alt

উপ-সম্পাদকীয়

চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি

এম এ কবীর

: বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

কয় দিন ধরেই সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি ও টুকটাক বন্যার খবর আসছিল। তবে পদ্মা ব্রিজের দিকে বেশি মনোযোগ থাকায় সবাই এটিকে হালকা বন্যা হিসেবেই দেখছিলেন। কিন্তু গত কয় দিনে সিলেটে-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি খুবই খারাপ হতে থাকে এবং বতর্মানে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই বন্যার কারণে ইতোমধ্যে ১৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের জুনেই সিলেট বিভাগে বেশ বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল। তবে এবারের বন্যা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। এর পর থেকে ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ বন্যাই মূলত হাওর ও সুনামগঞ্জের বেশকিছু অঞ্চল (মূলত নিম্নাঞ্চল) এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। গত পাঁচ বছরের মধ্যে একমাত্র ২০১৯ সালেই সুনামগঞ্জ ও সিলেট শহরাঞ্চলে বন্যা হয়। তবে সেটি অল্প কিছুদিন স্থায়ী হয়। এবারের বন্যাটি স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। বেশ কয় দিন আগে থেকেই সিলেটে অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখনো সেটিকে আমলে নেয়া হয়নি। ওই সময় থেকেই নগরের লামাবাজার, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, সোনাপাড়া, শাহজালাল উপ-শহর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, কাজলশাহ, লালাদীঘির পাড়, আম্বরখানাসহ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সিলেট বিভাগের প্রায় ৮০ শতাংশই ডুবে গেছে। এর আগে পুরো অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার মতো বন্যা হয়নি।

এবার অনেক উঁচু এলাকাও পানির নিচে চলে গেছে। কবে পানি নামবে, এ বিষয়েও খুব বেশি বলা যাচ্ছে না। প্রকাশিত সংবাদ, ছবি ও ভিডিও কনটেন্ট থেকে জানা গেছে, গত কয় দিনের ভারী বর্ষণে সিলেট বিভাগের কমপক্ষে ছয় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ১০ জেলার ৬৪ উপজেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জে ভ্রমণে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়েন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থী। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। বন্ধ হয়ে গেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। বন্ধ হয়ে গেছে রেল যোগাযোগ। বন্ধ হয়ে গেছে আকাশপথ। বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, বিচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক। খাবার পানির হাহাকার।

একটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর বন্যা প্লাবিত অঞ্চল হিসেবে। আমরা মনে মনে খুশি হয়েছি এই ভেবে যে, মাঝেমধ্যে ঘূর্ণিঝড় আইলা কিংবা সিডর আঘাত হানলেও এখন আর আমাদের দেশে বন্যা নেই। এটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি। কিন্তু আমরা ভুলে যাই এখনকার বন্যা আমাদের হাতেই তৈরি। বিভিন্ন ‘উন্নয়ন’ কর্মকান্ডে ভরাট করে ফেলেছি অনেক নদীর মুখ। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি এখন আর পথ না পেয়ে ভাসিয়ে নিচ্ছে জীবন, ঘরবাড়ি ও ফসলি মাঠ। আমরা বড় বড় উন্নয়ন দেখে ভুলে যাই অন্য সবকিছু। আমরা ভুলে যাই আমাদের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার কথা। আমরা প্রতিনিয়তই নদী খননসহ বৃষ্টির পানি যেন জমতে না পারে, ওই চেষ্টা করি না।

আমরা মনে করি, ত্রাণ দিয়েই আমরা বন্যা মোকাবিলা করব। বারবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ত্রাণের খবর। আর বন্যাপীড়িতদের এই ত্রাণ দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা এক ধরনের আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি। কিন্তু ত্রাণ দিয়ে সব ঠিক করে ফেলবই-আসলে এটি বন্যা মোকাবিলার ওষুধ হওয়া একবারেই উচিত নয়। বন্যা হলে ত্রাণ দিয়ে মানুষের ক্ষুধা মেটানো যায়, ভোটের রাজনীতি হয়। তবে মানুষের বন্যা অভিজ্ঞতার কষ্ট কমানো যায় না। ওই অঞ্চলে কেন এমন হয়, এই বিষয়ে সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা কী কখনো ভাবেননি? এবার হয়েছে সিলেট, নেত্রকোনা কিংবা সুনামগঞ্জে। এর পর হয়তো হবে আরও অন্য জায়গায়। কারণ এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই।

অবকাঠামো নির্মাণের আবর্জনা কোথায় যাচ্ছে, সেগুলো স্যুয়ারেজগুলোকে বন্ধ করে দিচ্ছে কি না, এ বিষয়ে আমরা কতটা সজাগ আছি? আমাদের নর্দমাগুলো পরিষ্কার করা, সেগুলোর নালা খোলা রাখা, খনন করা, এগুলো সর্বশেষ কবে করা হয়েছে, ওই কাজের মেয়াদ কতদিন ছিল- এসবের হালনাগাদ তথ্য আমরা জানি না। তাই বন্যা যখন আমাদের জীবনে ছোবল দেয়, তখন আমরা সেটি মোকাবিলার কোন ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারি না। বন্যার কারণে ৪০ লাখের অধিক মানুষ গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে আমরা দেখছি, বড় বড় হাঁড়ি-পাতিলে শিশুদের রেখে তাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নারীরা গাছে উঠে বসে আছেন। অর্ধেক ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘরে তালা দিয়ে মানুষ জীবন বাঁচাতে চলছেন অন্য জায়গায়। গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে, কুমিরে খাচ্ছে। শঙ্কা আরও আছে। ধারণা করা হচ্ছে, কয় দিন পর্যন্ত পানি আরও বাড়তে পারে। মানুষ আরও দিশাহারা হচ্ছে। যাদের জীবনে এবারই এ ধরনের দুর্যোগ প্রথম, তারা আরও কঠিন সময় পার করছেন।

মার্ক টোয়েনের মতো আমুদে লেখক ইতিহাসে বিরল। জীবনটাকে তিনি আনন্দময় করে রেখেছিলেন। রাস্তা দিয়ে যখন চলতেন, তখন সঙ্গীর সঙ্গে রসিকতা করতেন। হাসির গল্প বলতেন। মার্ক টোয়েনের গল্প শুনে না হেসে কেউ মুখ বন্ধ রাখবে এ রকম ঘটনা কখনো ঘটেনি। তবে ঘটল একবার। একটা ছোট শহরে মার্ক টোয়েনের বক্তৃতার ব্যবস্থা করা হলো। সেখানে গিয়ে অবসরে হাঁটছিলেন রাস্তা দিয়ে। এক যুবক মার্ক টোয়েনকে থামালেন। বললেন, আমার এক চাচা রয়েছে, যিনি কখনোই হাসেন না। জোরে হাসির তো প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি মৃদু হাসিও তার ঠোঁটে দেখা যায় না। মার্ক টোয়েন সেই যুবককে বললেন, তার লেকচারে যেন চাচাকে নিয়ে আসেন। বিকেলে চাচাকে নিয়ে সত্যিই হাজির হলেন সেই যুবক। বসলেন একেবারে সামনের সারিতে। তাদের দিকে তাকিয়েই মার্ক টোয়েন একের পর এক কৌতুক বলে যেতে লাগলেন। এবং দেখলেন, যুবকটি মিথ্যে কিছু বলেনি। সবাই হাসছে, শুধু ছেলেটির চাচা মুখ চেপে বসে আছেন! তখন মার্ক টোয়েন ভেবে ভেবে সবচেয়ে হাসির গল্পগুলো বলতে লাগলেন। রামগড়–রের ছানারাও হাসতে বাধ্য হতো, এমন গল্পও করলেন, কিন্তু কোনো ফল হলো না।

কাজ যখন হলো না, তখন মেজাজ খারাপ করে লেকচার শেষ হলে হলো থেকে বেরিয়ে গেলেন লেখক। বিষয়টা খুব ভাবাল মার্ক টোয়েনকে। কিছুতেই তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলেন না তিনি। এরপর এক বন্ধুর সঙ্গে যখন কথা বলছেন, তখন সেই প্রসঙ্গটিতে এলেন তিনি। ‘আমি দারুণ সব রসিকতা করেও এক বৃদ্ধকে আজ হাসাতে পারিনি।’ বন্ধুকে বললেন মার্ক টোয়েন। বন্ধুটি একগাল হেসে বললেন, ‘এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছ, বন্ধু? ভুল করছ। আমি সেই বৃদ্ধকে চিনি। কয়েক বছর ধরেই চিনি। অনেক বছর ধরেই তিনি তো কানে শোনেন না।’ মার্ক টোয়েনের কোনো রসিকতাই যে তার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি, এটা জেনে এবার হো হো করে হেসে উঠলেন লেখক নিজে।

তবে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতাটি আমাদের আশাবাদী করে- ‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে; হারা শশীর হারা হাসি অন্ধকারেই ফিরে আসে’। আমরাও আশায় বুক বাঁধি।

[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; সভাপতি, ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি

এম এ কবীর

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

কয় দিন ধরেই সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি ও টুকটাক বন্যার খবর আসছিল। তবে পদ্মা ব্রিজের দিকে বেশি মনোযোগ থাকায় সবাই এটিকে হালকা বন্যা হিসেবেই দেখছিলেন। কিন্তু গত কয় দিনে সিলেটে-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি খুবই খারাপ হতে থাকে এবং বতর্মানে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই বন্যার কারণে ইতোমধ্যে ১৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের জুনেই সিলেট বিভাগে বেশ বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল। তবে এবারের বন্যা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। এর পর থেকে ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ বন্যাই মূলত হাওর ও সুনামগঞ্জের বেশকিছু অঞ্চল (মূলত নিম্নাঞ্চল) এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। গত পাঁচ বছরের মধ্যে একমাত্র ২০১৯ সালেই সুনামগঞ্জ ও সিলেট শহরাঞ্চলে বন্যা হয়। তবে সেটি অল্প কিছুদিন স্থায়ী হয়। এবারের বন্যাটি স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। বেশ কয় দিন আগে থেকেই সিলেটে অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখনো সেটিকে আমলে নেয়া হয়নি। ওই সময় থেকেই নগরের লামাবাজার, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, সোনাপাড়া, শাহজালাল উপ-শহর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, কাজলশাহ, লালাদীঘির পাড়, আম্বরখানাসহ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সিলেট বিভাগের প্রায় ৮০ শতাংশই ডুবে গেছে। এর আগে পুরো অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার মতো বন্যা হয়নি।

এবার অনেক উঁচু এলাকাও পানির নিচে চলে গেছে। কবে পানি নামবে, এ বিষয়েও খুব বেশি বলা যাচ্ছে না। প্রকাশিত সংবাদ, ছবি ও ভিডিও কনটেন্ট থেকে জানা গেছে, গত কয় দিনের ভারী বর্ষণে সিলেট বিভাগের কমপক্ষে ছয় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ১০ জেলার ৬৪ উপজেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জে ভ্রমণে গিয়ে বন্যায় আটকা পড়েন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থী। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। বন্ধ হয়ে গেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। বন্ধ হয়ে গেছে রেল যোগাযোগ। বন্ধ হয়ে গেছে আকাশপথ। বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, বিচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক। খাবার পানির হাহাকার।

একটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর বন্যা প্লাবিত অঞ্চল হিসেবে। আমরা মনে মনে খুশি হয়েছি এই ভেবে যে, মাঝেমধ্যে ঘূর্ণিঝড় আইলা কিংবা সিডর আঘাত হানলেও এখন আর আমাদের দেশে বন্যা নেই। এটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি। কিন্তু আমরা ভুলে যাই এখনকার বন্যা আমাদের হাতেই তৈরি। বিভিন্ন ‘উন্নয়ন’ কর্মকান্ডে ভরাট করে ফেলেছি অনেক নদীর মুখ। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি এখন আর পথ না পেয়ে ভাসিয়ে নিচ্ছে জীবন, ঘরবাড়ি ও ফসলি মাঠ। আমরা বড় বড় উন্নয়ন দেখে ভুলে যাই অন্য সবকিছু। আমরা ভুলে যাই আমাদের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার কথা। আমরা প্রতিনিয়তই নদী খননসহ বৃষ্টির পানি যেন জমতে না পারে, ওই চেষ্টা করি না।

আমরা মনে করি, ত্রাণ দিয়েই আমরা বন্যা মোকাবিলা করব। বারবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ত্রাণের খবর। আর বন্যাপীড়িতদের এই ত্রাণ দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা এক ধরনের আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি। কিন্তু ত্রাণ দিয়ে সব ঠিক করে ফেলবই-আসলে এটি বন্যা মোকাবিলার ওষুধ হওয়া একবারেই উচিত নয়। বন্যা হলে ত্রাণ দিয়ে মানুষের ক্ষুধা মেটানো যায়, ভোটের রাজনীতি হয়। তবে মানুষের বন্যা অভিজ্ঞতার কষ্ট কমানো যায় না। ওই অঞ্চলে কেন এমন হয়, এই বিষয়ে সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা কী কখনো ভাবেননি? এবার হয়েছে সিলেট, নেত্রকোনা কিংবা সুনামগঞ্জে। এর পর হয়তো হবে আরও অন্য জায়গায়। কারণ এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই।

অবকাঠামো নির্মাণের আবর্জনা কোথায় যাচ্ছে, সেগুলো স্যুয়ারেজগুলোকে বন্ধ করে দিচ্ছে কি না, এ বিষয়ে আমরা কতটা সজাগ আছি? আমাদের নর্দমাগুলো পরিষ্কার করা, সেগুলোর নালা খোলা রাখা, খনন করা, এগুলো সর্বশেষ কবে করা হয়েছে, ওই কাজের মেয়াদ কতদিন ছিল- এসবের হালনাগাদ তথ্য আমরা জানি না। তাই বন্যা যখন আমাদের জীবনে ছোবল দেয়, তখন আমরা সেটি মোকাবিলার কোন ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারি না। বন্যার কারণে ৪০ লাখের অধিক মানুষ গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে আমরা দেখছি, বড় বড় হাঁড়ি-পাতিলে শিশুদের রেখে তাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নারীরা গাছে উঠে বসে আছেন। অর্ধেক ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘরে তালা দিয়ে মানুষ জীবন বাঁচাতে চলছেন অন্য জায়গায়। গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে, কুমিরে খাচ্ছে। শঙ্কা আরও আছে। ধারণা করা হচ্ছে, কয় দিন পর্যন্ত পানি আরও বাড়তে পারে। মানুষ আরও দিশাহারা হচ্ছে। যাদের জীবনে এবারই এ ধরনের দুর্যোগ প্রথম, তারা আরও কঠিন সময় পার করছেন।

মার্ক টোয়েনের মতো আমুদে লেখক ইতিহাসে বিরল। জীবনটাকে তিনি আনন্দময় করে রেখেছিলেন। রাস্তা দিয়ে যখন চলতেন, তখন সঙ্গীর সঙ্গে রসিকতা করতেন। হাসির গল্প বলতেন। মার্ক টোয়েনের গল্প শুনে না হেসে কেউ মুখ বন্ধ রাখবে এ রকম ঘটনা কখনো ঘটেনি। তবে ঘটল একবার। একটা ছোট শহরে মার্ক টোয়েনের বক্তৃতার ব্যবস্থা করা হলো। সেখানে গিয়ে অবসরে হাঁটছিলেন রাস্তা দিয়ে। এক যুবক মার্ক টোয়েনকে থামালেন। বললেন, আমার এক চাচা রয়েছে, যিনি কখনোই হাসেন না। জোরে হাসির তো প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি মৃদু হাসিও তার ঠোঁটে দেখা যায় না। মার্ক টোয়েন সেই যুবককে বললেন, তার লেকচারে যেন চাচাকে নিয়ে আসেন। বিকেলে চাচাকে নিয়ে সত্যিই হাজির হলেন সেই যুবক। বসলেন একেবারে সামনের সারিতে। তাদের দিকে তাকিয়েই মার্ক টোয়েন একের পর এক কৌতুক বলে যেতে লাগলেন। এবং দেখলেন, যুবকটি মিথ্যে কিছু বলেনি। সবাই হাসছে, শুধু ছেলেটির চাচা মুখ চেপে বসে আছেন! তখন মার্ক টোয়েন ভেবে ভেবে সবচেয়ে হাসির গল্পগুলো বলতে লাগলেন। রামগড়–রের ছানারাও হাসতে বাধ্য হতো, এমন গল্পও করলেন, কিন্তু কোনো ফল হলো না।

কাজ যখন হলো না, তখন মেজাজ খারাপ করে লেকচার শেষ হলে হলো থেকে বেরিয়ে গেলেন লেখক। বিষয়টা খুব ভাবাল মার্ক টোয়েনকে। কিছুতেই তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলেন না তিনি। এরপর এক বন্ধুর সঙ্গে যখন কথা বলছেন, তখন সেই প্রসঙ্গটিতে এলেন তিনি। ‘আমি দারুণ সব রসিকতা করেও এক বৃদ্ধকে আজ হাসাতে পারিনি।’ বন্ধুকে বললেন মার্ক টোয়েন। বন্ধুটি একগাল হেসে বললেন, ‘এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছ, বন্ধু? ভুল করছ। আমি সেই বৃদ্ধকে চিনি। কয়েক বছর ধরেই চিনি। অনেক বছর ধরেই তিনি তো কানে শোনেন না।’ মার্ক টোয়েনের কোনো রসিকতাই যে তার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি, এটা জেনে এবার হো হো করে হেসে উঠলেন লেখক নিজে।

তবে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতাটি আমাদের আশাবাদী করে- ‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে; হারা শশীর হারা হাসি অন্ধকারেই ফিরে আসে’। আমরাও আশায় বুক বাঁধি।

[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; সভাপতি, ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]

back to top