alt

উপ-সম্পাদকীয়

সিপিআই (এম)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার নেতৃত্বের মূল্যায়ন

গৌতম রায়

: শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

মহ. সেলিম সিপিআই (এম) দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণের পর এক বছর অতিক্রান্ত হলো। তার নাম যখন দলের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে উঠে আসছিল, শাসক শিবির এবং তাদের তোষামদকারী মিডিয়ার পক্ষ থেকে ভয়ঙ্কর রকমের সাম্প্রদায়িক বিভাজনমূলক খবর পরিবেশিত হতে শুরু করে। জন্মসূত্রে মুসলমান বলে সেলিমকে কখনো সিপিআই (এম) দলের রাজ্য সম্পাদক করবে না- সিপিআই (এম) থেকে বিতাড়িত হয়ে নামকাওয়াস্তে তৃণমূলে থাকা, অথচ সেখানেও কোনোরকম পাত্তা না পাওয়া এক প্রাক্তন সাংসদ নিজের নানা অপকীর্তি আড়াল করতে এই সাম্প্রদায়িক প্রচার ভিন্ন ভঙ্গিতে অনেক দিন ধরেই করছিলেন। দলে থাকতে সেই লোকটি কখনই মানুষের স্বার্থে কাজ করেনি, মুসলমানদের স্বার্থে তো দূরের কথা। কিন্তু ক্রমশ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হয়ে নিজের অপকীর্তিকে আড়াল করতে সিপিআই (এম)-এর বিরুদ্ধে সে ‘মুসলিম কার্ড’ খেলতে শুরু করে।

সেই প্রাক্তন সাংসদের হয়ত প্রত্যাশা ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথাকথিত মুসলিম প্রীতির জেরে সে আবার তৃণমূলেও করেকম্মে খেতে পারবে। সিপিআই (এম)-এর ভিতরে সাম্প্রদায়িক কোটারি করার চেষ্টা করে, নিজেকে বুদ্ধিজীবী প্রতিপন্ন করে, বিজেপি ঘনিষ্ঠ লোককে দিয়ে বই নিজের বই ছাপিয়েও তৃণমূল বা মমতার কাছে এতটুকু গ্রহণযোগ্য হতে না পারা সেই পচা টমেটো বা তার শাগরেদরা সে অসত্য প্রচার চালাচ্ছিল সিপিআইকে (এম) ঘিরে, তারই দোসর হিসেবে তাতে গলা মিলিয়েছিল একাংশের সংবাদমাধ্যম। ব্রাহ্মণ্যবাদী থেকে নানা ধরনের তকমা তারা সিপিআইকে (এম) দিতেও পিছপা হয়নি।

সেলিম তার দলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার অব্যবহিত পরেই যে সাংবাদিক সম্মেলন করেন, সেখানেও বৈদ্যুতিক গণমাধ্যমের কেউ কেউ নানা সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন করে তাকে উত্তেজিত করবার, প্ররোচিত করবার চেষ্টা করেছিল। যে বুদ্ধিমত্তা, কৌতুক আর রাজনীতি দিয়ে সেসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্নের মোকাবিলায় ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সেলিম, তাতেই বোঝা গিয়েছিল- আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসে বা ফেসবুক-টুইটার থেকে দল পরিচালিত করবার মানুষ সেলিম নন।

দলের দায়িত্ব নেওয়ার অব্যবহিত পরেই শহিদ আনিস খানের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সেলিম। যেদিন যাবেন হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে আনিসের বাড়ি, তার আগের রাতেই ঘটল নারকীয় বাগটুই গণহত্যা বীরভূম জেলায়। আনিসের বাড়ি যাওয়ার আগেই বাগটুইয়ের নারকীয় ঘটনার নিন্দা করে দলের সদর দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন সেলিম। তখনও কি শাসক, কি শৌখিন মজদুর ‘বিরোধী’ বিজেপির বাগটুই ঘিরে নিদ্রাভঙ্গই হয়নি।

ঘুমিয়ে পড়া সিপিআই (এম), ঝিমিয়ে পড়া সিপিআইকে (এম) শুধু ওই দলের কর্মী-সমর্থকরাই নয়, বামপন্থী দলগুলোর লোকজনও নয়- কেন্দ্রের শাসক বিজেপি আর রাজ্যের শাসক তৃণমূল নতুন করে দেখল

আনিসের বাড়ি যাওয়ার আগেই সেলিম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বাগটুই যাবেন। আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতায় প্রতিটি বিষয়েই আলাপ আলোচনায় অযথা সময়ক্ষেপ করে এ ধরনের ঘটনাক্রম ঘিরে দলের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবার যে পথে এতকাল সিপিআই (এম) হাঁটত, সেখানে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় নেতা হিসেবে বিমান বসু এবং বামফ্রন্টের শরিক দলের নেতা হিসেবে আরএসপির সর্বভারতীয় সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্যকে নিয়ে একদম উল্কার বেগে সেলিম পৌঁছে গেলেন বাগটুইতে।

বিরাট গাড়ির কনভয় নয়, দলীয় কমরেডের বাইকের সাওয়ারী হয়ে গেরিলা কায়দায় সেলিম পৌঁছলেন বাগটুইতে। তৃণমূলের নেতার প্রাসদপম বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে জবাব দিলেন শাসককে। পুলিশ বোঝার আগেই অকুস্থলে পৌঁছে গিয়ে সেলিম বুঝিয়ে দিলেন তিনি সেলিম, তিনি কেবল বক্তৃতা, ফেসবুক, টুইটার দিয়েই দলকে পরিচালিত করবেন না।

ঘুমিয়ে পড়া সিপিআই (এম), ঝিমিয়ে পড়া সিপিআইকে (এম) কেবল ওই দলের কর্মী-সমর্থকরাই নয়, বামপন্থি দলগুলোর লোকজনেরাও নয়- কেন্দ্রের শাসক বিজেপি আর রাজ্যের শাসক তৃণমূল নতুন করে দেখল। ঘুম ছুটতে শুরু করল বিজেপির। ঘুম ছুটে গেল মমতার। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন ফিরহাদ হাকিমকে দিয়ে সব ম্যানেজ করে নেবেন। কিন্তু সেলিমের রাজনৈতিক তৎপরতার মোকাবিলা করতে হেলিকপ্টারে করে ছুটে গিয়ে, অনুব্রত মন্ডলকে নিয়ে প্রলেপ লাগাবার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন মমতা।

যে গেরিলা কায়দায় বাগটুইতে পৌঁছে তৃণমূলবিরোধী আন্দোলনকে একটা ভিন্নমাত্রায় রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন সেলিম, এমনটা বিগত তিরিশ-চল্লিশ বছরে সিপিআই (এম) দলে কখনো দেখা যায়নি। প্রাজ্ঞতাকে স্থবিরতায় পর্যবসিত না করে, প্রাজ্ঞতার সঙ্গে ক্ষিপ্রতাকে সংযুক্ত করে প্রথমেই সেলিম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিজের ব্যতিক্রমী আঙ্গিককে।

গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্মটিকে একটা সুনির্দিষ্ট্য রাজনৈতিক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে বিস্তৃত করে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি আর তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার ধারক-বাহক, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সমস্ত গণতান্ত্রিক মানুষকে, ধর্মনিরপেক্ষ জনমতকে শামিল করা- এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত এক বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন সেলিম। বস্তুত প্রমোদ দাশগুপ্তের পরে এমন পায়ে সর্ষে লাগানো সম্পাদক ক্ষমতায় থাকার সময়েই হোক আর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেই হোক- সিপিআই (এম) পায়নি। তবে কেবল টো টো করে ঘুরলেই তো হলো না, সেই পরিশ্রমকে ফলপ্রসূ করে তোলা, সেটাও কিন্তু যেকোনো কায়িক শ্রমের একটা বড় বিষয়। এখানেও বলতে হয়, গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি আনাচে কানাচে চষে বেড়ানো সেলিম কিন্তু এসব সফরকালে কেবলমাত্র নিজের দলের গন্ডির ভিতরে সীমাবদ্ধ রাখেননি নিজেকে। বস্তুত দীর্ঘকাল ধরেই সিপিআই (এম) বা বামপন্থি পরিমন্ডলের বাইরেও সেলিমের একটা প্রবল গ্রহণযোগ্যতা আছে। এমন গ্রহণযোগ্যতা হলফ করে বলা যায়, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছাড়া আর কোনো বামপন্থি নেতাদের হয়নি।

সর্বস্তরের এই গ্রহণযোগ্যতাকে কিন্তু সেলিম কখনই নিজের টিআরপি বাড়াবার কাজে ব্যবহার করেননি। নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে সেলিম চিরদিন উৎসর্গ করেছেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বিস্তারের লক্ষ্যে। ভারতের গোটা রাজনৈতিক পরিমন্ডলে সেলিমই সম্ভবত একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি শৈশবে সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফফর খানের পায়ের নিচে বসে ও যেমন জীবনের শিক্ষা নিয়েছেন, তেমনই বিপ্লবী রাধারমণ মিত্রের কলকাতা অনুসন্ধানেও তার সাগরেদ হয়েছেন, তেমনই জীবনদর্শনের পাঠ নিয়েছেন আবু সয়ীদ আইয়ুব, গৌরী আইয়ুবের কাছে; আবার সেবাব্রতের মানুষকে ভালোবাসার পাঠ নিয়েছেন স্বামী আত্মস্থানন্দের কাছে। তাই আমরা ব্যতিক্রমী সেলিমকে দেখেছিলাম, স্বামী আত্মস্থানন্দের প্রয়াণের পর বেলুড় মঠে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ভিতর দিয়ে।

বাস্তববোধ আর বিচক্ষণতার ভিতর দিয়ে মাত্র এক বছর সময়ের ভিতরে সিপিআইকে ( এম) পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ময়দানে যেভাবে সেলিম ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন তাতে তার এই কর্মকান্ডের সঙ্গে তুলনা চলে বিরোধী রাজনীতিক হিসেবে জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্তদের ভূমিকা এবং অবদানের সঙ্গে। জ্যোতিবাবুর মধ্যে যেমন কখনো এতটুকু নাটকীয়তা ছিল না, আবার প্রমোদবাবু যেমন হাতের তালুর মতো জানতেন সংগঠনকে, স্মৃতিশক্তি ছিল ঈর্ষণীয়- এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রত্যয় আমরা দেখতে পাই সেলিমের ভিতরে। আগের প্রজন্মকে সম্মান দেওয়া, মর্যাদা দেওয়া এটা যেমন সেলিমের বৈশিষ্ট্য, তেমনই পরের প্রজন্মকে স্বীকৃতি দেওয়া, তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া- এটাও সেলিমের একটা বিশেষ উল্লেখ করবার মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

সেলিম মিতবাক। রাজনীতির বাইরে একটাও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে তিনি নিজেকে বা তার দলকে কখনও বিড়ম্বনার ভিতরে ফেলেন না। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সেলিমের চিকিৎসকপতœী যাকে চব্বিশ ঘণ্টাই প্রয়োজনে যাতে হাসপাতাল পায়, সেজন্যে যে কোয়ার্টারটি বরাদ্দ করা হয়েছিল- সেখানে হঠাৎ গিয়ে অনভিপ্রেতভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে নাটকীয় পরিবেশ তৈরি করেন। সেলিমপতœী ডা. রোজিনা খাতুন পেশাগতভাবে অ্যানাসথেটিস্ট। চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতালে কর্মরত। একটি শিশু হাসপাতালের চৌহদ্দির ভিতরে একজন অজ্ঞান করবার চিকিৎসকের চব্বিশ ঘণ্টা থাকবার কতখানি প্রয়োজনীয়তা- চিকিৎসা বিষয়টি সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে, তারাই সেটা বুঝবেন।

মমতা একাধারে মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েও একটা শিশু হাসপাতালের কোয়ার্টারে অজ্ঞান করবার চিকিৎসকের সব সময় থাকার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে। শুধুমাত্র ব্যক্তি সেলিমের প্রতি রাজনৈতিক বিদ্বেষ নিয়ে ডা. রোজিনা খাতুনের সেই কোয়ার্টারে থাকার প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি সত্ত্বেও তাদের উৎখাত করেন। মমতার সেই রাজনৈতিক অভিসন্ধির বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে হয় সেলিমকেই। ঘটনার সময়ে সংসদ চলার জন্যে (তখন সেলিম সাংসদ) তিনি দিল্লিতে ছিলেন। কলকাতায় এসে সাংবাদিক সম্মেলনে একটি অরাজনৈতিক, শিষ্টাচারবিরোধী আক্রমণ কিন্তু তাকে মমতার বিরুদ্ধে বলতে শোনা যায়নি। ঘরেবাইরে অনেকেই হয়ত সেদিন ভেবেছিলেন, ভালোই হয়েছে ফাঁকড়ে পড়েছে সেলিম। কিন্তু কাউকে কোনোরকম ইঙ্গিতবাহী অরাজনৈতিক কটু কথাও বলতে শোনা যায়নি সেলিমকে।

সেলিমের সিপিআই (এম)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার এক বছরের সাফল্য দেখে এখন জোর গলাতেই একথা বলতে চাই যে, ২০০৪ সালে তিনি যদি আবার জাতীয় রাজনীতিতে ফিরে না যেতেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেই আরো নিবিড়ভাবে থাকতেন, তার দল এবং বামফ্রন্ট সরকারে আরো সক্রিয় থাকতেন, তাহলে আজকের দুর্দিন পশ্চিমবঙ্গবাসীকে দেখতে হতো না। সেদিন সেলিম আবার জাতীয় রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ায় সংসদে বামপন্থিদের সাফল্যে নতুন শিরোপা যুক্ত হলেও বামফ্রন্টকে বিশেষ করে সিপিআইকে (এম) শক্তিহীন করবার জন্য ঘরেবাইরে যে চক্রান্ত হয়েছে, তার মোকাবিলায় বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সেলিম প্রত্যক্ষভাবে থাকলে আজকের এ দুর্দশায় বাংলার মানুষকে পড়তে হতো না। সেলিমের বাস্তববোধ, সমস্ত স্তরের মানুষের সঙ্গে সংযোগ এবং সমস্ত স্তরের মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা আর জনপ্রিয়তা কিছুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আরএসএস-বিজেপির দোসরকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন হতে দিত না।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সিপিআই (এম)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার নেতৃত্বের মূল্যায়ন

গৌতম রায়

শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

মহ. সেলিম সিপিআই (এম) দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণের পর এক বছর অতিক্রান্ত হলো। তার নাম যখন দলের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে উঠে আসছিল, শাসক শিবির এবং তাদের তোষামদকারী মিডিয়ার পক্ষ থেকে ভয়ঙ্কর রকমের সাম্প্রদায়িক বিভাজনমূলক খবর পরিবেশিত হতে শুরু করে। জন্মসূত্রে মুসলমান বলে সেলিমকে কখনো সিপিআই (এম) দলের রাজ্য সম্পাদক করবে না- সিপিআই (এম) থেকে বিতাড়িত হয়ে নামকাওয়াস্তে তৃণমূলে থাকা, অথচ সেখানেও কোনোরকম পাত্তা না পাওয়া এক প্রাক্তন সাংসদ নিজের নানা অপকীর্তি আড়াল করতে এই সাম্প্রদায়িক প্রচার ভিন্ন ভঙ্গিতে অনেক দিন ধরেই করছিলেন। দলে থাকতে সেই লোকটি কখনই মানুষের স্বার্থে কাজ করেনি, মুসলমানদের স্বার্থে তো দূরের কথা। কিন্তু ক্রমশ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হয়ে নিজের অপকীর্তিকে আড়াল করতে সিপিআই (এম)-এর বিরুদ্ধে সে ‘মুসলিম কার্ড’ খেলতে শুরু করে।

সেই প্রাক্তন সাংসদের হয়ত প্রত্যাশা ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথাকথিত মুসলিম প্রীতির জেরে সে আবার তৃণমূলেও করেকম্মে খেতে পারবে। সিপিআই (এম)-এর ভিতরে সাম্প্রদায়িক কোটারি করার চেষ্টা করে, নিজেকে বুদ্ধিজীবী প্রতিপন্ন করে, বিজেপি ঘনিষ্ঠ লোককে দিয়ে বই নিজের বই ছাপিয়েও তৃণমূল বা মমতার কাছে এতটুকু গ্রহণযোগ্য হতে না পারা সেই পচা টমেটো বা তার শাগরেদরা সে অসত্য প্রচার চালাচ্ছিল সিপিআইকে (এম) ঘিরে, তারই দোসর হিসেবে তাতে গলা মিলিয়েছিল একাংশের সংবাদমাধ্যম। ব্রাহ্মণ্যবাদী থেকে নানা ধরনের তকমা তারা সিপিআইকে (এম) দিতেও পিছপা হয়নি।

সেলিম তার দলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার অব্যবহিত পরেই যে সাংবাদিক সম্মেলন করেন, সেখানেও বৈদ্যুতিক গণমাধ্যমের কেউ কেউ নানা সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন করে তাকে উত্তেজিত করবার, প্ররোচিত করবার চেষ্টা করেছিল। যে বুদ্ধিমত্তা, কৌতুক আর রাজনীতি দিয়ে সেসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্নের মোকাবিলায় ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সেলিম, তাতেই বোঝা গিয়েছিল- আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসে বা ফেসবুক-টুইটার থেকে দল পরিচালিত করবার মানুষ সেলিম নন।

দলের দায়িত্ব নেওয়ার অব্যবহিত পরেই শহিদ আনিস খানের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সেলিম। যেদিন যাবেন হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে আনিসের বাড়ি, তার আগের রাতেই ঘটল নারকীয় বাগটুই গণহত্যা বীরভূম জেলায়। আনিসের বাড়ি যাওয়ার আগেই বাগটুইয়ের নারকীয় ঘটনার নিন্দা করে দলের সদর দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন সেলিম। তখনও কি শাসক, কি শৌখিন মজদুর ‘বিরোধী’ বিজেপির বাগটুই ঘিরে নিদ্রাভঙ্গই হয়নি।

ঘুমিয়ে পড়া সিপিআই (এম), ঝিমিয়ে পড়া সিপিআইকে (এম) শুধু ওই দলের কর্মী-সমর্থকরাই নয়, বামপন্থী দলগুলোর লোকজনও নয়- কেন্দ্রের শাসক বিজেপি আর রাজ্যের শাসক তৃণমূল নতুন করে দেখল

আনিসের বাড়ি যাওয়ার আগেই সেলিম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বাগটুই যাবেন। আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতায় প্রতিটি বিষয়েই আলাপ আলোচনায় অযথা সময়ক্ষেপ করে এ ধরনের ঘটনাক্রম ঘিরে দলের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবার যে পথে এতকাল সিপিআই (এম) হাঁটত, সেখানে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় নেতা হিসেবে বিমান বসু এবং বামফ্রন্টের শরিক দলের নেতা হিসেবে আরএসপির সর্বভারতীয় সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্যকে নিয়ে একদম উল্কার বেগে সেলিম পৌঁছে গেলেন বাগটুইতে।

বিরাট গাড়ির কনভয় নয়, দলীয় কমরেডের বাইকের সাওয়ারী হয়ে গেরিলা কায়দায় সেলিম পৌঁছলেন বাগটুইতে। তৃণমূলের নেতার প্রাসদপম বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে জবাব দিলেন শাসককে। পুলিশ বোঝার আগেই অকুস্থলে পৌঁছে গিয়ে সেলিম বুঝিয়ে দিলেন তিনি সেলিম, তিনি কেবল বক্তৃতা, ফেসবুক, টুইটার দিয়েই দলকে পরিচালিত করবেন না।

ঘুমিয়ে পড়া সিপিআই (এম), ঝিমিয়ে পড়া সিপিআইকে (এম) কেবল ওই দলের কর্মী-সমর্থকরাই নয়, বামপন্থি দলগুলোর লোকজনেরাও নয়- কেন্দ্রের শাসক বিজেপি আর রাজ্যের শাসক তৃণমূল নতুন করে দেখল। ঘুম ছুটতে শুরু করল বিজেপির। ঘুম ছুটে গেল মমতার। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন ফিরহাদ হাকিমকে দিয়ে সব ম্যানেজ করে নেবেন। কিন্তু সেলিমের রাজনৈতিক তৎপরতার মোকাবিলা করতে হেলিকপ্টারে করে ছুটে গিয়ে, অনুব্রত মন্ডলকে নিয়ে প্রলেপ লাগাবার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন মমতা।

যে গেরিলা কায়দায় বাগটুইতে পৌঁছে তৃণমূলবিরোধী আন্দোলনকে একটা ভিন্নমাত্রায় রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন সেলিম, এমনটা বিগত তিরিশ-চল্লিশ বছরে সিপিআই (এম) দলে কখনো দেখা যায়নি। প্রাজ্ঞতাকে স্থবিরতায় পর্যবসিত না করে, প্রাজ্ঞতার সঙ্গে ক্ষিপ্রতাকে সংযুক্ত করে প্রথমেই সেলিম বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিজের ব্যতিক্রমী আঙ্গিককে।

গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্মটিকে একটা সুনির্দিষ্ট্য রাজনৈতিক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে বিস্তৃত করে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি আর তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার ধারক-বাহক, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সমস্ত গণতান্ত্রিক মানুষকে, ধর্মনিরপেক্ষ জনমতকে শামিল করা- এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত এক বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন সেলিম। বস্তুত প্রমোদ দাশগুপ্তের পরে এমন পায়ে সর্ষে লাগানো সম্পাদক ক্ষমতায় থাকার সময়েই হোক আর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেই হোক- সিপিআই (এম) পায়নি। তবে কেবল টো টো করে ঘুরলেই তো হলো না, সেই পরিশ্রমকে ফলপ্রসূ করে তোলা, সেটাও কিন্তু যেকোনো কায়িক শ্রমের একটা বড় বিষয়। এখানেও বলতে হয়, গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি আনাচে কানাচে চষে বেড়ানো সেলিম কিন্তু এসব সফরকালে কেবলমাত্র নিজের দলের গন্ডির ভিতরে সীমাবদ্ধ রাখেননি নিজেকে। বস্তুত দীর্ঘকাল ধরেই সিপিআই (এম) বা বামপন্থি পরিমন্ডলের বাইরেও সেলিমের একটা প্রবল গ্রহণযোগ্যতা আছে। এমন গ্রহণযোগ্যতা হলফ করে বলা যায়, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছাড়া আর কোনো বামপন্থি নেতাদের হয়নি।

সর্বস্তরের এই গ্রহণযোগ্যতাকে কিন্তু সেলিম কখনই নিজের টিআরপি বাড়াবার কাজে ব্যবহার করেননি। নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে সেলিম চিরদিন উৎসর্গ করেছেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার বিস্তারের লক্ষ্যে। ভারতের গোটা রাজনৈতিক পরিমন্ডলে সেলিমই সম্ভবত একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি শৈশবে সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফফর খানের পায়ের নিচে বসে ও যেমন জীবনের শিক্ষা নিয়েছেন, তেমনই বিপ্লবী রাধারমণ মিত্রের কলকাতা অনুসন্ধানেও তার সাগরেদ হয়েছেন, তেমনই জীবনদর্শনের পাঠ নিয়েছেন আবু সয়ীদ আইয়ুব, গৌরী আইয়ুবের কাছে; আবার সেবাব্রতের মানুষকে ভালোবাসার পাঠ নিয়েছেন স্বামী আত্মস্থানন্দের কাছে। তাই আমরা ব্যতিক্রমী সেলিমকে দেখেছিলাম, স্বামী আত্মস্থানন্দের প্রয়াণের পর বেলুড় মঠে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ভিতর দিয়ে।

বাস্তববোধ আর বিচক্ষণতার ভিতর দিয়ে মাত্র এক বছর সময়ের ভিতরে সিপিআইকে ( এম) পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ময়দানে যেভাবে সেলিম ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন তাতে তার এই কর্মকান্ডের সঙ্গে তুলনা চলে বিরোধী রাজনীতিক হিসেবে জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্তদের ভূমিকা এবং অবদানের সঙ্গে। জ্যোতিবাবুর মধ্যে যেমন কখনো এতটুকু নাটকীয়তা ছিল না, আবার প্রমোদবাবু যেমন হাতের তালুর মতো জানতেন সংগঠনকে, স্মৃতিশক্তি ছিল ঈর্ষণীয়- এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রত্যয় আমরা দেখতে পাই সেলিমের ভিতরে। আগের প্রজন্মকে সম্মান দেওয়া, মর্যাদা দেওয়া এটা যেমন সেলিমের বৈশিষ্ট্য, তেমনই পরের প্রজন্মকে স্বীকৃতি দেওয়া, তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া- এটাও সেলিমের একটা বিশেষ উল্লেখ করবার মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

সেলিম মিতবাক। রাজনীতির বাইরে একটাও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে তিনি নিজেকে বা তার দলকে কখনও বিড়ম্বনার ভিতরে ফেলেন না। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সেলিমের চিকিৎসকপতœী যাকে চব্বিশ ঘণ্টাই প্রয়োজনে যাতে হাসপাতাল পায়, সেজন্যে যে কোয়ার্টারটি বরাদ্দ করা হয়েছিল- সেখানে হঠাৎ গিয়ে অনভিপ্রেতভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে নাটকীয় পরিবেশ তৈরি করেন। সেলিমপতœী ডা. রোজিনা খাতুন পেশাগতভাবে অ্যানাসথেটিস্ট। চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতালে কর্মরত। একটি শিশু হাসপাতালের চৌহদ্দির ভিতরে একজন অজ্ঞান করবার চিকিৎসকের চব্বিশ ঘণ্টা থাকবার কতখানি প্রয়োজনীয়তা- চিকিৎসা বিষয়টি সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে, তারাই সেটা বুঝবেন।

মমতা একাধারে মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েও একটা শিশু হাসপাতালের কোয়ার্টারে অজ্ঞান করবার চিকিৎসকের সব সময় থাকার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে। শুধুমাত্র ব্যক্তি সেলিমের প্রতি রাজনৈতিক বিদ্বেষ নিয়ে ডা. রোজিনা খাতুনের সেই কোয়ার্টারে থাকার প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি সত্ত্বেও তাদের উৎখাত করেন। মমতার সেই রাজনৈতিক অভিসন্ধির বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে হয় সেলিমকেই। ঘটনার সময়ে সংসদ চলার জন্যে (তখন সেলিম সাংসদ) তিনি দিল্লিতে ছিলেন। কলকাতায় এসে সাংবাদিক সম্মেলনে একটি অরাজনৈতিক, শিষ্টাচারবিরোধী আক্রমণ কিন্তু তাকে মমতার বিরুদ্ধে বলতে শোনা যায়নি। ঘরেবাইরে অনেকেই হয়ত সেদিন ভেবেছিলেন, ভালোই হয়েছে ফাঁকড়ে পড়েছে সেলিম। কিন্তু কাউকে কোনোরকম ইঙ্গিতবাহী অরাজনৈতিক কটু কথাও বলতে শোনা যায়নি সেলিমকে।

সেলিমের সিপিআই (এম)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার এক বছরের সাফল্য দেখে এখন জোর গলাতেই একথা বলতে চাই যে, ২০০৪ সালে তিনি যদি আবার জাতীয় রাজনীতিতে ফিরে না যেতেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেই আরো নিবিড়ভাবে থাকতেন, তার দল এবং বামফ্রন্ট সরকারে আরো সক্রিয় থাকতেন, তাহলে আজকের দুর্দিন পশ্চিমবঙ্গবাসীকে দেখতে হতো না। সেদিন সেলিম আবার জাতীয় রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ায় সংসদে বামপন্থিদের সাফল্যে নতুন শিরোপা যুক্ত হলেও বামফ্রন্টকে বিশেষ করে সিপিআইকে (এম) শক্তিহীন করবার জন্য ঘরেবাইরে যে চক্রান্ত হয়েছে, তার মোকাবিলায় বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সেলিম প্রত্যক্ষভাবে থাকলে আজকের এ দুর্দশায় বাংলার মানুষকে পড়তে হতো না। সেলিমের বাস্তববোধ, সমস্ত স্তরের মানুষের সঙ্গে সংযোগ এবং সমস্ত স্তরের মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা আর জনপ্রিয়তা কিছুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আরএসএস-বিজেপির দোসরকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন হতে দিত না।

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

back to top