alt

উপ-সম্পাদকীয়

ফিরে দেখা : একাত্তরে কিছু গণহত্যার কথা

সাদেকুর রহমান

: রোববার, ০৪ জুন ২০২৩

(শেষাংশ)

মাগন মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে এই গ্রামে সবার আগে হত্যা করা হয়। নিহত মাগনের ভাই মালেক জানান, সকাল বেলা পাকিস্তানি বাহিনীর ৪০-৫০ সদস্য নদী পার হয়ে তাদের বাড়িতে হানা দেয়। এরপর তার ভাইকে হত্যা করে।

তিনি জানান, লাশগুলো হত্যার পর কিছু নদীতে ফেলে দেয়া হয় এবং পাঁচটি গণকবরে প্রায় ৪০ জনকে চাপা দেয়া হয়।

বলাই সিধবা নামে একজনের পরিবারের ৯ জনকে সেদিন পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে। তারা হলেন - দ্রুপদিসিধবা, সচিন্দ্র চন্দ্র সিধবা, যোগিন্দ্র চন্দ্র সিধবা, প্রফুল্ল চন্দ্র সিধবা, মায়াদাসি সিধবা, ভাই মন্টু চন্দ্র সিধবা এবং লক্ষন চন্দ্র সিধবার নাম জানা গেলেও বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি।

পাচু শিকদারের মা কমলা ও বোন যমুনা হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। এর বাইরে তার আরেক বোনকে গুলি করা হয়।

শত্রুবাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো মন্টু বিশ্বাস পরিবারের স্বজনদের মধ্যে নিতাই শিধা, দয়াল শিধা, হরিনাথ শিধা ও মনিন্দ্র শিধা এবং ছেলে সুধীর সিধা ও সুধাংশু সিধার নাম জানা গেছে। এর বাইরে আরেকজন মারা গেলেও তার নাম জানা যায়নি।

এছাড়া মন্টু বিশ্বাসের স্বজন সীতানাথের দুই ছেলেকে হত্যা করা হয় এবং একমাত্র মেয়ে পুস্পরানীকে পাকিস্তানি বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। দুই মাস পর ছাড়া পেলে পুস্পরানী পরিবারের সঙ্গে দেশ ছাড়েন।

হরিপুর গণহত্যা : মুক্তিযুদ্ধের বছর ২২ জুন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এক নারকীয় হত্যাতান্ডব চালায় ফেনীর ছাগলনাইয়ার হরিপুর গ্রামে। মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে তথ্য দিতে রাজি না হওয়ায় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সহযোগিতায় পাকিস্তানি হায়েনারা ৯ জন সাধারণ মানুষকে অমানুষিক নির্যাতন করে এবং ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।

সেদিন সকালে ১০-১৫ জনের বেশি পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল ছাগলনাইয়ার বাংলাবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে আসে। তখন রাস্তায় গরু নিয়ে যাওয়া অবস্থায় তারা তাহেরকে ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি কোনো তথ্য দিতে না পারলে তাকে গরুর দড়ি দিয়ে সেখানে বেঁধে রাখে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা রেজুমিয়া ব্রিজের পাশে বাঁশপাড়া গ্রামের বতু মিয়া ও তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা বাংলাবাজার রাস্তার পাশে নয়জনকে ধরে হাত বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখে। এরপর আরও চার বয়স্কলোককেও ধরে আনে। খানসেনারা সব পথচারীর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শত্রুসেনারা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা তরুণদের ওপর নির্যাতন করে। তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা শুরু করে। নয়জনকে হত্যা করে তাদের লাশ ফেনী ছাগলনাইয়া মহাসড়কের পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। তিন দিন পর্যন্ত লাশগুলো ডোবায় পড়ে ছিল। তখন পাঞ্জাবিদের অনুমতি ছাড়া লাশ দাফন করা যেত না। দুই দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী লাশগুলো দাফনের জন্য দুই ঘণ্টা সময় দেয়। পচা-গলিত লাশগুলোকে কোনো কাফন ও গোসল ছাড়া গর্তের মধ্যে মাটি চাপা দেয়া হয়। হরিপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পকিস্তানি সেনাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভারতে চলে যান।

[ লেখক : সমন্বয়ক ও গবেষক, ‘প্রবাসে প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং ‘প্রবাস বাংলা’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ বেতার ]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ফিরে দেখা : একাত্তরে কিছু গণহত্যার কথা

সাদেকুর রহমান

রোববার, ০৪ জুন ২০২৩

(শেষাংশ)

মাগন মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে এই গ্রামে সবার আগে হত্যা করা হয়। নিহত মাগনের ভাই মালেক জানান, সকাল বেলা পাকিস্তানি বাহিনীর ৪০-৫০ সদস্য নদী পার হয়ে তাদের বাড়িতে হানা দেয়। এরপর তার ভাইকে হত্যা করে।

তিনি জানান, লাশগুলো হত্যার পর কিছু নদীতে ফেলে দেয়া হয় এবং পাঁচটি গণকবরে প্রায় ৪০ জনকে চাপা দেয়া হয়।

বলাই সিধবা নামে একজনের পরিবারের ৯ জনকে সেদিন পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে। তারা হলেন - দ্রুপদিসিধবা, সচিন্দ্র চন্দ্র সিধবা, যোগিন্দ্র চন্দ্র সিধবা, প্রফুল্ল চন্দ্র সিধবা, মায়াদাসি সিধবা, ভাই মন্টু চন্দ্র সিধবা এবং লক্ষন চন্দ্র সিধবার নাম জানা গেলেও বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি।

পাচু শিকদারের মা কমলা ও বোন যমুনা হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। এর বাইরে তার আরেক বোনকে গুলি করা হয়।

শত্রুবাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো মন্টু বিশ্বাস পরিবারের স্বজনদের মধ্যে নিতাই শিধা, দয়াল শিধা, হরিনাথ শিধা ও মনিন্দ্র শিধা এবং ছেলে সুধীর সিধা ও সুধাংশু সিধার নাম জানা গেছে। এর বাইরে আরেকজন মারা গেলেও তার নাম জানা যায়নি।

এছাড়া মন্টু বিশ্বাসের স্বজন সীতানাথের দুই ছেলেকে হত্যা করা হয় এবং একমাত্র মেয়ে পুস্পরানীকে পাকিস্তানি বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। দুই মাস পর ছাড়া পেলে পুস্পরানী পরিবারের সঙ্গে দেশ ছাড়েন।

হরিপুর গণহত্যা : মুক্তিযুদ্ধের বছর ২২ জুন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এক নারকীয় হত্যাতান্ডব চালায় ফেনীর ছাগলনাইয়ার হরিপুর গ্রামে। মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে তথ্য দিতে রাজি না হওয়ায় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সহযোগিতায় পাকিস্তানি হায়েনারা ৯ জন সাধারণ মানুষকে অমানুষিক নির্যাতন করে এবং ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।

সেদিন সকালে ১০-১৫ জনের বেশি পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল ছাগলনাইয়ার বাংলাবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে আসে। তখন রাস্তায় গরু নিয়ে যাওয়া অবস্থায় তারা তাহেরকে ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি কোনো তথ্য দিতে না পারলে তাকে গরুর দড়ি দিয়ে সেখানে বেঁধে রাখে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা রেজুমিয়া ব্রিজের পাশে বাঁশপাড়া গ্রামের বতু মিয়া ও তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা বাংলাবাজার রাস্তার পাশে নয়জনকে ধরে হাত বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখে। এরপর আরও চার বয়স্কলোককেও ধরে আনে। খানসেনারা সব পথচারীর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শত্রুসেনারা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা তরুণদের ওপর নির্যাতন করে। তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা শুরু করে। নয়জনকে হত্যা করে তাদের লাশ ফেনী ছাগলনাইয়া মহাসড়কের পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। তিন দিন পর্যন্ত লাশগুলো ডোবায় পড়ে ছিল। তখন পাঞ্জাবিদের অনুমতি ছাড়া লাশ দাফন করা যেত না। দুই দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী লাশগুলো দাফনের জন্য দুই ঘণ্টা সময় দেয়। পচা-গলিত লাশগুলোকে কোনো কাফন ও গোসল ছাড়া গর্তের মধ্যে মাটি চাপা দেয়া হয়। হরিপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পকিস্তানি সেনাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভারতে চলে যান।

[ লেখক : সমন্বয়ক ও গবেষক, ‘প্রবাসে প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং ‘প্রবাস বাংলা’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ বেতার ]

back to top