alt

উপ-সম্পাদকীয়

খেলনা শিল্পের সম্ভাবনা

রেজাউল করিম খোকন

: বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

২০২০-২১ সালে প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই সেক্টর থেকে রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে দেশে ৫ হাজার ৩০টি প্লাস্টিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোকবল এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। ২০২০-২১ সালে প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই সেক্টরে রপ্তানির পরিমাণ ১.০ বিলিয়ন ডলার।

প্লাস্টিক খেলনা সেক্টর নন-ট্র্যাডিশনাল রপ্তানি খাত হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন বয়সের শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা ব্যবহার করা হয়। দিন দিন বাড়ছে চাহিদা। বাংলাদেশের খেলনা ইতোমধ্যে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পা রেখেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা বেশ ভালো। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাতটি খেলনার মেধাস্বত্ব নিবন্ধন (পেটেন্ট) করা হয়। সেটা এখন মোট ২ হাজার ৫৫৮টি।

২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে দেশ থেকে মোট প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির ২৯ শতাংশ আয়ই এসেছে খেলনা থেকে। এই সময়ে খেলনা রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ। বাংলাদেশের প্লাস্টিক রপ্তানি মোটামুটি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে। করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরেও প্লাস্টিক খাতের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলনা রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় ছিল মাত্র ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের রপ্তানি আয়ে বড় ভূমিকা রাখবে প্লাস্টিকের খেলনা সামগ্রী। আমাদের এখানে কয়েক বছর আগেও কম মূল্যের প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। কিন্ত গত কয়েক বছরে অবস্থা অনেকটা বদলেছে। বর্তমানে এ সব খেলনার বিরাট একটি অংশই তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। আরও আগে থেকেই পুরান ঢাকা এবং আশপাশের কিছু এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হিসেবে খেলনা তৈরির বিভিন্ন কারখানা গড়ে উঠছে।

মূলত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম খেলনার বাজার পুরান ঢাকার চকবাজারে। বেশ কয়েক বছর আগেও প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই আসত চীন ও তাইওয়ান থেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ভালো একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশে তৈরি খেলনা সামগ্রী। দেশে বিভিন্ন ধরনের খেলনার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে এ শিল্পে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ।

বাংলাদেশে ছোটদের জন্য খেলনা তৈরির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন। খেলনা প্রস্তুতকারী দেশীয় বিভিন্ন কারখানা এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে এই শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়ে বিরাট অবদান রাখতে পারে দেশীয় অর্থনীতিতে। এক সময়ে বাংলাদেশে খেলনা সামগ্রী হিসেবে অনেক নিম্নমানের পণ্য তৈরি হতো; যা ক্রেতাদের তেমনভাবে আকৃষ্ট করতো না। ফলে বিদেশ থেকে খেলনা আমদানি করা হতো, যার বেশিরভাগই আমদানি হতো চীন থেকে।

তবে বর্তমানে চীন থেকে আমদানিকৃত খেলনার সমমানের অনেক খেলনা আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশে উন্নত কারিগরি প্রযুক্তির অভাব থাকায় খেলনা শিল্প তেমন এগিয়ে যেতে পারছেনা, বারবার হোঁচট খাচ্ছে। দেশীয় লেদ কারখানা থেকে ম্যানুয়ালি মোল্ড তৈরি করতে হচ্ছে। অথচ বিদেশে কম্পিউটারাইজড মেশিনে এ ধরনের মোল্ড তৈরি করা হয় অত্যন্ত নিখুঁত এবং সুন্দরভাবে। আজকাল অনেক ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা চীন ও তাইওয়ান থেকে মোল্ড বা ডাইস করে নিয়ে আসছেন। ডাইস তৈরির কম্পিউটারাইজড মেশিন দেশে থাকলে বাংলাদেশেই অনেক সুন্দর, উন্নত এবং আধুনিক মানের খেলনা তৈরি সম্ভব। এতে অপেক্ষাকৃত কম খরচে ভালো ভালো খেলনা সামগ্রী তৈরি করে বাজারে ছাড়া সম্ভব হবে।

সুলভে ডাইস তৈরি করা গেলে চীনা বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে তৈরি খেলনা আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজন ভালো ডাইস ডিজাইনার। দক্ষ, আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন ডিজাইনারেরও অভাব রয়েছে এখানে। শুধুমাত্র ডাইস দিয়ে খেলনা তৈরি করলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না, এর সঙ্গে আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। এই শিল্প যদি দিনে দিনে উন্নতি লাভ করে তাহলে আরো অনেকেই আগ্রহী হবেন এ ব্যাপারে। এ ব্যবসায় উদ্যোক্তা বাড়তে থাকলে শিল্পটি আপনা আপনি বেশ জমজমাট হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই।

খেলনা তৈরির কাজটি মূলত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্র্ভুক্ত। বিভিন্ন ব্যাংক এসএমই ঋণের আওতায় খেলনা তৈরির কাজে নিয়মিত উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে মূলধন জোগান দিতে পারে। কারণ অনেক উদ্যোক্তা পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে দারুণ সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিকে এগিয়ে নিতে পারছেন না। পুঁজির জোগান পেলে খেলনা শিল্প চাঙা হয়ে উঠতে পারে খুব দ্রুতই। এখনও বাংলাদেশের বাজারে চীনা ও তাইওয়ানের খেলনা সামগ্রীর বেশ ভালো দাপট বজায় রয়েছে।

কিন্তু তারপরেও অনেক উদ্যোক্তা সাহস নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তারা ছোট ছোট খেলনা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন নিজেদের বাসা বাড়িতেই। স্বল্প পুঁজি খাটিয়ে মোটামুটি উপার্জন করছেন। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা পেলে আন্তর্জাতিক মানের খেলনা সামগ্রী এদেশেই তৈরি সম্ভব। তখন খেলনা বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা যাবে। খেলনা শিল্পটিকে এসএমই খাতের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যাংকঋণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকার দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে নানমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। এ জন্য প্রণোদনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

দেশে খেলনা প্রস্তুত শিল্পে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খেলনা প্রস্তুতে ব্যবহৃত প্রায় সব উপকরণ আমদানি নির্ভর। এসব উপকরণ আমদানিতে ক্ষেত্র বিশেষ ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ মূসক প্রযোজ্য রয়েছে। ফলে আমদানিকৃত খেলনার সঙ্গে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই দেশীয় খেলনা শিল্পের প্রসার এবং সুরক্ষার জন্য খেলনা তৈরিতে ব্যবহার্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ আমদানিতে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক এবং সমুদয় মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খেলনা শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা। আমাদের প্রত্যাশা- খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তা, প্রস্তুতকারীদের প্রয়োজনীয় ব্যাংকঋণ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

খেলনা শিল্পের সম্ভাবনা

রেজাউল করিম খোকন

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

২০২০-২১ সালে প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই সেক্টর থেকে রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে দেশে ৫ হাজার ৩০টি প্লাস্টিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোকবল এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। ২০২০-২১ সালে প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই সেক্টরে রপ্তানির পরিমাণ ১.০ বিলিয়ন ডলার।

প্লাস্টিক খেলনা সেক্টর নন-ট্র্যাডিশনাল রপ্তানি খাত হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন বয়সের শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা ব্যবহার করা হয়। দিন দিন বাড়ছে চাহিদা। বাংলাদেশের খেলনা ইতোমধ্যে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পা রেখেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা বেশ ভালো। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাতটি খেলনার মেধাস্বত্ব নিবন্ধন (পেটেন্ট) করা হয়। সেটা এখন মোট ২ হাজার ৫৫৮টি।

২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে দেশ থেকে মোট প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির ২৯ শতাংশ আয়ই এসেছে খেলনা থেকে। এই সময়ে খেলনা রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ। বাংলাদেশের প্লাস্টিক রপ্তানি মোটামুটি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে। করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরেও প্লাস্টিক খাতের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলনা রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় ছিল মাত্র ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের রপ্তানি আয়ে বড় ভূমিকা রাখবে প্লাস্টিকের খেলনা সামগ্রী। আমাদের এখানে কয়েক বছর আগেও কম মূল্যের প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। কিন্ত গত কয়েক বছরে অবস্থা অনেকটা বদলেছে। বর্তমানে এ সব খেলনার বিরাট একটি অংশই তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। আরও আগে থেকেই পুরান ঢাকা এবং আশপাশের কিছু এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হিসেবে খেলনা তৈরির বিভিন্ন কারখানা গড়ে উঠছে।

মূলত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম খেলনার বাজার পুরান ঢাকার চকবাজারে। বেশ কয়েক বছর আগেও প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই আসত চীন ও তাইওয়ান থেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ভালো একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশে তৈরি খেলনা সামগ্রী। দেশে বিভিন্ন ধরনের খেলনার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে এ শিল্পে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ।

বাংলাদেশে ছোটদের জন্য খেলনা তৈরির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন। খেলনা প্রস্তুতকারী দেশীয় বিভিন্ন কারখানা এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে এই শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়ে বিরাট অবদান রাখতে পারে দেশীয় অর্থনীতিতে। এক সময়ে বাংলাদেশে খেলনা সামগ্রী হিসেবে অনেক নিম্নমানের পণ্য তৈরি হতো; যা ক্রেতাদের তেমনভাবে আকৃষ্ট করতো না। ফলে বিদেশ থেকে খেলনা আমদানি করা হতো, যার বেশিরভাগই আমদানি হতো চীন থেকে।

তবে বর্তমানে চীন থেকে আমদানিকৃত খেলনার সমমানের অনেক খেলনা আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশে উন্নত কারিগরি প্রযুক্তির অভাব থাকায় খেলনা শিল্প তেমন এগিয়ে যেতে পারছেনা, বারবার হোঁচট খাচ্ছে। দেশীয় লেদ কারখানা থেকে ম্যানুয়ালি মোল্ড তৈরি করতে হচ্ছে। অথচ বিদেশে কম্পিউটারাইজড মেশিনে এ ধরনের মোল্ড তৈরি করা হয় অত্যন্ত নিখুঁত এবং সুন্দরভাবে। আজকাল অনেক ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা চীন ও তাইওয়ান থেকে মোল্ড বা ডাইস করে নিয়ে আসছেন। ডাইস তৈরির কম্পিউটারাইজড মেশিন দেশে থাকলে বাংলাদেশেই অনেক সুন্দর, উন্নত এবং আধুনিক মানের খেলনা তৈরি সম্ভব। এতে অপেক্ষাকৃত কম খরচে ভালো ভালো খেলনা সামগ্রী তৈরি করে বাজারে ছাড়া সম্ভব হবে।

সুলভে ডাইস তৈরি করা গেলে চীনা বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে তৈরি খেলনা আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজন ভালো ডাইস ডিজাইনার। দক্ষ, আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন ডিজাইনারেরও অভাব রয়েছে এখানে। শুধুমাত্র ডাইস দিয়ে খেলনা তৈরি করলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না, এর সঙ্গে আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। এই শিল্প যদি দিনে দিনে উন্নতি লাভ করে তাহলে আরো অনেকেই আগ্রহী হবেন এ ব্যাপারে। এ ব্যবসায় উদ্যোক্তা বাড়তে থাকলে শিল্পটি আপনা আপনি বেশ জমজমাট হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই।

খেলনা তৈরির কাজটি মূলত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্র্ভুক্ত। বিভিন্ন ব্যাংক এসএমই ঋণের আওতায় খেলনা তৈরির কাজে নিয়মিত উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে মূলধন জোগান দিতে পারে। কারণ অনেক উদ্যোক্তা পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে দারুণ সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিকে এগিয়ে নিতে পারছেন না। পুঁজির জোগান পেলে খেলনা শিল্প চাঙা হয়ে উঠতে পারে খুব দ্রুতই। এখনও বাংলাদেশের বাজারে চীনা ও তাইওয়ানের খেলনা সামগ্রীর বেশ ভালো দাপট বজায় রয়েছে।

কিন্তু তারপরেও অনেক উদ্যোক্তা সাহস নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তারা ছোট ছোট খেলনা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন নিজেদের বাসা বাড়িতেই। স্বল্প পুঁজি খাটিয়ে মোটামুটি উপার্জন করছেন। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা পেলে আন্তর্জাতিক মানের খেলনা সামগ্রী এদেশেই তৈরি সম্ভব। তখন খেলনা বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা যাবে। খেলনা শিল্পটিকে এসএমই খাতের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যাংকঋণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকার দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে নানমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। এ জন্য প্রণোদনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

দেশে খেলনা প্রস্তুত শিল্পে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খেলনা প্রস্তুতে ব্যবহৃত প্রায় সব উপকরণ আমদানি নির্ভর। এসব উপকরণ আমদানিতে ক্ষেত্র বিশেষ ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ মূসক প্রযোজ্য রয়েছে। ফলে আমদানিকৃত খেলনার সঙ্গে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই দেশীয় খেলনা শিল্পের প্রসার এবং সুরক্ষার জন্য খেলনা তৈরিতে ব্যবহার্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ আমদানিতে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক এবং সমুদয় মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খেলনা শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা। আমাদের প্রত্যাশা- খেলনা শিল্পের উদ্যোক্তা, প্রস্তুতকারীদের প্রয়োজনীয় ব্যাংকঋণ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

back to top