মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতার বহুমাত্রিকতা। চলন্ত বাসে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক। রাস্তাঘাট, যানবাহন যে নারীদের জন্য কতটা অনিরাপদ গণপরিবহনে বার বার ধর্ষণের ঘটনা এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
চলন্ত বাসে ধর্ষণ এক কঠিন ও কুৎসিত বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সামাজিক সুস্থতাকে। প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নারীর নিরাপত্তা। এই সমাজে মানুষ কতটা বেপরোয়া হলে, নারীর সম্ভমকে কতটা তুচ্ছ জ্ঞান করলে চলন্ত বাসে এক নারীকে ধর্ষণে লিপ্ত হতে পারে! গত ২ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের বাস টাঙ্গাইল অতিক্রম করার সময় ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ডাকাত দল তিন ঘণ্টা ধরে বাসের যাত্রীদের জিম্মি রেখে ডাকাতি ও নারী ধর্ষণ শেষে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসের সব যাত্রী নেমে গেলে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপার এক তরুণীকে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া গত বছরের ২৬ জুনও চট্টগ্রামের মিরসরাই বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ঘরে-বাইরে কোথাও নারী আজ নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী। বাদ যাচ্ছে না প্রতিবন্ধীরাও। এমনকি ২২ মাসের শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার নজির রয়েছে।
শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা নারীও রেহাই পাচ্ছে না। ধর্ষণের মতো ঘটনা রাজধানীকেন্দ্রিক হলে এবং ধর্ষক ও ধর্ষিতা সমাজের উচ্চবিত্তের হলে তা নিয়ে হইচই পড়ে। মফঃস্বল শহরের এসব ঘটনা সব মিডিয়ায় আসে না। আর ধর্ষণের মতো নারীর প্রতি সহিংসতা যদি গণপরিবহনে সংঘটিত হয় তখন আর তা চাপা থাকে না। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে এমনই এক ঘটনায় ফুসে উঠেছিল সারা জাতি। টাঙ্গাইলের মধুপুরে সে দিনের চাঞ্চল্যকর রূপা গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল জাতির বিবেক। এরপরের গণপরিবহনে অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কখনো ধর্ষণ শেষে হত্যাও করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়াসহ চলন্ত বাসে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা এবং ধামরাই, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও ময়মনসিংহে বাস-মাইক্রোবাসে পোশাক শ্রমিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু এসব জঘণ্য অপরাধের বিচার বা অপরাধীর শাস্তির খবর লোকসমক্ষে খুর একটা আসেনি। আড়ালে আবডালে নয়, ধর্ষক যখন লোকসমক্ষে নারীর প্রতি চরম নির্মমতা চালায়, তখন বুঝতে হয় এ সমাজে নারী কত অরক্ষিত! অথচ এই নারীই সমাজ বিনির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি সমান কাজ করে যাচ্ছে! বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০১৯ সালে গণপরিবহনে সড়কপথে ৪৪টি, রেলপথে ৪টি এবং নৌপথে ৪টি মোট ৫২টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৯ জন নারী। এর মধ্যে ১৬টি ধর্ষণ, ১২টি গণধর্ষণ, ৯টি ধর্ষণের চেষ্টা, ১৫টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গণপরিবহনে চলাকালে নারীরা নিপীড়ন, অসম্মানজনক আচরণ, হেনস্তার শিকার হচ্ছে। পরিবহন চালক, হেলপার ছাড়াও পুরুষযাত্রীরা নারীদের যৌন হেনস্তা করছে।
ধর্ষণসহ সব ধরনের যৌন নিপীড়ন আজ দেশে মহামারী রূপ ধারণ করেছে। ধর্ষণের ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় যেটুকু প্রকাশ পায় তার চেয়ে বাস্তব অবস্থা আরও কঠিন। রক্ষণশীল আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীরা সাধারণত লোকলজ্জা ও সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে ধর্ষণের কথা প্রকাশ করে না। মামলা করে হয়রানি ও সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার হতাশায় ধর্ষণের ঘটনাকে আড়াল করে যায়। মামলা নিতে পুলিশের গরিমসি এবং মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণেও অনেক ধর্ষণের ঘটনা চাপা পড়ে যায়। ধর্ষণের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের গণপরিবহনে চাঞ্চল্যকর রূপা গণধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় দেশবাসীর চাপে স্বল্পতম সময়ে মামলার বিচার সম্পন্ন হয়। এ মামলার বিচারে ৪ পরিবহন শ্রমিকের ফাঁসি ও একজনকে ৭ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। বাংলাদেশে ধর্ষণের জন্য যে আইনি বিধান রয়েছে তাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আলামত সংগ্রহ এবং যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ধর্ষিতাকে যেতে হয় তাও কঠিন। ধর্ষণের ব্যাপারে ধর্ষিকাকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদও নারীর জন্য পীড়াদায়ক। মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিও ধর্ষণকে উৎসাহিত করে।
ধর্ষণের মতো দুষ্টক্ষতকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হলে ধর্ষকের স্বরূপ উন্মোচিত করতে হবে। ধর্ষিতা ও তার পরিবারকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আইনি সহায়তা দিতে হবে। নারী-পুরুষের স্বীকৃত সম-অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ রাস্তাঘাটে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষিতা নয়, ধর্ষককে নিরাপরাধ প্রমাণ করতে হলে ধর্ষিতার ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ কমবে। গণপরিবহনে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি যেকোনো ধরনের সহিংসতা বন্ধে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের নিয়োগপত্র প্রদান, তাদের নেমপ্লেটসহ আলাদা ধরনের পোশাক সরবরাহ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি সংবলিত ডাটাবেইজ তৈরি করা, গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নারীদের সংরক্ষিত আসন জানালার পাশে রাখা, গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার হটলাইন নম্বর ও গাড়ির নম্বর সাটানোর ব্যবস্থা রাখা এবং গণপরিবহনে অস্বচ্ছ কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। গণপরিবহনে ধর্ষণের বিচার চলাকালে ভিকটিম ও তার পরিবারের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্ষণের মামলা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত মনিটরিং এবং প্রয়োজনে ধর্ষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় মামলাকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়া যেতে পারে। নারীকে শুধু নারী নয়, একজন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে জেন্ডারভিত্তিক এ সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে ধর্ষণ নির্মূলে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।
[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও শিক্ষক]
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতার বহুমাত্রিকতা। চলন্ত বাসে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক। রাস্তাঘাট, যানবাহন যে নারীদের জন্য কতটা অনিরাপদ গণপরিবহনে বার বার ধর্ষণের ঘটনা এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
চলন্ত বাসে ধর্ষণ এক কঠিন ও কুৎসিত বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সামাজিক সুস্থতাকে। প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নারীর নিরাপত্তা। এই সমাজে মানুষ কতটা বেপরোয়া হলে, নারীর সম্ভমকে কতটা তুচ্ছ জ্ঞান করলে চলন্ত বাসে এক নারীকে ধর্ষণে লিপ্ত হতে পারে! গত ২ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের বাস টাঙ্গাইল অতিক্রম করার সময় ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ডাকাত দল তিন ঘণ্টা ধরে বাসের যাত্রীদের জিম্মি রেখে ডাকাতি ও নারী ধর্ষণ শেষে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসের সব যাত্রী নেমে গেলে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপার এক তরুণীকে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া গত বছরের ২৬ জুনও চট্টগ্রামের মিরসরাই বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ঘরে-বাইরে কোথাও নারী আজ নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী। বাদ যাচ্ছে না প্রতিবন্ধীরাও। এমনকি ২২ মাসের শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার নজির রয়েছে।
শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা নারীও রেহাই পাচ্ছে না। ধর্ষণের মতো ঘটনা রাজধানীকেন্দ্রিক হলে এবং ধর্ষক ও ধর্ষিতা সমাজের উচ্চবিত্তের হলে তা নিয়ে হইচই পড়ে। মফঃস্বল শহরের এসব ঘটনা সব মিডিয়ায় আসে না। আর ধর্ষণের মতো নারীর প্রতি সহিংসতা যদি গণপরিবহনে সংঘটিত হয় তখন আর তা চাপা থাকে না। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে এমনই এক ঘটনায় ফুসে উঠেছিল সারা জাতি। টাঙ্গাইলের মধুপুরে সে দিনের চাঞ্চল্যকর রূপা গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল জাতির বিবেক। এরপরের গণপরিবহনে অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কখনো ধর্ষণ শেষে হত্যাও করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়াসহ চলন্ত বাসে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা এবং ধামরাই, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও ময়মনসিংহে বাস-মাইক্রোবাসে পোশাক শ্রমিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু এসব জঘণ্য অপরাধের বিচার বা অপরাধীর শাস্তির খবর লোকসমক্ষে খুর একটা আসেনি। আড়ালে আবডালে নয়, ধর্ষক যখন লোকসমক্ষে নারীর প্রতি চরম নির্মমতা চালায়, তখন বুঝতে হয় এ সমাজে নারী কত অরক্ষিত! অথচ এই নারীই সমাজ বিনির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি সমান কাজ করে যাচ্ছে! বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০১৯ সালে গণপরিবহনে সড়কপথে ৪৪টি, রেলপথে ৪টি এবং নৌপথে ৪টি মোট ৫২টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৯ জন নারী। এর মধ্যে ১৬টি ধর্ষণ, ১২টি গণধর্ষণ, ৯টি ধর্ষণের চেষ্টা, ১৫টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গণপরিবহনে চলাকালে নারীরা নিপীড়ন, অসম্মানজনক আচরণ, হেনস্তার শিকার হচ্ছে। পরিবহন চালক, হেলপার ছাড়াও পুরুষযাত্রীরা নারীদের যৌন হেনস্তা করছে।
ধর্ষণসহ সব ধরনের যৌন নিপীড়ন আজ দেশে মহামারী রূপ ধারণ করেছে। ধর্ষণের ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় যেটুকু প্রকাশ পায় তার চেয়ে বাস্তব অবস্থা আরও কঠিন। রক্ষণশীল আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীরা সাধারণত লোকলজ্জা ও সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে ধর্ষণের কথা প্রকাশ করে না। মামলা করে হয়রানি ও সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার হতাশায় ধর্ষণের ঘটনাকে আড়াল করে যায়। মামলা নিতে পুলিশের গরিমসি এবং মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণেও অনেক ধর্ষণের ঘটনা চাপা পড়ে যায়। ধর্ষণের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের গণপরিবহনে চাঞ্চল্যকর রূপা গণধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় দেশবাসীর চাপে স্বল্পতম সময়ে মামলার বিচার সম্পন্ন হয়। এ মামলার বিচারে ৪ পরিবহন শ্রমিকের ফাঁসি ও একজনকে ৭ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। বাংলাদেশে ধর্ষণের জন্য যে আইনি বিধান রয়েছে তাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আলামত সংগ্রহ এবং যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ধর্ষিতাকে যেতে হয় তাও কঠিন। ধর্ষণের ব্যাপারে ধর্ষিকাকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদও নারীর জন্য পীড়াদায়ক। মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিও ধর্ষণকে উৎসাহিত করে।
ধর্ষণের মতো দুষ্টক্ষতকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হলে ধর্ষকের স্বরূপ উন্মোচিত করতে হবে। ধর্ষিতা ও তার পরিবারকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আইনি সহায়তা দিতে হবে। নারী-পুরুষের স্বীকৃত সম-অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ রাস্তাঘাটে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষিতা নয়, ধর্ষককে নিরাপরাধ প্রমাণ করতে হলে ধর্ষিতার ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ কমবে। গণপরিবহনে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি যেকোনো ধরনের সহিংসতা বন্ধে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের নিয়োগপত্র প্রদান, তাদের নেমপ্লেটসহ আলাদা ধরনের পোশাক সরবরাহ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি সংবলিত ডাটাবেইজ তৈরি করা, গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ নারীদের সংরক্ষিত আসন জানালার পাশে রাখা, গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার হটলাইন নম্বর ও গাড়ির নম্বর সাটানোর ব্যবস্থা রাখা এবং গণপরিবহনে অস্বচ্ছ কাচ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। গণপরিবহনে ধর্ষণের বিচার চলাকালে ভিকটিম ও তার পরিবারের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্ষণের মামলা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত মনিটরিং এবং প্রয়োজনে ধর্ষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় মামলাকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়া যেতে পারে। নারীকে শুধু নারী নয়, একজন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে জেন্ডারভিত্তিক এ সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে ধর্ষণ নির্মূলে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।
[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও শিক্ষক]