জাকিয়া সুলতানা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর সর্ববৃহৎ মাঠ, যার আয়তন প্রায় ৭.৪৭ একর। এ মাঠে পুরান ঢাকার সাতটি থানা এলাকার শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে থাকে। এ মাঠ শুধু খেলার জায়গাই নয়, আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে অবসর সময় কাটানোর জন্য এ মাঠে আসেন।
ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্য ও গর্বের একটি অংশ এবং দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এ মাঠের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এ মাঠে বাংলাদেশের জাতীয় দলের বেশ কিছু খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখনো প্রতি বছর এ মাঠ থেকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় তৈরি হয়। মাঠটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত, যার একটি অংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। বাকি দুটি অংশ ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ ও স্থানীয় খেলার মাঠ।
রাজধানী ঢাকার জন্য প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) এ মাঠটি ‘খেলার মাঠ’ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। এ মাঠে একটি বহুতল মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এবং নির্মাণ কাজ চলমান রাখে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনোরূপ অনুমোদন ব্যতিরেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ধূপখোলা মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করে সেখানে মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। স্থানীয় এলাকাবাসী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা খেলার মাঠে মার্কেট ও স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জনমানুষের মতামতকে তোয়াক্কা না করে এবং খেলার মাঠ রক্ষায় প্রণীত আইনি বিধান ও আদালত প্রদত্ত আদেশ লঙ্ঘন করে মার্কেট নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ৬টি সমমনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, ব্লাস্ট, নাগরিক উদ্যোগ ও গ্রিন ভয়েস) কর্তৃক ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং-২০৩২/২০২৩) দায়ের করে।
মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত ১২ মার্চ ২০২৩ তারিখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণসংক্রান্ত সবাই কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা আদেশ ও রুল জারি করেন। একইসাথে আদালত ধূপখোলা মাঠ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ প্রদান করেনে। সেই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক ধূপখোলা মাঠে মার্কেট নির্মাণ ও মাঠের শ্রেণী পরিবর্তনের উদ্যোগ সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইন ও ঢাকা শহরের সব খেলার মাঠ রক্ষায় আদালতের প্রদত্ত রায়ের পরিপন্থি হওয়ার কেন তা আইনবহির্ভূত, আইনি কর্তৃত্ববিহীন এবং আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের ওপর রুল জারি করেন আদালত। এ রুলে নির্মিত স্থাপনা কেন অপসারণের এবং কেন তা জনগণের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
ইতোপূর্বে ২০০৩ সালে ঢাকা মহানগরীর সব খেলার মাঠ, পার্ক ও উদ্যান রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) অপর একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং-৩৪৭৫/২০০৩) দায়ের করে। জনস্বার্থমূলক এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে মহামান্য আদালত বিগত ১৫ মার্চ ২০১১ তারিখে ঢাকার ১০টি খেলার মাঠ ও ষাটের বেশি পার্ক সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ প্রদান করেন। একইসাথে এসব খেলার মাঠে এবং পার্কে স্থাপিত স্থাপনা অপসারণের এবং মামলাভুক্ত খেলার মাঠ ও পার্কের সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ প্রদান করেন। এ দশটি খেলার মাঠের মধ্যে ধূপখোলা খেলার মাঠ অন্যতম।
মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণের জন্য ২০০০ সালে আইন প্রণীত হয়। এ আইনের ২(ঘ) ধারায় খেলার মাঠের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী ‘খেলার মাঠ’ বলতে খেলাধুলা বা ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য মাস্টারপ্ল্যানে খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত জায়গাকে বুঝানো হয়েছে। এ আইনের ধারা ৫-এ খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তনে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- এ আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যতীত, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।
ধারা ৮(১) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক ৫ বৎসরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। ৮(২) অনুযায়ী ৫-এর বিধান লঙ্ঘন করে যদি কোনো জায়গা বা জায়গার অংশবিশেষের শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নোটিশ দ্বারা জমির মালিককে বা বিধান লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিকে নোটিশে উল্লেখিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তনের কাজে বাধা প্রদান করতে পারবে এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে অননুমোদিত নির্মাণকার্য ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিতে পারবে।
আইনি বিধিনিষেধ ও আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ঢাকার প্রতিটি পার্ক ও খেলার মাঠে নির্বিচারে নির্মিত হচ্ছে স্থাপনা। আইন প্রয়োগকারী ও আদালতের রায় বাস্তবায়নকারী সংস্থাও নিজ দায়িত্বের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তথাকথিত উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বেছে নিয়েছে বিশ্বে বসবাস-অনুপযোগী শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকা এ নগরীর খেলার মাঠ ও পার্ককে। রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই।
নগর-পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। সে হিসেবে ঢাকার দুই সিটিতে মাঠ দরকার অন্তত ৬১০টি, রয়েছে মাত্র ২৫৬টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ঢাকার মোট জনসংখ্যার ২৭.৮২% তরুণ খেলার মাঠের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছে নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম ও হাঁটা চলার অধিকার থেকে; সর্বোপরি গাছপালা-প্রকৃতির সাথে মানুষের সংযোগ স্থাপনের জরুরি সুযোগ থেকে। নগরবাসীর সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে সব সময় এগিয়ে এসেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিভিন্ন সময় ঘোষণা করেছেন যুগান্তকারী রায়। ধূপখোলা মাঠ নিয়ে যখন নগরবাসী উদ্বিগ্ন, ঠিক সেই সময় এ মাঠ রক্ষায় আদালত প্রদান করলেন স্থিতাবস্থা আদেশ; যা জনমনে আশা জাগিয়েছে। বাস্তবায়িত হোক উচ্চ আদালতের নির্দেশনা, অপসারিত হোক ধূপখোলা মাঠে নির্মিত ও নির্মাণাধীন স্থাপনা- এটাই নগরবাসীর দাবি।
সৌজন্যে : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)
[লেখক : প্রাবন্ধিক]
জাকিয়া সুলতানা
সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর সর্ববৃহৎ মাঠ, যার আয়তন প্রায় ৭.৪৭ একর। এ মাঠে পুরান ঢাকার সাতটি থানা এলাকার শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে থাকে। এ মাঠ শুধু খেলার জায়গাই নয়, আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে অবসর সময় কাটানোর জন্য এ মাঠে আসেন।
ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্য ও গর্বের একটি অংশ এবং দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এ মাঠের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এ মাঠে বাংলাদেশের জাতীয় দলের বেশ কিছু খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখনো প্রতি বছর এ মাঠ থেকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় তৈরি হয়। মাঠটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত, যার একটি অংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। বাকি দুটি অংশ ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ ও স্থানীয় খেলার মাঠ।
রাজধানী ঢাকার জন্য প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) এ মাঠটি ‘খেলার মাঠ’ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। এ মাঠে একটি বহুতল মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এবং নির্মাণ কাজ চলমান রাখে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনোরূপ অনুমোদন ব্যতিরেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ধূপখোলা মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করে সেখানে মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। স্থানীয় এলাকাবাসী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা খেলার মাঠে মার্কেট ও স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জনমানুষের মতামতকে তোয়াক্কা না করে এবং খেলার মাঠ রক্ষায় প্রণীত আইনি বিধান ও আদালত প্রদত্ত আদেশ লঙ্ঘন করে মার্কেট নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ৬টি সমমনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, ব্লাস্ট, নাগরিক উদ্যোগ ও গ্রিন ভয়েস) কর্তৃক ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং-২০৩২/২০২৩) দায়ের করে।
মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত ১২ মার্চ ২০২৩ তারিখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণসংক্রান্ত সবাই কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা আদেশ ও রুল জারি করেন। একইসাথে আদালত ধূপখোলা মাঠ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ প্রদান করেনে। সেই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক ধূপখোলা মাঠে মার্কেট নির্মাণ ও মাঠের শ্রেণী পরিবর্তনের উদ্যোগ সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইন ও ঢাকা শহরের সব খেলার মাঠ রক্ষায় আদালতের প্রদত্ত রায়ের পরিপন্থি হওয়ার কেন তা আইনবহির্ভূত, আইনি কর্তৃত্ববিহীন এবং আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের ওপর রুল জারি করেন আদালত। এ রুলে নির্মিত স্থাপনা কেন অপসারণের এবং কেন তা জনগণের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
ইতোপূর্বে ২০০৩ সালে ঢাকা মহানগরীর সব খেলার মাঠ, পার্ক ও উদ্যান রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) অপর একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং-৩৪৭৫/২০০৩) দায়ের করে। জনস্বার্থমূলক এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে মহামান্য আদালত বিগত ১৫ মার্চ ২০১১ তারিখে ঢাকার ১০টি খেলার মাঠ ও ষাটের বেশি পার্ক সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ প্রদান করেন। একইসাথে এসব খেলার মাঠে এবং পার্কে স্থাপিত স্থাপনা অপসারণের এবং মামলাভুক্ত খেলার মাঠ ও পার্কের সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ প্রদান করেন। এ দশটি খেলার মাঠের মধ্যে ধূপখোলা খেলার মাঠ অন্যতম।
মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণের জন্য ২০০০ সালে আইন প্রণীত হয়। এ আইনের ২(ঘ) ধারায় খেলার মাঠের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী ‘খেলার মাঠ’ বলতে খেলাধুলা বা ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য মাস্টারপ্ল্যানে খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত জায়গাকে বুঝানো হয়েছে। এ আইনের ধারা ৫-এ খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তনে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- এ আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যতীত, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।
ধারা ৮(১) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক ৫ বৎসরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। ৮(২) অনুযায়ী ৫-এর বিধান লঙ্ঘন করে যদি কোনো জায়গা বা জায়গার অংশবিশেষের শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নোটিশ দ্বারা জমির মালিককে বা বিধান লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিকে নোটিশে উল্লেখিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তনের কাজে বাধা প্রদান করতে পারবে এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে অননুমোদিত নির্মাণকার্য ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিতে পারবে।
আইনি বিধিনিষেধ ও আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ঢাকার প্রতিটি পার্ক ও খেলার মাঠে নির্বিচারে নির্মিত হচ্ছে স্থাপনা। আইন প্রয়োগকারী ও আদালতের রায় বাস্তবায়নকারী সংস্থাও নিজ দায়িত্বের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তথাকথিত উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বেছে নিয়েছে বিশ্বে বসবাস-অনুপযোগী শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকা এ নগরীর খেলার মাঠ ও পার্ককে। রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই।
নগর-পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। সে হিসেবে ঢাকার দুই সিটিতে মাঠ দরকার অন্তত ৬১০টি, রয়েছে মাত্র ২৫৬টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ঢাকার মোট জনসংখ্যার ২৭.৮২% তরুণ খেলার মাঠের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছে নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম ও হাঁটা চলার অধিকার থেকে; সর্বোপরি গাছপালা-প্রকৃতির সাথে মানুষের সংযোগ স্থাপনের জরুরি সুযোগ থেকে। নগরবাসীর সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে সব সময় এগিয়ে এসেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিভিন্ন সময় ঘোষণা করেছেন যুগান্তকারী রায়। ধূপখোলা মাঠ নিয়ে যখন নগরবাসী উদ্বিগ্ন, ঠিক সেই সময় এ মাঠ রক্ষায় আদালত প্রদান করলেন স্থিতাবস্থা আদেশ; যা জনমনে আশা জাগিয়েছে। বাস্তবায়িত হোক উচ্চ আদালতের নির্দেশনা, অপসারিত হোক ধূপখোলা মাঠে নির্মিত ও নির্মাণাধীন স্থাপনা- এটাই নগরবাসীর দাবি।
সৌজন্যে : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)
[লেখক : প্রাবন্ধিক]