alt

উপ-সম্পাদকীয়

কৃষি খাতে যান্ত্রিকীকরণ

আবির সুজন

: মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩

সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশে কৃষি ও কৃষকের সম্পর্ক জন্ম থেকেই একে অপরের পরিপূরক। আর স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে। প্রতিবছর দেশে ৪৩ শতাংশ হারে কৃষি জমি কমলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে চালের উৎপাদন। দেশের কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের বিকাশ মূলত ধান চাষকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। তবে ধানকেন্দ্রিক যান্ত্রিকতা থেকে বের হয়ে আমাদের কৃষি খাতকেই যান্ত্রিকতার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।

তাই গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ জরুরি আর গ্রামীণ কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রধান হাতিয়ার করতে হবে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। তাই শুধু যান্ত্রিকীকরণ করেই অনেক বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষতিও কমানো সম্ভব হবে। কৃষিযন্ত্রের কথা শুনলে আমাদের দেশের কৃষি শ্রমিকরা আঁতকে উঠে। তারা ভাবেন যন্ত্র এসে তাদের কাজটুকু কেড়ে নেবে। এখন আর সেই দিন নেই। এখন একটি কৃষিযন্ত্র গ্রামের একজন তরুণের নিরাপদ কর্মসংস্থান। আধুনিক চাষ পদ্ধতির সঙ্গে টিকে থাকতে মান্ধাতা আমলের ধ্যান-ধারণা দিয়ে সম্ভব নয়। এটি সবাই বুঝে গেছে। সময়ের বিবর্তনে কাজেরও বহু ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

তাছাড়াও এখন কৃষি শ্রমিকেরও তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণেও কৃষি হয়ে উঠেছে ব্যয়বহুল। আর এর সমাধান আসতে পারে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমেই।

দেশে বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণ প্রচলন হলে কম খরচে উৎপাদনের পাশাপাশি মানও নিশ্চিত করা যাবে। ভুট্টায় যান্ত্রিকীকরণ করা হলে ভুট্টাচাষিরা ভুট্টা উৎপাদনে আরও আগ্রহী হবে। এতে করে একদিকে দেশে যেমন আটার ওপর চাপ কমবে অন্যদিকে হাস-মুরগির খাবারের জোগান বাড়বে। তাছাড়া মাছের প্রক্রিয়াকরণেও যান্ত্রিকীকরণের সুযোগ আছে। গবাদি পশুতেও যান্ত্রিকীকরণের প্রাথমিক ধাপও আছে। বিশেষ করে মিল্কিংয়ের জন্য যান্ত্রিকীকরণ অনেক দরকার। দুধ পরিবহনেও যান্ত্রিকীকরণের সুযোগ রয়েছে। পোস্ট-হারভেস্ট লস কমিয়ে আনার জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিভিন্ন শস্যের জন্য যে অপচয় হচ্ছে সেটি রোধ করার জন্য হলেও কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করতে হবে।

বাংলাদেশে প্রায় ৬২ শতাংশ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন সেক্টরে, যার মধ্যে শস্য সেক্টরেই প্রায় ৫৫ শতাংশ। দেশের জনসংখ্যার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি সেক্টরের যেমন চাপ বাড়ছে, তার শঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যশস্য উৎপাদন, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই সেক্টরের গুরুত্ব। নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করা হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন ২৫ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি অর্জন করা সম্ভব হবে।

যেখানে ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ড প্রতি হেক্টর জমিত্র ধান উৎপাদন করেছে গড়ে সাত টনের বেশি, আমরা সেখানে উৎপাদন করছি ৪ থেকে ৫ টন। মাছ, মাংস, সবজি ও বিভিন্ন ফসল এসব দেশ একই জমিতে আমাদের চেয়ে বেশি হারে উৎপাদন করছে। আর সফলতা পেতে আমাদেরও তাদের অনুসরণ করা উচিত। তাই এসব প্রকল্প হতে খামার যান্ত্রিকীকরণ ফসল ফলানোত্তর কর্তনোত্তর ক্ষতি কমানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ করতে হবে। কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ, কৃষি শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি কর্মকান্ডের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

[লেখক : শিক্ষার্থী, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ]

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

কৃষি খাতে যান্ত্রিকীকরণ

আবির সুজন

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩

সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশে কৃষি ও কৃষকের সম্পর্ক জন্ম থেকেই একে অপরের পরিপূরক। আর স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে। প্রতিবছর দেশে ৪৩ শতাংশ হারে কৃষি জমি কমলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে চালের উৎপাদন। দেশের কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের বিকাশ মূলত ধান চাষকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। তবে ধানকেন্দ্রিক যান্ত্রিকতা থেকে বের হয়ে আমাদের কৃষি খাতকেই যান্ত্রিকতার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।

তাই গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ জরুরি আর গ্রামীণ কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রধান হাতিয়ার করতে হবে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। তাই শুধু যান্ত্রিকীকরণ করেই অনেক বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষতিও কমানো সম্ভব হবে। কৃষিযন্ত্রের কথা শুনলে আমাদের দেশের কৃষি শ্রমিকরা আঁতকে উঠে। তারা ভাবেন যন্ত্র এসে তাদের কাজটুকু কেড়ে নেবে। এখন আর সেই দিন নেই। এখন একটি কৃষিযন্ত্র গ্রামের একজন তরুণের নিরাপদ কর্মসংস্থান। আধুনিক চাষ পদ্ধতির সঙ্গে টিকে থাকতে মান্ধাতা আমলের ধ্যান-ধারণা দিয়ে সম্ভব নয়। এটি সবাই বুঝে গেছে। সময়ের বিবর্তনে কাজেরও বহু ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

তাছাড়াও এখন কৃষি শ্রমিকেরও তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণেও কৃষি হয়ে উঠেছে ব্যয়বহুল। আর এর সমাধান আসতে পারে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমেই।

দেশে বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণ প্রচলন হলে কম খরচে উৎপাদনের পাশাপাশি মানও নিশ্চিত করা যাবে। ভুট্টায় যান্ত্রিকীকরণ করা হলে ভুট্টাচাষিরা ভুট্টা উৎপাদনে আরও আগ্রহী হবে। এতে করে একদিকে দেশে যেমন আটার ওপর চাপ কমবে অন্যদিকে হাস-মুরগির খাবারের জোগান বাড়বে। তাছাড়া মাছের প্রক্রিয়াকরণেও যান্ত্রিকীকরণের সুযোগ আছে। গবাদি পশুতেও যান্ত্রিকীকরণের প্রাথমিক ধাপও আছে। বিশেষ করে মিল্কিংয়ের জন্য যান্ত্রিকীকরণ অনেক দরকার। দুধ পরিবহনেও যান্ত্রিকীকরণের সুযোগ রয়েছে। পোস্ট-হারভেস্ট লস কমিয়ে আনার জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিভিন্ন শস্যের জন্য যে অপচয় হচ্ছে সেটি রোধ করার জন্য হলেও কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করতে হবে।

বাংলাদেশে প্রায় ৬২ শতাংশ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন সেক্টরে, যার মধ্যে শস্য সেক্টরেই প্রায় ৫৫ শতাংশ। দেশের জনসংখ্যার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি সেক্টরের যেমন চাপ বাড়ছে, তার শঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্যশস্য উৎপাদন, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই সেক্টরের গুরুত্ব। নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করা হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন ২৫ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি অর্জন করা সম্ভব হবে।

যেখানে ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ড প্রতি হেক্টর জমিত্র ধান উৎপাদন করেছে গড়ে সাত টনের বেশি, আমরা সেখানে উৎপাদন করছি ৪ থেকে ৫ টন। মাছ, মাংস, সবজি ও বিভিন্ন ফসল এসব দেশ একই জমিতে আমাদের চেয়ে বেশি হারে উৎপাদন করছে। আর সফলতা পেতে আমাদেরও তাদের অনুসরণ করা উচিত। তাই এসব প্রকল্প হতে খামার যান্ত্রিকীকরণ ফসল ফলানোত্তর কর্তনোত্তর ক্ষতি কমানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ করতে হবে। কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ, কৃষি শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি কর্মকান্ডের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

[লেখক : শিক্ষার্থী, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ]

back to top