alt

উপ-সম্পাদকীয়

সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাক পাঠ্যবই

আহসান হাবিব

: সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
image

শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে শিক্ষার্থীদের বই দেয়া হলে তাদের আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়

বই উৎসব বাংলাদেশ সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ। প্রতি বছরে এ উৎসব পালিত হয়। ১ জানুয়ারি প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী এবং পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। এটি পাঠ্যপুস্তক উৎসব বা পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস নামেও পরিচিত।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সংকট কমাতে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার বিনা মূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে বই উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো হলে শিক্ষার্থীদের যেমন আনন্দের সীমা থাকে না তেমনি পড়াশোনায়ও আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু গত বছরে যে সংকট দেখা গিয়েছিল এবারও সে সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ সময়মতো শিক্ষার্থীরা হাতে বই না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি করাসহ তিনটি কারণে এবারও সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে মানসম্মত সব বই তুলে দেয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কাও।

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র সাড়ে তিন মাস বাকি। কিন্তু আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশই দিতে পারেনি এনসিটিবি। তাহলে প্রায় ৩৫ কোটি বই কীভাবে ছাপানো সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় ২০২৩ সালে ১ জানুয়ারি কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছাবে তো। যদি বই সময়মতো হাতে না আসে বা কয়েক শিফটে এলো-এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আনন্দ থাকে না।

গত বছর থেকে যে অনিয়ম শুরু হলো তা এ বছরেও হবে-এভাবে দেখা যাবে অনিয়মগুলো নিয়মে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বই উৎসবের আনন্দ মাটি করে আসছে বই। এমন কেন হয়? মানুষ এক বছরের সংকট থেকে কাজের শিক্ষা নেয়। শিক্ষা নেয়া তো দূরের কথা, আমাদের উচ্চপর্যায়ে যারা আছেন, তারা এই সংকটকে কীভাবে আরও দীর্ঘমেয়াদি করা যায়, সেই চেষ্টায় মত্ত থাকেন। কিন্তু এমন হচ্ছে কেন? তাহলে কী সদিচ্ছার অভাব। এসব অনিয়মের কোন জবাবদিহিতা নেই বলে? পাঠ্যপুস্তকের ছাপা, কাগজ নিম্নমানের এসব প্রকাশের পর প্রকাশকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের নজির আজও তৈরি হয়নি। তাহলে কি ধরে নেব যে ভূত শর্ষেতে?

২০১০ সাল থেকে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়ার যে রেওয়াজ শুরু হয়েছিল গত বছর থেকে তাতে ভাটা পড়েছে। গত শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বই বিতরণ শুরু করা গেলেও সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। এদিকে নতুন বছরের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় রচিত বই) ছাপানোর কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হয়েছে।

আবার বই ছাপার কাজ পেতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে গড়ে ২২ থেকে ২৫ শতাংশ কম দাম দিয়েছে মুদ্রণকারীরা। যদিও কাগজ, কালি ও কাগজ তৈরির মণ্ডের (পাল্প) দাম বাড়তির দিকে। এ দুটি কারণেও মানসম্মত বই ছাপানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এনসিটিবির কর্মকর্তা ও মুদ্রণকারী উভয়েরই আশঙ্কা, কার্যাদেশ দিতে বিলম্বসহ তিন কারণে সময়মতো মানসম্মত বই ছাপিয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিতরণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। অর্থাৎ গত বছরে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে জাতীয় শিক্ষা শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোন শিক্ষাই নেয়নি। যে কারণে এবারেও একই সংকট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া কার্যাদেশ শুরুর আগেই মুদ্রণকারীদের পক্ষ থেকে দাবি-দাওয়া দেয়া শুরু হয়েছে।

দরপত্র অনুযায়ী মোট সময়ের প্রথম ভাগে ৫০ শতাংশ এবং বাকি ৫০ শতাংশ বই পরের ভাগে দেয়ার কথা থাকলেও এখন মুদ্রণকারী চাইছে এই শর্ত না রাখতে। অতীতেও দেখা গেছে, শেষ সময়ে কিছুসংখ্যক মুদ্রণকারী নানা ফন্দিফিকির করে নিম্নমানের কাগজে বই দেয়। এবারও একই আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার দুই বছর বই উৎসব হয়নি। চলতি শিক্ষাবর্ষে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দিতে পারেনি এনসিটিবি। ফেব্রুয়ারি-মার্চেও কোন কোন মুদ্রণকারী বই দিয়েছিল। বইয়ের কাগজের মান নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল। এবারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সাধারণত বছরের মে মাস থেকেই দরপত্রের প্রক্রিয়া শুরু হতো। কিন্তু এ বছর এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকা-সংক্রান্ত জটিলতার জেরে এ দরপত্রের প্রক্রিয়াটিই শুরু হয় অন্তত তিন মাস পর। এরপর আবার মূল্যায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ করতেও দেরি হচ্ছে। বিলম্বে কার্যাদেশ ও চুক্তি হলে শেষ সময়ে নিম্নমানের কাগজে বই দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ইতিপূর্বে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার জন্য যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিল এবং মুদ্রণ শিল্প সমিতি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে শেষ সময়ে এবার আরও বেশি নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর আশঙ্কা আছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বরাত দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে যে এটা ঠিক যে তারা সময়ের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। এ জন্য কিছুটা আশঙ্কা থাকলেও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে সময়মতো মানসম্মত বই দেয়া যায়। মুদ্রণকারীরাও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। আমরা মনে করি বছরের শুরুতে ছাত্ররা নতুন বই নিয়ে উৎসব করবে এটা নিছক উৎসব নয়, পড়াশোনার জন্য এটা একটি প্রেরণাও। একটি প্রতিষ্ঠান যেহেতু এই কাজটির জন্য নিয়োজিত তারা কেন তিন মাস দেরি করে বই ছাপার প্রক্রিয়া শুরু করবে, এটা কোন যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

[লেখক : সংবাদকর্মী]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাক পাঠ্যবই

আহসান হাবিব

image

শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে শিক্ষার্থীদের বই দেয়া হলে তাদের আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

বই উৎসব বাংলাদেশ সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ। প্রতি বছরে এ উৎসব পালিত হয়। ১ জানুয়ারি প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী এবং পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। এটি পাঠ্যপুস্তক উৎসব বা পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস নামেও পরিচিত।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সংকট কমাতে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার বিনা মূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে বই উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো হলে শিক্ষার্থীদের যেমন আনন্দের সীমা থাকে না তেমনি পড়াশোনায়ও আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু গত বছরে যে সংকট দেখা গিয়েছিল এবারও সে সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ সময়মতো শিক্ষার্থীরা হাতে বই না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি করাসহ তিনটি কারণে এবারও সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে মানসম্মত সব বই তুলে দেয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কাও।

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র সাড়ে তিন মাস বাকি। কিন্তু আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশই দিতে পারেনি এনসিটিবি। তাহলে প্রায় ৩৫ কোটি বই কীভাবে ছাপানো সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় ২০২৩ সালে ১ জানুয়ারি কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছাবে তো। যদি বই সময়মতো হাতে না আসে বা কয়েক শিফটে এলো-এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আনন্দ থাকে না।

গত বছর থেকে যে অনিয়ম শুরু হলো তা এ বছরেও হবে-এভাবে দেখা যাবে অনিয়মগুলো নিয়মে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বই উৎসবের আনন্দ মাটি করে আসছে বই। এমন কেন হয়? মানুষ এক বছরের সংকট থেকে কাজের শিক্ষা নেয়। শিক্ষা নেয়া তো দূরের কথা, আমাদের উচ্চপর্যায়ে যারা আছেন, তারা এই সংকটকে কীভাবে আরও দীর্ঘমেয়াদি করা যায়, সেই চেষ্টায় মত্ত থাকেন। কিন্তু এমন হচ্ছে কেন? তাহলে কী সদিচ্ছার অভাব। এসব অনিয়মের কোন জবাবদিহিতা নেই বলে? পাঠ্যপুস্তকের ছাপা, কাগজ নিম্নমানের এসব প্রকাশের পর প্রকাশকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের নজির আজও তৈরি হয়নি। তাহলে কি ধরে নেব যে ভূত শর্ষেতে?

২০১০ সাল থেকে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়ার যে রেওয়াজ শুরু হয়েছিল গত বছর থেকে তাতে ভাটা পড়েছে। গত শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বই বিতরণ শুরু করা গেলেও সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। এদিকে নতুন বছরের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় রচিত বই) ছাপানোর কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হয়েছে।

আবার বই ছাপার কাজ পেতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে গড়ে ২২ থেকে ২৫ শতাংশ কম দাম দিয়েছে মুদ্রণকারীরা। যদিও কাগজ, কালি ও কাগজ তৈরির মণ্ডের (পাল্প) দাম বাড়তির দিকে। এ দুটি কারণেও মানসম্মত বই ছাপানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এনসিটিবির কর্মকর্তা ও মুদ্রণকারী উভয়েরই আশঙ্কা, কার্যাদেশ দিতে বিলম্বসহ তিন কারণে সময়মতো মানসম্মত বই ছাপিয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিতরণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। অর্থাৎ গত বছরে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে জাতীয় শিক্ষা শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোন শিক্ষাই নেয়নি। যে কারণে এবারেও একই সংকট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া কার্যাদেশ শুরুর আগেই মুদ্রণকারীদের পক্ষ থেকে দাবি-দাওয়া দেয়া শুরু হয়েছে।

দরপত্র অনুযায়ী মোট সময়ের প্রথম ভাগে ৫০ শতাংশ এবং বাকি ৫০ শতাংশ বই পরের ভাগে দেয়ার কথা থাকলেও এখন মুদ্রণকারী চাইছে এই শর্ত না রাখতে। অতীতেও দেখা গেছে, শেষ সময়ে কিছুসংখ্যক মুদ্রণকারী নানা ফন্দিফিকির করে নিম্নমানের কাগজে বই দেয়। এবারও একই আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার দুই বছর বই উৎসব হয়নি। চলতি শিক্ষাবর্ষে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দিতে পারেনি এনসিটিবি। ফেব্রুয়ারি-মার্চেও কোন কোন মুদ্রণকারী বই দিয়েছিল। বইয়ের কাগজের মান নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল। এবারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সাধারণত বছরের মে মাস থেকেই দরপত্রের প্রক্রিয়া শুরু হতো। কিন্তু এ বছর এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকা-সংক্রান্ত জটিলতার জেরে এ দরপত্রের প্রক্রিয়াটিই শুরু হয় অন্তত তিন মাস পর। এরপর আবার মূল্যায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ করতেও দেরি হচ্ছে। বিলম্বে কার্যাদেশ ও চুক্তি হলে শেষ সময়ে নিম্নমানের কাগজে বই দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ইতিপূর্বে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার জন্য যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিল এবং মুদ্রণ শিল্প সমিতি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে শেষ সময়ে এবার আরও বেশি নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর আশঙ্কা আছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বরাত দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে যে এটা ঠিক যে তারা সময়ের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। এ জন্য কিছুটা আশঙ্কা থাকলেও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে সময়মতো মানসম্মত বই দেয়া যায়। মুদ্রণকারীরাও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। আমরা মনে করি বছরের শুরুতে ছাত্ররা নতুন বই নিয়ে উৎসব করবে এটা নিছক উৎসব নয়, পড়াশোনার জন্য এটা একটি প্রেরণাও। একটি প্রতিষ্ঠান যেহেতু এই কাজটির জন্য নিয়োজিত তারা কেন তিন মাস দেরি করে বই ছাপার প্রক্রিয়া শুরু করবে, এটা কোন যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

[লেখক : সংবাদকর্মী]

back to top