মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রোববার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসেবে এ বছর জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে ২০২৩ সালে দিবসটি পালিত হবে। কুষ্ঠরোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের উদ্দেশ্য হলো কুষ্ঠ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করা। জনবিচ্ছিন্ন কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃগ্রহণ, সর্বপ্রকার কুষ্ঠজনিত কুসংস্কার দূরীকরণ, এই সব লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে জনসাধারণ এবং কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য ও শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে এই দিবসের লক্ষ্য।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কুষ্ঠবিরোধী সংগঠনসমূহের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ‘আইলেপ’, যা ১৩টি আন্তর্জাতিক এনজিও এর সমন্বয়ে গঠিত, এই দিবসটি পালনে উদ্যোগ নেয়। আইলেপ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাউল ফোলেরো বিশ্বব্যাপী কুষ্ঠরোগবিষয়ক ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে ও কুষ্ঠরোগের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ১৯৫৪ সালে দিবসটি উদযাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
কুষ্ঠ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে পুরনো রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর তিনটি প্রধান ধর্ম, যথা- হিন্দু, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থগুলোতে এ রোগের উল্লেখ আছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত মিসর, চীন, গ্রিক, রোম, ভারত ইত্যাদি প্রায় সব কটি দেশের ইতিকথায় এর বিবরণ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এ রোগের ইতিহাস চার হাজার বছরের পুরনো। এ রোগের সবচেয়ে পুরনো কংকালনির্ভর প্রমাণ মেলে ভারতবর্ষে, যা প্রায় খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার সালের সময়কার। তবে, রোগটির সঙ্গে মানুষের পরিচয় কয়েক হাজার বছর আগের হলেও, এর প্রকৃত কারণ তাদের জানা ছিল না। তেমনি এর কোনো চিকিৎসাও তাদের জানা ছিল না। ফলে, শত সহস্র বছর ধরে এ রোগকে কেন্দ্র করে চলে আসে নানাবিধ অলীক ধারণা ও কুসংস্কার, যার নির্মম শিকার হয়ে সমাজে যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর নিপীড়িত, নিগৃহীত হয়েছে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। কোথাও এটাকে মনে করা হয়েছে বিধাতার অভিশাপ, কোথাও বা পাপাচারের ফসল।
এ রোগের কার্যকারণ বা প্রতিকারের বিষয়ে তেমন কিছু না জানলেও লোকজন এটুকু বুঝতে পেরেছিল যে, এ রোগ ছোঁয়াচে, জন থেকে জনান্তরে ছড়াতে পারে। ফলে, সমাজের স্বার্থপরতার বলি হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হতে হয়েছে অস্পৃশ্য, কোথাও সমাজচ্যুত, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে লোকালয় থেকে নির্বাসিত। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ আমরা কুষ্ঠের কারণ, এর উপসর্গ ও ক্রমধারা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল। এর কার্যকর চিকিৎসাও আমাদের আয়ত্তে। এক্ষেত্রে মাইলফলক ছিল ১৮৭৩ সালে নরওয়ের বিজ্ঞানী গেরহার্ড হ্যানসেনের যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই কৃতী বিজ্ঞানী গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন, কুষ্ঠ আসলে একটি জীবাণুঘটিত রোগ, যা একটি ধীরলয়ে বংশবিস্তার করা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে।
[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]
মাহতাব হোসাইন মাজেদ
শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩
প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রোববার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসেবে এ বছর জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে ২০২৩ সালে দিবসটি পালিত হবে। কুষ্ঠরোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের উদ্দেশ্য হলো কুষ্ঠ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করা। জনবিচ্ছিন্ন কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজে পুনঃগ্রহণ, সর্বপ্রকার কুষ্ঠজনিত কুসংস্কার দূরীকরণ, এই সব লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে জনসাধারণ এবং কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য ও শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে এই দিবসের লক্ষ্য।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কুষ্ঠবিরোধী সংগঠনসমূহের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন ‘আইলেপ’, যা ১৩টি আন্তর্জাতিক এনজিও এর সমন্বয়ে গঠিত, এই দিবসটি পালনে উদ্যোগ নেয়। আইলেপ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাউল ফোলেরো বিশ্বব্যাপী কুষ্ঠরোগবিষয়ক ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে ও কুষ্ঠরোগের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ১৯৫৪ সালে দিবসটি উদযাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
কুষ্ঠ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে পুরনো রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর তিনটি প্রধান ধর্ম, যথা- হিন্দু, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থগুলোতে এ রোগের উল্লেখ আছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত মিসর, চীন, গ্রিক, রোম, ভারত ইত্যাদি প্রায় সব কটি দেশের ইতিকথায় এর বিবরণ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এ রোগের ইতিহাস চার হাজার বছরের পুরনো। এ রোগের সবচেয়ে পুরনো কংকালনির্ভর প্রমাণ মেলে ভারতবর্ষে, যা প্রায় খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার সালের সময়কার। তবে, রোগটির সঙ্গে মানুষের পরিচয় কয়েক হাজার বছর আগের হলেও, এর প্রকৃত কারণ তাদের জানা ছিল না। তেমনি এর কোনো চিকিৎসাও তাদের জানা ছিল না। ফলে, শত সহস্র বছর ধরে এ রোগকে কেন্দ্র করে চলে আসে নানাবিধ অলীক ধারণা ও কুসংস্কার, যার নির্মম শিকার হয়ে সমাজে যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর নিপীড়িত, নিগৃহীত হয়েছে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। কোথাও এটাকে মনে করা হয়েছে বিধাতার অভিশাপ, কোথাও বা পাপাচারের ফসল।
এ রোগের কার্যকারণ বা প্রতিকারের বিষয়ে তেমন কিছু না জানলেও লোকজন এটুকু বুঝতে পেরেছিল যে, এ রোগ ছোঁয়াচে, জন থেকে জনান্তরে ছড়াতে পারে। ফলে, সমাজের স্বার্থপরতার বলি হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হতে হয়েছে অস্পৃশ্য, কোথাও সমাজচ্যুত, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে লোকালয় থেকে নির্বাসিত। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ আমরা কুষ্ঠের কারণ, এর উপসর্গ ও ক্রমধারা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল। এর কার্যকর চিকিৎসাও আমাদের আয়ত্তে। এক্ষেত্রে মাইলফলক ছিল ১৮৭৩ সালে নরওয়ের বিজ্ঞানী গেরহার্ড হ্যানসেনের যুগান্তকারী আবিষ্কার। এই কৃতী বিজ্ঞানী গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন, কুষ্ঠ আসলে একটি জীবাণুঘটিত রোগ, যা একটি ধীরলয়ে বংশবিস্তার করা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে।
[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]