পারে জেল-জরিমানা। অথচ নির্বাচনে বড়বড় ঘটনা ঘটলেও কমিশনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি।

এছাড়া গত ১২ জুন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাবেক সিইসি, ইসি ও ইসি সচিবগণ মতবিনিময়কালে বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ অথচ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ও নির্বাচন কমিশনের সচিবেরা এ কথা স্পষ্ট করে বলেননি, আমাদের নির্বাচন ব্যাবস্থা কেন কীভাবে ধ্বংস হলো? আমরা জানতে চাই, আরো বড় পরিসরে সেই আলোচনা কখন-কবে হবে? ইসি, সিইসি, সচিব মহোদয়গণ যতই মাথা চুলকাতে থাকুন না কেন, কাজির কাজ যতদিন রাজনীতিবিদদের হাতে থাকবে, ততদিন প্রহসনের নির্বাচনের দাবানলের সমাপ্তি হবে না। সত্য হলো, সরকার বা নির্বাহী বিভাগ না চাইলে দেশে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব।

১২ জুন আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেসব কথা বলেছেন, সেসব কথা কি কমিশনের সদস্য ও আমজনতার অজানা? এসব গুরুত্বপূর্ণ কথা আগেও নির্বাচন কমিশনের সংলাপে, মিডিয়া ইভেন্টে, মতবিনিময় সভায় কিংবা গণমাধ্যমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা চটকদার বক্তৃতায় বহুবার বলেছেন। বিগত হুদা কমিশন দায়িত্ব নিয়ে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপও করেছিল। কিন্তু বাস্তবে তারা সেসব পরামর্শের ধারেকাছেও যাননি। কাজ করেছেন ‘ওপরের নির্দেশ’ অনুযায়ী। বাংলাদেশের সবকিছু চলে ওপরের নির্দেশে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশ্বাস, সহাবস্থান, দেশাত্মবোধ, সাধারণ মানুষের মঙ্গল কামনা কোনো দলের মধ্যেই নেই। সবারই লক্ষ্য ক্ষমতা। ক্ষমতা থাকলে আমাকে ঠেকাবে কে? যে কারণে ক্ষমতায় গিয়ে চলে প্রতিশোধের পালা। আমরা দেখেছি ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট, দশ ট্রাক অস্ত্র আমদানি, দুর্নীতির গোলাঘর নামক হাওয়া ভবন, লগি-বৈঠার তান্ডব, লাগাতার আন্দোলন, জঙ্গি সন্ত্রাসের উত্থান, আগুন সন্ত্রাস, পেট্রলবোমার তান্ডবসহ আরো কতো কী? সবকিছুর প্রয়োজনে চাই ক্ষমতা, আর ক্ষমতার উৎস নির্বাচন। সেই নির্বাচন হবে নানা ছলে-বলে, কৌশলে, সংবিধানের দোহাইয়ে দলকে জেতানোর কৌশলে। সোজা কথায় জিতলে ঠিক, না জিতলে বেঠিক।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারাই নানা ঘটনা ও দুর্নীতির বৈতরণী পার পাওয়ার জন্যে নির্বাচন ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করেছে। কারণ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে, শপথ ভুলে সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে অতীতের দুর্নীতি ও আগামীতে সর্বস্তরে লুটপাটে মেতে ওঠা যাবে। দেশের দেউলিয়া ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে আমাদের দেশে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন বরাবরই গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অথচ আমরা দেখেছি, ভারতের প্রয়াত সিইসি টি এন সেসান নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল না থাকলে একের পর এক নির্বাচন স্থগিত করে আবার তারিখ নির্ধারণ করেছেন কারও পরোয়া না করে।

গত পাঁচ বছরে নূরুল হুদা কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন করেছে। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে এসব নির্বাচন ছিল সহিংস, সংঘাতময় ও জবরদস্তিমূলক। আবার কোনো কোনো নির্বাচন ছিল ভোটারবিমুখ। ওই অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল ও প্রার্থীরা যে যেখানে পেরেছেন, জবরদস্তি করেছেন, চর দখলের মতো মহড়া দিয়েছেন।

[লেখক : সাংবাদিক]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দায়িত্ব থেকে সরে গেলেই সুশীল হয়ে যান

মোহাম্মদ আবু নোমান

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

পদে যখন ছিলেন বিবেককে কোমায় রেখে, ক্ষমতার লোভে অন্ধ ছিলেন! এখন ক্ষমতা নেই, পদও নেই, অথচ বিবেক জাগ্রত! নুনের মেয়াদ শেষ, গুণ গাওয়াও বাদ! দুধ-ননী, মাখন-ঘোল, কমিশন, সবটা খাওয়ার পর ৩৬০ ডিগ্রি পল্টি দিয়ে নগ্ন সত্য বলতে পারলেন। ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, ভোটারবিহীন গণবিচ্ছিন্ন নির্বাচন, শতভাগ ভোট, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় শত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট, নির্বাচন ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত, বিপন্ন ও মানুষ খুনের দায়ভার কার? এ দেশে দায়িত্ব থেকে সরে গেলে সবাই সুশীল হয়ে যান। আপনার জীবন কাহিনী ছিলো রোমান্টিকে ভরপুর! যা করে গেলেন দেশ-তথা বিশ্ববাসীর কাছে চিরস্মরণীয় ও অম্লান হয়ে থাকবেন। নির্বাচন ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে, শ্মশানে পাঠিয়ে আজ কৌতুককর সদুপদেশ ডেলিভারি করে বলছেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং;’ আরো বলেছেন, ‘বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’

তাহলে অতীতে বিএনপিকে বাদ দিয়ে আপনি যে এক তরফা নির্বাচন করেছেন সেগুলো গ্রহণযোগ্য হয়েছে কী? লোকলজ্জা বা চক্ষুলজ্জা বলেও একটা কথা আছে। এছাড়া বিএনপিকে ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের হাজার হাজার নির্বাচন করলেন কেন? সাবেক সিইসি যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলতে হয়, আপনি দায়িত্বে থাকতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য কিছু করলেন না কেন? কী কারণে রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলো, তা তলিয়ে দেখেছিলেন কী? দেখার মতো চোখ আপনাদের ছিলো কী? যাই হোক আপনি দেশবাসীর নজর ও আগ্রহে আছেন, আরো অনেক চটকদার বাক্য শোনার অপেক্ষায়।

সিইসি পদে থাকা অবস্থায় তিনি এই সাধু ও অতি আবশ্যকীয় সদুপদেশ মনে রাখলে নির্বাচনী ব্যবস্থাটি ধ্বংস হতো না। তিনি এখন সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর বসে নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু হবে তার পথ বাতলাচ্ছেন। ক্ষমতায় থাকতে তিনি আমেরিকানদেরও ‘সুষ্ঠু ভোট’ শিক্ষা দেওয়ার কথা বলতেন।

গত ৪ জুন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির বিতর্ক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা স্বীকারও করেছেন, ‘বেশ কিছু কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়াটা ছিল অস্বস্তিকর।’ তাহলে বলতে হয়, এভাবে ভোটপড়া নির্বাচনগুলো আপনি বাতিল করেছেন কী-না? জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি বা কমিশন কর্মচারীদের পক্ষপাত বা দায়িত্ব অবহেলার জন্য জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলার বিধানও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের হতে পারে জেল-জরিমানা। অথচ নির্বাচনে বড়বড় ঘটনা ঘটলেও কমিশনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি।

এছাড়া গত ১২ জুন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাবেক সিইসি, ইসি ও ইসি সচিবগণ মতবিনিময়কালে বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ অথচ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ও নির্বাচন কমিশনের সচিবেরা এ কথা স্পষ্ট করে বলেননি, আমাদের নির্বাচন ব্যাবস্থা কেন কীভাবে ধ্বংস হলো? আমরা জানতে চাই, আরো বড় পরিসরে সেই আলোচনা কখন-কবে হবে? ইসি, সিইসি, সচিব মহোদয়গণ যতই মাথা চুলকাতে থাকুন না কেন, কাজির কাজ যতদিন রাজনীতিবিদদের হাতে থাকবে, ততদিন প্রহসনের নির্বাচনের দাবানলের সমাপ্তি হবে না। সত্য হলো, সরকার বা নির্বাহী বিভাগ না চাইলে দেশে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব।

১২ জুন আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেসব কথা বলেছেন, সেসব কথা কি কমিশনের সদস্য ও আমজনতার অজানা? এসব গুরুত্বপূর্ণ কথা আগেও নির্বাচন কমিশনের সংলাপে, মিডিয়া ইভেন্টে, মতবিনিময় সভায় কিংবা গণমাধ্যমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা চটকদার বক্তৃতায় বহুবার বলেছেন। বিগত হুদা কমিশন দায়িত্ব নিয়ে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপও করেছিল। কিন্তু বাস্তবে তারা সেসব পরামর্শের ধারেকাছেও যাননি। কাজ করেছেন ‘ওপরের নির্দেশ’ অনুযায়ী। বাংলাদেশের সবকিছু চলে ওপরের নির্দেশে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশ্বাস, সহাবস্থান, দেশাত্মবোধ, সাধারণ মানুষের মঙ্গল কামনা কোনো দলের মধ্যেই নেই। সবারই লক্ষ্য ক্ষমতা। ক্ষমতা থাকলে আমাকে ঠেকাবে কে? যে কারণে ক্ষমতায় গিয়ে চলে প্রতিশোধের পালা। আমরা দেখেছি ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট, দশ ট্রাক অস্ত্র আমদানি, দুর্নীতির গোলাঘর নামক হাওয়া ভবন, লগি-বৈঠার তান্ডব, লাগাতার আন্দোলন, জঙ্গি সন্ত্রাসের উত্থান, আগুন সন্ত্রাস, পেট্রলবোমার তান্ডবসহ আরো কতো কী? সবকিছুর প্রয়োজনে চাই ক্ষমতা, আর ক্ষমতার উৎস নির্বাচন। সেই নির্বাচন হবে নানা ছলে-বলে, কৌশলে, সংবিধানের দোহাইয়ে দলকে জেতানোর কৌশলে। সোজা কথায় জিতলে ঠিক, না জিতলে বেঠিক।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারাই নানা ঘটনা ও দুর্নীতির বৈতরণী পার পাওয়ার জন্যে নির্বাচন ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করেছে। কারণ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে, শপথ ভুলে সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে অতীতের দুর্নীতি ও আগামীতে সর্বস্তরে লুটপাটে মেতে ওঠা যাবে। দেশের দেউলিয়া ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে আমাদের দেশে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন বরাবরই গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অথচ আমরা দেখেছি, ভারতের প্রয়াত সিইসি টি এন সেসান নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল না থাকলে একের পর এক নির্বাচন স্থগিত করে আবার তারিখ নির্ধারণ করেছেন কারও পরোয়া না করে।

গত পাঁচ বছরে নূরুল হুদা কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন করেছে। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে এসব নির্বাচন ছিল সহিংস, সংঘাতময় ও জবরদস্তিমূলক। আবার কোনো কোনো নির্বাচন ছিল ভোটারবিমুখ। ওই অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল ও প্রার্থীরা যে যেখানে পেরেছেন, জবরদস্তি করেছেন, চর দখলের মতো মহড়া দিয়েছেন।

[লেখক : সাংবাদিক]

back to top